রাকীব আল হাসান:
দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় অর্ধশতাব্দী হতে চললো। একটা জাতি গঠনের জন্য এটা নেহায়েত কম সময় নয়, বিশেষত গতি-প্রগতির এই যুগে। যে তথ্য পৌঁছাতে মাসের পর মাস চলে যেত তা এখন মুহূর্তের মধ্যেই পৌঁছে যায়, যে পথ পাড়ি দিতে বছর লেগে যেত তা আজ একদিনেই পাড়ি দেওয়া যায়, যে গাণিতিক হিসাব কষতে দিনের পর দিন মাথা খাটানো লাগত তা এখন একটা ক্লিকের ব্যাপার, যে তথ্য খুঁজে বের করতে শত শত বই ঘেঁটে হয়রান হতে হতো তা এখন সেকেন্ডের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়- এই গতিময়তার যুগে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু অর্ধশতাব্দ আগেই উপনিবেশের অবসান ঘটিয়ে পাশ্চাত্যরা মুসলিম দেশগুলো ছেড়ে চলে গেলেও কোনো মুসলিম দেশ আজ পর্যন্ত একটা স্থিতিশীল, ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করতে পারেনি, এমন কোনো ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি যা একটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখবে, এমন কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি যেটা হয়রানি বাদেই সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো দূর করতে পারে, এমন কোনো শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি যা জনগণকে চরিত্রবান, দেশপ্রেমিক, নিঃস্বার্থ, আত্মত্যাগী, দেশ ও মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হিসাবে তৈরি করবে। পাশ্চাত্যদের গোলাম থাকা কালে তারা মুসলিম দাবিদার এই জাতিকে যে শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়ে গেছে, যে হানাহানি, অনৈক্যের রাজনীতি শিখিয়ে গেছে সেটাই এখনো এরা চর্চা করে যাচ্ছে। পাশ্চাত্যরা এই ব্যবস্থাগুলো চাপিয়ে দিয়ে গেছে মুসলিমদেরকে চিরস্থায়ীভাবে গোলাম বানিয়ে রাখার জন্য আর এরাও বাদরের মতো তাদের অনুকরণেই কেবল সেই ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরা একবারও ভেবে দেখছে না যে, পাশ্চাত্যদের সামাজিক, সাংস্কৃতি, ধর্মীয়, ভৌগোলিক, মানসিক অবস্থা এদের থেকে ভিন্ন। তাদের জন্য যে ব্যবস্থা প্রযোজ্য তা মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। নিজ নিজ অঞ্চলের মানুষের সাথে খাপ খাবে এমন ব্যবস্থা অন্বেষণের চেষ্টা অবশ্যই করার দরকার ছিল। কিন্তু মুসলিম দাবিদার জাতিগুলোর নেতৃবৃন্দ কেবল প্রভুদের অনুকরণই করে গেছেন। পাশ্চাত্যদের সেখানো রাজনৈতিক সিস্টেমের চর্চা করতে করতে জাতিটা শত শত ভাগে বিভক্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
কয়েক’শ বছর পশুর মতো দাস জীবন যাপনের পর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফল হিসেবে যখন পাশ্চাত্য জাতিগুলো তাদের দাস খণ্ড খণ্ড তথাকথিত মুসলিম দেশগুলিকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে চলে গেল, তখন তাদের সৃষ্ট মানসিকভাবে তাদের ক্রীতদাস একটি শ্রেণির হাতে প্রশাসন দিয়ে গেল। এই শ্রেণিটি শুধু চামড়ার রংটা বাদে সর্বদিক দিয়ে পাশ্চাত্য খ্রিস্টান জাতিগুলির মানসিক ক্রীতদাস, তারা পূর্বতন প্রভুদের দয়ায় ক্ষমতা হাতে পেয়ে প্রভুদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদি সমস্ত ব্যবস্থা নিজ নিজ জাতির উপর বহাল রাখল।
