-হুমায়ূন কবীর
আল্লাহ আখেরী নবী মোহাম্মদের (দ:) আগমনের পূর্বে যুগে যুগে পৃথিবীর প্রতি জনপদে তাঁর নবী-রসুল বা অবতার প্রেরণ কোরেছেন। তাঁদের প্রতি সংশ্লিষ্ট নৃ-গোষ্ঠীর ভাষায় নাজেল কোরেছেন ঐশী গ্রন্থ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নবীগণের জীবনাবসানের পর তাঁর অনুসারীরা সেই ধর্মের শিক্ষার অতি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কায়েমী স্বার্থরক্ষায় ধর্মকে ব্যবহার কোরতে গিয়ে সেগুলিকে বিকৃত কোরে ফেলেছে। এমন কি ধর্মগ্রন্থগুলির মধ্যেও নিজেদের মনগড়া কথা ঢুকিয়ে দিয়েছে। ব্যতিক্রম হোচ্ছে শেষ গ্রন্থ আল কোর’আন। এর সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ নিজে নেওয়ায় (সুরা হেজর ৯) ১৪০০ বছর পরেও এটি সম্পূর্ণ অবিকৃত আছে। তবে কোর’আনকে বিকৃত না কোরতে পারলেও কোর’আন এবং হাদীসের বিকৃত ব্যাখ্যার মাধ্যমে দীনের উদ্দেশ্য এবং প্রতিটি বিষয়ের ধারণাই পাল্টে দেওয়া হোয়েছে।
শেষ ইসলামের আগের সেই বিকৃত ধর্মগুলির বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে তুলনামূলক বিচার কোরলে, তাদের গ্রন্থগুলি নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণী মন নিয়ে পড়লে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, সকল ধর্মের অবতারগণ যে একই স্রষ্টার প্রেরিত, তাঁদের আনীত গ্রন্থাদিও সেই অভিন্ন স্রষ্টার নাজেলকৃত, এবং সব ধর্মগুলি যেন একই বৃক্ষের শাখা প্রশাখা। বর্তমানেও সেগুলির আকৃতি ও প্রকৃতিতে অনেক মিল রোয়েছে কারণ আদীতে, ধারণাগতভাবে সবই এক ও অভিন্ন। পৃথিবীতে বিরাজিত ধর্মগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য অন্বেষণ কোরতে গিয়ে অপরিসীম শ্রমস্বীকার কোরেছেন বহু দার্শনিক ও গবেষক যাদের নামোল্লেখ করা সব সময় সম্ভব হয় না। তাদের লেখা থেকে তথ্যাদি নিয়েই আমরা এই আলোচনার একটি উপসংহারে পৌঁছানোর চেষ্টা কোরছি। সেইসব মনীষী ও গবেষকদের প্রতি আমার হৃদয়ের গভীর থেকে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা। এখানে ইসলাম ও সনাতন (হিন্দু) ধর্মের মধ্যে কয়েকটি মিল তুলে ধোরছি।
এমন আরও বহু উদাহরণ দেওয়া সম্ভব, কিন্তু খোলা মন নিয়ে যারা উপরোক্ত সাতাশটি মিল লক্ষ্য কোরবেন তারা আশা কোরি বুঝতে পারবেন যে সব ধর্মের উৎসই এক। তাই কোন ধর্মের অবতারদের বিষয়ে অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা, কোন ধর্মকে কটাক্ষ ও অবমাননা করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। ২০১৩ এর জানুয়ারী থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেবল ভারতেই ধর্মীয় সহিংসতার শিকার হোয়ে প্রাণ হারিয়েছে ১০৭ জন মানুষ। এই সংঘাতের শেষ কোথায় এবং কিভাবে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বিদ্বৎসমাজ। আমার মতে হিন্দু-মুসলমান উভয়ই স্রষ্টা প্রদত্ত একই সনাতন ধর্মের (দীনুল কাইয়্যেমা) অনুসারী। পবিত্র কোর’আনে বহু আয়াতে ইসলামকে দীনুল কাইয়্যেমাহ বা সনাতন, শ্বাশ্বত জীবনব্যবস্থা হিসাবে আখ্যায়িত করা হোয়েছে। হিন্দু বোলে আদতে কোন ধর্ম নেই, বেদ-পুরাণে হিন্দু শব্দের কোন উল্লেখও নেই। তারা আসলে সনাতন ধর্মের একটি প্রাচীন ও আঞ্চলিক সংস্করণের অনুসারী। সেই দীনের চূড়ান্ত বিকশিত ও সবশেষ সংস্করণ আল্লাহ পাঠিয়েছেন শেষ নবীর মাধ্যমে। বহুবিধ কারণে এই মহাসত্য বুঝতে ব্যর্থ হওয়ায় একই ধর্ম আজ বহু ধর্মে বিভক্ত হোয়ে আছে এবং একে অপরের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। তারা প্রত্যেকেই যদি এটা অনুধাবন করে যে, আমাদের স্রষ্টা এক, আমরা এক আদম-হাওয়া থেকে এসেছি, সেই সূত্রে আমরা ভাই-বোন, বিভিন্ন সময় যে সকল নবী-রসুল, অবতারগণ এসেছেন তারা সকলেই আমাদের মঙ্গলের জন্য, কল্যাণের জন্য স্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত হোয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে নবী রসুল বোলে স্বীকৃতি দেওয়া আমাদের ঈমানের অঙ্গ এবং ফরদ। মানবজাতি এখন যে মহা সঙ্কটকাল অতিক্রম কোরছে এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ, আমাদের উচিত স্রষ্টার বিধানের দিকে ফিরে যাওয়া, অবতার প্রেরণের ধারাবাহিকতায় শেষ অবতার, নবী, রসুল মোহাম্মদের প্রকৃত শিক্ষাকে গ্রহণ করা, বর্তমানের বিকৃতটি নয়। জীবনব্যবস্থা ছাড়া মানুষ চোলতে পারে না। সঠিক কোন জীবনব্যবস্থা খুঁজে না পাওয়ায় তারা স্রষ্টাহীন, আল্লাহহীন, ইহুদি-খ্রিস্টান বস্তুবাদী সভ্যতা দাজ্জালের প্রদত্ত জীবনব্যবস্থাগুলির অনুসরণ কোরছে, কিন্তু শান্তি পাচ্ছে না, নিরাপত্তা পাচ্ছে না। বরং দিন দিন মানুষ পশু পর্যায়ে উপনীত হোচ্ছে। দাজ্জালের অনুসারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মকে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার কোরছে, এজন্য তারা বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে ধর্মীয় দাঙ্গা বাঁধিয়ে রাখতে চায়। প্রকৃতপক্ষে দাজ্জালের অনুসারীরা কোন ধর্মই বিশ্বাস করে না। ওদের ধর্ম ক্ষমতা। কাজেই আপনারা যারা ধর্মের সত্যিকারের অনুসারী অন্তত আপনারা এক হোন, আপনারা যার যার ধর্মগ্রন্থে কি বলা আছে সেটা অনুসরণ কোরুন। দেখবেন সকল ধরণের দাঙ্গা, ফাসাদ, সন্ত্রাস নির্মূল হোয়ে যাবে, হোতে বাধ্য।
লেখক: প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও যামানার এমামের অনুসারী