মোহাম্মদ মাসুদ রানা
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই ধর্মভীরু, তবে তারা ধর্মীয় বিষয়গুলির ব্যাপারে ধর্মব্যবসায়ী আলেম মোল্লা ও পুরোহিত শ্রেণির উপর নির্ভর করে। তারা জানেই না যে, এই শ্রেণিটি প্রকৃতপক্ষে ধর্মের ধারক-বাহক নয়, তারা ধর্মব্যবসায়ী, আগুনখোর, স্রষ্টা এদেরকে জাহান্নাম বা নরকের ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা-পুরোহিতদের প্রচারে সাধারণ মানুষ সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত হয়, অতীতে যা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। ধর্মের নামে উন্মাদনা যুগে যুগে অশান্তির একটি মূল কারণ। সাম্প্রতিককালে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মিশর, সিরিয়া ইত্যাদি দেশগুলিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর পিছনে মূল কারণ ছিল এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি। একই চিত্র দেখা যায় মিয়ানমারেও। বৌদ্ধ ধর্মব্যবসায়ীরা মানবতার মূর্ত প্রতীক গৌতম বুদ্ধের (আ:) অহিংস বাণীর কবর রচনা করে সেখানে যুগ যুগ ধরে বসবাসরত মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর নির্মম নৃশংসতা চালিয়েছে। ভারতবর্ষের ইতিহাসে যত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়েছে তার সবগুলোর পেছনেই এভাবে ইন্ধন যুগিয়েছে উভয় ধর্মের ধর্মযাজক, পুরোহিত শ্রেণির অপপ্রচার, উস্কানি। আবার মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কয়েক শতাব্দব্যাপী যে ক্রুসেড চলেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, তার প্রধান কারণ রাজনৈতিক হলেও, তৎকালীন রাজারা তার বাস্তব রূপ দিতে পেরেছিল একমাত্র ধর্মযাজকদের সাহায্যেই। কারণ ধর্ম ভিন্ন অন্য কোনো উপায়ে ইউরোপকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব ছিল না। এ কথা বুঝেই ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে পুরো খ্রিস্টান জগৎকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল খ্রিস্টান পোপ বা ধর্মযাজকরা।
এটা সন্দেহাতীত বিষয় যে, স্রষ্টা প্রেরিত সকল ধর্মই এসেছে মানবতার কল্যাণে, মানুষকে শান্তি দেওয়ার জন্য, মুক্তি দেওয়ার জন্য, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য নয়, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য নয়। ব্যবসায়ীরা যেমন অধিক মুনাফা লাভের জন্য নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট তৈরি করে, সুযোগ বুঝে স্বার্থোদ্ধার করে, তেমনি ধর্মব্যবসায়ীরাও নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট বা জোট সৃষ্টি করে স্বার্থ হাসিলের জন্য “ধর্ম গেল – ধর্ম গেল” জিকির তুলে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে।
কাজেই এখন যদি সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া যায় যে, এই মোল্লা-পুরুতরা যে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করছে, যে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে, সন্ত্রাস করছে সেটা স্রষ্টা প্রদত্ত প্রকৃত ধর্ম নয়, যুগে যুগে স্রষ্টা মানবজাতির হিতসাধনের নিমিত্তে যে ধর্ম পাঠিয়েছেন এগুলো তার বিপরীতমুখী ধর্ম, তাহলে সাধারণ মানুষ আর তাদের কোনো অপপ্রচারে কান দেবে না, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে। ধর্মব্যবসায়ীদের প্রকৃত রূপ এবং তাদের প্রচারিত ধর্ম কিভাবে বিকৃত তা যদি আরও ব্যাপকভাবে মানুষের মাঝে প্রচার করা যায়, তবে আমাদের দেশ থেকে ধর্মীয় অন্ধত্ব, গোঁড়ামী, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় সন্ত্রাস, ধর্মব্যবসা এক কথায় ধর্মের নামে যা কিছু মিথ্যা সমাজে প্রতিষ্ঠিত আছে তা একেবারে নির্মূল হয়ে যাবে। ধর্মজীবী মোল্লা-পুরোহিতরা ধর্মের নামে কোনো হুজুগ বা উন্মাদনা সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি সাধন কোরতে পারবে না। প্রকৃত ধর্মের রূপ কেমন ছিল, নবী-রসুল-অবতারদের মূল শিক্ষা কী ছিল, তাঁরা সারা জীবন কিসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, মানবজাতির প্রকৃত এবাদত কী, আকিদাবিহীন ঈমানের কোনো মূল্য নেই কেন- এসব বিষয় মানুষের সামনে পরিষ্কার করে তুলে ধরতে হবে। তবেই মানুষ সজাগ ও সচেতন হবে। তারা আর ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতারণার শিকার হবে না।