মসীহ উর রহমান, আমীর, হেযবুত তওহীদ:
গত ১৯ বছর যাবৎ আমরা হেযবুত তওহীদ ধর্মজীবী মোল্লা ও এক শ্রেণির ইসলামবিদ্বেষী মিডিয়া দ্বারা অপপ্রচারের শিকার হয়ে আসছি। এর বিপক্ষে আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি সাধারণ মানুষকে আমাদের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা দিতে। হ্যাণ্ডবিল, বই, সিডি এবং পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে উপস্থাপন করার অবিরাম চেষ্টা করেছি, অনেকাংশে সফলও হয়েছি। যার ফলে গত কয়েক বছর যাবৎ আমাদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হচ্ছিল। তারা ক্রমেই আমাদের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভ করছিল। কিন্তু সম্প্রতি রংপুরে দেশেরপত্রের কার্যালয়ে ধর্মব্যবসায়ী মোল্লারা বে-আইনীভাবে হামলা চালায়। তারা স্থানীয় লোকজনকে মিথ্যা কথা বলে হেযবুত তওহীদের ব্যাপারে বিভ্রান্ত করে এবং তাদেরকে উত্তেজিত করে তোলে। তাদেরকে নিয়ে দেশেরপত্রের কার্যালয় ভাঙচুর চালায়। শুধু তাই নয়, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির মিডিয়া এবং কিছু ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা আবারো অপপ্রচারে নেমেছে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে।
তাই আবারও আমরা হেযবুত তওহীদের ব্যাপারে সকলকে পরিষ্কারভাবে কিছু বিষয় জানাতে চাই যাতে করে আমাদের ব্যাপারে, আমাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে কারও মনে কোন প্রকার সন্দেহ না থাকে; আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার যাতে কাউকে প্রভাবিত করতে না পারে। আমাদের সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে তুলে ধরা হোল-
১. প্রতিষ্ঠা: হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম, এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী (১৯২৫-২০১২), যিনি টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান। তিনি ১৯৯৫ সনে হেযবুত তওহীদ প্রতিষ্ঠা করেন।
২. হেযবুত তওহীদের মূল বক্তব্য: আজকে সমস্ত পৃথিবী অন্যায়, অশান্তি, রক্তপাত, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, যুদ্ধ, হানাহানি, মারামারিতে পরিপূর্ণ। এর থেকে মুক্তি পাবার জন্য বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন মত পথ, তন্ত্র, ইজম তৈরি করে প্রয়োগ করা হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে, তাদেরকে অত্যাধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে শক্তিশালী করা হচ্ছে, কিন্তু কোনভাবেই এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। যামানার এমাম বলছেন- এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য একটিমাত্র উপায় আছে তাহোল- স্রষ্টার দেওয়া জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করে নেওয়া। এটা করলেই মানবজাতির মুক্তি আসবে। সেই জীবনব্যবস্থার ভিত্তি হোল তওহীদ, আল্লাহ ছাড়া আর কোন হুকুম না মানা। হেযবুত তওহীদের বক্তব্য হোল যদি মানবজাতি সম্মিলিতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর দেওয়া হুকুম মেনে নেয়, তাহোলে তারা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে। বর্তমান পৃথিবীতে ইসলাম নামে যে ধর্মটি চালু আছে সেটা আল্লাহ ও রসুলের প্রকৃত ইসলাম নয়। কিভাবে গত ১৩০০ বছরে প্রকৃত ইসলাম বিকৃত হোল তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া এখানে সম্ভব নয়। প্রকৃত ইসলাম কেমন ছিলো তার রূপরেখা মহান আল্লাহ যামানার এমামকে দান কোরেছেন।
৩. কার্যক্রম: আমাদের কাজ সর্বশ্রেণির মানুষের সঙ্গে। তাই হেযবুত তওহীদের কোন গোপন কর্মকাণ্ড থাকা সম্ভব নয় এবং নেই। আমরা আলোচনার মাধ্যমে, পত্রিকা, হ্যান্ডবিল, বই, প্রামাণ্যচিত্র ইত্যাদির মাধ্যমে যে মহাসত্য যামানার এমামের মাধ্যমে পেয়েছি সেগুলি মানুষের কাছে প্রচার করে যাচ্ছি। আমাদের কোন মিছিল, মিটিং, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, হরতাল, অবরোধ ইত্যাদির নামে গণতান্ত্রিক দলগুলোর মতো মানুষের জন্য অকল্যাণকর কোন কর্মকাণ্ড নেই।
