মো. মশিউর রহমান
হেযবুত তওহীদ এমন একটি সংগঠন যার সদস্যরা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছরে একটিও অপরাধ করে নি, একটিও আইনভঙ্গ করে নি। এটা আমাদের দাবি নয়, এটা প্রশাসনের তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে দাখিলকৃত তদন্ত রিপোর্টের সারমর্ম। এর পক্ষে নিম্ন থেকে উচ্চ পর্যন্ত সকল আদালতের দলিল আমরা দেখাতে পারব। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চিত্র আপনাদের সামনে রয়েছে, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার চিত্রও আপনাদের সামনে রয়েছে যারা হাজার হাজারবার বিবিধ অপরাধ, দুর্নীতি, খুন ইত্যাদির দরুন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে, হেযবুত তওহীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার গৌরবময় অবস্থান সম্পর্কে যারা জানেন তারা কোনোরূপ অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না বলেই আমাদের বিশ্বাস।
তথাপি আমরা আজও হয়রানির শিকার:
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় এখানেই। এখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে অপপ্রচারে প্রভাবিত, অথবা তারা আইনের দৃষ্টি দিয়ে না দেখে ব্যক্তিগত ধ্যানধারণার ভিত্তিতে হেযবুত তওহীদকে পরিমাপ করেন। আমরা একই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন বিপরীতমুখী পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। হয়তো একটি জেলায় আমাদেরকে প্রশাসন খুব সহযোগিতা করছে। হঠাৎ নতুন কোনো কর্মকর্তা এসে কাজই বন্ধ করে দিলেন। যখন ঢাকা মহানগরীতে আমরা বড় বড় জনসভা করে যাচ্ছি তখন ঢাকারই কোনো একটি থানায় সেমিনার করারও অনুমতি মিলছে না। অর্থাৎ এটা সুস্পষ্ট যে আমাদের বিষয়ে প্রশাসনের মধ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি (Consistent Policy) নেই। একজন কর্মকর্তার অজ্ঞতাপ্রসূত সন্দেহ বা প্রচেষ্টাই আমাদের বিরাট জনসভার আয়োজনকেও শেষ মুহূর্তে প- করে দিতে পারে। আমরা যেখানে একশ’টি অনুষ্ঠানের অনুমতি চাই, সেখানে একটার অনুমতি পাই। কিন্তু হওয়ার কথা ছিল উল্টো। কেননা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ-র্যাব ইত্যাদি বাহিনীর প্রধানগণ বার বার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তখন আমরা ছুটে গেছি। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে প্রশাসনের মধ্য থেকেই যখন বিরূপ আচরণ পাই তখন বিস্মিত না হয়ে পারি না।
আমরা কাজ করতে পারি পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে:
আগেই বলেছি, শুধুমাত্র দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে মানুষের অপরাধ প্রবণতা দূর করা যায় না। তার জন্য ধর্মের সঠিক শিক্ষা, মূল্যবোধ, আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতার জাগরণ প্রয়োজন। অন্যদিকে জঙ্গিবাদের মতো বৃহৎ সংকট মোকাবেলায় এই আদর্শিক মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এখানে প্রয়োজন পড়ে একটি সঠিক পাল্টা আদর্শ (Counter Narrative)। সেই আদর্শটি আল্লাহর রহমতে আমাদের কাছে আছে। আমরা চাই দেশ ও জাতি এটা প্রয়োগ করে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে পরিত্রাণ লাভ করুক। আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার লাখো কোটি জনতা ধর্ম ও