কামরুল আহমেদ: যদি প্রশ্ন করা হয় জাহান্নামের কোনো প্রকার আজাবের স্পর্শ ব্যতিরেকে একজন মানুষ খুব সহজেই জান্নাতে যাবে কী করে? এর উত্তর হবে, একমাত্র তওহীদ গ্রহণের মাধ্যমে। এ মহা মূল্যবান তওহীদ আল্লাহ আদম (আ.) থেকে শেষ নবী পর্যন্ত সকল নবী-রসুলকে দান করেছেন। আল্লাহর রসুল এই তওহীদকেই জান্নাতের চাবি বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, “জান্নাতের চাবি হচ্ছে- আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা (এলাহ) নেই” (মুয়াজ বিন জাবাল থেকে আহমদ, মেশকাত)। এই উপমা দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে কোনো আমল দিয়েই মানুষ জান্নাতের বন্ধ দুয়ার খুলতে পারবে না। কেবল তওহীদই মানুষকে জান্নাতে নিতে পারবে।
তাহলে প্রশ্ন আসে, আমল অর্থাৎ নামাজ রোজা ইত্যাদি করে কী হবে?
হ্যাঁ, এর উত্তর হচ্ছে, আমল দিয়ে জান্নাতের স্তর নির্ধারিত হবে। একজন মো’মেন জান্নাতে যাওয়ার পর জান্নাতের অসংখ্য স্তরের মধ্যে কোন স্তরে অবস্থান করবে সেটা নির্ধারিত হবে তার আমলের ভিত্তিতে। স্তরবিন্যাসের সময় তার প্রত্যেকটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আমলও আল্লাহ পরিমাপ করবেন। আল্লাহ বলেছেন, “মানুষ দুই প্রকার- মো’মেন ও কাফের (সুরা তাগাবুন ২)। এই মো’মেন হচ্ছে যারা তওহীদে থাকবে (আল্লাহর হুকুমকে স্বীকার করবে) এবং কাফের হচ্ছে যারা তওহীদ (আল্লাহর হুকুমকে) অস্বীকার করবে। হাশরের দিন শুরুতেই আল্লাহ গোটা মানবজাতিকে দুটো ভাগে বিভক্ত করে ফেলবেন। তিনি বলবেন, “হে অপরাধীরা! আজকে তোমরা পৃথক হয়ে যাও (সুরা ইয়াসীন ৫৯)। একভাগে থাকবে তারা যারা তওহীদে ছিল, অপরভাগে তারা থাকবে যারা তওহীদে ছিল না।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, আজকে মুসলমান জাতি লক্ষ প্রকার আমল করে যাচ্ছে কিন্তু তারা তওহীদেই নেই। তারা আল্লাহর পরিবর্তে পশ্চিমা বস্তুবাদী দাজ্জালীয় সভ্যতার হুকুমবিধানকে বরণ করে নিয়েছে।
তওহীদের গুরুত্ব: এর গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহর রসুল কী বলেছেন খেয়াল করুন। তিনি একদিন আবু যার গেফারিকে (রা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এই ঘোষণা দিল যে আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করল।” আবু যার (রা.) বিস্মিত হলেন।
তওহীদবিহীন কোনো আমলই আল্লাহ গ্রহণ করবেন না
