হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

নামের আংশিক মিলের কারণে হয়রানি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন

ওবায়দুল হক বাদল:
মিডিয়া সন্ত্রাসের ফাঁদে পড়ে দেশের বহু জায়গায় নিরাপরাধ হেযবুত তওহীদের বহু সদস্যকে হিজবুত তাহরীরের সদস্য সন্দেহে গ্রেফতার করা হতো। শুরু হতো হয়রানি। অথচ দুটো সংগঠন সম্পূর্ণ আলাদা। দুটো দল যে সম্পূর্ণ আলাদা, প্রতিষ্ঠাতা আলাদা, কর্মসূচি আলাদা, নীতি-পদ্ধতি আলাদা এটা আদালতকে বোঝাতে বোঝাতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলে গেছে, বিনা অপরাধে কারাগারে বন্দী থাকতে হয়েছে হেযবুত তওহীদের নিরাপরাধ বহু সদস্যকে।

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ‘নামে নামে যমে টানে’। নামের মিলের কারণে কারো ভালো কাজের কোনো পুরস্কার হয়ত কেউ পায় না তবে মন্দ কাজের ভাগ কখনো কখনো ঘাড়ে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায়, একই এলাকার দুই ব্যক্তির নাম এক। কিন্তু তাদের আচার আচরণ, কর্মক্ষেত্র, পেশা, বংশ, স্বভাব-চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। একজন হয়ত ভয়ঙ্কর অপরাধী অন্যজন হয়ত ভদ্র, মার্জিত, নির্বিবাদী একজন মানুষ। একজনের নামে হয়ত থানায় একাধিক মামলা রয়েছে, হয়ত তিনি ফেরারি ফাঁসির আসামি অন্যজন হয়ত কখনো থানার বারান্দায়ও যান নি। থানার দারোগা ফেরারি আসামিকে খুঁজতে গিয়ে ঐ এলাকার নির্বিবাদী নিরপরাধ লোকটিকে যদি ধরে নিয়ে যান তাহলে বিষয়টি কেমন হবে? এমন ঘটনা যে ঘটে না তা কিন্তু না। এমন ঘটনাও ঘটে। তবে শুধু নামের কারণে বিভ্রান্ত হয়ে এভাবে একজন অপরাধীর পরিবর্তে নিরপরাধ কেউ সাজা খেটেছে এমন ঘটনা দেখা যায় না। ভুল বুঝতে পেরে নিরপরাধ ব্যক্তিটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এবং তার সাথে দ্বিতীয়বার আর এমন ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেনা। তবে নামের আংশিক মিলের কারণে কোনো ব্যক্তিকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে এমনটা দেখা যায় না।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নামের আংশিক মিলের কারণে বহু হয়রানির শিকার হতে হয়েছে এমন একটি ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে। এবং এই হয়রানি চক্রাকারে চলছে। হাজার বার ঘুরে-ফিরে একই ভুল হচ্ছে। ফ্যাসিবাদী আমলে একটি সংগঠনের সঙ্গে এরকম ঘটনা অনেকবার হয়েছে; ফ্যাসিস্টদের কাছ থেকে এধরনের আচরণ অস্বাভাবিক নয়। তবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশে এমনটা মোটেও কাম্য নয়।

এমনই একটি অভাগা, নিষ্পেষিত দল হল হেযবুত তওহীদ। শুধু অন্য একটি সংগঠনের নামের সাথে আংশিক মিলের কারণে কারাগার পর্যন্ত ঘুরে আসতে হয়েছে নিরাপরাধ সদস্যদের। আদালত বারবার এদের নিরাপরাধ সাক্ষ্য দিলেও অজানা কারণে স্থানীয় প্রশাসন বারবার একই ভুল করেছিল।

২৪’ এর গণঅভ্যুত্থানের পর প্রশাসনের কাছ থেকে ‘অজানা কারণে হওয়া’ এধরনের ভুল জনগণ প্রত্যাশা করে না।
বিষয়টা একটু খোলাসা করি। কারোরই অজানা নয়, ‘হিজবুত তাহরীর’ জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠিত একটি ইসলামিক দল। ২০০৯ সনে বাংলাদেশে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। এই দলটির সঙ্গে হেযবুত তওহীদের নামের আংশিক মিল থাকায় হেযবুত তওহীদকে প্রচণ্ড হয়রানির সম্মুখীন হতে হয় বিগত দিনে।

