রাকীব আল হাসান:
যে ব্যক্তির মধ্যে অনেক এলেম বা জ্ঞান রয়েছে তিনি হলেন আলেম। আল্লাহ ও তাঁর রসুলের দৃষ্টিতে একজন আলেমের মর্যাদা আকাশচুম্বী। মূর্খের সারা রাতের নফল এবাদতের চেয়ে আলেমের ঘুম উত্তম। শহীদের রক্তের চেয়েও আলেমের কলমের কালি বেশি পবিত্র। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই অসীম মর্যাদার ধারক প্রকৃত আলেম আসলে কারা? আমরা সমাজের দিকে দৃষ্টি দিলেই দেখতে পাই, একদল স্বার্থবাদী লোক ধর্মকে তাদের জীবিকা নির্বাহের হাতিয়ারে পরিণত করেছে। তারা হরেক রকমের ধর্মীয় কাজ-কর্ম করে টাকা উপার্জন করছে, সমাজে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে। কেউ আবার ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি করছে, ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে সহিংসতা করছে, মানুষ খুন করছে। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো তারা দাবি করছে যে, তারা আলেম। অথচ, আল্লাহর রসুল এদের সম্পর্কে বলে গেছেন- তারা আসমানের নীচে সর্বনিকৃষ্ট জীব। প্রকৃত আলেম ছিলেন প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর মোজাহেদরা যারা নিজেদের সর্বস্ব কোরবানি করে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করেছিলেন এবং অর্ধ পৃথিবীতে তওহীদের পতাকা উড়িয়েছিলেন। রসুলের আসহাবগণের পরবর্তীতে যারা আলেম হোতে চান তাদের চরিত্র ও কাজ আসহাবদের মতোই হোতে হবে। তা না হোলে যতো বড় টাইটেলধারীই হোন না কেন, যতো বড় আলখেল্লাধারীই হোন না কেন তারা প্রকৃত আলেম নন। সুতরাং
১। প্রকৃত যারা আলেম তারা কখনও অহঙ্কারী হবেন না, কারণ অহঙ্কার কেবলমাত্র আল্লাহরই সাজে। প্রকৃত আলেমরা তাদের সঞ্চিত জ্ঞানকে খুবই সামান্য মনে কোরবেন এবং সর্বদা অতৃপ্ত থাকবেন। তারা নিজেদেরকে কখনওই আলেম বোলে মনে কোরবেন না, দাবি বা প্রচার করা তো দূরের কথা।
২। তারা আল্লাহর দীন বিক্রি কোরে জীবিকা নির্বাহ কোরবেন না। এই জ্ঞান অন্যকে দেওয়া তারা নিজেদের ঈমানী দায়িত্ব বোলে মনে কোরবেন। আলী (রা:) কে রসুলাল্লাহ ‘জ্ঞান-নগরীর দ্বার’ বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন। তিনি কি আজকের আলেমদের মতো তাঁর জ্ঞান বিক্রি কোরে জীবিকা নির্বাহ কোরতেন? জীবিকা অর্জনের জন্য তিনি কুলির কাজ কোরতেন এবং যাঁতার চাক্কি পিষে যবের আটা প্রস্তুত কোরতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী জান্নাতের রানী মা ফাতেমার (রা:) পবিত্র হাতে কড়া পড়ে গিয়েছিল। এই জ্ঞানের দুয়ার আলীকেই (রা:) আমরা দেখি সিংহের বিক্রমে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরতে। তার অনন্য সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য রসুলাল্লাহ তাঁকে আরেকটি উপাধি দিয়েছিলেন- সেটা হোল আসাদুল্লাহ বা আল্লাহর সিংহ। সুতরাং যিনি দীনের যতো বড় আলেম হবেন তিনি ততো বড় যোদ্ধা হবেন অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বের রক্ষক হবেন।
৩। প্রকৃত আলেম তার জ্ঞানকে মানবতার কল্যাণে নিস্বার্থভাবে প্রচার করে যান। তার শিক্ষায় একটিও বিষয় থাকেনা বা থাকতে পারে না যা আল্লাহ বা তার রসুলের শিক্ষার বিপরীত। আল্লাহ ধর্মব্যবসা হারাম কোরেছেন, দীনের কাজের পার্থিব মূল্য গ্রহণকে তিনি আগুন ভক্ষণের সঙ্গে তুলনা কোরেছেন। যারা এই কাজ করে তাদেরকে তিনি বোলেছেন পথভ্রষ্ট, অপবিত্র, জাহান্নামী (সুরা বাকারা- ১৭৪)। তাদের পেছনে দাঁড়াতে মোমেনদেরকে নিষেধ কোরেছেন (সুরা ইয়াসীন ২১)। অথচ আজকের সমাজের প্রতিষ্ঠিত আলেমগণ জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবেই দীন বিক্রি করাকেই বেছে নিয়েছেন। এরা আল্লাহর কোর’আনের আয়াতের পরিপন্থী কাজ কোরছেন এবং নিজেদের আলেম বলে দাবি করে অর্থের বিনিময়ে নামাজ পড়িয়ে, মুর্দা দাফন করে, খতম পড়ে, ওয়াজ মাহফিল, খোতবা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদেরকেই আল্লাহর রসুল আসমানের নিচে সর্ব নিকৃষ্ট জীব বোলেছেন।
৪। আল্লাহ কোর’আনে বোলেছেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধ হোয়ে আমার রজ্জুকে ধোরে রাখ। আজ এই নামধারী আলেমরা ইসলামকে নানান মাজহাব, ফেরকা, তরীকা, খানকা, পীরের অনুসারী এবং হাজারো ভাগে ভাগ কোরেছেন, সাধারণ মানুষ এই সব মাজহাব ফেরকা আবিষ্কার করে নি। এই কাজ কোরে নামধারী আলেমরা জাতিকে মেরে ফেলেছেন। প্রকৃত আলেমরা কখনই ইসলামকে এই ভাবে ধ্বংস করতে পারেন না।
৫। বর্তমানের আলেম দাবিদাররা যে মাদ্রাসা থেকে ইসলাম শিখে আলেম খেতাব পাচ্ছেন সেই মাদ্রাসাগুলি ব্রিটিশ খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্রের ফসল। ঔপনিবেশিক যুগে খ্রিস্টান পণ্ডিতরা বহু গবেষণা কোরে তওহীদহীন ও সংগ্রামহীন বিকৃত একটি ইসলাম তৈরি করে এবং ১৪৬ বছর ধোরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় সেই ইসলামটি এই জাতিকে শেখায়। সেই বিকৃত ইসলামটি বিক্রি কোরেই খাচ্ছেন এই আলেম-পুরোহিত শ্রেণিটি। সেই আত্মাহীন, ভারসাম্যহীন ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করে পদে পদে ফতোয়া দিয়ে, মতবাদ সৃষ্টি করে, জাতির মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে চোলছে এই পরনির্ভরশীল পুরোহিত শ্রেণিটি।
আমরা চাই এ জাতির সত্যনিষ্ঠ আলেম ওলামাদের কালঘুম ভাঙুক। তারাও আল্লাহর প্রকৃত তওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হোক।