সালাহ (নামাজ) হোল উম্মতে মোহাম্মদীর চরিত্র গঠনের ছাঁচ। যে মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে উম্মতে মোহাম্মদী নিজেদেরকে কঠিন সংগ্রামে আত্মনিয়োগ কোরবে সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন কোরতে হোলে যথাযথ চরিত্রেরও প্রয়োজন আছে। সেই চরিত্র অর্জনের প্রশিক্ষণই হোল সালাহ (নামাজ)। সালাহই জাতিকে ঐক্য, শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের অনুপম শিক্ষা দেয়। তবে সালাহর উপকারিতা বর্ণনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার আজকের আলোচ্য বিষয় হোল- মো’মেনরা সালাহ (নামাজ) কায়েম কোরবে কার পেছনে তা নিরূপন করা। এটা বুঝে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
একজন এমাম (নেতা) ছাড়া সালাহ (নামাজ) হয় না। সালাতে একজন এমামের পেছনে ঐক্যবদ্ধভাবে রুকু, সাজদা, এতেদাল কোরতে হয় অর্থাৎ এমামের অনুসরণ কোরতে হয়। এমাম রুকুতে গেলে মুসল্লিকেও বাধ্যতামূলকভাবে রুকুতে যেতে হয়, এমাম সেজদা কোরলে মুসল্লিদেরও সেজদা কোরতে হয়। কেউ এমামের অনুসরণ না কোরলে তার সালাহ পণ্ড হোয়ে যায়। অর্থাৎ স¤পূর্ণ সালাহ চলাকালীন সময়ে মুসল্লি এমামের অনুসরণ করেন। এখান থেকে মুসল্লিরা আনুগত্যের শিক্ষা গ্রহণ করেন। বাস্তব জীবনেও যাতে এমাম বা নেতা (যার অধীনে সালাহ কায়েম করা হোল) যে আদেশ দেন তার অবাধ্যতা না কোরে এমামের প্রতিটি হুকুমের আনুগত্য কোরতে পারেন তার শিক্ষা গ্রহণ করেন। এখন প্রশ্ন হোল- যে এমামের নেতৃত্বে সালাহ কায়েম করা হোল তিনি কি আসলেই অনুসৃত হবার যোগ্যতা রাখেন? প্রশ্নটি আরেকটু পরিষ্কার করা দরকার। সালাহতে আমরা যার আনুগত্য কোরব, বাস্তব জীবনে যে মানুষটির নির্দেশ মেনে চোলতে চেষ্টা কোরব সেই মানুষটির চরিত্র কেমন হওয়া দরকার? অবশ্যই তাকে হোতে হবে শান্তির দূত। তিনি চাইবেন সমাজে যাতে কোন হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি এক কথায় অনৈক্য না থাকে। ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে মানুষ একসাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস কোরতে পারে। তিনি কোনো বিভক্তিকে প্রশ্রয় দেবেন না। তিনি কোনো পার্থিব স্বার্থের বশবর্তী হোয়ে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত কোরবেন না। সবচেয়ে বড় কথা হোল, তিনি তার কাজের কোন বিনিময় নেবেন না। তিনি সালাহর (নামাজের) এমামতি কোরবেন জাতি গঠনের মহান ব্রত নিয়ে, এর বিনিময় তিনি একমাত্র স্রষ্টার কাছেই পাওয়ার আশা কোরবেন। মহান রব্বুল আলামিনও মোমেনদেরকে কেমন নেতার (এমামের) অনুসরণ কোরতে হবে তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বোলেছেন- অনুসরণ কর তাদের (এমাম) যারা বিনিময় চায় না এবং সঠিক পথপ্রাপ্ত (কোর’আন-সুরা আল ইয়াসীন-২১)।
