হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ

মো. মোস্তাফিজুর রহমান শিহাব:
আল্লাহ তাঁর রসুলের (সা.) মাধ্যমে যে শেষ দ্বীন প্রেরণ করেছেন সেই দ্বীন সহজ ও সরল। এই দীনে কোন জটিলতা নেই। আল্লাহর রসুল তাঁর বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলাল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ-সরল। দ্বীন নিয়ে যে কড়াকড়ি করে দ্বীন তার বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং দীনের নিকটবর্তী থাক, নিয়মিত পূণ্যের কাজে পুরস্কারের সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং সকাল- সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে (ইবাদতের মাধ্যমে) আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর।” এছাড়াও দ্বীন শিক্ষা দেয়ার সময় রসুল দ্বীনকে সহজভাবে তুলে ধরার কথাও বলেছেন। রসুলাল্লাহ মুয়াজ ও আবু মুসা (রা.)-কে ইয়ামেনে প্রেরণের প্রাক্কালে এ উপদেশ দিয়েছিলেন যে, “(জনগণের কাছে ধর্মীয় বিষয়গুলো) সহজ করে তুলে ধরো, কঠিনরূপে নয়। একে অপরকে মান্য কর, বিভেদে লিপ্ত হয়ো না।” রসুলাল্লাহর আরেকটি হাদিস আবু ইয়ালা তার মুসনাদে আনাস ইবনে মালিকের বরাতে এবং ইবনে কাছীর সুরা হাদীদের ২৭ আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেছেন। সেই হাদিসে রয়েছে, রসুল বলতেন, “নিজের উপর এমন অতিরিক্ত বোঝা চাপিও না যাতে তোমার ধ্বংস হওয়ার আশংকা থাকে। তোমাদের পূর্ববর্তী জনগোষ্ঠী নিজেদের উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে ধ্বংস হয়েছে। তাদের ধ্বংসাবশেষ পুরাতন মঠ-মন্দিরে খুঁজে পাওয়া যায়।”
এই হাদিসগুলো থেকে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে দ্বীন নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি ইসলামে নেই। যে জাতিই দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে সে জাতিই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমরা মুসলিমরা দীনের অনেক বিষয় নিয়ে এখনও বাড়াবাড়ি করেই চলেছি। এই বাড়াবাড়ি শুধু এখন নয়, এই বাড়াবাড়ি বহুপূর্ব থেকেই চলে আসছে। রসুলের ওফাতের ৬০-৭০ বছর পর যখন জাতির আকিদায় ফাটল ধরলো তখন থেকেই জাতির মধ্যকার আলেমরা দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু করেছিলেন। সেই দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ির চূড়ান্ত রূপ আজ সমাজে বিদ্যমান।
উদাহারণস্বরূপ যদি আমি বলি আমাদের সমাজে মেয়েদের পর্দা করা নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আজও রয়েছে। পর্দা বলতে এখনও মনে করা হয় পা থেকে মাথা পর্যন্ত বোরকা দিয়ে ঢেকে রাখা। অনেকে নারীকে ঘরের বাইরে যেতে দিতেই নারাজ। কিন্তু ইসলামের নীতি কি সত্যিই এমন?
পবিত্র কোর’আনের সুরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে ও তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণভাবে প্রকাশমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের চাদর/ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে।” এছাড়াও কোর’আনের সুরা আহযাবের ৫৯ আয়াতে বলা হয়েছে, “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।”
এই দুটি আয়াতের মধ্যে যদি আমরা লক্ষ করি তাহলে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাবো যে আল্লাহ একটি সহজ নীতি দিয়ে দিয়েছেন। তিনি এখানে স্বাভাবিক কাজকর্ম করার জন্য প্রকাশমান অঙ্গগুলি খোলা রাখতে অনুমতি দিয়েছেন আবার চাদরের কিছু অংশ দিয়ে বক্ষদেশ আবৃত রাখতে বলেছেন যাতে তাদের মুখ ঢেকে গিয়ে তাদের চিনতে ব্যাঘাত না ঘটে। কিন্তু এই দুটি সহজ আয়াত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়। আজ নারীরা তাদের অধিকার পাবার জন্য পশ্চিমা অশ্লীল সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকছে কারণ তারা আল্লাহর এত সুন্দর বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ। আমাদের আলেম সমাজের অতি বিশ্লেষণ ও দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ির ফলে তাদের অনেকেই ইসলামকে দুর্বহ বোঝা মনে করেন। ইসলামবিদ্বেষী হয়ে যান। এমতাবস্থায় আমরা হেযবুত তওহীদ চেষ্টা করছি আল্লাহর দেওয়া সহজ-সরল নীতিগুলোকে পুনরায় উদ্ভাসিত করতে।
এরকম আরও বহু বিষয় রয়েছে যেগুলোর ব্যাপারে আমরা এখনও বাড়াবাড়ি করি। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে প্রেরণ করেছেন মানবজাতির কল্যাণ ও মুক্তির জন্য। সেই হেদায়াহ বা সত্যদ্বীন এসেছে মানবজীবনের সকল জটিলতা ও সংকীর্ণতা দুর করার জন্য। কিন্তু আমাদের মধ্যকার এক শ্রেণীর আলেম এখনও এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে নি। তারা এখনও দ্বীন নিয়ে বাড়াবড়ি করে যাচ্ছে এবং এর ফলে দ্বীন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ছে। আমরা হেযবুত তওহীদ এই বিষয়টি নিয়ে বরাবরই কথা বলে চলেছি। দ্বীন নিয়ে যা বাড়াবাড়ি হয়েছে সেগুলোকে দূর করে এখন আল্লাহ প্রদত্ত প্রকৃত দ্বীনকে ধারণ করতে হবে। আল্লাহ দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি নিষেধ করা সত্ত্বেও যদি আমরা সেটা করি সেটা হবে আল্লাহর হুকুম না মানা যা জাতির ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
‘দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ’ এ বিষয়টি স্পষ্ট করতে আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) এর জীবনের একটি উত্তম ঘটনা তুলে ধরছি। “তিনি একদিন কুফার একটি উন্মুক্ত স্থানে যোহরের সালাহ আদায় করলেন এবং মানুষের অভাব অভিযোগ শোনার জন্য বসলেন। এভাবে আসরের সালাহর সময় হয়ে গেল। তারপর তার কাছে পানি আনা হলে তিনি পানি পান করলের, মুখ-হাত-মাথা ইত্যাদি ধৌত করলেন। তারপর উঠে দাঁড়ালেন এবং দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট পানি পান করলেন। এরপর দাঁড়িয়ে বললেন- মানুষ দাঁড়িয়ে পানি পান করা পছন্দ করেন না কিন্তু আমি যা করলাম রসুল (স.) তাই করেছেন (সহী বুখারী, কিতাবুল আশরিক, দশম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩)

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...