নুরুল আবসার সোহাগ:
সন্ত্রাস শব্দটির সঙ্গে সর্বশ্রেণির মানুষ ব্যাপকভাবে পরিচিত। সন্ত্রাস যারা করে তাদেরকে বলে সন্ত্রাসী, ইংরেজীতে টেরোরিস্ট, হিন্দিতে আতঙ্কবাজ। সাধারণত বোমা ফাটিয়ে, অস্ত্র ব্যবহার করে যারা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং মানুষের জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি করে তারাই হল সন্ত্রাসী। স্বাভাবিকভাবেই এসব সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেফতার করলে তাদের কাছে পাওয়া যায় বোমা, গ্রেনেড অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি। এসব সন্ত্রাসীদেরকে মানুষ ঘৃণা করে। কিন্তু আমাদের সমাজে আরেক শ্রেণির সন্ত্রাসী বসবাস করে যাদেরকে মানুষ ঘৃণা তো করেই না, উল্টো সম্মান, শ্রদ্ধা ও সমীহ করে। এই সন্ত্রাসীরা সুবেশী এবং শিক্ষিত তবে সুশিক্ষিত কিনা তা প্রশ্নসাপেক্ষ। এই সন্ত্রাসীরা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মতো অন্ধকারে বাস করে না, এদের সগর্ব পদচারণায় ধন্য সমাজের উঁচু তলা। এরা তাদের আত্মীয় পরিজনের মুখ উজ্জ্বল করে সমাজে তথ্যসন্ত্রাস বিস্তার করে থাকেন। এরা হলেন পশ্চিমা বস্তুবাদী ‘অসভ্য’ সভ্যতার তল্পিবাহক লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট পরিচয়ধারী তথ্যসন্ত্রাসী। এদের হাতে অসি নেই, আছে মসী। আর মসীর ধার যে অসির চেয়ে বহুগুণ বেশি সেটার প্রমাণ তারা হরহামেশাই দিয়ে থাকেন। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মানুষের জীবন-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়, কিন্তু তথ্যসন্ত্রাসী জীবন-সম্পদের পাশাপাশি সম্মানও ছিনিয়ে নেয়। তাদের কলমের এক লাইন লেখায় হাজার হাজার তলোয়ারের ঝনঝনানির সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে। এই তথ্যসন্ত্রাসীদের আক্রমণে অতীতে বিধ্বস্ত হয়েছে বহু দেশ, জনপদ, বিলীন হয়ে গেছে বহু সভ্যতা। সম্প্রতি আমরা ইরাক, আফগানিস্তান ইত্যাদি দেশে মার্কিন সেনাবাহিনীর আক্রমণের প্রেক্ষাপট তৈরিতে তথ্যসন্ত্রাসী তথা মিডিয়ার ভূমিকা প্রত্যক্ষ করেছি। টুইনটাওয়ার হামলার ঘটনার পর তেমন কোনো তথ্য-প্রমাণ ও তদন্ত ছাড়াই ঘোষণা করা হলো যে, এটা আল কায়েদার কাজ। আল কায়েদার প্রধান ওসামা আছেন আফগানিস্তানে। সুতরাং আফগান আক্রমণ করতে হবে। এই আক্রমণের বৈধতা প্রমাণ করার জন্য পশ্চিমা বিশ্ব তার গণমাধ্যমগুলিকে ভীষণভাবে ব্যবহার করল। প্রতিটি মিডিয়া একযোগে তালেবান শাসনাধীন আফগানিস্তানের মানুষদের অসহায়ত্বের কথা, সেখানে নারীদের উপর আরোপিত কঠোর পর্দাপ্রথা, বাকপরাধীনতা, বিচারের নামে ‘মধ্যযুগীয় বর্বরতা’ ইত্যাদি সংবাদ প্রচার করতে লাগল। এরই মধ্যে সামরিক হামলা শুরু হলো, পাশাপাশি চলল মিডিয়ার হামলা। বিশ্বের মানুষের মন তালেবানদের বিরুদ্ধে নয়, একেবারে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষিয়ে দেওয়া হলো। এরপর একইভাবে ইরাক হামলার বৈধতাও মিডিয়া বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হলো। বিশ্বের মানুষের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে একটি দেশ আক্রমণ করার মধ্যে জনমত হারানোর ঝুঁকি থাকে, নির্বাচনের