জিজ্ঞেস করলেন, “রসুলাল্লাহ! যদি সে চুরি করে এবং ব্যভিচার করে?” রসুলাল্লাহ বললেন, “হ্যাঁ, যদি সে চুরি ও ব্যভিচার করে তবুও জান্নাতে দাখিল হবে।” আবু যার (রা.) বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাই তিনি নিশ্চিত হওয়ার জন্য বার বার একই প্রশ্নই করতে থাকলেন। চারবার একই উত্তর দেওয়ার পর, রসুলাল্লাহ বললেন, “হ্যাঁ, সে জান্নাতে যাবে যদি সে চুরি করে, যদি সে ব্যভিচার করে এমন কি যদি মাটিতে আবু যারের নাক ঘসেও দেয়।” (আবু যার গেফারি রা. থেকে বোখারি)।
মৃত্যুদণ্ডের পরে ইসলামের সবচেয়ে কঠিন দণ্ড হচ্ছে চুরি আর ব্যভিচারের। যারা এই দুটো জঘন্য অপরাধও করবে তাদেরকেও আল্লাহ জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন না, যদি সে একমাত্র আল্লাহকেই তার হুকুমদাতা হিসাবে বিশ্বাস ও মান্য করে। বিশ্বনবী পরিষ্কারভাবে বলেছেন, আল্লাহর সাথে তার বান্দার চুক্তি এই যে, বান্দা তার পক্ষ থেকে যদি এই শর্ত পালন করে যে, সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ইলাহ অর্থাৎ বিধাতা বলে স্বীকার করবে না- তবে আল্লাহও তার পক্ষ থেকে এই শর্ত পালন করবেন যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন (হাদীস- মুয়ায রা. থেকে বোখারী, মুসলিম মেশকাত)।
একটি হাদিসে কুদসি রয়েছে যেখানে রসুলাল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ বলেন, হে বনি আদম! হে বনি আদম! যদি তোমার গুনাহ আকাশের মেঘমালার মতো বিপুল পরিমাণও হয়, তারপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমার সে গুনাহ মাফ করে দেবো এবং সে জন্য আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! যদি তুমি পৃথিবী পরিমাণ বিশাল গুনাহরাশি নিয়েও আমার দিকে ফিরে আসো এবং আমার সাথে আর কাউকে শরিক না করো, তাহলে আমিও তোমার প্রতি পৃথিবী পরিমাণ বিশাল ক্ষমা নিয়ে হাজির হবো [আনাস (রা.) থেকে তিরমিযি]”। এখানেও ঐ একই শর্ত- আল্লাহর সাথে শরিক করা যাবে না অর্থাৎ তওহীদে থাকতে হবে।
রসুলাল্লাহর নবুয়তি জীবনের তেইশ বছরের তের বছরই কেটেছে তওহীদের ডাক দিয়ে। প্রথমে তিনি কোনো আমলের দাবিই করেন নি। তিনি কেবল একটা কথাই বলেছেন, হে আরব জাতি! তোমরা যদি একটা কথা স্বীকার করো পৃথিবী তোমাদের পায়ের তলায় লুটিয়ে পড়বে। তোমরা বল, আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম, কর্তৃত্ব আমরা মানব না। মক্কার কাফেরদের আপত্তিই ছিল তওহীদ নিয়ে। দ্বন্দ্বটাই এখানে যে কার সার্বভৌমত্ব চলবে, আল্লাহর না মানুষের। সালাহ-সওম নিয়ে কোনো নির্যাতন নিপীড়ন হয় নি, কারণ ওগুলোর হুকুমই তখন আসে নি।
তওহীদের এত গুরুত্ব কেন?
