পাঠকের প্রতি অনুরোধ, পুরো নিবন্ধটি স্থির মনযোগসহকারে পাঠ না কোরে কোন রকম সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন না। কয়েকটি মৌলিক বিষয় আপনাকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, ইসলামের যে কোন আমলের দলিল হোচ্ছে কোর’আন এবং রসুলের সুন্নাহ। রসুলাল্লাহর ওফাতের পর থেকে গত ১৪০০ বছরে ইসলামে মধ্যে বহু কিছু প্রবেশ কোরেছে যাকে বলা হয় বেদাত।
তাই একটা কথা সকলের মনে রাখা উচিৎ যে, “এতদিন ধোরে এত কোটি কোটি লোকে একটা কাজকে এবাদত মনে কোরে পালন কোরে আসছে, অমুক মসজিদের এমাম সাহেব বোলেছেন, অমুক মোফাসসের, ফকীহ, আল্লামা, বুজুর্গানে দীন এই আমল করেন” ইত্যাদি কথাগুলি ইসলামের কোন দলিল নয়। বরং সকলের দেখা দরকার বিষয়টি কোর’আনে আল্লাহ বোলেছেন কিনা এবং সে মোতাবেক আল্লাহর রসুল কোরেছেন কিনা। এটাই হোল ইসলামের আওতা। এর পরে আসে কোন আমলের কতটুকু গুরুত্ব। আপনার শরীরের সকল অঙ্গের গুরুত্ব কি সমান? আপনার হাতের নখের, চোখের ভ্রুর যা গুরুত্ব আপনার হৃদপিণ্ডেরও কি তা-ই গুরুত্ব? নিশ্চয়ই নয়। তেমনি দীনের বিষয়গুলির মধ্যেও গুরুত্বের বিস্তর তারতম্য রোয়েছে। যে বিষয়গুলি দীনের অত্যাবশ্যকীয় অংশ সেগুলি কোর’আনে আল্লাহ হুকুম দিয়েছেন। সেই হুকুমগুলির বাস্তবায়ন কিভাবে হবে তা রসুলাল্লাহ হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। এই শিক্ষাগুলিই হোচ্ছে রসুলের সুন্নাহ। আমাদের আলোচ্য বিষয় হোচ্ছে ধর্মব্যবসা। এই ধর্মব্যবসার অন্যতম মাধ্যম হোল নামাজ পড়িয়ে টাকা নেওয়া। শুধুমাত্র টাকা আয় করার জন্যই ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা শ্রেণি অনেক কিছুরই উদ্ভব ঘোটিয়েছে যার মধ্যে মিলাদ পড়ানো, ওয়াজ-মাহফিল, ওরশ, মাজারে গিয়ে নানা কারণে সাদকা (মাজার ব্যবসাও এক প্রকার ধর্মব্যবসা), এছাড়াও রোয়েছে রমজান মাসে তারাবির সালাহ (নামাজ)। কিন্তু সত্য হোচ্ছে, এই তারাবির সালাহসহ (নামাজ) এই কাজগুলির হুকুম আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে কোথাও দেন নি, আল্লাহর রসুলও তাঁর আসহাবদেরকে জীবনে একবারও পড়তে বোলেছেন বোলে কোন দলিল নেই। অথচ এই কাজগুলিকে ধর্মব্যসার স্বার্থে ধর্মব্যবসায়ীগণ এত অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন, মনে হয় যেন এগুলি ইসলামের অপরিহার্য বিষয়, এগুলি না কোরলে মোসলেমই থাকা দায়। আসল কথা হোচ্ছে এই ধর্মব্যবসায়ীগণ সেইসব আমলকেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোরে তুলেছেন যেগুলি নিরাপদ এবং যেগুলির মাধ্যমে ধর্মবাণিজ্য চালানো যায়। আমরা বোলি না যে, তারাবি পড়াসহ উপরোক্ত কাজগুলি অনুচিৎ। আমাদের প্রশ্ন হোল, আল্লাহ যে কাজগুলি ফরদ কোরেছেন, সেগুলি যারা পরিত্যাগ কোরেছেন তাদের নফল এবাদত আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে কি না? একটি উদাহরণ দেই: আল্লাহ কোর’আনে সওম ফরদ হওয়ার কথা উল্লেখ কোরেছেন মাত্র একবার আর সওম পালনের নিয়ম কানুন উল্লেখ কোরেছে আর দুই/তিনটি আয়াতে, আর জেহাদ ও কেতাল (সংগ্রাম) ফরদ হওয়ার কথা বলা হোয়েছে বহুবার আর এর বিবরণ দেওয়া হোয়েছে প্রায় সাতশ’র মতো আয়াতে। জেহাদ-কেতাল সংক্রান্ত সব আয়াত একত্র কোরলে আট পারার মতো হোয়ে যায়। মো’মেনের সংজ্ঞার মধ্যেও আল্লাহ জেহাদকে অন্তর্ভুক্ত কোরে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘মো’মেন শুধুমাত্র তারাই যারা আল্লাহ ও রসুলের প্রতি ঈমান আনার পর আর সন্দেহ পোষণ করে না এবং সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে (সূরা হুজরাত ১৫)।’ এ সংজ্ঞাতে আল্লাহ সওমকে অন্তর্ভুক্ত করেন নাই, জেহাদকে কোরেছেন। শুধু তাই নয়, সওম পালন না কোরলে কেউ ইসলাম থেকে বহিষ্কার এ কথা আল্লাহ কোথাও বলেন নি, কিন্তু জেহাদ না কোরলে আল্লাহ কঠিন শাস্তি দিবেন এবং পুরো জাতিকে অন্য জাতির গোলামে পরিণত কোরবেন (সূরা তওবা ৩৯)। আরও নির্দিষ্টভাবে বোলতে গেলে, জেহাদ ছাড়া ইসলামের এমন কোন আমল নেই যা বাদ দিলে “ইসলাম থেকে বহিঃষ্কার” এমন কথা আল্লাহ কোথাও বলেন নি।