মুসলমান নামক এই হতভাগ্য জাতির নেতারা তাদের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তারা আল্লাহর হুকুম বাদ দিয়ে, রসুলের আদর্শ বাদ দিয়ে সর্বতভাবে পাশ্চাত্যদের গোলামী করেছে, পাশ্চাত্যদের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করেছে কিন্তু নিজেরা জনগণের সামনে ধার্মিক সাজার চেষ্টা করেছে লেবাস দিয়ে আর ব্যক্তিগত আমল দেখিয়ে। এটা দেখে কথিত মুসলিমরা দলে দলে ভোট দিয়ে ঐ সমস্ত বর্ণচোরা নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়েছে। ইসলামের আদর্শ, শিক্ষা, পবিত্র কোর’আনের হুকুম-আহকাম কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে পাশ্চাত্যের জীবনদর্শনকে গ্রহণ করে নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে নিরাপদে নামাজ, রোজা, মোরাকাবা, মোশাহেদা করে ভাবছেন অতি মুসলিম, খুব ধার্মিক, মোত্তাকি হচ্ছেন।
পাশ্চাত্যদের অন্ধ অনুকরণ এমনভাবে করল এই মুসলিম দেশগুলো নেতৃবৃন্দ যে, তারা একবারও ভেবে দেখল না সেই ব্যাপারে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা কতটা কঠর। যেমন অর্থনীতিক সিস্টেমের ক্ষেত্রে তারা নিজেদের দেশে সুদভিত্তিক অর্থনীতি চালু রাখল। যদিও সুদের সর্বনি¤œ পাপ হলো নিজের মায়ের সাথে ব্যাভীচারে লিপ্ত হওয়া (নাউযুবিল্লাহ)। তারা এই অনুকরণ করল দেশকে পাশ্চাত্যদের মতো উন্নত করে তোলার আশায় (আসলে উন্নতি বলতে তারা পাশ্চাত্যদের মতোই কেবল অর্থনীতিক উন্নয়নই বুঝল)। অনুকরণের একটা পরিণতি হচ্ছে ব্যক্তিই হোক আর জাতিই হোক, নিজস্ব সত্তা হারিয়ে ফেলে। অন্যের অন্ধ অনুকরণ যে করতে যায়, তার কোনটাই হয় না, এটাও হয়না ওটাও হয় না। এই ব্যাপারে এসেও তাই হলো; করুণ ব্যর্থতা। কারণ বহু; একটা হলো চরিত্রের অভাব। দেশের, জাতীর স্বার্থের উপরে নিজের স্বার্থের স্থান, কাজে ফাঁকি, পরিশ্রমের বিমুখতা ইত্যাদি।
দ্বিতীয় হলো যে, প্রশাসন ব্যবস্থায় ঔপনিবেশিক প্রভুরা রেখে গেছেন সেটাকেও এই নেতৃত্ব ঠিক তেমনি ভাবেই বজায় রেখেছেন সেই একটা কারণে; হীনম্মন্যতার মানসিকতায়। অন্যান্য সব ব্যাপারের মতো নকল করায় ব্যর্থ হয়েছে এখানেও। প্রশাসনের ক্ষেত্রেও তেমনি ব্যর্থতা এসে দাঁড়িয়েছে ঐ একই কারণে, চরিত্রের অভাবে, এবং পাশ্চাত্যের প্রশাসন পদ্ধতি প্রাচ্যে প্রযোজ্য নয় বলে। ওদেশে কোথাও কোন অপরাধ ঘটলে দু’ থেকে পাঁচ মিনিটে পুলিশ পৌঁছায় আর এসব দেশে চব্বিশ ঘণ্টায়ও পৌঁছায় না। ওদেশগুলিতে কোথাও দুর্ঘটনা হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে এ্যাম্বুলেন্স এসে আহতকে তীরবেগে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং এ্যাম্বুলেন্স পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার, নার্স ক্ষিপ্রতার সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করে। আর এই জাতির দেশগুলিতে দুর্ঘটনা হলে এ্যাম্বুলেন্স আসে অনেক চেষ্টা, ডাকাডাকির পর, যদি সেটা অচল হয়ে পড়ে না থেকে থাকে, এবং হাসপাতালে পৌঁছার সময় অবধি যদি আহত বেঁচে থাকে তার দু’এক ঘণ্টা হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা বা পরিচর্যাহীন অবস্থায় পড়ে থাকে। ওদেশে ট্রেনের আসা যাওয়া দেখে ঘড়ি মেলানো যায়। এদেশে ট্রেন ইত্যাদির সময়ের অমিল মিনিটের নয় অনেক ঘণ্টার। এভাবে বলতে গেলে বহু হয়ে যাবে। মোট কথা কোন তুলনাই চলে না। পাশ্চাত্যের এই অন্ধ অনুকরণের চেষ্টার ফল যা দাঁড়িয়েছে তাতে সম্মুখে অগ্রসর প্রগতি তো দূরের কথা জাতীয় ও ব্যক্তি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে প্রাচ্যের প্রতিটি দেশ আজ শুধু পশ্চাত্যগামী নয়, অধঃগামী। উর্দ্ধগামী হয়েছে শুধু জনসংখ্যায়, অপরাধে, খুনে, জখমে, চুরিতে, রাহাজানীতে এবং পাশ্চাত্যের কাছে ঋণের, ধারের অংকের পরিমাণে। এই যে মুসলিম দেশগুলোর বর্তমান নেতৃত্বের করুণ ব্যর্থতা এই যে ঈমান, চরিত্র, আত্মা বিকিয়ে দিয়েও পার্থিব সম্পদ লাভের ব্যর্থতা, বৈষয়িকভাবে উন্নতি লাভেও ব্যর্থতা এ হচ্ছে বর্তমান মুসলিম বিশ্বের মোশরেক নেতৃত্বের নেট ফল।