তওহীদের গুরুত্ব বুঝতে হলে আগে বুঝতে হবে এই তওহীদের মানে কী? এর মধ্যে কী এমন কথা আছে যার দরুণ সমস্ত গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন? জেনা চুরিও ক্ষমা করে দেবেন। অসংখ্য নবী-রসুল এই কথাটির কারণে অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করেছেন। শেষ নবীও নির্যাতনে জর্জরিত হয়েছেন। তিনি কোনো আমলের দাওয়াত দেন নি যে আমলের জন্য তাকে নির্যাতন করা হবে। তাকে নির্যাতন করাই হয়েছে তওহীদের জন্য। সেই তওহীদটা কী? সেটা হচ্ছে, ছোট্ট একটি বাক্য “লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ”। এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা, বিধানদাতা নেই। এক কথায় সার্বভৌমত্ব, সর্বময় কর্তৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে- আল্লাহর হাতে নাকি মানুষের হাতে? বর্তমানে এই কলেমার ইলাহ শব্দের অর্থ মা’বুদ করা হয়। কিন্তু মা’বুদ আরবি শব্দ, ইলাহও আরবি শব্দ। দুটো শব্দই কোর’আনে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন। মাবুদ অর্থ উপাস্য, তিনি সেই সত্তা যার এবাদত, উপাসনা করতে হবে । আর ইলাহ শব্দের অর্থ তিনি সেই সত্তা যার হুকুম, আদেশ মানতে হবে । আল্লাহ ইলাহ এবং মাবুদ উভয়ই। কিন্তু কলেমায়, তওহীদে কেবল ইলাহ হিসাবে মেনে নেওয়ার জন্য দাবি করা হয়েছে। আল্লাহকে ইলাহ হিসাবে মানার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর সাথে বান্দার একটি চুক্তি যে বান্দা তার ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, জাতি, অর্থনীতি, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি কোনো ক্ষেত্রে আর কারো আধিপত্য, হুকুম মানবে না। যদি মানে তাহলে সেটা হবে শেরক, অংশীবাদ। আর যদি আল্লাহর হুকুম সম্পূর্ণ অস্বীকার করে সেটা হবে কুফর (প্রত্যাখ্যান)।
আল্লাহর অসংখ্য গুণাবলী যেমন তিনি সৃষ্টিকর্তা, রেজেকদাতা, উপাস্য ইত্যাদি সব স্বীকার করেও যদি তাঁর হুকুম না মানে, অর্থাৎ তাঁকে ইলাহ বলে না মানে তাহলে যত আমল করুক সব ব্যর্থ হবে। সে জান্নাতে যেতে পারবে না। এজন্য ইসলামের সমস্ত বিষয়টিকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। ঈমান ও আমল। যে ঈমান আনল তার জন্য আমল। এই ঈমান কিসের উপর? আল্লাহর অস্তিত্বে নয় কেবল, আল্লাহর হুকুমের উপর, আল্লাহর সার্বভৌমত্বের উপর ঈমান। এটা যে আনবে তার জন্য নামাজ, রোজা, হজ্বসহ অন্যান্য আমল প্রযোজ্য হবে।
প্রশ্ন হতে পারে, তওহীদের বেলায় আল্লাহ এত উদার কেন আর শেরক-কুফরের বেলায় এত কঠোর কেন? তওহীদে থাকলে কোনো গোনাহ আল্লাহ দেখবেন না, সব মাফ করে দেবেন। আর তওহীদে না থাকলে, শেরক করলে কোনো আমলই আল্লাহ দেখবেন না, সবসুদ্ধ জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
এখানে আল্লাহ এত কঠোর কেন?
এর উত্তর হচ্ছে, ইবলিসের সাথে আল্লাহর চ্যালেঞ্জ হয়েছিল এই বিষয়টি নিয়ে। আদম সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ তাঁর সব মালায়েকদের ডেকে তাঁর সিদ্ধান্ত জানালেন যে, তিনি এমন কিছু সৃষ্টি করতে চান যার ভিতরে আল্লাহর সব গুণ থাকবে, সে হবে আল্লাহর প্রতিনিধি। এ কথা শুনে মালায়েকরা এর পরিণাম কী হতে পারে সে বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করলেন। তারা বললেন, আপনার এই সৃষ্টি তো পৃথিবীতে গিয়ে ফাসাদ (অন্যায়, অবিচার) ও সাফাকুদ্দিমা (রক্তপাত, যুদ্ধ) করবে। আল্লাহ বললেন, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।