৪. অর্থের উৎস: এই কাজের জন্য আমরা আন্দোলনের বাইরের কারও কাছ থেকে অর্থ সহায়তা গ্রহণ করি না। আমাদের আন্দোলনের সকল সদস্যরাই নিজেদের জীবন ও সম্পদ মানবতার কল্যাণে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করে আন্দোলনের ব্যয়ভার বহন করে থাকেন।
৫. আদালতের রিপোর্ট: গত উনিশ বছরে হেযবুত তওহীদের একজন সদস্যও দেশের কোন একটি আইন ভঙ্গ করে নি। একটিও অপরাধ করে নি। এটা আমাদের কথা নয়, এটা বাংলাদেশের সর্বনিু থেকে সর্বোচ্চ আদলতের রিপোর্ট। মিথ্যা অভিযোগে আমাদের সদস্যদেরকে আজ পর্যন্ত সাড়ে চার শতাধিকবার গ্রেফতার করা হয়েছে, কিন্তু তাদের একটিও আইনভঙ্গ কেউ প্রমাণ কোরতে পারে নি। ফলে তারা সকলেই মিথ্যা অভিযোগের দায় থেকে অব্যহতি পেয়েছেন।
৬. ধর্মব্যবসার স্বরূপ উন্মোচন: প্রতিটি ধর্মে ধর্মব্যবসা নিষিদ্ধ। ইসলামের কোন কাজ করে বিনিময় নেওয়াকে আল্লাহ হারাম কোরেছেন (সুরা বাকারা ১৭৪) এবং যারা তা করে তাদের আনুগত্য, অনুসরণ কোরতে আল্লাহ নিষেধ কোরেছেন (সুরা ইয়াসীন- ২১)। কাজেই আমরা কোন ধর্মব্যবসায়ীর সঙ্গে কোনরূপ এবাদত করি না। যারা সত্যনিষ্ঠ এবং মানবতার প্রকৃত কল্যাণে নিবেদিত আমরা কেবলমাত্র তাদের সঙ্গেই এবাদত করে থাকি।
৭. জঙ্গিবাদ নির্মূলের উপায়: জঙ্গিবাদ ইসলামে নেই, তবে ইসলামের অপব্যাখ্যার ফলেই এই ভ্রান্ত মতবাদের উদ্ভব হোয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পশ্চিমা শক্তির অন্যায়-অবিচারের মোকাবেলা কোরতে গিয়ে নির্যাতিত, নিরুপায় মানুষ জঙ্গিতে রূপান্তরিত হোয়েছে। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলি তাদের স্বার্থে জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে, অপরদিকে তারা সামরিক পদ্ধতিতে, দমন পীড়ন চালিয়ে জঙ্গিদেরকে নির্মূল কোরতে চাচ্ছে। আমরা বলছি, কেবলমাত্র বল প্রয়োগে জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে না, এটি যেহেতু একটি ভ্রান্ত আদর্শিক মতবাদ, তাই একে মোকাবেলা কোরতে হবে সঠিক আদর্শ দিয়ে। ইসলাম থেকে যুক্তি প্রমাণ দিয়ে জঙ্গিবাদের অসারতা ও অবৈধতা প্রমাণ করা গেলে কেউ আর এই পথকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ বলে বিশ্বাস কোরবে না। ফলে জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে। এই আদর্শিক লড়াই করার জন্য যে যুক্তি প্রমাণ আবশ্যক তা আল্লাহ দয়া করে যামানার এমামকে দান কোরেছেন। আমরা দৈনিক দেশেরপত্র পত্রিকার মাধ্যমে এই মহাসত্যগুলি মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
৮. ১৬ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব: সমস্ত অগ্রগতি, উন্নতি, প্রগতির মূল হল ঐক্য। আজ এই ষোল কোটি বাঙালির সমস্ত অশান্তির মূল কারণ আমাদের মধ্যে হানাহানি, বিভেদ, অনৈক্য। যদি আমরা অন্যায়, অবিচার, জুলুম, সন্ত্রাস, হানাহানি, ধর্মব্যবসা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তবেই আমাদের সমাজ থেকে সেগুলি দূর হয়ে যাবে। কাজেই আমরা এখন “এক জাতি-এক দেশ, ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ” এই স্লোগানকে সাথে নিয়ে সারা বাংলাদেশের আপামর জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যেই সারা দেশে আমরা দশ হাজারের বেশি জনসভা করেছি যেগুলোতে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ কোরেছে। আমাদের জনসভাগুলিতে, সেমিনারগুলিতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ছাত্র, সাধারণ মানুষ সবাই অংশগ্রহণ করছেন এবং দু’হাত তুলে আমাদেরকে সমর্থন দিচ্ছেন।
আল্লাহ বোলেছেন, হে মো’মেনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও। কাজেই আমাদের কর্মসূচী, আমাদের কার্যক্রম, আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ যেন কোনরূপ বিভ্রান্ত কোরতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে আহ্বান কোরছি, কেউ আমাদের ব্যাপারে কোনরূপ গুজবে কান না দিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমাদের বই, পত্রিকা, হ্যাণ্ডবিল, ঠিকানা এমনকি আমাদের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ঠিকানা সবকিছু প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত হোচ্ছে।