[তাদের অনুসরণ করো যারা
তোমাদের কাছে বিনিময় চায় না
এবং সঠিক পথে আছে। (সুরা ইয়াসীন ২১)]
এ কথা অনস্বীকার্য যে বর্তমানে সম্পূর্ণ মানবজাতি এক বিরাট ক্রান্তিকাল অতিক্রম কোরছে। পৃথিবী আজ অন্যায়, অবিচার, যুলুম, যুদ্ধ, রক্তপাত, হত্যা, ধর্ষণ, বেকারত্ব, দারিদ্র্য অর্থাৎ অশান্তিতে পরিপূর্ণ। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে সংঘাত, সংঘর্ষ হোচ্ছে না। শান্তি রক্ষার জন্য বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা তৈরি কোরে, বিভিন্ন নামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হোয়ে আপ্রাণ চেষ্টা কোরে যাচ্ছে। অথচ এই নতুন শতাব্দীর একটি দিনও যায় নাই যেদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও যুদ্ধ, রক্তপাত চলে নাই। শান্তির সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হোয়েছে। মানবজাতির এমন এক সঙ্কটমুহূর্তে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর লেখাগুলি দৈনিক দেশেরপত্র ও দৈনিক নিউজে প্রকাশিত হোচ্ছে যা মানবজাতির সামনে আজ আশার আলো জ্বালিয়েছে।
আমাদের দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও এই সঙ্কটের কালো ছায়া ঘনীভূত হোয়ে আছে দীর্ঘদিন ধোরে। সাম্প্রতিককালে বিশ্বজুড়ে ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ব্যাপক আকার ধারণ কোরেছে। এই সন্ত্রাসকে কেন্দ্র কোরে বিশ্বের শক্তিমান রাষ্ট্রগুলি তাদের তাণ্ডব চালিয়েছে ইরাকে, আফগানে, ফিলিস্তিনে। কূটনৈতিক চাল দিয়ে তারা মোসলেম জাতিটিকে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে লিপ্ত কোরে এবং অস্ত্র সরবরাহ ও বিক্রি কোরে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা কোরেছে সিরিয়ায় মিশরে। আরও বহুদেশেই বয়ে চোলছে রক্তের নদী। ধর্মকে ব্যবহার কোরে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি আমাদের এই শান্তিপ্রিয় দরিদ্র, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের দেশটিকে ঐ রকম আরেকটি দেশে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এই অনিবার্য পরিস্থিতির দিকে দেশকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে অপরিণামদর্শী ধর্মজীবী সন্ত্রাসপ্রিয় মোল্লা শ্রেণি এবং ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারকারী কিছু অপশক্তি। এরা চায় সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি কোরে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি কোরতে এবং এর থেকে নিজেদের ফায়দা হাসিল কোরতে। তারা তাদের লেবাস দেখিয়ে, দাড়ি-টুপি দেখিয়ে মানুষকে বোঝাতে চায় যে তারা ইসলামের কর্তৃপক্ষ, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারাই ইসলামের ঘোর শত্রু। তারা এই দীনটিকে বিক্রি কোরে খাচ্ছে, একে তারা যখন যেভাবে ইচ্ছা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার কোরছে। কিন্তু আল্লাহর রসুল বোলেছেন,
(১) আল্লাহ মানুষের কাপড়-চোপড়, পোশাক-পরিচ্ছদ দেখেন না, দেখেন মানুষের অন্তর এবং তার কাজ [আবু হোরায়রা (রা:) থেকে মোসলেম]।
(২) তোমরা কোন ব্যক্তির অধিক সালাহ আদায় ও অধিক সিয়াম পালন করা দেখে ভুল কোরো না, বরং লক্ষ্য করো সে যখন কথা বলে সত্য বলে কি না, এবং তার কাছে রাখা আমানত বিশ্বস্ততার সাথে ফিরিয়ে দেয় কিনা এবং নিজের পরিবার পরিজনের জন্য হালাল উপায়ে রোজগার করে কিনা। [মহানবীর (স.) ভাষণ- ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত]।