তিনি নিজ হাত দিয়ে আদমকে বানালেন এবং তাঁর ভিতরে নিজের রূহ প্রবেশ করিয়ে দিলেন। মানুষ আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হলো। সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করার বিবেক নামক আদালত তার মধ্যে স্থাপিত হলো। এটা আর কারো মধ্যে নেই। আল্লাহ সমস্ত মালায়েককে আদেশ করলেন, তোমরা এর প্রয়োজন পুরণে নিয়োজিত হও। তারা সেজদা করে আদমের সেবায় আত্মনিয়োগ করল। এ কারণেই শক্তিশালী জীবজন্তু থেকে মহাশক্তিশালী বিদ্যুৎকে পর্যন্ত আমরা চাকরের মত ব্যবহার করি, আগুনের মত দৈত্যকে ছোট দেশলাইয়ের বাক্সে পুরে রাখি।
কিন্তু ইবলিস সেদিন সেজদা করে নি। সে আল্লাহর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল এই বলে যে, মানুষ আল্লাহর হুকুম মানবে না। পরিণামে সে অশান্তিতে (ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমায়) পতিত হবে। মানুষ অশান্তিতে পতিত হলেই ইবলিসের জয় এবং আল্লাহর পরাজয়। আল্লাহ মানুষের বিবেকের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ইবলিসকে দাঁড় করালেন তার প্রতিপক্ষরূপে। মানুষের দায়িত্ব (এবাদত) হলো পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখা। এটা করার পক্ষে বাধা দেবে ইবলিস, সে তা-ই করবে যার পরিণামে মানবসমাজে বিশৃঙ্খলা হয়। মানুষ যদি শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারে তাহলে সে পরকালে আবার জান্নাতে ফিরে যাবে। আর যদি না পারে তাহলে ইবলিসের সঙ্গে জাহান্নামে দগ্ধ হবে।
আল্লাহ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার উপায় বাতলে দিলেন। সেটাই হচ্ছে এই তওহীদ, যাকে আল্লাহ সেরাতুল মুস্তাকীম বা সহজসরল পথ বলে অভিহিত করেছেন। এই পথের গন্তব্যটা হচ্ছে জান্নাত। পথে ইবলিস বসে থাকবে, সে চেষ্টা করবে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে আর মানুষ কোনো অবস্থাতেই এই পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। হলেই সে অশান্তিতে পড়বে, ফলে ইবলিস বিজয়ী হয়ে যাবে এবং আল্লাহ পরাজিত হবেন। এখন মানুষ কোনটা করবে সেটাই হচ্ছে তার জীবনকালের পরীক্ষা।
আল্লাহ কোর’আনে বার বার বলেছেন- আসমান ও জমিনের সার্বভৌমত্ব আল্লাহর। তিনি মানব জাতির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক জীবন পরিচালনার জন্য যে ব্যবস্থা, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি দিলেন সেটার সার্বভৌমত্ব হলো আল্লাহর। বৃহত্তর ও সমষ্টিগত জীবনে গায়রুল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার ও গ্রহণ করে নিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তিজীবনের সার্বভৌমত্বটুকু আমরা আল্লাহর জন্য রেখেছি। সেই জাল্লে-জালাল, আযিজুল জব্বার, স্রষ্টা ভিক্ষুক নন যে তিনি এই ক্ষুদ্র তওহীদ গ্রহণ করবেন। তাছাড়া ওটা তওহীদই নয়, ওটা শেরক ও কুফর। রাজতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাজার, বাদশাহ্র; ফ্যাসিবাদের সার্বভৌমত্ব হচ্ছে ডিক্টেটরের অর্থাৎ একনায়কের; সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমের সার্বভৌমত্ব হচ্ছে সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণির ডিকটেটরশিপ; আর এই দীনুল ইসলামের সার্বভৌমত্ব হচ্ছে – স্বয়ং আল্লাহর, এতে কোথাও কোন আপসের স্থান নেই। একথা যার ঈমান নয়, সে মুসলিমও নয়, মো’মেনও নয় উম্মতে মোহাম্মদী তো দূরের কথা। তারা সারা বছর রোযা রাখলেও, সারারাত্রি নামাজ পড়লেও নয়। এই তওহীদই হচ্ছে সিরাতুল মুস্তাকীম- সহজ, সরল সোজা পথ।