কথাও মাথায় রাখতে হয়। এজন্য রাষ্ট্রের দ্বারা সংঘটিত প্রতিটি অন্যায়ের বৈধতার পক্ষে ফতোয়া হাজির করতে প্রয়োজন পড়ে বুদ্ধিজীবী তথ্যসন্ত্রাসীদের। আগের কালে যখন ধর্ম দিয়ে রাজ্যশাসন হতো, তখন রাজা-বাদশাহরা কিছু মুফতি, মওলানাদেরকে টাকা দিয়ে পুষতেন। এই ধর্মজীবীরা রাজার সকল অন্যায়ের পক্ষে ধর্মীয় যুক্তির যোগান দিত। সেটা প্রচার করে দিলে জনগণ রাজার বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগ আনতে পারত না। এখন ধর্মনিরপেক্ষতার যুগ, তাই ধর্মহীন তথ্যজীবীদের বাজার বেশ চড়া। ধর্মজীবীরা মানহীন শিক্ষাব্যবস্থার কুফলে সমাজের ‘নিুবর্গের’ পূজ্য হয়ে আছেন।
তথ্যসন্ত্রাসীদের সঙ্গে অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের আরও বড় একটি মিল আছে। অস্ত্রসন্ত্রাসীরা যেমন কাউকে আক্রমণ করার আগে তার গতিবিধি, চলাফেরা, আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করে, তারপর সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, মোক্ষম সুযোগে হামলা করে। হয়তো বোমা মারে, নয়তো গুলি করে বা যে কোন ক্ষতি করে। তথ্যসন্ত্রাসীরাও আগে থেকে সহযোগী ঠিক করে রাখে, তথ্যের সোর্স তৈরি করে, গোয়েন্দাগিরি করে তার দুর্বলতাগুলি জেনে রাখে, তারপরে কোনো এক দুর্বল মুহূর্তে শুরু করে হামলা। পত্রিকায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা তার বিরুদ্ধে লেখা হয়, তার অতীতের সকল অপরাধগুলির ময়নাতদন্ত ফলাও করে প্রচার করা হয়। যারাই তাদের কায়েমী স্বার্থসিদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় অথবা যারা পশ্চিমা সভ্যতার জীবনদর্শনে বিশ্বাসী নয় অথবা যার কাছ থেকে তারা মোটা অঙ্কের অর্থ আশা করে তাদেরকেই এ তথ্যসন্ত্রাসীরা প্রতিপক্ষ হিসাবে গ্রহণ করে। এরপরে তার বিরুদ্ধে এমন জঘন্য মিথ্যাচার ও অপশব্দ ব্যবহার করতে থাকে যে সে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষের মনে ঘৃণা, বিদ্বেষ এক কথায় একটি নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়। প্রথমে আক্রান্ত লোকটির মান-সম্মান ইজ্জত বলতে সমাজে কিচ্ছু থাকে না, একটা পর্যায়ে সে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে থাকে। কিন্তু প্রচলিত আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলি পেরিয়ে নির্দোষ প্রমাণ হতে হতে তার দফা রফা শেষ। যেমন ধরুন পুলিশ সন্দেহবশত একজন সাধারণ মানুষকে ডাকাত ভেবে গ্রেফতার করল, কিন্তু সে আসলে ডাকাত নয়। তথ্যসন্ত্রাসীরা তার ছবি তুলে পত্রিকায় প্রকাশ করে দিল, বুকে নেমপ্লেট সাঁটা, পাশে দাঁড়িয়ে দু’জন বীর পুলিশ। পরিচিতমহলে তার মানসম্মান ধূলায় মিশে গেল। মামলা আদালতে গড়াল। সেখানে সে নির্দোষ প্রমাণিত হলো। এরই মধ্যে কয়েকবছর সময় কেটে গেল। সে জীবিকাহীন হলো, তার পরিবারের সদস্যরা সর্বত্র লাঞ্ছিত হলো। কিন্তু সে যখন নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে জেল থেকে বেরিয়ে এল তখন তার হৃত সম্মান ফিরিয়ে দিতে কোনো সম্পাদক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এগিয়ে এল না।