এবারে আসা যাক উপরোক্ত আয়াতের আলোকে আমাদের বর্তমান সমাজে। যারা দীনের বিনিময় গ্রহণ করে তাদের অনুসরণ কোরতে আল্লাহ নিষেধ কোরেছেন। সে ক্ষেত্রে যারা নামাজ পড়িয়ে, মিলাদ পড়িয়ে, ওয়াজ কোরে ইত্যাদিভাবে অর্থ উপার্জন কোরছে তাদের অনুসরণ করা এবং তাদের এমামতিতে সালাহ কায়েম করা কতটুকু যৌক্তিক? শুধু যে যৌক্তিক নয় তাই নয়, সেটা হবে সরাসরি আল্লাহর হুকুমের বরখেলাপ। অথচ এখন সেটাই করা হোচ্ছে। প্রকৃত ইসলামের যুগে রসুলাল্লাহর সময় এবং তৎপরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদুনের সময় কেউ নামাজ পড়িয়ে বা অন্যান্য দীনের কাজ কোরে বিনিময় নিয়েছেন এমন নজির কেউ দেখাতে পারবেন না। এর কোন পার্থিব বিনিময় হয় না। এর বিনিময় (পুরস্কার) আছে স্রষ্টার কাছে। তবে তার জন্য পৃথিবীতে এই কাজ হোতে হবে সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে। যারা পার্থিব স্বার্থ আদায় কোরবে তাদের অনুসরণ কোরতে আল্লাহই নিষেধ কোরেছেন। কিন্তু আল্লাহর স্পষ্ট নিষেধবাণী সত্ত্বেও আজকে মোসলেম নামধারী জাতিটি ধর্মের বিনিময় গ্রহণকারীর অনুসরণ কোরছে। তাদের পেছনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাহ কায়েম কোরছে, জুমা পড়ছে, তারাবীহ পড়ছে। এটা সরাসরি আল্লাহর হুকুম অমান্য করা।
আবার আল্লাহ যে সঠিক পথপ্রাপ্তদের (হেদায়াহপ্রাপ্ত) অনুসরণ কোরতে নির্দেশ দিয়েছেন তারও বরখেলাপ হোচ্ছে। ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা-মাওলানারা মোটেও সঠিকপথের পথিক নয়। শুধু তাই নয়, তারাই মানুষকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত কোরে রেখেছে তাদের ব্যক্তিস্বার্থের খাতিরে। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধা করে, তাদেরকে নবীর উত্তরসূরি হিসেবে জ্ঞান করে। আর এই সুযোগে তারা এই মানুষগুলোকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করছে। সাধারণ মানুষকে ওয়াজ কোরে, বক্তৃতা দিয়ে উত্তেজিত কোরে তাদেরকে হানাহানি, রক্তপাত ও নৈরাজ্যের পথে ধাবিত কোরছে।
তাদের এই ভুলগুলোই ধরিয়ে দিয়ে যামানার এমাম, এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী তাদেরকে সত্য পথের দিকে আহ্বান করেন। কিন্তু এতে তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে। তারা ধর্মব্যবসা বিলুপ্ত হবার আশঙ্কা থেকে এমামুযযামান ও তাঁর অনুসারীদের বিরোধিতা শুরু করে। তাঁকে খ্রিস্টান, কাফের, নাস্তিক আখ্যা দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সাধারণ সানুষকে উত্তেজিত কোরে তোলে। অর্থাৎ, এই ধর্মব্যবাসায়ী শ্রেণিটির ধর্মব্যবসা পরিত্যাগ করার কোন মানসিকতাই নেই। সুতরাং এদের অনুসরণ করা এবং এদের পেছনে নামাজ পড়া কোন যুক্তিতেই টিকে না।
আর তাই এমামুযযামানের অনুসারী হেযবুত তওহীদের মো’মেন মোজাহেদ-মোজাহেদারা প্রচলিত মসজিদে গিয়ে অন্যান্যদের মতো ধর্মব্যবসায়ী মোল্লাদের পেছনে সালাহ কায়েম করেন না। তারা পাঁচ ওয়াক্ত সালাহ, জুমার সালাহ, তারাবীহর সালাহ ও ঈদের সালাহ পড়েন নিজেরা নিজেরা জামায়াতবদ্ধ হোয়ে। জুমার সালাতে পুরুষদের পেছনে নারীরাও অংশগ্রহণ করেন। যিনি এমামতি করেন তিনি কোন পার্থিব স্বার্থের জন্য করেন না, বরং তিনি একটি ঐক্যবদ্ধ, সুশৃঙ্খল ও আনুগত্যশীল জাতি গঠনের লক্ষ্যেই এমামতি করেন, খুতবা দেন। যামানার এমামের অনুসারীদের জুমা ধর্মব্যবসায়ীদের মতো প্রাণহীন নয়, প্রাণোচ্ছল জুমা। সে জুমায় সকল স্তরের মানুষ অংশগ্রহণ কোরতে পারেন। ১৩০০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর সেই জুমা, সেই সালাহ আবার শুরু হোয়েছে। আসুন, আমরা ধর্মব্যবসায়ীদের প্রত্যাখ্যান কোরি এবং তাদের আনুগত্য না কোরি কারণ, যারা বিনিময় নেয় তাদের আনুগত্য করা আল্লাহর সরাসরি নিষেধ (সুরা আল ইয়াসীন-২১)।