পাশ্চাত্যদের চাপিয়ে দেওয়া ব্যবস্থাগুলো কার্যকর রাখায় মুসলিম বিশ্বে সমস্যা দাঁড়িয়েছে আরেকটা। ইসলাম হলো সর্বাধুনিক ধর্ম। একটা জীবন্ত ইতিহাস রয়েছে ইসলামের। কিছুদিন আগেও মুসলিমরা দুনিয়া শাসন করেছে। একটি সুমহান সভ্যতার জন্মদাতা তারা। আবু বকর (রা.), ওমরের (রা.) শাসনামল নিয়ে মুসলমানরা আজও গর্ব করে। তারা এমন একজন মহামানবের আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত যিনি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্ময়কর ইতিহাসের জন্মদাতা, যিনি ছিলেন একাধারে নবী, সেনাপ্রধান, সমাজ সংস্কারক, বিচারক। এই জাতির প্রাণশক্তি যে কোর’আন, তা হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যেটা ‘অপরিবর্তনীয়’ ও ‘অবিকৃত’ আছে। সেখানে হাজার হাজার আয়াত রয়েছে মুসলিমদের জাতীয় জীবনের সাথে জড়িত। সেই আয়াতগুলোর বাস্তবায়ন করা মুসলিমদের ঈমানী বাধ্যবাধকতার অংশ। কিন্তু জাতীয় জীবনে হুকুম দেওয়ার ক্ষমতা যখন তারা হারাল তখন স্বভাবতই প্রশ্নের জন্ম হলো- এখন তারা কী করবে? তারা না পারল আল্লাহর হুকুম প্রত্যাখ্যান করে ব্রিটিশের হুকুম গ্রহণ করে নিতে, আবার না পারল ব্রিটিশের হুকুম প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন করতে। শুরু হলো মুসলিমদের জাতীয় জীবনের সাথে ব্যক্তি জীবনের সংঘাত! ফলে ধর্মবিশ্বাসী মানুষের সাথে রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব শুরু হলো। সহজেই মানুষকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার রাস্তা খোলা রইল। এই সুযোগটাই গ্রহণ করে জঙ্গিবাদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মুসলিম বিশ্বে।
যাইহোক, মুসলিম বিশ্বের নেতাদের এই অন্ধ অনুকরণ কি পাশ্চাত্যদের ষড়যন্ত্র থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে পারছে? না, বরং একটার পর একটা মুসলিম দেশ ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে ষড়যন্ত্র করে করে। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, ইয়েমেন ইত্যাদি দেশ ইতোমধ্যেই ধ্বংসস্তুপ। মধ্যপ্রাচ্যের প্রত্যেকটা দেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আরবদেশগুলো যতদূর পারা যায় পাশ্চাত্যদের পদলেহন করে বেঁচে থাকার চেষ্টায় আছে কিন্তু শেষ রক্ষা হবে না।
মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে আমাদের দেশও একটি বৃহৎ মুসলিম প্রধান দেশ। আমাদের দেশ নিয়েও গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া সিস্টেম দিয়ে দেশ রক্ষা হবে না। আমাদেরকে বুঝতে হবে ব্রিটিশরা আমাদেরকে যে গণতন্ত্র শিখিয়ে গেছে সেটা কিন্তু তারা নিজেরাও আমাদের দেশে চর্চা করে যায়নি। তারা অস্ত্রের জোরে দু’শ বছর এখানে শাসন, শোষণ চালিয়েছে অথচ চলে যাবার সময় আমাদেরকে দিয়ে গেছে একটি অনৈক্য-বিভাজন সৃষ্টির সিস্টেম। তারা যেন স্থায়ীভাবে আমাদেরকে শোষণ চালিয়ে যেতে পারে এ কারণেই গোলামদের দেশে প্রভুদের চাপিয়ে যাওয়া এই সিস্টেম। তারা যখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শাসন, শোষণ চালিয়েছে তখন বিভিন্ন রকম বিরোধিতার শিকার হয়েছে, তখন তারা ভেবেছে যদি এই গোলামদেরকে পদানত রাখার সিস্টেম বের করা না যায় তাহলে এভাবে বেশিদিন টিকে থাকা যাবে না। তারা সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে তারাই আবার শিখিয়েছে কীভাবে অধিকার আদায়ের জন্য দাবি জানাতে হয়, কীভাবে প্রতিবাদ জানাতে হয়, কীভাবে মানববন্ধন, অনশন, হরতাল, অবরোধ ইত্যাদি করতে হয়। এভাবে তারা আমাদেরকে গণতান্ত্রিক সিস্টেম শিখিয়েছে হাতে ধরে ধরে।
