হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

পর্দা নিয়ে বাড়াবাড়ি ও উগ্র আধুনিকতার শিকার নারী

রুফায়দাহ পন্নী:

আমাদের দেশের ওয়াজকারী বক্তারা অধিকাংশই ধর্মজীবী। এই ধর্মব্যবসয়ী ওয়াজকারীরা ওয়াজ করতে উঠেই নারী বিদ্বেষী বয়ান শুরু করেন। তাদের দৃষ্টিতে নারীরা হচ্ছে ইবলিসের প্রধান হাতিয়ার যা কিনা ‘পরহেজগার’ বান্দাদেরকে ধর্মের পথ থেকে বিচ্যুত করে দেয়, জাহান্নামে যাওয়ার পথ সুগম করে দেয়। তাই নারীরা মসজিদে যাবে না, গেলে নামাজির নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তারা যত্রতত্র ঘোরাফেরা করবে না, করলে ‘পরহেজগার’ বান্দাদের চোখের জেনা সংঘটিত হয়ে যাবে। নারী থাকবে আপাদমস্তক আবৃত, ‘পরহেজগার’ বান্দারা ঘরের ভিতরে ‘ঝিনুকে সুরক্ষিত মুক্তোসদৃশ’ (অনেকের ভাষায় তেঁতুল বা কলাসদৃশ) বিবিদেরকে মহব্বত করবেন। পরপুরুষ যেন তাদের চুলের অগ্রভাগও দর্শন না করতে পারে, তাদের কণ্ঠস্বর, তাদের পদধ্বনিও যেন শুনতে না পারে সে বিষয়ে তাদের পরহেজগার স্বামীরা থাকবেন অতন্দ্রপ্রহরীর ন্যায় সদা জাগ্রত। নারীরা হবে শুধুই তাদের আজ্ঞা পালনকারী। তাদেরকে যেভাবে ইচ্ছা শাসন করা যাবে, প্রয়োজন পড়লে পেটানোও যাবে। কিছুদিন আগে আরবের গ্র্যান্ড মুফতিতো নাকি স্ত্রীর গোশত খাওয়াও জায়েজ করে দিয়েছেন! পরে বিরূপ সমালোচনার মুখে তিনি তার ফতোয়া থেকে সরে আসেন।

ঠিক তাদের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে অতি সেক্যুলার কথিত শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। তারা এবং ধর্মব্যবসায়ীদের ওয়াজে সায় দানকারী জনগোষ্ঠী উভয়পক্ষই চূড়ান্ত ভারসাম্যহীন। সেক্যুলার সমাজ চাচ্ছে নারীর পোশাকের উপর যেন কোনো সীমারেখাই না থাকে। তারা দিবস-রজনি পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেও তাদের এই চাওয়াটা একটি পুরুষতান্ত্রিক চাওয়া। তাদের অভিসন্ধি হচ্ছে, নারী-স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে তারা তাদের অনাবৃত শরীর দেখে দর্শনসুখ লাভ করবে। অর্থাৎ এটা বলা যে, তোমরা আরো খোলামেলা থাকো, তোমার রূপ দেখে আমরা সুখী হই। এর প্রমাণ হচ্ছে, নারীকে যদি পোশাকের স্বাধীনতা দেওয়া হয় তাহলে যে নারী বোরকা পরতে চাইবে বা হেজাব করতে চাইবে স্বভাবতই তাকেও সেটা করার জন্য নিন্দা করা যাবে না। কিন্তু বাস্ততে কথিত ‘শিক্ষিত’ জনগোষ্ঠী সেটাকে মেনে নেন না, পর্দানশীন নারীদেরকে তাই তারা ব্যঙ্গ করেন।

বস্তুত ধর্মগুলো (কেবল ইসলাম নয়) শালীন পোশাকের পক্ষে মত দিয়েছে এবং সেটা নারী-পুরুষ উভয়েরই। যৌক্তিক কারণে আমি শেষ জীবনবিধান ইসলাম থেকেই বলছি। আল্লাহ বলছেন: “(হে নবী) আপনি বিশ্বাসী পুরুষদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহকে হেফাজত করে।” (সুরা নূর, আয়াত-৩০)