আল্লাহ বোলেছেন, ‘কুতিবা আলাইকুমুল কেতাল- তোমাদের জন্য কেতাল (সংগ্রাম) ফরদ করা হোল (সূরা বাকারা ২২৬, ২৪৬, সূরা নেসা ৭৭)। ঠিক একই শব্দমালা ব্যবহার কোরে আল্লাহ সওমকেও ফরদ কোরেছেন- কুতিবা আলাইকুম সিয়াম (সূরা বাকারা ১৮৩)। একেবারে শব্দে শব্দে এক, কেবল এক স্থানে বলা হোয়েছে কেতাল, আরেক স্থানে সিয়াম। আল্লাহ যে বিষয়টি একবার মাত্র করার হুকুম দিলেও সেটা অবশ্যই ফরদ ও গুরুত্বপূর্ণ কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হোচ্ছে যে বিষয়টি একইভাবে ফরদ করা হোল এবং যেই কাজের বিষয়ে শত শতবার বলা হোল (জেহাদ ও কেতাল) এবং যেটি মহানবী এবং তাঁর আসহাবরা সারাজীবন ধোরে কোরলেন সেটির গুরুত্ব আর দুই তিনটি আয়াতে যে বিষয়টি বলা হোল (সওম) এই উভয় কাজের গুরুত্ব কি সমান? নিশ্চয়ই নয়। মহান আল্লাহ কোর’আনে শত শতবার জেহাদ কেতাল সম্পর্কে বলার পরও এ প্রসঙ্গে কেউ একটি শব্দও উচ্চারণ করেন না। মিডিয়াতে তো প্রশ্নই ওঠে না, এমন কি যে এমাম সাহেব মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে সিয়ামের ফজিলত নিয়ে সুরেলা ওয়াজে শ্রোতাদের মোহিত করেন, তিনিও ভুলেও জেহাদের নাম উচ্চারণ করেন না।
এর কারণ কি? এর কারণ সওম অতি নিরাপদ একটি আমল যা কোরলে সুঁইয়ের খোঁচাও লাগার আশঙ্কা নেই। এতে জীবনের ঝুঁকি নেই, আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ারও সম্ভাবনা নেই, কোন কোরবানিরও প্রশ্ন নেই। পক্ষান্তরে জেহাদ এমন একটি কাজ যা কোরতে গেলে জীবন ও সম্পদের সম্পূর্ণ কোরবানি প্রয়োজন।
ইসলামের সকল প্রকার আমলের পূর্বশর্ত হোচ্ছে আল্লাহর তওহীদের প্রতি ঈমান। এই তওহীদ হোচ্ছে- লা এলাহা এল্লা আল্লাহ, অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোন সার্বভৌমত্বের মালিক বা হুকুমদাতা নেই। বর্তমানে ১৬০ কোটির মোসলেম নামক জাতিটি তাদের সার্বিক জীবনে আল্লাহর দেওয়া বিধানগুলিকে প্রত্যাখ্যান কোরে দাজ্জাল অর্থাৎ ইহুদি খ্রিস্টান সভ্যতার তৈরি করা বিধান, মতবাদ, তন্ত্র-মন্ত্র মানছে। এর অর্থ তারা তাদের সার্বিক জীবনের হুকুমদাতা, এলাহ মানছে মানুষকে। এই কারণে তারা কলেমার চুক্তি থেকে বহির্গত হোয়ে গেছে, অর্থাৎ তারা আর মোমেন বা মোসলেম নেই। একটু আগেই বোললাম, ইসলামের সকল আমল মোমেন-মোসলেমের জন্য। যেহেতু এ জাতি মোমেন বা মোসলেম নয়, তাই যারা মো’মেন না তাদের তারাবি কেন ফরদ সালাহ করারও কোন মানে নেই, সেগুলি আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
আমাদের কথা হোল, যেটা সত্য সেটা সাধারণ মানুষের জানা উচিৎ, এটা তাদের অধিকারও বটে। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ নষ্ট হবে এই ভয়ে সত্য গোপন কোরে সাধারণ ধর্মপ্রিয় মানুষকে অসত্যের মধ্যে নিমজ্জিত কোরে রাখা কোন মোমেনের কাজ হোতে পারে না। আল্লাহর হুকুম হোল, হে ঈমানদারগণ, তোমরা সত্য ও ন্যায়ের উপর অটল থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান করো, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আতœীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও।…আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলো কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম স¤পর্কেই অবগত। (সুরা নেসা ১৩৫)। সুতরাং সত্য আমাদেরকে বোলতেই হবে, যদিও সেটা কারও কারও অপ্রিয় হয়।
কিভাবে গুরুত্বের এই ওলট-পালট হোল?
