হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম:
হেযবুত তওহীদ সমাজ পরিবর্তনের জন্য যে আদর্শটি প্রস্তাব করছে তা হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম। সুতরাং প্রতিষ্ঠিত বিকৃত ধর্মের ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসীরা আমাদের স¤পর্কে জানার আগ্রহ থেকে অনেক প্রশ্ন করে থাকেন। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করি তাদের সবার উত্তর দিতে। এই প্রশ্নকারীদের মধ্যে হেযবুত তওহীদের অনেক সদস্যও যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন হেযবুত তওহীদের বাইরের অনেক মানুষ। আমি এই লেখার মধ্যে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেব যেগুলো অনেকের মনেই রয়েছে। হেযবুত তওহীদের একজন সমর্থক আমাকে বলেছিলেন যে-
প্রশ্ন: হেযবুত তওহীদের কথা বলতে গিয়ে আমি প্রশাসনকে ভয় পাই। এই ভীতি থেকে আমি কী করে রক্ষা পেতে পারি?
উত্তর: আপনি একটি কথা শুধু মনে রাখবেন, ভয় পায় অপরাধীরা। যারা অপরাধ করে তারা প্রশাসনের সামনে গেলে তাদের আত্মায় নৈতিক বল থাকে না। কিন্তু হেযবুত তওহীদ এমন একটি আন্দোলন যারা কোনো আইনভঙ্গ করে না, অন্যায় করে না। দেশের কল্যাণে মানুষের কল্যাণে কথা বলে। কাজেই হেযবুত তওহীদের কথা বলতে গিয়ে ভয় করার প্রশ্নই আসে না। এ কারণে আমাদের হাজার হাজার কর্মী সারা দেশে যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্ভয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী বা অপপ্রচারে প্রভাবিত যে কোনো গোষ্ঠীর দ্বারা বৈরিতার সম্মুখীন হচ্ছেন, কিন্তু একদিনের জন্যও এ আন্দোলনের কাজ থেমে থাকে নি। কারণ একটাই- হেযবুত তওহীদ প্রকৃতপক্ষেই কোনো অন্যায় করে না।
এটা একদিকের কথা। দ্বিতীয় কথা হলো, কোনো মো’মেন যখন সত্য নিয়ে দাঁড়ান তখন তার সঙ্গে থাকেন আল্লাহ। মো’মেনের উচিত শুধু আল্লাহকে ভয় করা, কোনো মানুষকে ভয় না করা, কোনো মানুষের সামনে মাথা নত না করা। এটা করলে আল্লাহ খুব অসন্তুষ্ট হন।
তৃতীয় কথা হলো, অনেকের মধ্যে দুর্বলতা কাজ করে, হীনম্মন্যতা থাকে। কারণ গোটা দুনিয়ায় ইসলাম এখন টার্গেট, আক্রমণের বস্তু। এর ফলে সমগ্র বিশ্বের মুসলিমই এক প্রকার হীনম্মন্যতায় আচ্ছন্ন। এর প্রভাবের বাইরে আমরাও অনেকে যেতে পারছি না। এটা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে সচেতন প্রচেষ্টার দ্বারা।
প্রশ্ন: আপনাদের অনুষ্ঠানে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ করেছি। এতেই বোঝা যায় আপনাদের মোটিভ কী।
উত্তর: দেখুন আমি একটা আলোচনায় বলেছিলাম আল্লাহর একটা নীতি সুরা জুমার এর ১৮ নম্বর আয়াতে তিনি বলেছেন, তোমার শুন এর মধ্যে যা উত্তম তা গ্রহণ করো। আল্লাহর এই নীতির আলোকে আমি প্রায় সময় বলে থাকি সত্য কথা ন্যায়-সঙ্গত কথা যে বলবে সে কোন ধর্মের, কোন বর্ণের কোন দলের তা দেখবে না। তা তোমরা গ্রহণ করবে। আর যদি অন্যায় কথা বলে, অসঙ্গত কথা বলে তবে সে কোন ধর্মের ,কোন বর্ণের কোন দলের তাও দেখবে না তা বর্জন করবে। সে লোক মহাপরহেজগার হলেও বর্জন করবে।
এই কথার আলোকে আমাদের কর্মীরা অনেক সময় বিভিন্ন কবি সাহিত্যিক, লেখক, সমাজ সংস্কারক, রাজনীতিক নেতা, বুদ্ধিজীবির উক্তিকে আলোচনায় আনেন। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে পূর্ব থেকেই আমাদের অধিকাংশ জনগণ এতটাই দ্বিধাগ্রস্ত এবং বিভক্ত যে, অপছন্দের কোন ব্যক্তির কথা বলার সাথে সাথে ঐ কথা কেন উল্লেখ করা হলো তাই উল্লেখকারীকেই সম্পূর্ণ বাতিল করে দেয়া হয়। এটা এতটাই বিব্রতকর অবস্থা যে একে চিন্তার সংকীর্ণতা ছাড়া আমি আর কিছু ভাবতে পারি না। একটি নির্দিষ্ট ধ্যান ধারণার প্রতি তাদের মনোভাব এতটাই কেন্দ্রীভ‚ত হয়ে যায় যে তারা অন্য সকলের প্রতি বিদ্বেষী হয়ে ওঠে, ন্যূনতম শ্রদ্ধা বা ভদ্রতাও তারা প্রদর্শন করতে প্রস্তুত নন। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার সৃষ্টির অণু-পরমাণুসহ যাবতীয় বস্তু নিচয় যেমন দুনিয়াময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন, তেমনি তিনি জ্ঞানও তিনি একজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে মানবজাতির বিভিন্ন জনের কাছে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ গোত্রের হতে পারে।
