রাকীব আল হাসান:
পৃথিবীব্যাপী জঙ্গিবাদ এক ভয়াবহ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে, যে ব্যাধির সংক্রমণে প্রতিনিয়ত মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে শত-সহস্র আদম সন্তান; ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে বিভিন্ন দেশ ও জনপদ। সব থেকে ভয়ের বিষয় হচ্ছে দিন দিন জঙ্গিদের সংখ্যা, সামর্থ্য ও ধ্বংসযজ্ঞ বেড়েই চলছে। এমতবস্থায় এদেরকে এ পথ থেকে সরাতে হলে সর্বপ্রথম তাদের কর্মকাণ্ড যে ভুল অর্থাৎ ইসলামবিরোধী তা বোঝাতে হবে। এখানে আমি মাত্র দু’টি উপায়ে জঙ্গিদের আদর্শের অসারতা প্রমাণ করব-
জঙ্গিদের দু’টি ভুল
(১) ইসলাম সম্পর্কে তাদের সম্পূর্ণ ধারণা (আকিদা) ভুল ও বিকৃত। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করে এই পৃথিবীতে তাকে তাঁর খলিফা, প্রতিনিধি কেন নিযুক্ত করলেন; মানুষের মধ্যে তাঁর নিজের আত্মা কেন ফুঁকে দিলেন; পৃথিবীতে পাঠিয়ে মানুষের দেহ-আত্মার মধ্যে কেন ইবলিসকে প্রবেশ করার অনুমতি দিলেন; আবার নবী-রসুল পাঠিয়ে মানুষকে হেদায়াহ অর্থাৎ দিক নির্দেশনা দিয়ে কী দায়িত্ব আল্লাহ দিলেন; এক কথায় মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী, ইসলাম কী এ সম্বন্ধে এই ক্ষুদ্র দলটির সঠিক আকিদা (Comprehensive Concept) নেই। অথচ তারা আল্লাহকে, তাঁর রসুলকে ও দীনুল ইসলামকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন, আর তাই তারা ইহুদি-খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’র দাবি মোতাবেক গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্বকে মানতে রাজী নন, তারা চান পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু যেটাকে তারা ইসলাম বলে ভাবছেন সেটা আল্লাহ রসুলের প্রকৃত ইসলামই নয়। গত ১৩০০ বছরে আল্লাহ রসুলের প্রকৃত ইসলাম বিকৃত হতে হতে আজ সেটা একেবারে বিপরীতমুখী হয়ে গেছে। তাই এটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম করে আল্লাহর দীনের কোনো ‘খেদমত’ হবে না, এজন্য আল্লাহর কাছ থেকে বিনিময় আশা করাও অর্থহীন।
(২) তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যে পথ বেছে নিয়েছেন তাদের সে পথ ভুল। তারা যে সন্ত্রাসের পথ গ্রহণ করেছেন সেই পথে চললে দুনিয়াও পাবেন না, আখেরাতও পাবেন না অর্থাৎ দুই কূলই হারাবেন। আগে বুঝতে হবে ইসলাম অর্থাৎ সত্যদীন (দীনুল হক) কী এবং এর প্রতিষ্ঠার সঠিক প্রক্রিয়া কী। তাদের বুঝতে হবে এবং উপলব্ধি করতে হবে যে পৃথিবীতে সত্যদীন প্রতিষ্ঠার একমাত্র সঠিক নীতি, পথ ও প্রক্রিয়া হচ্ছে শুধু সেইটা যেটা আল্লাহর রসুল নিজে করেছেন এবং আমাদের শিখিয়ে গেছেন। ঐ পথ ছাড়া আর কোনও পথে, কোনও প্রক্রিয়ায় তারা আল্লাহর সাহায্য পাচ্ছেন না এবং পাবেন না, ফলে তারা সফলও হচ্ছেন না এবং হবেন না। বিশ্বব্যাপী তাদের পরাজয় ও দুরাবস্থা থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাদেরকে মুমিন হিসাবেও স্বীকার করেন না। কেননা তিনি বলেছেন, “মুমিনরা যখনই কাফেরদের সঙ্গে মোকাবেলায় অবতীর্ণ হবে, কাফেররা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে। তারা কোনো অভিভাবক ও সাহায্য পাবে না। এটা আল্লাহর অপরিবর্তনীয় সুন্নাহ (রীতি) যা পূর্বকাল থেকে চলে আসছে। নিশ্চয়ই আল্লাহর সুন্নাতে কোনো পরিবর্তন নেই (সুরা ফাতাহ ২২-২৩)।
রসুলাল্লাহ কি মক্কার ১৩ বছর কোনো যুদ্ধ করেছেন? তিনি ও তাঁর আসহাবগণ নিরবচ্ছিন্নভাবে শুধু তওহীদের বালাগ করে গেছেন। মদীনার মানুষগুলি যখন রসুলাল্লাহকে তাদের নেতা হিসাবে মেনে নিয়েছে তখন একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন তিনি কিন্তু আর ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী নন তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক। কাজেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, শান্তি, শৃৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তখন অস্ত্র হাতে নিলে সেটা হয় সেনাবাহিনীর কাজ, সেটা সন্ত্রাস হয় না, জঙ্গিবাদ হয় না। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই ব্যক্তি বা দল বা গোষ্ঠী হিসাবে অস্ত্র-ধারণ করা যায় না, এটা হবে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ। এই জঙ্গিবাদের কোনো স্থান ইসলামে নেই। আল্লাহ এবং তাঁর রসুল এ সুযোগ দেন নি কাওকে। কাজেই ইসলামে কোনো জঙ্গিবাদ নেই।