রাজনীতির নামে চলা সকল প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তারা জানতে পারছে কীভাবে ধর্মের নামে প্রতারণা করে তাদের সম্পদ হরণ করেছে একটি গোষ্ঠী, কীভাবে তাদের ঈমানী চেতনাকে ভুল খাতে নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছে ধর্মব্যবসায়ী অপরাজনীতিকরা। আমাদের বক্তব্য যাদের হৃদয়ে সত্যের ঝঙ্কার তুলছে, তারা দেশ ও জাতিকে রক্ষায় নিঃস্বার্থ ভূমিকা রাখতে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। আমরা চাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং হেযবুত তওহীদ পারস্পরিক আস্থার মধ্যে থেকে কাজ করে যাবে। বাহিনীগুলোর কাছে রয়েছে শক্তি, আমাদের কাছে রয়েছে আদর্শ। আমরা যদি পরস্পর সহযোগী হিসেবে কাজ করে যেতে পারি, তাহলে তা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অনন্য শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট আমাদের প্রত্যাশা:
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেশের কল্যাণকামী নাগরিকদের বন্ধু। আমরা দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ চাই। মাননীয় এমামুয্যামান আমাদেরকে এই শিক্ষা দিয়ে গেছেন যে মানবজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে মানুষের মূল এবাদত। সারা বিশ্বে যখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠেছে, যখন মুসলিম দেশগুলোও বিভিন্ন সামরিক জোটে যোগদান করছে, তখন আমাদের এই সবুজ শ্যামল দেশটিকে রক্ষা করার একটি পথ আমরা প্রস্তাব করছি। আমাদের আশা থাকবে আমাদের প্রস্তাবটি বিবেচনা করা হোক।
আমরা যেন মানুষকে এ প্রবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাগ্রত করে তুলতে পারি, সেজন্য আমাদের বিষয়ে প্রশাসনের মধ্যে একটি সুসমন্বিত নীতি থাকা অপরিহার্য বলে মনে করি। আমরা চাই আপনারা অতি দ্রুত আমাদের বিষয়ে সেই নীতি গ্রহণ করবেন, দেশের সকল থানায় সেই নীতিই অনুসরণ করা হবে। আমরা যদি অন্যায় করি, আমরাদেরকে আইনে সোপর্দ করা হোক। কিন্তু যদি আমরা দেশের জন্য কল্যাণকর হই, তাহলে আমাদের চলার পথকে সুগম ও কণ্টকমুক্ত করা হোক। আমাদের সম্পর্কে আপনারা নিশ্চিন্ত হোন, সন্দেহমুক্ত হোন। “হেযবুত তওহীদ এখন তো ভালো কথা বলছে, ভালো কাজই করছে, কিন্তু ভবিষ্যতে না জানি কী করে ফেলে?” – এ ধরনের অহেতুক সন্দেহ অন্তত আমাদের ব্যাপারে করবেন না। সবাইকে এক পাল্লায় মাপার নীতি অবশ্যই অযৌক্তিক। তাহলে জগতে ভালো-মন্দ, আসল-নকল বলে কোনো কিছু থাকত না। কারা প্রকৃতপক্ষে দেশের মানুষের কল্যাণ চায়, ঐক্য চায়, কারা শত্রুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে চায়, অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র থেকে মানুষকে নিরাপদ করতে চায় তা অবশ্যই আপনাদের সুস্পষ্টভাবে নিরূপণ করতে হবে। ভালো কাজকে উৎসাহিত করা এবং মন্দকে দমন করাই রাষ্ট্রের নীতি হওয়া উচিত।
আমরা আমাদের দেশে প্রচলিত আইন ভঙ্গ না করার নীতি থেকে কখনোই বিচ্যুত হবো না ইনশা’ল্লাহ। আমাদের সম্পর্কে জানার জন্য হাজারটা পথ খোলা আছে। আমাদের জনসভাগুলোর ভিডিওগুলো অনলাইনে আছে, আমাদের লেখা বইগুলো, পত্রিকাগুলো ওয়েবসাইটে আছে। দেশের প্রায় পঞ্চাশটি জেলা-শহরে আমাদের কার্যালয় রয়েছে। সুতরাং আমাদের বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির কোনো অবকাশই নেই। (সমাপ্ত)