তারা কিন্তু ভোট করেনি। ভোট করলে তারা কখনোই জিততে পারত না, তারা অস্ত্রের জোরে দু’শো বছর শাসন করেছে। তারা চলে যাবার সময় শয়তানি বুদ্ধির চালে আমাদের দেশটাকে পাকিস্তানের অধীন করে গেল। তখনও কিন্তু ভোটের মাধ্যমে শাসন করা হয়নি। জোর-যবরদস্তি চালানো হয়েছে, ভোটে জেতার পরেও আমাদের হাতে দেশের শাসনভার দেয়নি। ফলে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা লেগেছে।
বিশ্বপরিস্থিতি খুব টালামাটাল। পরাশক্তিগুলি জঙ্গিবাদী ইস্যু সৃষ্টি করে, মুসলিমদের অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে একটার পর একটা মুসলিম দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে, লুটপাট করে যাচ্ছে। আমাদের দেশকে নিয়েও চলছে জঙ্গিবাদী ষড়যন্ত্র। আঞ্চলিক শক্তিগুলিও প্রধান্য বিস্তারে ব্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে এখন একটা শক্তিশালী জাতিসত্ত¡া ছাড়া স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এমনকি আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাও অসম্ভব হয়ে যাবে।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, স্বাধীনতা পরবর্তী ৪৫ বছরে অবকাঠামোগত দিক দিয়ে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। যেখানে কাচা রাস্তা ছিল সেখানে পাকা রাস্তা হয়েছে, যেখানে টিনের ঘর ছিল সেখানে বিল্ডিং হয়েছে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে অনেক, ব্রিজ-কালভার্ট হয়েছে, ফ্লাই-ওভার হয়েছে, কলকারখানা হয়েছে, বহু মানুষ বিদ্যুৎ পেয়েছে, জাতীয় বাজেটের আকার বেড়েছে বহুগুণ। বৈষয়িক দিক থেকে আমাদের উন্নতি হলেও আমাদেরকে বুঝতে হবে একটা জাতির সবচেয়ে বড় শক্তি হলো জনসাধারণের ঐক্য। একটা জাতি যখন সঙ্কটে পড়ে তখন এই ঐক্যই পারে জাতিকে সঙ্কট থেকে উদ্ধার করতে। ১৯৭১ সাল তার জ্বলন্ত উদাহরণ।
স্বাধীনতার পর থেকে এ জাতির কর্ণধারদের উচিত ছিল পাশ্চাত্যদের অনুকরণ না করে, ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া ব্যবস্থাগুলোর মূলোৎপাটন করে ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। কেবল আমাদের দেশ নয়, পুরো মুসলিম বিশ্বের একই অবস্থা। জনগণ তো নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করে, ব্যক্তিগত জীবনে নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি বহুবিধ আমলও করে কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে চলে উপনিবেশিক আমলে পাশ্চাত্যদের রেখে যাওয়া সুদভিত্তিক অর্থনীতি, হানাহানির রাজনীতি আর পাশ্চাত্য প্রভুদের পদলেহন।
এখন ব্রিটিশদের তৈরি এই বিভাজনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখালে আমাদের দেশটাও সিরিয়া-ইরাক হবে। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি। এমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যেটা ষোল কোটি মানুষকে ইস্পাত-কঠিন ঐক্যবদ্ধ করবে। এই হানাহানির রাজনীতি আমাদের কখনোই শান্তি দিতে পারেনি। এটা থেকে এখন বেরিয়ে আসা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এখন বেরিয়ে আসার উপায়টা আমাদেরকে ঠিক করতে হবে।