দু’টি বিশ্বযুদ্ধের পেছনেই এ জাতীয় তথ্যসন্ত্রাসীদের বিরাট ভূমিকা ছিল- এটা ইতিহাস। তাদের মিথ্যাচারের দ্বারা রচিত হয়েছে ইরাক ইরান যুদ্ধের পটভূমি। তাদের কারণে আজকে দেশে দেশে বহু নিরীহ মানুষ অহেতুক হয়রানীর শিকার হচ্ছে। এই তথ্যসন্ত্রাসীদের দ্বারা আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছি সম্ভববত আমরাই অর্থাৎ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর অনুসারিবৃন্দ। আমরা মানবজাতির সামনে একটি মহাসত্য তুলে ধরছি, কারণ এটা আমাদের দায়বদ্ধতা। মানবজাতির মুক্তির পথ আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়েছেন। আমরা যদি সেটা মানুষকে না জানাই, মানুষ কোনোদিনও শান্তির পথ খুঁজে পাবে না, অশান্তির মধ্যেই হাবুডুবু খেতে থাকবে। আমরা জোর করে তাদেরকে উদ্ধার করতে পারব না সত্য, কিন্তু তাদেরকে জানাতে পারি। তারা যদি আমাদের কথায় মনোযোগ দেয় অবশ্যই মুক্তির পথ পাবে, শুধু ইহজাগতিক মুক্তিই নয়, পারলৌকিক মুক্তির পথও আল্লাহ যামানার এমামের মাধ্যমে আমাদেরকে বোঝার তওফিক দিয়েছেন। একজন অন্ধকে মানুষ বলে দেয় যে, তোমার সামনে একটি খাদ আছে। এক পা বাড়ালে পড়ে যাবে। আমি তোমাকে পার করে দিচ্ছি। এটা মানুষ মানবতাবোধ থেকেই করে, কোনো স্বার্থের কারণে না। আমরাও তেমনি মানবজাতিকে সতর্ক করছি। এখন কেউ যদি বলে যে, অন্ধকে সাবধান করার প্রয়োজন নেই, তাকে পড়তে দাও তাহলে সে কি মানবতার শত্র“ নয়? আজ আমরা যখন মানুষের সামনে তাদের সঙ্কটের কারণ এবং তা থেকে মুক্তির পথ বলার চেষ্টা করছি, তখন আমাদের দেশের কতিপয় মিডিয়া তথ্যসন্ত্রাসীর বেশে আবির্ভূত হয়ে শুরু করেছে চিৎকার, ওদের কথা শুনো না। তাদের প্রসঙ্গে শুরুতেই একটি কথা বলে নেয়া যুক্তিযুক্ত হবে যে, সকল মিডিয়াই যে তথ্যসন্ত্রাস করে আমরা তেমন অভিযোগ করি না, অনেক মিডিয়াকর্মী আছেন যারা ব্যক্তিগতভাবে সত্যনিষ্ঠ। বিভিন্ন টকশো, সভা-সেমিনারে তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তারা সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে তুলে ধরছেন। তাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু যারা সত্যের সঙ্গে মিথ্যা মিশিয়ে মানুষকে খাওয়ান, তথ্য সংগ্রহ না করে তথ্য রচনা করেন, যারা কেবল মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্যই সাংবাদিকতা পেশাকে গ্রহণ করেছেন তাদেরকেই তথ্যসন্ত্রাসী হিসাবে উল্লেখ করছি।
আমাদের কথা হচ্ছে, কোটি কোটি মানুষ কি ঘাস খায়? না। তাদের নিজেদের ভালোমন্দ বোঝার বুদ্ধি আছে। আমরা তাদের সামনে যে বক্তব্য তুলে ধরছি সেটা যদি তাদের পছন্দ না হয় তারা তা নেবে না, পছন্দ হলে নেবে। কিন্তু তাদেরকে শোনা থেকে, জানা থেকে, পড়া থেকে বিরত রাখার অধিকার কেউ তাদেরকে দেয় নি। উপরন্তু তারা এ কাজে যেটাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে সেটা হচ্ছে মিথ্যা অপবাদ আরোপ। বিভিন্ন গালভরা শ্লোগান লেখা সাইনবোর্ড বুকে ঝুলিয়ে জাতির বিবেক হবার দাবিদাররা আমাদের সম্বন্ধে নির্জলা মিথ্যা প্রচার করেন কিন্তু ঐ মিথ্যা প্রচারের বলি ভুক্তভোগী আমরা যখন তার প্রতিবাদ করি, তাদের কথা মিথ্যা তা প্রমাণ করি, তখন তা পত্রিকায় প্রকাশ করার সৎসাহস তাদের নেই। আমরা যখন তাদের জানিয়ে দেই যে তারা মিথ্যা প্রচার করছেন, তারপরও