পরের আয়াতেই তিনি বলছেন, (হে নবী) আপনি বিশ্বাসী নারীদেরও বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত/সংযত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাযত করে, তারা যেন তাদের আভরণ (গোপন সৌন্দর্য) প্রদর্শন করে না বেড়ায়, তবে তাদের শরীরের যে অংশ এমনিতেই খোলা থাকে তার কথা আলাদা (সুরা নূর, আয়াত-৩১)। আল্লাহ নারীর সাধারণ প্রকাশমান অংশ আবৃত করতে বলেন নি, যেটা ওয়াজকারীরা ঢাকতে বলে থাকেন। মানুষের মুখমণ্ডল সাধারণ প্রকাশমান অঙ্গ কারণ মুখমণ্ডল দেখেই একজন মানুষকে চেনা যায়। মানুষ খাদ্যগ্রহণ করে মুখ দিয়ে, শ্বাস গ্রহণ করে নাক দিয়ে, দেখে দৃষ্টি দিয়ে, শোনে কান দিয়ে, কাজ করে হাত দিয়ে, পথ চলে পা দিয়ে। এই অঙ্গগুলোকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা তারা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে চরমভাবে ব্যহত করে। তাই এগুলোকে আল্লাহ আবৃত রাখতে বলেন নি, বললে সেটা অপ্রাকৃতিক হতো। বিষয়টি হচ্ছে যে অঙ্গসমূহ প্রকাশ করলে আদিম প্রবৃত্তি জাগ্রত হয় সে অঙ্গগুলো সকলের সামনে আবৃত রাখার কথা আল্লাহ বলেছেন। তিনি মুখ ঢেকে রাখতে বলেন নি। বরং তিনি নারীর মুখমণ্ডল উন্মুক্ত রাখতে বলেছেন যেন তাদেরকে চেনা যায়। তিনি বলেন, হে নবী, আপনি আপনার পত্নী, কন্যা ও বিশ্বাসী নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদর (থেকে কিয়দংশ) নিজেদের দেহের উপর টেনে নেয়, যেন তাদেরকে চেনা যায়। এতে করে তাদেরকে কোন রকম উত্ত্যক্ত করা হবে না (সুরা আহযাব ৫৯)। মুখ ঢেকে রাখলে চেনা কঠিন হয়ে যাবে না কি?

প্রকৃতপক্ষে সমাজে নারী-পুরুষের শালীন সহাবস্থানকে উৎসাতি করতে ও সাবলীল করতে যে শিক্ষা প্রয়োজন তা বর্তমানে প্রচলিত ভারসাম্যহীন বিকৃত ধর্মগুলো দিতে পারছে না, কারণ সেগুলো কুক্ষিগত কূপমণ্ডূক কাঠমোল্লাদের হাতে আর তারা বিকৃত ইসলামটাকেই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ওয়াজ করে খেতে ব্যস্ত।
আমাদের কথিত আধুনিক শিক্ষিতরাও ইন্দ্রিয়বিলাসের সুবিধার জন্য নারীকে পণ্য বানাতে চাচ্ছে, প্রতিটি পণ্যের মোড়কে নারীদেহকে প্রদর্শন করা হচ্ছে, নাটকে-সিনেমায়, টিভিতে, অনলাইনে নারীদেহকেই আধুনিকতা, উদারতা, স্বাধীনতা, মুক্তি ইত্যাদি শ্রুতিমধুর শব্দের মায়াজালে জড়িয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এসব করে নারীর প্রচার বাড়লেও সম্মান কতটুকু বাড়ল সে প্রশ্ন কেউ করছে না। বস্তুত ধর্মব্যবসায়ী ও পাশ্চাত্য অশ্লীল সভ্যতার ফেরিওয়ালা শিক্ষিত শ্রেণি উভয়ের দ্বারা নারী হচ্ছে পুরুষের দুরভিসন্ধি, নারীত্বের অবমাননা ও সামাজিক অবিচারের শিকার।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...