যেহেতু হেযবুত তওহীদ ইসলামের কথা বলে, তাই ফ্যাসিস্ট আমলে ইসলামভীতি প্রচারকারী মিডিয়া স্বভাবতই হেযবুত তওহীদকেও সন্দেহের বাণে বিদ্ধ করে আসছিল। আন্দোলন প্রতিষ্ঠার (১৯৯৫) কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা নানারকম অপপ্রচার আরম্ভ করে দেয়। আন্দোলনের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গি দলের সঙ্গে হেযবুত তওহীদকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে থাকে। ফলে মানুষের মনে অকারণ সন্দেহের জন্ম হয়, বিরাটসংখ্যক মানুষ হেযবুত তওহীদকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করে। যেখানে হেযবুত তওহীদের প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত হয় সেখানেই প্রচারকারী সদস্যদের উপর হামলা ও মামলা যুগপৎ চলতে থাকে। শত শত সন্দেহমূলক মামলা হতে থাকে যেগুলো সবই আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কিন্তু এরই মধ্যে আর্থিক ক্ষতি, আক্রান্তদের জীবিকা হারানো, মানহানি যা হওয়ার হয়ে যায়।

২০০৯ সনে ‘হিজবুত তাহরীর’ নিষিদ্ধ হওয়ার পর ইসলাম বিদ্বেষী গণমাধ্যমগুলো একটা মওকা পেয়ে যায়। তারা হেযবুত তওহীদের সঙ্গে হিজবুত তাহরীরকে মিলিয়ে মিশিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে থাকে। ‘হিজব’ শব্দের অর্থ দল। তাই আরবিতে যে কোনো দলের নামের মধ্যেই ‘হিজব’ শব্দটি থাকা সম্ভব। পবিত্র কোর’আনেও হিজবুল্লাহ (আল্লাহর দল), হিজবুশ শয়তান (শয়তানের দল) শব্দ দুটো আছে। হেযবুত তওহীদের সঙ্গে হিজবুত তাহরীরের নামের এই আংশিক মিলকে পুঁজি করে জনমনে ও প্রশাসনে ভীষণভাবে জলঘোলা করা হয়। অনেকেই মনে করতে থাকে, দুটো দল আসলে একই। এমনও সংবাদ প্রচার করে দেওয়া হয় যে নিষিদ্ধ হওয়ার পর হিজবুত তাহরীরের সদস্যরা গা ঢাকা দিতে হেযবুত তওহীদে যোগ দিচ্ছেন, বস্তুত যা ছিল সর্বাংশে মিথ্যা।

মিডিয়া সন্ত্রাসের ফাঁদে পড়ে দেশের বহু জায়গায় হেযবুত তওহীদের বহু সদস্যকে হিজবুত তাহরীরের সদস্য সন্দেহে গ্রেফতার করা হতে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে থানা থেকে উর্ধ্বতন পর্যায়ে খোঁজ খবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর ছেড়ে দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মামলা দায়ের হয়ে যায়। বিচার শুরু হয় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিসাবে। ফলে পুলিশী নির্যাতন, ব্রিটিশ প্রবর্তিত বিচার প্রক্রিয়ার হয়রানি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। দুটো দল যে সম্পূর্ণ আলাদা, প্রতিষ্ঠাতা আলাদা, কর্মসূচি আলাদা, নীতি-পদ্ধতি আলাদা এটা আদালতকে বোঝাতে বোঝাতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলে গেছে, বিনা অপরাধে কারাগারে বন্দী থাকতে হয়েছে বহু সদস্যকে। অথচ দুটো সংগঠন সম্পূর্ণ আলাদা। একটি ছকের মাধ্য সংগঠন দুটোর মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

দুটো দলের মধ্যে এমন বহু সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আমাদের সরকারি আমলারা, কর্মকর্তারা কেবল সত্য উদ্ঘাটনে বা তথ্য সংগ্রহে অলসতা করে হেযবুত তওহীদকে হিজবুত তাহরীর ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন কামরায় বসে থাকা শিক্ষিত শ্রেণিটির দ্বারা এতটাই নির্বুদ্ধিতার চর্চা আমাদের দেশে হয়েছে যা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর মনে হতে পারে। অবশেষে যখন হেযবুত তওহীদ দেশজুড়ে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, অপরাজনীতি, ধর্মের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ অনুষ্ঠান করতে লাগলো, পত্রিকা প্রকাশ ও প্রচার করতে লাগল তখন মানুষের মন থেকে সেই অপপ্রচারের প্রভাব কেটে যেতে লাগল। তবু এখনও বহু মানুষের মনে এ বিষয়ে অপপ্রচারের ধোঁয়াশা থেকে যাওয়া অসম্ভব নয়। সে কারণেই এই লেখার অবতারণা।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...