হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ধর্মব্যবসা কী এবং এর উৎপত্তি কিভাবে?

মোহাম্মদ আসাদ আলী

ধর্মব্যবসা:
আমাদের সমাজে বহু পন্থায় ধর্মকে পুঁজি করে স্বার্থ হাসিল করা হয়। নামাজ পড়িয়ে, কোর’আন খতম দিয়ে, মিলাদ পড়িয়ে, জানাজা পড়িয়ে, খোতবা-ওয়াজ করে, পরকালে মুক্তিদানের জন্য জান্নাতের ওসিলা সেজে কথিত আলেম, মোল্লা-মাওলানারা অর্থ উপার্জন করে। আবার অনেকে ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মোকাবেলা করে। এই সবগুলোই ধর্মব্যবসা। ধর্মের কাজের কোনো পার্থিব বিনিময় হয় না, এর বিনিময় বা পুরস্কার কেবল আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিন্তু যখনই তার মূল্য নির্ধারণ করা হয় বা স্বার্থের লোভে ধর্মের আশ্রয় গ্রহণ করা হয় তখন আর সেটা ধর্মকর্ম থাকে না, সেটা হয়ে যায় ধর্মব্যবসা, যা সকল ধর্মে নিষিদ্ধ।
ধর্মব্যবসার উৎপত্তি:
মানুষের ইতিহাস সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের চিরন্তন দ্বন্দ্বের ইতিহাস। এই দ্বন্দ্বে কখনও কখনও সত্য জয়ী হয়েছে আবার কখনও হয়েছে বিপর্যস্ত। সকল সত্যের উৎস হচ্ছেন মহান আল্লাহ, তাঁর পক্ষ থেকেই মানুষ যুগে যুগে সত্য লাভ করেছে। আদম (আ:) থেকে শুরু করে আখেরী নবী মোহাম্মদ (দ:) পর্যন্ত পৃথিবীর প্রতিটি জনপদে, প্রতিটি সমাজে আল্লাহ সত্যদীনসহ তাঁর নবী, রসুল, অবতার প্রেরণ করেছেন। তাদের মাধ্যমেই সত্য এসেছে, সত্য জয়ী হয়েছে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কিন্তু এই মহামানবদের অন্তর্ধানের কিছুকাল পর থেকে ক্রমেই তাদের আনিত দীনে বিকৃতি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। মানুষের মধ্যে স্বার্থচিন্তার বিস্তার ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক বিকৃতি এসেছে নেতৃত্ব পর্যায়ে। লোভ-লালসা, অহংকার, ভোগ-বিলাসিতার মোহ শাসকদেরকে খুব সহজেই অধর্মের পথে চালিত করেছে। কিন্তু অধর্মের শরণাগত হলেও শাসকরা এটা ভালো করেই জানতো যে, সমাজ তাদের অধর্ম মানবে না। যে কোনো সময় ধর্মপ্রাণ সাধারণ জনতা অধর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। এমন সময় শাসকদের প্রয়োজন পড়েছে এমন একটি ধর্মজ্ঞ শ্রেণির যারা শাসকদের পক্ষ থেকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে, শাসকের অন্যায় কর্মকে ধর্মের আলোকে ফতোয়া দিয়ে সঠিক প্রমাণ করবে, অর্থাৎ এক প্রকার দালাল শ্রেণির। অবশ্যই ধর্মের ব্যাপারে তাদের পাণ্ডিত্য থাকতে হবে সর্বজনবিদিত। কারণ, সমাজ কেবল তার কথাই বিশ্বাস করবে, শুনবে ও মানবে যারা ধর্মের জ্ঞান রাখে, ধর্মীয় কেতাব যাদের মুখস্থ। ইতিহাস এটাই বলছে যে, এই দালাল শ্রেণি খুঁজে বের করতে অধার্মিক শাসকদের তেমন বেগ পেতে হয় নি। কারণ আগেই বলে এসেছি তখন মানুষের মধ্যে একটু-আধটু স্বার্থচিন্তা প্রবেশ করে ফেলেছে। আর যেখানে স্বার্থের চিন্তা থাকে, সেখানে অধর্মের পথে কোনো বাধাই টেকে না, শাসকের বিপুল ধনরাশি, মান-সম্মান আর ক্ষমতার প্রলোভনের সামনে তো নয়ই। এভাবেই প্রায় সকল ধর্মের অনুসারীদের মধ্য হতে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণির উৎপত্তি ঘটেছে, ধর্মব্যবসা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...