খ্রিস্ট ধর্ম মানুষের জাতীয় জীবনে শান্তি আনতে ব্যর্থ হওয়ার ফলশ্র“তিতে সংঘটিত রেনেসাঁর পর থেকে স্রষ্টার অস্তিত্বে অবিশ্বাস বা সন্দেহ করা ইউরোপ-প্রভাবিত শিক্ষিত সমাজের একটি ফ্যাশনে রূপ নিয়েছে। আধুনিকতা আর ধর্মকে বিদ্রুপ করা যেন সমার্থক হোয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই নিজেকে নাস্তিক হিসাবে প্রচার কোরতে গর্বিত বোধ করেন, তবে তার মানে এই নয় যে তারা সত্যিই নাস্তিক হোতে পেরেছেন। নাস্তিকতার রকমফের আছে যেমন ডগমাটিক বা গোঁড়া নাস্তিক, স্কেপটিক্যাল বা সংশয়বাদী নাস্তিক, ক্রিটিক্যাল বা সমালোচনামূলক নাস্তিক, প্র্যাকটিক্যাল বা বাস্তবমুখী নাস্তিক, অ্যাগনোস্টিক বা অজ্ঞেয়বাদী, ডায়ালেক্টিকেল বা দ্বান্দ্বিক নাস্তিক, সেমান্টিকেল, মার্কসিসটিক, মনস্তাত্ত্বিক ইত্যাদি ইত্যাদি। সন্দেহবাদীদের ভিড়ে প্রকৃত নাস্তিক খুঁজে পাওয়া খুবই দুরূহ। তাদের লক্ষণ সম্পর্কে সংক্ষেপে শুধু এটুকু বোলতে পারি, যারা প্রকৃতই নাস্তিক তারা নিজ জন্মদাত্রী জননীর সঙ্গে শারীরীক সম্পর্ক স্থাপন কোরতেও কোনো আত্মগ্লানী অনুভব কোরবেন না। কারণ ওই কাজ কোরতে ধর্মের নিষেধাজ্ঞা আছে, গণতন্ত্রে বা সমাজতন্ত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, আর প্রকৃত নাস্তিকরা ধর্মকে তথা ঈশ্বরকে বিশ্বাসই করেন না।
যারা প্র্যাকটিক্যাল নাস্তিক তাদের অভিমত হোল আল্লাহ থাকা বা না থাকায় মানুষের কিছু নেই। আল্লাহ ছাড়াও মানুষ চলতে সক্ষম, সবচেয়ে বড় ধর্ম মানবধর্ম- যার সঙ্গে ঈশ্বরের কোন সম্পর্ক না থাকলেও চোলবে। এরাই ধর্মের সব বিধিব্যবস্থাকে তুলে দিয়ে নিজেদের মনগড়া বিধান দিয়ে মানবসমাজ পরিচালনা কোরতে চান। আজকের যে বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে আমরা বসবাস কোরছি সেটা মূলত এই প্রকার নাস্তিকতা থেকেই উৎসারিত ধর্মনিরপেক্ষতা।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা জীবনের সকল অঙ্গনকে ধর্মের প্রভাবমুক্ত কোরতে চায়। তারা কি কখনো ভেবে দেখেছে যে সমাজের হতদরিদ্র মানুষগুলির জীবনযাপনের কথা যারা নিজেরা অধিক অর্থ উপার্জনে সক্ষম নয় এবং যারা অচল? সমাজের একটি বিরাট অংশের মানুষ অন্যের দানের উপর নির্ভরশীল। দরিদ্রকে অর্থ দান সকল ধর্মের শিক্ষা, মহামানব তথা নবী-রসুল-অবতারদের শিক্ষা। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নির্বিশেষে সকল ধর্মমনা ব্যক্তিই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কম বেশি অর্থ দান কোরে থাকে। তারা এই দান করে প্রধানত মানবসেবা এবং পরকালীন মুক্তির আশায়। নাস্তিকদের প্রতি আমাদের কথা হলো, এই যে তারা ধর্মকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, স্রষ্টা ও পরকালের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে, তাহোলে এই অভাবগ্রস্ত, আশ্রয়হীন, অন্নহীন বস্ত্রহীনদেরকে তারা কী কোরবে? তারা কি পারবে রাষ্ট্রব্যবস্থার মাধ্যমে এই কোটি কোটি মানুষকে বহন কোরতে? এই যে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা আজ কায়েম করা হোয়েছে তা দিন দিন মানুষকে আত্মাহীন পশুতে পরিণত কোরে ফেলছে, উপার্জনে অক্ষম বৃদ্ধ পিতাকে, বৃদ্ধা মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হোচ্ছে, অনাত্মীয় দরিদ্র মানুষকে দয়া করার তো প্রশ্নই আসে না। বেশি দিন হয় নি সমাজের মধ্যে কিছু দানশীল লোক থাকতেন যারা নিজের অর্থে সমাজের মানুষের জন্য বহু শিক্ষালয়, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, সরাইখানা, দাতব্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কোরে দিতেন। হাজী মোহাম্মদ মোহসীন, রণদা প্রসাদ সাহার নাম আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ধনীরা দান কোরবে এটাই ছিল স্বাভাবিক, অথচ পশ্চিমা বস্তুবাদী সভ্যতা মানুষকে এমন পুঁজিবাদী কৃপণে পরিণত কোরছে যে, যে যত ধনী সেই ততো অর্থ-কাঙাল। দান তো দূরের কথা। তারা যদি কোন হাসপাতাল বা স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন তার পেছনেও থাকে অর্থলিপ্সা। দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ার চিন্তা এখন আর তাদের চিন্তা-চেতনায় উদয় হয় না। অথচ একেই বলা হোচ্ছে কল্যাণ রাষ্ট্র, কী বিদ্রুপ। এই কল্যাণ রাষ্ট্র কি পারবে সব দরিদ্র মানুষকে একদিনের আহার যোগাতে? পারবে না। অথচ মানুষ ধর্ম দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে পরকালের মুক্তির আশায় দান কোরে এই কোটি কোটি মানুষকে দান-খয়রাতের মাধ্যমে প্রতিপালন কোরে যাচ্ছে। এই অভাবী মানুষকে একদিন খাওয়ানোর তো সাধ্য নেই তার উপর পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রভাবে মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ভারসাম্যহীনতা দিন দিন চূড়ান্ত আকার নিচ্ছে। এক জায়গায় কিছু মানুষ পাহাড়সমান সম্পদের মালিকে পরিণত হোচ্ছে, আরেক জায়গায় মানুষ না খেয়ে মরছে। এটা সৃষ্টি কোরেছে বস্তুবাদ, ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা। এটা পাশ্চাত্য সভ্যতার সৃষ্টি। ধর্মের কারণেই প্রতিদিন কোনো রকমে এই দরিদ্র মানুষের অন্নসংস্থান হোচ্ছে, সমাজটা এখনো মরতে মরতে টিকে আছে। তা না হোলে তো মানুষের গোশত আজ মানুষ খেতো।