তারা আবারও সেই একই মিথ্যা লিখেন। শুধু মিথ্যাই লেখেন না, আমাদেরকে হয়রানী, নির্যাতন, নিপীড়ন করার জন্য প্রোপাগান্ডা চালিয়ে প্রশাসনকে প্ররোচিত করেন। বর্তমানে সারা বিশ্বেই গণতন্ত্রের জোয়ার। বিশ্বের প্রধান গণমাধ্যমগুলিসহ অধিকাংশ দেশ নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক মতাদর্শে বিশ্বাসী বলে মনে করে, তাই তারা বাক-স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদির কথা বলে। এই নীতি-আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের মিডিয়াগুলি গণতন্ত্রের বিপরীত যে মতাদর্শগুলি সম্পূর্ণ ভিন্ন সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী যেমন সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, ফ্যাসিবাদীদের মতাদর্শ প্রচারে বাধা দেয় না, তাদের সম্বন্ধে মিথ্যা প্রচার করে না, উপরন্তু সহযোগিতা করে; অথচ আমরা স্রষ্টার সার্বভৌমত্ব ভিত্তিক জীবনাদর্শ, যে একমাত্র জীবনাদর্শ বাস্তবিকই মানবজাতিকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে সমর্থ হয়েছিল, সেটার প্রচার করতে গেলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা ইত্যাদির কথা বেমালুম ভুলে যান। শুধু তাই নয়, এদেশের বাম মতাদর্শে বিশ্বাসী সশস্ত্র দলগুলি হাজার-হাজার লোক নৃশংসভাবে হত্যা করেছে এবং করছে, সরকারী অস্ত্র লুট, অপহরণ, সন্ত্রাসী, রাহাজানী করছে, বহু আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকেও হত্যা করেছে, তাদের ব্যাপারেও মিডিয়া তেমন একটা সোচ্চার নয়। যে দলগুলি গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রচারক তারাও প্রকাশ্যে এ জাতীয় অপরাধগুলি করে থাকে। কিন্তু যে দলটি জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ বছর সময়ে একটিও অপরাধ, একটিও আইনভঙ্গ করে নি, তাদের বিরুদ্ধে অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমগুলি অবিশ্রান্তভাবে হাজার-হাজার মিথ্যা কথা প্রচার করেছে, জঙ্গী, সন্ত্রাসী, গোপন ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার করে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মনে আমাদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা দিয়ে চলেছে। গোয়েবলসের নীতি ছিল- একটি মিথ্যাকে একশতবার প্রচার করলে মানুষ সেটাকেই সত্য বলে ধরে নেয়। এই গোয়েবলসই হচ্ছে তথ্যসন্ত্রাসীদের পয়গম্বর।
এদের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা সেনাবাহিনীর ব্যারাক থেকেও সাংঘাতিক। এদের বিরুদ্ধে কোনো আইনও কার্যকর হয় না। এদের মান এত বেশি সুরক্ষিত যে, কারো মানহানী মামলাকে এরা গ্রাহ্য করে না। এরা চাইলে একজনের নামও পাল্টে দিতে পারে। আমাদেরকে হয়রানি করার জন্য এরা প্রায়ই পত্রিকায় হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে হেযবুত তওহীদের নাম জড়িয়ে দিয়েছে। দু’টি দলের নামের আংশিক মিলের কারণে দেশের বহুস্থানে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে পুলিশ নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীর মনে করে গ্রেফতার করেছে। একটি পত্রিকায় মাননীয় এমামুয্যামানের নামই লেখা হয়েছিল