ব্রিটিশ খ্রিস্টানরা এই জাতিকে গোলাম বানানোর পর এরা যেন আর কোনদিন মাথা তুলতে না পারে সেজন্য ফন্দি কোরল যে, তারা এই জাতিকে দিনমান আল্লাহর উপাসনায় ব্যস্ত কোরে রাখবে। এর জন্য হাদিস, সেরাত, ফেকাহ থেকে তারা রসুলাল্লাহ ও তাঁর আসহাবদের ব্যক্তিগত আমলগুলি খুঁজে বের কোরল। ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হোচ্ছে এর ভিত্তি তওহীদ, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব। এর পরে গুরুত্বপূর্ণ হোচ্ছে এই দীনকে মানুষের জাতীয় সামষ্টিক জীবনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম করা বা জেহাদ করা। এই বিষয়গুলি দীনের এবং উম্মাহর অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ব্রিটিশ খ্রিস্টানরা যখন এই জাতির সার্বভৌমত্বের অধিকার নিজেদের হাতে নিয়ে নিলো, তখন তারা একটি বিকৃত ইসলাম তৈরি কোরল যেখানে তওহীদকে ‘আল্লাহ একমাত্র উপাস্য’ এই বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হোল এবং জেহাদকে আত্মার বিরুদ্ধে বোলে চালিয়ে দেওয়া হোল। আর যতো রকম সুন্নাহ, মোস্তাহাব, নফল নামাজ খুঁজে পাওয়া গেলো যেমন- তারাবি, তাহাজ্জুদ, আওয়াবীন, এশরাক, চাশত এমন অনেক সালাহকে এবং ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় যেমন- হায়েজ-নেফাস, ঢিলা কুলুখ, টুপি-পাগড়ি, মেসওয়াক, দস্তরখান ইত্যাদিকে মহা-গুরুত্বপূর্ণ বোলে উপরে স্থান দেওয়া হোল। তাদেরকে শেখানো হোল- রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা এগুলি সব দুনিয়াবি ব্যাপার। এগুলি ইসলামের মুখ্য কিছু নয়, গৌণ এবং অপকৃষ্ট বিষয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত জাতি এমন বহু আমল কোরে যাচ্ছে যেগুলির কথা রসুলাল্লাহ (দ:) এবং তাঁর আসহাবরা কখনও শোনেনও নি, অথবা শুনলেও সেগুলির প্রতি তাঁরা কোন গুরুত্ব আরোপ করেন নি। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত চারিত্রিক উন্নয়নের জন্য কোরতেন।
আজ এই মোসলেম নামক জনসংখ্যাটি তাদের জাতীয় জীবনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী (এলাহ) হিসাবে আল্লাহকে মানছে না, তারা সামষ্টিক জীবনে আল্লাহর হুকুম-বিধানগুলি বাদ দিয়েছে, বাদ দিয়ে দাজ্জাল অর্থাৎ ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতার’ তৈরি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রসহ বিভিন্ন তন্ত্রমন্ত্রের বিধান দিয়ে তাদের জীবন চালাচ্ছে। এদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি এমন কি সংস্কৃতি পর্যন্ত দাজ্জাল নিয়ন্ত্রিত। দাজ্জালকে প্রভু, রব এবং এলাহ হিসাবে গ্রহণ কোরে তারা কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের হেয়ে আছে। কাফের-মোশরেকদের প্রথম কাজ কি হওয়া উচিৎ- নামাজ পড়া, নাকি আগে ইসলামে প্রবেশ করা?