সুতরাং প্রকৃত ধার্মিকরা কখনোই মানুষকে নিজ ধর্মপ্রীতি ও আমলের অহঙ্কার প্রদর্শন কোরে বেড়ায় না। বরং তারা ধর্মের শিক্ষাকে ধারণ করে। আল্লাহ শুকর, মৃত পশু ইত্যাদি হারাম কোরেছেন। কিন্তু অনন্যোপায় হোয়ে কেউ যদি সেগুলি খায় আল্লাহ ক্ষমা কোরে দেবেন, কিন্তু যারা ধর্মকে রুটি রুজির মাধ্যম বানাবে তারা এতই ঘৃণিত প্রাণী যে আখেরাতে তাদের দিকে আল্লাহ দৃষ্টিপাতও কোরবেন না। তিনি বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ যে কেতাব নাযেল কোরেছেন, যারা তা গোপন রাখে ও বিনিময়ে তুচ্ছ পার্থিব মূল্য গ্রহণ করে, তারা নিজের পেটে আগুন ব্যতীত অন্য কিছুই পুরে না। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথাও বোলবেন না এবং পবিত্রও কোরবেন না। তাদের জন্য রোয়েছে বীভৎস শাস্তি। তারাই হেদায়াতের বিনিময়ে পথভ্রষ্ঠতা এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় কোরেছে; আগুন সহ্য কোরতে তারা কতই না ধৈর্যশীল! (সুরা বাকারা: ১৭৩-১৭৬)
কেবল নামাজ, মিলাদ ও জানাজা পড়িয়ে, ওয়াজ কোরে, খোতবা আর কোর’আন খতম দিয়ে, পরলোকের ওসিলা হিসাবে মুরিদের থেকে অর্থ গ্রহণ করাই ধর্মব্যবসা নয়, ধর্মকে ব্যবহার কোরে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করাও ধর্মব্যবসা। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য এমন কোন হীন কাজ নেই যা রাজনৈতিক ধর্মব্যবসায়ীরা কোরতে পারে না। প্রতি মুহূর্তে তারা রং পাল্টায় আর সকল প্রকার প্রতারণাকে তারা হেকমত বা কৌশলের দোহাই দিয়ে আল্লাহ-রসুলের নামে চালায়। আজ তারা যেটাকে হারাম বোলে ফতোয়া দেয়, কালই সেটাকে বৈধ বোলে ফতোয়া নাযিল করে। যে কথা আল্লাহ বলেন নি সেটাই আল্লাহর নামে চালিয়ে দেয়া এবং তার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করা আল্লাহর দৃষ্টিতে অত্যন্ত গর্হিত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। [সুরা বাকারা-৭৯] সাধারণ ইসলামপ্রিয় মানুষকে তারা এভাবে বিপথগামী করে। এভাবেই ইসলাম এখন বিভিন্ন প্রকার ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে বন্দি।
অথচ আল্লাহর রসুলের সময়ে এবং প্রকৃত ইসলামের যুগে ধর্মজীবী আলেমদের কোন অস্তিত্ব এই উম্মাহর মধ্যে ছিলো না। আল্লাহর রসুলের বহু পরে যখন খেলাফত রাজতন্ত্রে পর্যবসিত হোল তখন আব্বাসীয়, উমাইয়া, ফাতেমীয় ইত্যাদি নামের বাদশাহ, সুলতানদের অন্যায় কাজকে জনগণের সামনে জায়েজ হিসাবে ফতোয়া দেওয়ার জন্য আবির্ভাব হয় এই জ্ঞানপাপী আলেমদের। অর্থের বিনিময়ে এই আলেমরা লক্ষ লক্ষ জাল হাদিস তৈরি কোরেছিল। এটা ইতিহাস। এই সব আলেমদেরই আদর্শিক উত্তরাধিকাররা আজও আমাদের সমাজে ধর্মকে পুঁজি কোরে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে কথা বলার মতো কেউ নেই, কারণ সমাজের অধিকাংশ মানুষই ধর্মের ব্যাপারে একপ্রকার অজ্ঞ এবং এইসব ধর্মজীবীদের উপরই সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। ধর্মব্যবসা কোনকালেই কোন ধর্মেই বৈধ ছিলো না। সকল নবী ও রসুলগণ মানুষের কল্যাণে সারাজীবন ধর্মপ্রচার ও প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কোরে গেছেন। এর বিনিময়ে তারা মানুষের কাছ থেকে কোন বিনিময় গ্রহণ করেন নি। পবিত্র কোর’আনে নূহ (আ:), সালেহ (আ:), হুদ (আ:), লুত (আ:), শোয়েব (আ:), শেষ নবী মোহাম্মদ (দ:) সহ আরও অনেক নবীর কথা বোলেছেন যাঁরা তাদের জাতির উদ্দেশ্যে সুস্পষ্টভাষায় বোলেছেন, হে আমার সম্প্রদায়! এর পরিবর্তে আমি তোমাদের নিকট কোন বিনিময় হিসাবে কোন অর্থসম্পদ চাই না। আমার বিনিময় ও পারিশ্রমিক আল্লাহর নিকট [সুরা হুদ-২৯, ৫১, সুরা ইউনুস-২, সুরা হুদ-৫১, সুরা শুআরা-১০৯, ১২৭, ১৪৫, ১৬৪, ১৮০, সুরা সাদ-৮৬, সুরা আনআম- ৯০]। সুতরাং তাঁদের উম্মাহর জন্যেও দীনকে স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা, এর বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করা কেবল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ বা হারামই নয়, এটি দীনকে ধ্বংস করার মতো পদক্ষেপ। কোর’আন ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের গ্রন্থগুলিতেও ধর্মীয় কাজ পার্থিব সুবিধা হাসিল করাকে জঘন্য অপরাধ বোলে উল্লেখ করা হোয়েছে।
