কাজী নজরুল ইসলাম
ঘোড়ার ভুরু হয় না। (তাই বলে কই তাকে ত বিশ্রী দেখায় না!)
রোমস্থনকারী জন্তু মাত্রেরই ক্ষুর বিভক্ত। (কিন্তু সাহিত্য-রোমস্থনকারী প্রানীগুলির আদতে ক্ষুরই হয় না! এটা বুঝি ব্যতিক্রম!)
তিমি মৎস্যের দাঁত হয় না! তবে হাড়ের মত এক-রকম পাৎলা স্থিতি-স্থাপক (যা’ রবারের মত টানলেই বাড়ে আবার আপনি সংকুচিত হয়) জিনিস তার ফোকলা মুখের উপর-চোয়ালে সমান্তরাল হয়ে লেগে থাকে। তাই দিয়ে এ মহাপ্রভুর দাঁতের কাজ চলে!
কচ্ছপ বা কাছিমের আবার দাঁত বিলকুল নদারদ্। (ছেলে বেলায় কিন্তু শুনেছি যে, কাছিমে আর ব্যাংএ একবার কামড়ে ধরলে মেঘ না ডাকলে ছাড়ে না!)
শশক বা খরগোশের চোখ কখনও বন্ধ হয় না, কেননা বেচারীদের চোখের পাতাই নেই! মেম সাহেবদের মুখের বোরকার চেয়েও পাৎলা একরকম চামড়ার পর্দা ঘুমোবার সময় তাদের চোখের উপর ঘনিয়ে আসে। (মানুষের যদি ও রকম হ’ত, তা হ’লে ত লোকে তাকে “চশম-খোর”, শা’র চোখের পর্দা নেই প্রভৃতি বলত! তা’ ছাড়া, চোখের পাতা না থাকলে প্রথমেই ত আমাদের চোখে ঘা হয়ে ফ্যাচকা চোখো হয়ে যেতাম)।
নিশ্বাস-প্রশ্বাসের জন্যে হরিণের না কি নাকের ছ্যাদা ছাড়া আরও কতকগুলি ঐ রকম ছ্যাদা আছে। আশ্চর্য বটে!
প্যাচার চোখে কোন গতি বা ভঙ্গি নেই, অর্থাৎ কিনা তাদের ঐ ভাঁটার মত চোখ দুটির তারা নড়েও না চড়েও না। সদা সর্বদাই ডাইনী মাগীর মত কট্মট্ করে তাকায়।
ভেড়ার আবার উপর-চোয়ালে দাঁত হয় না। (তা হ’লে দেখা যাচ্ছে যাঁর ওপর-চোয়ালের দাঁত ভেঙ্গে যায় তিনিও ঐ ভ্যাঁ-গোত্রের)
উট ত একেই একটা বিদঘুটে জানোয়ার, যাকে দূর থেকে আসতে দেখে অনেক সময় একটা সচল দোতলা বাড়ী বলেই মনে হয়। কিন্তু এর চেয়েও ঐ কুঁচবগলা’র হত্তম সংস্করণ জীবটির একটা বিশেষ গুণ আছে। সে গুণ আবার পেছনকার পদদ্বয়ে। উষ্ট্র-ঠাকুর তাঁর পেছনের শ্রীচরণ দুটি দিয়ে তার বড় বপুর যে কোন স্থান ছুঁতে পারে!
একটি হাতীর গর্দানে (স্কন্ধে) মাত্র চল্লিশ হাজার (বাপস!) মাংসপেশী থাকে! সাধে কি আর এ-জন্তুর হাতী নাম রাখা হয়েছে!
ক্যাঁকড়া এগিয়েও যেমন বেগে হাঁটতে পারে, পিছিয়েও তেমনি হাঁটতে পারে। বাহাদুরী আছে এ-মস্তকহীন প্রাণীটির!
আপনারা কোন সর্বদর্শী জানোয়ার দেখেছেন কি? সে হচ্ছে জিরাফ। এই জন্তুপ্রবর চতুর্মুখ না হয়েও আগেও যেমন দেখতে পান, পিছনেই তেমনি দেখতে পান। ভাগ্য আর কাকে বলে!
আর একটি মজার বিষয় হয় তো আপনারা কেউ লক্ষ্যই করেননি। বৃষ্টি হবার আগে বিড়াল জানতে পারে যে বৃষ্টি আসবে, আর সে তখন হাঁচে। অতএব বিড়াল বৃষ্টির দূত বললে কেউ আপত্তি করবেন না বোধ হয়!
উত্তর আমেরিকার ময়দানে একরকম লাল খেঁকশিয়ালী আছে। শুনছি, দুনিয়ার কোন প্রাণীই নাকি তাদের সঙ্গে দৌড়–তে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশী খেঁকিও বোধ হয় কম যাবে না। দিব নাকি এই লাল খেঁকির সঙ্গে আমাদের দেশী খেঁকির একদিন ‘ঘৌড়-দৌড়’ লাগিয়ে?