মরুভূমির বালির ওপর সোজা একটি লাইন টেনে বিশ্বনবী (দ.) বললেন- এই হচ্ছে সিরাতুল মুস্তাকীম, তারপর সেই লাইন থেকে ডাইনে, বামে আড়াআড়ি কতকগুলি লাইন টেনে বললেন- শয়তান এমনি করে মানুষকে এই সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত করতে ডাকবে। এই বলে তিনি কোর’আন থেকে পড়লেন- (আল্লাহ বলেছেন) “নিশ্চয়ই এই হচ্ছে আমার সিরাতুল মুস্তাকীম। কাজেই এই পথে চলো, অন্য পথ অনুসরণ করো না; (করলে) তা তোমাদের তার এই মহান পথ থেকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে (সুরা আন’আম ১৫৩)।
ঐ সিরাতুল মুস্তাকীম, সহজ-সরল পথ হচ্ছে প্রকৃত তওহীদ, জীবনের কোন বিভাগে, কোন অঙ্গনে এক আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে মানি না এবং কারো এবাদত করি না- এই সহজ সরল কথা। আমরা এই সিরাতুল মুস্তাকিমে গত কয়েকশ’ বছর থেকেই নেই। আমরা যে দীনকে আকড়ে ধরে আছি, যেটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে মেনে চলতে চেষ্টা করছি সেটা বহু মাযহাবে, ফেরকায় বিচ্ছিন্ন একটি অতি জটিল পথ, সেটা আর যাই হোক আল্লাহর দেয়া সিরাতুল মুস্তাকিম, সহজ সরল পথ নয়। সিরাতুল মুস্তাকিমের সহজ-সরল লাইন থেকে যে আড়াআড়ি লাইনগুলো মহানবী (দ.) টেনে ছিলেন এবং বলেছিলেন এগুলো শয়তানের লাইন, আমরা বিভিন্ন মাযহাব, ফেরকার ও তরিকার ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন লোকেরা সেই লাইনগুলিতে আছি।
পৃথিবীতে ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ জয়ী হবেন একমাত্র তওহীদ দিয়ে। বাকি সব আমল দিয়ে আল্লাহ বিজয়ী হবেন না। প্রমাণ বর্তমান বিশ্ব। আমলে ভরপুর, কিন্তু আল্লাহর হুকুম কোথাও নেই। চলছে বস্তুবাদী দাজ্জালের হুকুম। পরিণামে যুদ্ধ, রক্তপাত, হানাহানি, অন্যায়, অবিচার, অশান্তি।
এই প্রসঙ্গ কেন আসল?
সমগ্র বিশ্ববাসী আজ এই অশান্তি থেকে মুক্তির জন্য কঠোর থেকে কঠোরতর আইন বানাচ্ছে, নতুন নতুন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তৈরি করছে কিন্তু শান্তি আসছে না। মুসলিমরা প্রচুর আমল করছে, রোজা রাখছে, নামাজ পড়ছে, উপরন্তু খতম তারাবিও পড়ছে কিন্তু তাদের দুর্দশা কাটছে না। তাদের দেশগুলো আজ সা¤্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রের কবলে। পরকালেও তারা জাহান্নামে যাবে কারণ তারা তওহীদে নেই। এই পরিণতি থেকে মুক্তির একটাই উপায় যেটা আল্লাহর রসুল আরববাসীর সামনে তথা মানবজাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। সেটা হচ্ছে তওহীদের চুক্তিতে ফিরে আসা। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং সকল ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। এতে করে তারা দুই দিকে লাভবান হবে; প্রথমত তারা দুনিয়াতে শ্রেষ্ঠত্ব পাবে, পারস্পরিক শত্রুতা ভুলে ভাই ভাই হতে পারবে, তাদের সমাজ শান্তিময় হবে। দ্বিতীয়ত তাদের সমস্ত ব্যক্তিগত অপরাধ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়ে চিরস্থায়ী জান্নাতে দাখিল করাবেন।