রিয়াদুল হাসান:
প্রায়ই শুনি, বাংলার মানুষ ধর্মান্ধ নয়, ধর্মপ্রাণ, ধার্মিক, সংস্কৃতিমনা। যুগ যুগ ধরে এখানে সব ধর্ম সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করেছে তাই এখানে উগ্রতার সংস্কৃতি কখনোই গৃহীত হবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তারা বোঝেন না যে, সময় অনেক পাল্টেছে। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে যা ছিল না তা এখন হরদম চলছে। বিশ্বের অন্তত একশটি ফ্রন্টে একসাথে যুদ্ধ চলছে, যার সবগুলোর পেছনে আছে ধর্ম ও ধান্ধাবাজির রাজনীতিকে ব্যবহার করে আধিপত্যবাদ। আমাদের এখানে গত কয়েক দশক থেকে মানুষের ধর্মানুভূতিকে বার বার হাইজ্যাক করে হিং¯্রতার চর্চা করা হচ্ছে।
মসজিদের মাইকে নামাজের আহ্বান শুনে কতজন মুসল্লী মসজিদে উপস্থিত হন? কিন্তু আমাদের দেশে যখনই মসজিদের এই মাইক ব্যবহার করে ধর্ম অবমাননার ভুয়া ঘোষণা দেওয়া হয় তখনই হাজার হাজার “ধর্মপ্রাণ, শান্তিপ্রিয়, ধার্মিক” তওহীদী জনতা ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোটা, রাম দা, কিরিচ নিয়ে হজির হয়ে যায়। তারপর যা করে তাকে পাশবিকতা বলব না, কারণ এদের বন্যতা, হিং¯্রতা দেখে যে কোনো পশুও লজ্জিত হবে।
আমি সুশীলদের বলছি, আপনারা আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকবেন না। ধর্মের অনুভূতি যখন একটি গোষ্ঠীর হাতে জমা রেখেছেন তখন মনে রাখবেন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র কোনো সিরিয়াল কিলারের হাতে বন্ধক রেখেছেন। সে এই অস্ত্র যখন যেভাবে খুশি ব্যবহার করবে আপনার কিছুই করার থাকবে না। তাদের মাথায় ও বিভিন্ন স্থানে হাত বুলিয়ে শেষ রক্ষা হবে না। একটাই উপায় মানুষকে ধর্মের প্রকৃত রূপটি শিক্ষা দিন। মানুষের ধর্ম যে মনুষ্যত্ব তা শিক্ষা দিন, সমাজে শান্তি রক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস করাই যে এবাদত এটা শিক্ষা দিন। মানুষের ক্ষতি হয় এমন কাজই গোনাহের কাজ আর কল্যাণ হয় এমন কাজই সওয়াবের কাজ।
তাকে বলুন, যার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত তার নামাজ রোজা কবুল হয় না। তাকে বলুন, ধর্মব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে তোমাদেরকে ঈমানকে ব্যবহার করছে। ঈমান তোমার স¤পদ, তাকে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাও- মানবতার অসম্মান করার জন্য লাগিও না, দেশ ধ্বংসের জন্য লাগিও না। তাদেরকে শেখান, মসজিদ নির্মাণ যেমন সওয়াবের কাজ তেমনি মানুষ চলাচলের জন্য রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট নির্মাণ করাও এবাদত। মুসলিম জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে এজন্য যে তারা ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজে বাধা দিবে। তাদেরকে শেখাতে হবে, গুজবে কান দেওয়া, হুজুগে মাতা, কোনো সংবাদ যাচাই না করে কারো বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া আল্লাহ নিষেধ করেছেন। এটা কোনো মো’মেনের কাজ না।
কেউ অন্যায় কিছু লিখলে বা বললে তার প্রতিবিধান করার জন্য রাষ্ট্রীয় আইন আছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে, সাংগঠনিক পর্যায়ে একটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুক্তি তর্ক দিয়ে সংশোধনের চেষ্টা করা যায় কিন্তু আইন হাতে তুলে নিয়ে দ- কার্যকর করতে হলে অবশ্যই আগে কর্তৃপক্ষের আসনে তোমাকে বসতে হবে। এই কথাগুলো বলার দায়িত্ব ছিল যাদের তারা বলবেন না, কারণ তাদের কায়েমী স্বার্থ নষ্ট হবে। এই কথাগুলো তাই সবাইকে বলতে হবে। শতকণ্ঠে বলতে হবে। কেউ যদি বলে তোমার দাড়ি কোথায়, লেবাস কোথায় তাকে বলুন, চিন্তা করবেন না। আজ রাখি নি, কাল রাখতেও তো পারি। আগে আসুন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ঐক্যবদ্ধ হওয়া ফরজ। আগে ফরজ কাজটি করি। ধর্মের নামে অনাচার আর অধর্ম চালু রাখলে আল্লাহর এবং ইসলামের অবমাননা করা হয়। আগে একে প্রতিহত করি।
(কলামিস্ট: রিয়াদুল হাসান, সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি)