মো. আবু ফাহাদ
“যদি তুমি হও অনুগত মোহাম্মদের
তবে আমি (আল্লাহ) হয়ে যাবো তোমার
এই জগৎ কী আর এমন বিষয়;
লওহো-কলম (ভাগ্যের বিধান) আমি দিয়ে দিব তোমায়।”
-জওয়াবে শিকওয়া, ড. মোহাম্মদ আল্লামা ইকবাল
প্রাকৃতিক নিয়মেই দশজন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মতামত, আদেশ নিষেধ একজন ব্যক্তি মেনে চলতে পারে না। কিন্তু একজনের মতামত, আদেশ দশজন সহজেই মেনে চলতে পারে। কোনো জাতি একজন সর্বাধিনায়কের কতৃর্ত্ব মেনে নিলে বা তার আনুগত্য করলে সে জাতি ঐ নেতার দ্বারা ঐক্যের শেকলে আবদ্ধ থাকে। তখন ঐ নেতার লক্ষ্যই হয়ে যায় তাদের লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য পালনের পথে তারা একে অপরকে ভ্রাতৃসম জ্ঞান করে। যে জাতি তার নেতার প্রতি যত বেশি আনুগত্যশীল, সে জাতি ততই শক্তিশালী। অন্তত ইতিহাস আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় সামান্য কিছু সংখ্যক ব্রিটিশ সৈন্য মুখোমুখী হয় বিশাল-সংখ্যক শত্রুসেনার। ফিল্ড কমান্ডার হেড কোয়ার্টারে অবস্থানরত তার উর্ধতন অফিসারদের এ সম্পর্কে অবহিত করেন। সেখান থেকে আদেশ আসে যে, এই সেনাবহরকে আক্রমণ করতে। একথা সবাই বুঝতে পেরেছিল যে, এ আদেশে ভুলক্রমে এসেছে। কারণ সামান্য সৈন্য নিয়ে এই বিশাল সেনাবহরকে আক্রমণ করার অর্থ হচ্ছে আত্মহত্যা। তবুও আদেশ অমান্য না করে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং মৃত্যুকে বরণ করে নিল। এই সুবিশাল ভারতবর্ষকে ব্রিটিশরা তাদের এমন আনুগত্যের কারণেই দীর্ঘ ২০০ বছর গোলাম বানিয়ে রাখতে পেরেছিল। এজন্যেই বলা হয়ে থাকে, ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের সূর্য অস্ত যায় না। এই আনুগত্য হতে পারে রাষ্ট্রীয় থেকে ব্যক্তিগত যে কোনো পর্যায়ে। নেতার আনুগত্য না থাকলে সে জাতির ঐক্য বিনষ্ট হয়ে যায় ও সে জাতি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে, যার অবশ্যম্ভাবী ফল হচ্ছে সে জাতি বিজাতির দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়। আনুগত্য ভঙ্গ করলে যুদ্ধেও সামরিক বিপর্যয় নেমে আসে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে ওহুদ যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মহানবী (স.) গিরিপথের পশ্চাৎ আক্রমণের সম্ভাবনা উপলব্ধি করে, সেখানে কিছু ধনুকধারী সৈন্য নিযুক্ত করেন এবং তাদেরকে আদেশ করা হয় যেন কোনো অবস্থাতেই তারা এ স্থান ত্যাগ না করে। এ ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেছিলেন যে, “যদি তোমরা দেখতে পাও যে, পাখি আমাদেরকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে তাহলেও তোমরা স্থান ত্যাগ করবে না। যদি দেখতে পাও যে, আমরা তাদেরকে পরাজিত ও দলিত-মথিত করে ফেলছি তবুও তোমরা স্থান ত্যাগ করবে না।” কিন্তু যুদ্ধের আশাতীত সাফল্য ও পৃষ্ঠপ্রদর্শনপূর্বক শত্রুদের পলায়ন দেখে তারা গনিমতের (যুদ্ধে বিজিত মালামাল) সম্পদ কুড়াতে সেখান থেকে সরে যায়। আর তখনই খালিদ বিন ওয়ালিদ পেছন থেকে আক্রমণ করে সম্পূর্ণ যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন। মুসলমানদের বিজয় পরাজয়ের দিকে ধাবিত হলো। এই কিছু লোকের আনুগত্য ভঙ্গে পুরো বাহিনীকে তার খেসারত দিতে হয়েছিল। এজন্যই আনুগত্যের এত মূল্য।
আমাদের দেশে এখন যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি চলছে, তা শুধুই বিভক্তির সৃষ্টি করেছে। জাতি আজ শত শত রাজনৈতিক দলে বিভক্ত। কোনো সাধারণ কর্তৃপক্ষ নেই, সবাই নিজ দলের স্বার্থরক্ষা করে চলছে। আজকে ইসলাম যদিও রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে তবুও মুসলিমদের অবস্থা একই, তারা হাজার হাজার ফেরকা-মাযহাবে বিভক্ত। কোনো সাধারণ নেতার আনুগত্য নেই। একদল আরেকদলকে কাফের ফতোয়া দেয়, ঝাঁপিয়ে পড়ে হামলা করে। আনুগত্যের অভাবেই আজকের এই প্রচলিত বিকৃত ইসলাম ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উভয়েই ব্যর্থ। আজকে সা¤্রাজ্যবাদীদের সা¤্রাজ্য বিস্তারের যে ধ্বংসাত্মক লীলা চলছে তাদের কুদৃষ্টি থেকে আমাদের দেশও মুক্ত নয়। এদেশ নিয়ে অতীতেও শকুনের দল ষড়যন্ত্র করেছে, বর্তমানেও করছে। এমতাবস্থায় এ জাতিকে একজন নেতার অধীনে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিঃশর্তভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তখনই জাতি মুক্তি পাবে।