কয়েক শতাব্দী আগে যখন ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা মোসলেম বিশ্বের অধিকাংশ দেশকে সামরিক শক্তিবলে তাদের পদানত করার পর তাদের শাসনকে নির্বিঘ্ন করার জন্য মোসলেম জাতিকে তাদের পছন্দমত একটি বিকৃত ইসলাম শিক্ষা দেয়। অনেক গবেষণা কোরে তারা একটি বিকৃত ইসলাম তৈরি করে যেটা বাহ্যিকভাবে দেখতে প্রকৃত ইসলামের মতোই কিন্তু ভেতরে, আত্মায়, চরিত্রে আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামের একেবারে বিপরীত। এই শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাসে তারা ইসলামের আত্মা তওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং দীন প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক সংগ্রামকে বাদ দিয়ে শুধু মাসলা মাসায়েল ও বিতর্কিত বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে, যাতে এই মাদ্রাসা-শিক্ষিত লোকগুলো সবসময়ই নিজেদের মধ্যে মতভেদ, তর্কাতর্কি ও কোন্দলে লিপ্ত থাকে এবং এটাকেই ইসলাম মনে করে ও খ্রিস্টান শাসকদের বিরুদ্ধে কোনদিনও ঐক্যবদ্ধ হোতে না পারে। এখানে অংক, ভূগোল, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা কোন কিছুই রাখা হোল না, যেন মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে এসে তাদের রুজি-রোজগার কোরে বেঁচে থাকার জন্য এই দীন, ধর্ম বিক্রি কোরে রোজগার করা ছাড়া আর কোন পথ না থাকে। এই আত্মাহীন মৃত ইসলামটিকে জাতির মন-মগজে গেঁড়ে দেওয়ার জন্য এই উপমহাদেশের ভাইসরয় ওয়ারেন হেসটিংকস ১৭৮০ সনে ভারতের তদানীন্তন রাজধানী কোলকাতায় আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কোরলেন। এই মাদ্রাসায় খ্রিস্টানরাই অধ্যক্ষপদে থেকে ১৪৬ বছর ধরে এই জাতিকে তাদের তৈরি ইসলাম শিক্ষা দেয়। এই Syllabus I Curriculum ব্রিটিশ শাসকরা বাধ্যতামূলকভাবে এই উপমহাদেশের সর্বত্র বেশির ভাগ মাদ্রাসায় চালু করল। এইসব মাদ্রাসা থেকে যারা বের হয় তাদেরকে টাইটেল দেয়া হয় মাওলানা, মোফাস্সের, মোহাদ্দেস, আল্লামা, মুফতি ইত্যাদি। কিন্তু তারা কেউই আল্লাহ-রসুলের ইসলামের আলেম নয়, তারা খ্রিস্টানদের তৈরি করা একটি বিকৃত ইসলামের আলেম।
কিন্তু যখন কোন সত্যনিষ্ঠ মানুষ কোর’আন, হাদিস, ইতিহাসের দলিল প্রমাণ হাজির কোরে মানুষের সামনে তুলে ধরেন যে, ধর্মজীবী আলেমদের দ্বারা দীনের বিকৃতিসাধন এবং ধর্মকে জীবিকার মাধ্যমে পরিণত করার কারণেই আজ ইসলাম ও মোসলেম জাতির করুণ দুর্গতি; ধর্মকে ব্যবহার কোরে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল, ধর্মের নামে সন্ত্রাস করা আল্লাহর দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ; ইসলাম বিক্রি করাকে আল্লাহ হারাম কোরেছেন, একে আগুন খাওয়ার সঙ্গে তুলনা কোরেছেন, যারা এই কাজ কোরছে তারা আলেম নয়, তারা ইসলামের ধ্বংসসাধনকারী। তখনই আলেম নামধারী এইসব পরভোজীরা নিজেদের অবৈধ পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সেই সত্যনিষ্ঠ মানুষের কণ্ঠরোধ করার জন্য উদগ্রীব হোয়ে ওঠে, তার বিরুদ্ধে ফতোয়ার ঝড় তোলে। ওয়াজের মাধ্যমে, খোতবার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে