সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাকে তুলে ধরে জনসাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে নাটোরে এক বিশাল কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকাল ৫ টায় মানবতার কল্যাণে নিবেদিত আন্দোলন হেযবুত তওহীদ নাটোর জেলা শাখার উদ্যোগে এ কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌর সদরের দিয়ার পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সভার আয়োজন করা হয়।
হেযবুত তওহীদের বনপাড়া উপজেলা সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসাইন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুয্যামান, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা অনার্স কলেজের প্রভাষক শ্রী গোপাল চন্দ্র দাস, বাড়াইগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান (মাসুদ), বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্রী প্রদীপ কুমার পাল।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অত্র অঞ্চলের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এলাকার সাধারণ মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। সভায় উপস্থিত আপামর জনতা হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমামের বক্তব্যের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে বহু মানুষ হেযবুত তওহীদের এমামের সাথে করমর্দন করেন। এ সময় অনেককেই আবেগাপ্লুত হয়ে হেযবুত তওহীদের এমামের সাথে তাদের অনুভুতি প্রকাশ করতে দেখা যায়। সত্যের সন্ধান লাভে তাদের চোখে-মুখে এ সময় ফুটে ওঠে প্রশান্তির আভা। অনেকের দু-চোখ বেয়ে ঝরতে দেখা যায় অশ্রæ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সবক’টি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাসহ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনসচেতনামূলক প্রচারকাজ করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। জঙ্গিবাদকে ইস্যু করে বিশ্ব পরাশক্তিগুলো গত কয়েক বছর ধরে একটির পর একটি মুসলিম দেশকে ধ্বংস করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এর ধারাবাহিকতায় তারা এখন বাংলাদেশকে নিয়েও একই ষড়যন্ত্র করছে। এমতাবস্থায় দেশকে নিরাপদ রাখতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, অপরাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অপরিহার্য। হেযবুত তওহীদ দেশের কোটি মানুষের মাঝে জাতিগত ঐক্য সৃষ্টির জন্য নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই কার্যক্রমেরই অংশ হিসেবে উক্ত সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হেযবুত তওহীদের এমাম বলেন বর্তমান সময় অত্যন্ত ভয়াবহ। মানুষ অন্য সৃষ্টির মতো নয়, আল্লাহ তার মধ্যে অসম্ভব চিন্তাশক্তি দান করেছেন, কাজেই এই সময় নিয়ে মানুষকে ভাবতে হবে, চিন্তা করতে হবে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত বিশ্বের বহু দেশ, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো। এখন আমাদেরকে এটা নিয়ে ভাবতে হবে, সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। অন্যথায় ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ মানুষের ঈমানকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে দেশে সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটাতেই থাকবে। ফলে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমিকেও ইরাক-সিরিয়ার মতো করুণ পরিণতি বরণ করতে হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন একটি সঠিক আদর্শের। এই সঠিক আদর্শটি হেযবুত তওহীদের কাছে আছে।
তিনি আরো বলেন, এই ভয়ঙ্কর সঙ্কট থেকে আমাদেরকে রক্ষা করতে পারেন একমাত্র আল্লাহ। এই সঙ্কটে পড়ে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া ইত্যাদি দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে, এখন যদি বাংলাদেশকে এই সঙ্কট থেকে বাঁচাতে হয় তবে একমাত্র উপায় হচ্ছে মো’মেন হওয়া। কারণ মো’মেনের সাথে আল্লাহর ওয়াদা, তিনি মো’মেনদের রক্ষা করবেন, তিনি মো’মেনদের অভিভাবক। আর এই মো’মেন হতে হলে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যায় যে-ই করুক তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে ইসলামের নামে আমাদের সমাজে বহু অনৈসলামিক কার্যক্রম চলছে। এগুলো আল্লাহ রসুলের ইসলাম নয়। তিনি প্রকৃত ইসলাম ও বিকৃত ইসলামের রূপ তুলে ধরে বলেন, প্রকৃত ইসলাম মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, শত্রæকে ভাই বানিয়েছিল, আরবের অবজ্ঞাত, উপেক্ষিত, অশিক্ষিত একটা জাতিকে শ্রেষ্ঠ জাতি, শিক্ষকের জাতিতে পরিণত করেছিল। আর বর্তমানের বিকৃত ইসলাম মানুষের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে, একজাতিকে হাজার হাজার ফেরকা, মাজহাব, দল-উপদলে ভাগ করে পরস্পর শত্রæতে পরিণত করে।
তিনি বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতি, মুসলিম জাতির করুণ দুর্দশার চিত্র, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরে বলেন, জঙ্গিবাদের উৎপত্তি কীভাবে হলো? কীভাবে বিশ্ব পরাশক্তিগুলো মুসলমানদের ঈমানকে কিছু ভাড়াটে আলেমদের মাধ্যমে হাইজ্যাক করে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করল? এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকে জানতে হবে। তিনি হেযবুত তওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, মানবজাতির মধ্য থেকে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, অনৈক্য, ভেদাভেদ দূর করে শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য রসুলাল্লাহ (সা.) এর প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা তুলে ধরে মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। এটা করার জন্য হেযবুত তওহীদের সদস্যরা তাদের জীবন ও সম্পদ মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করে যাচ্ছেন। এই কাজের পুরস্কার তারা মহান আল্লাহর নিকট আশা করেন, তারা এর বিনিময়ে পার্থিব কোনো স্বার্থ আশা করেন না। তাদের কোরবানীর বিনিময়েই হেযবুত তওহীদ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে। কাজেই হেযবুত তওহীদের কোনো আর্থিক ও রাজনীতিক স্বার্থ নেই। তিনি হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অপপ্রচারের জবাব দেন, হেযবুত তওহীদের বৈধতার দলিলপত্র উপস্থাপন করেন এবং হেযবুত তওহীদ যে গত ২২ বছরে একটিও আইন ভঙ্গ করে নি তার স্বপক্ষে আদালতের রায়ের শত শত কপি সকলের সামনে উপস্থাপন করেন।
দেশবাসীর প্রতি তিনি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান করে বলেন, ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রচারিত ধর্মের অপব্যাখ্যা থেকে বের হয়ে আমাদের ধর্মের প্রকৃত চেতনা দ্বারা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে মো. আব্দুস সবুর খাঁনের সঞ্চালনায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন বিশিষ্ট আলেম মো. মেহেদী হাসান সাগর।