হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম পুলিশ মহাপরিদর্শক এর একটি উক্তির প্রেক্ষিতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন,
১৪ মে দৈনিক প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে চার-পাঁচটি ছেলে দুই-তিনটা মেয়েকে শ্লীলতাহানি করল। যাদের সামনে এই ঘটনা ঘটাল, সেই পাবলিকরা তাদের কেন ধরল না। পাবলিকই তো তাদের শায়েস্তা করতে পারত। প্রত্যেক নাগরিকের আইনগত অধিকার আছে, তাদের সামনে অপরাধ ঘটলে তারাই তাদের গ্রেপ্তার করতে পারবে। এতে পুলিশের গ্রেপ্তার করা লাগত না।’
আই জি পি সাহেবের প্রতি আমাদের সবিনয় বক্তব্য হচ্ছে, সাধারণ মানুষকে যদি জীবনের বা সম্মানের ঝুঁকি নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী দেখতে চান তাহলে তাদেরকে দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা দিতে হবে।
(১) এই প্রতিবাদ করা তাদের এবাদত, ধর্মীয় দায়িত্ব। কারণ সমাজের অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনো ধর্মে বিশ্বাসী যে ধর্মবিশ্বাস থেকে তারা স্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্যে, পরকালের মুক্তির আশায় তারা কঠিন কঠিন সাধনাও করছেন, কঠিন কঠিন কাজ ও করছেন এবং জীবন ও দিচ্ছেন। অনেকে শহীদ হওয়ার জন্য জঙ্গিবাদ নামক ভ্রান্তপথে পা বাড়াচ্ছেন। অধিকাংশ সময় এই ধর্ম বিশ্বাসটা ধর্ম ব্যবসায়ীদের ধারা প্রতারিত হয়ে ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। এই জিনিসটি তাদেরকে বুঝতে হবে যে, যেই ঈমান মানবতার কল্যাণে কাজে লাগে না, সবলের অত্যাচার থেকে দুর্বলকে রক্ষা করতে কাজে লাগে না, সেই ঈমান তাদের পরকালে জান্নাত দিতে পারবে না। বর্তমানে ধর্মবিশ্বাসগুলোও স্বার্থকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। মানুষের বাসযোগ্য সমাজ নির্মাণকে কেউ এবাদত মনে করছে না, কারণ মানুষকে অন্যায় অশান্তি থেকে রক্ষা করা যে এবাদত সেটা প্রচলিত বিকৃত ইসলামে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না। এই শিক্ষা দিতে হবে।
(২) তাদের সামাজিক দায়িত্ব। তাদেরকে এটা শিক্ষা দিতে হবে যে, যে সমাজে সে বড় হয়েছে সে সমাজের উপরে তার দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। যে সমাজে মানুষ স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক, আত্মচিন্তায় মগ্ন হয়ে যায় তাহলে সামজটা পশুর সমাজ হয়ে যায় সেটা আর মানব সমাজ থাকে না। তখন কে কাকে আক্রমণ করবে, কে কাজে মেরে স্বার্থোদ্ধার করবে এটাই হয়ে যায় সমাজের মূল চিন্তাধারা। পাশবিক লালসা চরিতার্থ করবে তারা। যখন সমাজ এই অবস্থায় চলে যাবে সেখানে মানুষের পরিবারগুলোও ধ্বংস হবে, সে নিজেও ধ্বংস হবে। তার নিজের মা, স্ত্রী মেয়েও আক্রান্ত হবে। তখনও হাজার হাজার মানুষ দাড়িয়ে দেখবে। আজকের সমাজে মানুষের ধর্মীয় জীবনের নেতৃত্ব দানকারী ধর্মব্যবসায়ী আলেম-পুরোহিতরা মানুষকে কেবল পরকালমুখী হতে শিক্ষা দেন। ফলে দেখা যায় যে যত বড় ধার্মিক সে তত বেশি নির্বিরোধী। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার ইচ্ছা বা সাহস কোনোটাই তাদের থাকে না। কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোকে তারা এবাদত মনে করেন না, এবাদত বলতে কেবল নামায-রোযাই বোঝেন। অথচ আল্লাহ বলেছেন, তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির মধ্যে তোমাদের উত্থান হয়েছে এই জন্য যে, তোমরা মানুষকে সৎ কাজে আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে (সুরা ইমরান ১১০)। কাজেই সামাজিক কর্তব্য হিসেবে একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসতে হবে এ শিক্ষা দিতে হবে। এখন এই শিক্ষা দেওয়াটাই হলো প্রধান উপায়।