এবার আসি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে, বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন থেকেই একটা রাজনীতিক চর্চা করে আসছে। এই রাজনীতিক সংস্কৃতি ব্রিটিশদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। জনগণ ব্যক্তিগতভাবে ধর্ম পালন করবে কিন্তু জাতীয়,রাষ্ট্রীয়ভাবে সেক্যুলার আদর্শের অনুসরণ করবে এটাই এই পর্যন্ত হয়ে আসছে। দুইটা প্রধান রাজনীতিক দল- আওয়ামীলীগ ও বিএনপি। কোটি কোটি মানুষ আওয়ামীলীগ সমর্থন করে তাদের আদর্শ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। আবার কোটি কোটি মানুষ বিএনপি সমর্থণ করে তাদের আদর্শ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যদি কোনরকমের ঘটন-অঘটন না ঘটে তবে এরাই পালাক্রমে ক্ষমতায় আসে আর যায়।
ইসলামপন্থী দলগুলো সবাই মিলে সর্বসাকুল্যে ১০% সমর্থন আদায় করতেও এই পর্যন্ত সক্ষম হয় নি। এখন এই জাতিকে একটা সত্যের উপর দাঁড় করানোর কাজ আমরা করছি। তাই সবাইকে নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বড় বিপদে আমরা পড়েছি, যখন আমরা বলি যে, শেখ সাহেবের কোনো কথার উক্তি টেনে যদি আমরা তাদের কর্মীদের বলি এখন তোমাদের সেই মোতাবেক এটা করা উচিত। তখন বিএনপির কোটি কোটি কর্মী নাখোশ। আর জিয়াউর রহমানের কথা যদি বলি তবে আপনি তো বুঝতেই পারছেন কি হবে?
আমারা যেহেতু ইসলামের কথাই বলি সেহেতু সার্বক্ষণিক আমাদেরকে হুমকি শুনতেই হয়। কারণ বিশ্ব আবহাওয়া এখন ইসলামের বিপক্ষে। আজ কথা বলতে দেয় তো কাল জেল খানায় নিয়ে যায়, আজকে কালো তালিকা করে কালকে নিষিদ্ধ করে। এই অবস্থাই চলছে। যাই হোক, এত কথা বললাম এই জন্য যে, মনে হচ্ছে এমন সমাজে কারও কোনো ভাল দিক নেই, কারও কোনো ভাল কথা বললেই অমুকের দালাল, তমুকের দালাল। সুতরাং গালি দেওয়ার চর্চা, অপবাদ আরোপের সংস্কৃতি চলছে – চলবে। কি আর করা? আমরা তো অন্যের কথার কারণে মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে করা সংগ্রাম থামিয়ে দিতে পারি না।
এ তো গেল এক দিকের কথা। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সরকার হচ্ছে একটি জাতির মস্তক, জনগণ তার দেহের মতো। আমরা জনগণকে নিয়ে কাজ করছি। তাই আমাদের পক্ষে এই প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় কোনোভাবেই মস্তক অর্থাৎ সরকারকে এড়িয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। যে কোনো জনসভা, সেমিনার বা জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করতে আমাদেরকে অনুমতি নিতে হয়। আমাদের আন্দোলনের নীতিই হলো আমাদের প্রতিটি কার্যক্রম হবে প্রকাশ্য, আমাদের কোনো গোপন কার্যক্রম থাকবে না। তাই আমরা যে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করলে সেটা আগে সরকারী কর্মকর্তাদের অবগত করি, জনপ্রতিনিধিদের অবগত করি যেন কোথাও কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশও না থাকে। যখন যে ক্ষমতায় ছিল আমরা তাদের কাছেই গেছি, আমাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেছি। তাদেরকে ভালো করে বোঝানোর স্বার্থেই আমাদের মঞ্চে এনে বসাই। আমাদের আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান যখন জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকারকে আদর্শিক লড়াইয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তখন কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না, তখন ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ক্ষমতার পালাবদলে যদি অন্য কোনো সরকার ক্ষমতায় আসে তখন তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই আমরা কাজ করব ইনশাল্লাহ।
(উত্তর দানকারী: হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম, এমাম, হেযবুত তওহীদ)