জুনায়েদ খান পন্নী। বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠনগুলির তালিকায় বারবার হেযবুত তওহীদের নাম উল্লেখ করেছে। যেখানে হেযবুত তওহীদের সমস্ত কার্যক্রম দিনের আলোর মত সমুজ্জ্বল, যেখানে আমরা দেশজুড়ে ৩৫ হাজারেরও বেশি সভা-সেমিনার, পথসভা ইত্যাদির আয়োজন করলাম তারা অপরিসীম উপেক্ষায় কিংবা অক্ষম আক্রোশে চোখ বন্ধ করে রইল। একটি লাইনও তারা পত্রিকায় লিখল না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে চালিয়ে যাচ্ছে সীমাহীন কূটিল ষড়যন্ত্র। কী করলে গোপনীয়তা থেকে বের হয়ে আসা যায় তা আমার জানা নেই। তবে কি রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙচুর না করলে প্রকাশ্য হয় না? প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি না করলে প্রকাশ্য হয় না? হরতাল অবরোধ করে, রাস্তাঘাট কেটে জনজীবন দুর্বিসহ করলেই কি তাকে প্রকাশ্য বলে? আমরা যদি এগুলো করতে পারতাম, তাহলে বোধকরি ঐ তথ্যসন্ত্রাসীরা আমাদেরকে আপন করে নিতেন। গণতন্ত্রের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ঐ কাজগুলো অনাকাক্সিক্ষত নয়, (কার্যত) অবৈধও নয়, কিন্তু মানবতার আদালত সেই সহিংসতার অনুমতি দেয় না বলেই আমরা আজীবন বিশ্বাস করি। এজন্যই কি আমরা তথ্যসন্ত্রাসের আঘাতে রক্তাক্ত?
যারা এতদিন ধরে আমাদের বিরুদ্ধে অক্লান্তভাবে লিখে চলেছেন তাদের প্রতি আমাদের দুটি কথা আছে। প্রথমত, পশ্চিমা ভাবাদর্শের সাংবাদিক হওয়ায় স্বভাবজাতভাবেই ইসলামের বিরুদ্ধে আপনারা অবস্থান নিয়েছেন। আমাদের কথা হচ্ছে, আল্লাহর রসুল যে ইসলাম নিয়ে এসেছিলেন সেটা বহুজনের দ্বারা বিকৃত হতে হতে বহুমাত্রিক রূপ ধারণ করেছে। বিকৃত ধর্ম দিয়ে শান্তি আসবে না এটা সহজ কথা। এই বিকৃত ধর্মকে ধারণ করে আছে লেবাসধারী ধর্মব্যবসায়ী আলেম সমাজ। তারা তিনটি বিষয়ে ধর্মের মধ্যে পাকাপোক্ত করে দিয়েছে, এক) ধর্মব্যবসা, দুই) জঙ্গিবাদ, তিন) সাম্প্রদায়িকতা। অথচ এ তিনটি বিষয়ই আল্লাহর প্রকৃত ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ এবং পথভ্রষ্টতা। আপনারা এগুলোকে ধর্মের অনুষঙ্গ মনে করে ধর্মবিদ্বেষী হয়েছেন। পক্ষান্তরে আমরা যামানার এমামের অনুসারীরা এই পথভ্রষ্টতাগুলিকে চিহ্নিত করে এগুলোর হাত থেকে মানবজাতিকে বাঁচানোর জন্য সংগ্রাম করছি। আমাদের কথা হচ্ছে, ইসলাম ধর্মের বিকৃতিকে নিষ্কাষণের চেষ্টা করুন, ইসলামকেই গালাগাল করবেন না। কেউ ইসলামের পক্ষে দাঁড়ালেই সন্ত্রাসী হয়ে যায় না, জঙ্গি হয়ে যায় না। আপনাদের চোখ আছে, বিবেকবুদ্ধি আছে, কেন সেগুলিকে কাজে লাগাচ্ছেন না। আগে যাচাই করুন, যাচাই করার মানদণ্ড হচ্ছে মানবতার কল্যাণ। যার দ্বারা মানবতার অকল্যাণ হচ্ছে এবং যে কোনো স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত সে অবশ্যই ধার্মিক নয়। কারণ মানবতাই বড় ধর্ম, মানবতাই ইসলাম, মানবতাই সনাতন। পক্ষান্তরে যাচাই করুন, কে মানবতার কল্যাণে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে বিনা স্বার্থে কাজ করছে। তবেই হেযবুত তওহীদকে বুঝতে পারবেন। তারপরও যারা আমাদের বিরুদ্ধে লিখবেন, তাদের ব্যাপারে সেইন্ট ভিনসেন্টের বিখ্যাত উক্তিটিই আমার সম্বল: … Let them bark.