যাবতীয় অন্যায় অশান্তির বিরুদ্ধে গতানুগতিভাবে শক্তি প্রয়োগ, কঠোর থেকে কঠোরতর আইন প্রয়োগ করেও যখন কাজ হচ্ছে না তখন চতুর্দিক থেকে এই কথা আসছে যে সামাজিক সচেতনতার বিকল্প নেই, আদর্শের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো সেই সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করার যে আদর্শ প্রয়োজন সেটা কোথায় আছে? সেটাতো কোথাও নেই। দুনিয়াময় গণতান্ত্রিক যে বিধানগুলো চালু আছে সেখানে নেই, প্লেটোর দ্যা রিপাবলিকানে নেই, মার্কসের দ্যাস ক্যাপিট্যালে নেই এক কথায় মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত মতবাদগুলোতে নেই। সমাজরক্ষার সেই আদর্শগুলো আধে ধর্মগ্রন্থগুলোয় যেগুলোকে প্রগতিবাদীরা অচ্ছুত করে রেখেছেন, আর ধর্মব্যবসায়ীরা রেখেছেন কুক্ষিগত করে। সেই ধর্মের মূল সত্যগুলো তুলে ধরছে হেযবুত তওহীদ। আমরা মনে করি যে মানবজাতিকে যদি এগুলি বোঝানো যায় তাহলে সত্যিই জনে জনে পুলিশ প্রহরার প্রয়োজন থাকবে না। সমাজের অন্যায় অপরাধ জনগণের দ্বারাই নির্মূল হয়ে যাবে। তার মানে এই নয় যে, জনগণ অপরাধীকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলবে। যার যে শাস্তি প্রাপ্য সেই শাস্তিই যেন সে পায় সেজন্য প্রচলিত আইনের হাতে সোপর্দ করবে, যার শাস্তি হবে দশটা বেত তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা যেন না হয় এটাও সমাজকে শিক্ষা দিতে হবে। জনগণেরও বিশ্বাস ও আস্থা থাকতে হবে যে, আইনের হাতে তুলে দিলে অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি হবে, কোনো ফাঁক ফোকর দিয়ে সে বেঁচে যেতে পারবে না।
আল্লাহর রসুল ১৪০০ বছর আগে উম্মতে মোহাম্মদী বলে যে জাতিটি তৈরি করেছিলেন সেই জাতির মধ্যে কোনো পুলিশ ছিল না, জনে জনে পাহারা দেয়ার মত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ছিল না। মানুষ তার দায়িত্ববোধ থেকে, ঈমানী চেতনা থেকে, সামাজিক কর্তব্য বোধ থেকে, মানবতার দিক থেকে মানুষ একে অপরের সহযোগিতা করেছে, অন্যকে ক্ষুধার্ত রেখে নিজে আহার করে নি, একজন আরেকজনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে, একজন আরেকজনের জন্য না খেয়ে থেকেছে, এমন কি জান দিয়েছে। সেই শিক্ষা দিলে এখনো পুলিশের প্রয়োজন হবে না। সেই শিক্ষা এনশা’ল্লাহ দিতে পারবে হেযবুত তওহীদ, তবে সকলের সহযোগিতা লাগবে। আজকে আইজি সাহেবের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমার কথা হলো আসুন মানুষকে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আমরা এটা শিক্ষা দিই, তখন দেখবেন আপনাদের এত কষ্ট করতে হবে না। একজনের দোষ আরেক জনের কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার জন্য এ ভাবে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করতে হবে না। এ শিক্ষাটি আজকে আমাদের ও আমাদের উত্তর প্রজন্মের বাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণের জন্য প্রয়োজন। আমরা সে শিক্ষা দেয়ার জন্যে নিঃস্বার্থ ভাবে তৈরি আছি।