অপপ্রচার শুরু করে যে এই লোক খ্রিস্টান, তার কথায় কান দেবে না, সে কাফের, মুরতাদ, সে কাদিয়ানী। তাকে মারো, তার বই পুড়িয়ে দাও। তার বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ করো। ধর্মজীবীরা নিজেদেরকে ধর্মের ঠিকাদার মনে করে, রক্ষক মনে করে। তারা ‘ধর্মরক্ষা’-র যিকির তুলে দেয়। ফলে সত্যবাদী কণ্ঠস্বর চাপা পড়ে যায় অন্ধ-উন্মাদনার শোরগোলে। আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনও ধর্মের প্রতি দুর্বলতা রোয়েছে। তারা আল্লাহ রসুলকে ভালোবাসে। সেই জন্যই তারা আজ পর্যন্ত এই ধর্মব্যবসায়ী এবং ধর্মের নামে সন্ত্রাসকারীদের শত অত্যাচার, নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য কোরেছে। তারা ইসলামের এমন অপব্যবহার কোরেছে, এমন চাঁদাবাজি, এমন সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোরেছে যে সাধারণ মানুষও এখন ইসলামের কথা শুনলে ভয় পায়, এই সব মোল্লাদের কারণে আল্লাহ ও রসুলের নাম কালিমালিপ্ত হোয়েছে। তাদের জন্য মানুষ ইসলামের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হোয়ে পোড়েছে। মুক্তির শেষ পথ যে ইসলাম তার দুয়ারও এই ধর্মব্যবসায়ীরা প্রায় বন্ধ কোরে ফেলেছে। এখনও যদি তাদেরকে নিবৃত না করা যায় তবে আর শেষরক্ষা করা যাবে না।
কিন্তু একমাত্র সত্যের প্রকাশই পারে মানুষকে অশান্তি থেকে মুক্তি দিতে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান, আপনারা কোনো প্রকার গুজবে কান না দিয়ে নিজেদের চোখ ও বিবেককে কাজে লাগান। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ বোলেছেন, “মো’মেনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা কোরে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও (সুরা হুজরাত-৬)।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৪২ বছর পর আজ আবারও আমাদের দেশকে ধ্বংস কোরে দেওয়ার চক্রান্ত চোলছে। একটি ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি ‘ধর্ম গেল-ধর্ম বাঁচাও’ যিকির তুলে দেশে একটি গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি কোরেছে। বৈদেশিক পরাশক্তিগুলি বিভিন্ন মতবাদ চাপিয়ে দিয়ে আমাদের দেশেও অসংখ্য দল, মতো সৃষ্টি কোরে রেখেছে, যার দ্বারা শতধাবিভক্ত হোয়ে গেছি আমরা। এই সুযোগে তারা আমাদেরকে শাসন ও শোষণ কোরে চোলছে। কিন্তু মানুষ এই সব অশান্তি থেকে বাঁচতে চায় এবং বাঁচার একটাই পথ, আবার ১৬ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হোতে হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমরা সমস্ত দল-মত, মতবাদ পরিত্যাগ কোরে এক দল, এক জাতিতে পরিণত হবো। রাজনীতি ও ধর্মের নামে এই অরাজকতা ও সন্ত্রাস আমরা দেখতে চাই না, আমরা চাই শান্তি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে আমাদেরকে ধর্মব্যবসায়ীদের স্বরূপ উন্মোচন কোরে দিতে হবে। নতুবা তারা কোনদিনও জাতিকে সত্যের উপরে ঐক্যবদ্ধ হোতে দেবে না। আর বৈদেশিক শক্তিকে ভয় করার কোন কারণ নেই, কারণ আমরা তাদের মুখাপেক্ষী হোয়ে থাকতে বাধ্য নই। নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি থাকলে আল্লাহ আমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন সেট নিয়েই নিজেদের মধ্যে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি কোরে বাঁচতে পারবো। কাজেই আমরা শপথ নেব- আমরা হবো এক জাতি, আমাদের এক দেশ, এক মত। যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে, হকের পক্ষে আমরা সবাই একমত। ১৬ কোটি মানুষ এক হোলে পৃথিবীর কোন শক্তি নেই আমাদের উপর মাথা তুলে দাঁড়ায়।