বরিশালের সাধারণ মানুষ আজ উগ্রবাদ ও সাম্পদ্রায়িকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর চক্রান্তের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হয়েছে। তারা বলছেন, আবহমানকাল ধরেই এ অঞ্চলে সব ধর্মের মানুষ মিলে-মিশে থাকছে। এটাই বাংলাদেশের মূল চেতনা, মানুষের মূল শক্তি। এই সম্প্রীতিকে যারা নষ্ট করতে চায় সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
গত দুই দিন ধরে বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণসংযোগ ও প্রচারাভিযান চালিয়েছে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ। দলটির সদস্যরা বরিশালের বিভিন্ন অফিস-আদালত, পাড়া-মহল্লায়, বাজার-ঘাটে গিয়ে সাধারণ মানুষকে উগ্রবাদ ও সাম্পদ্রায়িকতার বিরুদ্ধে সচেতন করেছেন। তারা বলছেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ কোন ধর্মই সমর্থন করেনা। কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে এদেশের তরুণদের জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইসলাম ধর্মের নানা বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে গুজব, হুজুগ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত করছে। তাদের এই অপতৎপরতা রোধ করতে হলে ধর্মবিশ্বাসী মানুষের সামনে ইসলামের সঠিক আদর্শ তুলে ধরতে হবে। হেযবুত তওহীদ ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তুলে ধরে আসছে এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মের নামে চলা সকল অধর্মের বিরুদ্ধে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাইয়ুম খান কায়সার বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনা তথা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি লালনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ, এর মূলে রয়েছে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম। দেশের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করেছেন। শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন, একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক বাঙালি, মানবতাবাদী ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন। এই চেতনাকে এগিয়ে নিতে এখন সামাজিক আন্দোলন জরুরি।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট এ. কে. এম জাহাঙ্গীর বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িকতার এক স্বর্ণময় সময় আমরা প্রত্যক্ষ করেছি মুক্তিযুদ্ধে। সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব পেশার মানুষ এক জোট হয়ে আন্দোলন করেছে, যুদ্ধ করেছে। তখন ধর্মীয় ভেদাভেদ ছিল না, আবার ধর্মহীনতাও ছিল না। একজন মানুষের প্রতি অন্য মানুষের এমন মমতা ও ভালোবাসা আর কখনও দেখা যায়নি। যুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশেও আমরা চেয়েছি সেরকম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। সব পেশা ও ধর্মের মানুষ যদি এক হয়ে কাজ করতে না পারি তবে এ দেশের উন্নয়ন কখনই সম্ভব হবে না। একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য সবার সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের বিকল্প নেই।
এ ব্যাপারে হেযবুত তওহীদের বরিশাল বিভাগীয় আমির মো. আলামিন সবুজ বলেন, কিছুদিন পূর্বে চরমোনাইয়ের অনুসারীরা ধর্মের দোহাই দিয়ে বরিশালে আমাদের সমাবেশ বানচাল করে দেয়। তারা সাধারণ মানুয়ের ধর্মানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তাদের কাছে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ প্রচার করে। তারা সাধারণ মানুষের মাঝে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করে। তাই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত দুইদিন যাবৎ বরিশাল মহানগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে আমাদের কর্মীরা জনগনের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছে। এই কাজে আমরা সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি। তারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনা লালন করে বলে আমাদের জানিয়েছে। তারা উগ্রবাদ ও সাম্পদ্রায়িকতার বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার অবস্থান নিয়েছে বলে আমাদের কাছে তাদের মনোভাব প্রকাশ করেছে।