হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে আলোচনা সভা ধর্মবিশ্বাস: এক বৃহৎ সমস্যার সহজ সমাধান

Untitled-10-300x174মিনারুল ইসলাম:
‘ধর্মবিশ্বাস: এক বৃহৎ সমস্যার সহজ সমাধান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উপমহাদেশের বিখ্যাত পন্নী পরিবারের সন্তান এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর প্রতিষ্ঠিত সম্পূর্ণ অরাজনৈতকি ও সংস্কারমূলক আন্দোলন হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে এবং দৈনিক বজ্রশক্তি পত্রিকার সৌজন্যে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত কাল সকাল সাড়ে দশটায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল বৈঠক কক্ষে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী এবং রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উক্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এমামুযযামানের কন্যা দৈনিক বজ্রশক্তি পত্রিকার উপদেষ্টা ও দৈনিক দেশেরপত্রের সাবেক সম্পাদক রুফায়দাহ্ পন্নীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের আমীর ও দৈনিক বজ্রশক্তির উপদেষ্টা মসীহ উর রহমান। তিনি বলেন, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই কোনও না কোনও ধর্মে বিশ্বাসী। তাদের এই ধর্ম বিশ্বাসকে ভুল পথে প্রবাহিত করে এক শ্রেণির মানুষ বিরাট অর্থ সম্পদের মালিক হচ্ছে। কেউ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ধর্মকে ব্যবহার করছে, কেউ জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটাচ্ছে, কেউবা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। এগুলোর কোনটিই ধর্মের সঠিক ব্যবহার নয় উল্লেখ করে মসীহ উর রহমান বলেন, ধর্ম এসেছে মানবতার কল্যাণ সাধনের জন্য। সমাজের মানুষকে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, শোষণ, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত, অনৈক্য থেকে মুক্ত করে শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণে ধর্মই যুগে যুগে পাথেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আজ ধর্মের সকল প্রকার অপব্যবহার থেকে ধর্মকে মুক্ত করে কিভাবে মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে জাতির উন্নতি ও প্রগতির পথে ব্যবহার করা যায় তা অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করেন তিনি। তিনি উপস্থিত সকল গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষকমণ্ডলীকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতেও আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যপক ড. আজিজুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, আজকে মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির অপরাজনীতিকারীরা ধর্মের নামে মানবতাবিরোধী কাজ করছে। সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, সভ্যতা বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি জানান, তিনি প্রচলিত কোন রাজনীতির সাথে জড়িত না এবং জড়িত হবার ইচ্ছাও নেই। তবে দেশে ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও চালাচ্ছে তাদের এই কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। দেশের মানুষের মুক্তির জন্য, দেশের মানুষের কল্যাণে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাকে ব্যবহারের প্রচেষ্টা করায় হেযবুত তওহীদের প্রশংসা করেন তিনি। তিনি অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্যের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, কিছু মানুষ ধর্মের অপব্যাখ্যা দ্বারা এদেশে তালেবানি রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। একাজে তারা মানুষের ধর্মবিশ্বাস, তাদের অসহায়ত্ব, দারিদ্র্য, অশিক্ষা ইত্যাদির সুযোগ নেয়। ধর্মের মূল চেতনা, দর্শনকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে ধর্মের নামে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। তিনি আরো বলেন, ধর্মের অপব্যাখ্যা করে কিছু ফতোয়াবাজরা মানবজাতির অর্ধেক যে নারী সেই নারীর অধিকারকে অস্বীকার করে। তারা নারীদেরকে গৃহবন্দী করে রাখতে চায়। কিন্তু ইসলাম তো দূরের কথা, কোন ধর্মই নারীর অধিকারকে অস্বীকার করে না। তিনি আরো বলেন, নারী শিক্ষাকে কখনও নিরুৎসাহিত করা যাবে না। এছাড়া তিনি তথাকথিত ধর্মভিত্তিক দল তথা যারা ধর্মকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে তাদের প্রতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
চ্যানেল আই এর সাংবাদিক জাহিদ সিদ্দিকী তার বক্তব্যে বলেন, ধর্মের নামে সহিংসতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং অকল্যাণ কোন ধর্মের কাজ নয়। ধর্মের কাজ মানবতার কল্যাণ। আমাদের ধর্মপরায়ণ ব্যক্তিরা বিভিন্ন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা, পূজা-অর্চনায় বিপুল ব্যয় করেন, কিন্তু গরীব দুঃখী মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্য কিছু করেন না। কিন্তু সেটাও এবাদত। দৈনিক বজ্রশক্তির সাহিত্য সম্পাদক মো. রিয়াদুল হাসান ধর্মনিরপেক্ষতার ইতিহাস আলোচনা করে বলেন যে, ধর্মবিশ্বাস মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ হলেও বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকালে একে বৃহত্তম সমস্যা বলেই মনে হয়। গত পাঁচশত বছর রাষ্ট্র ও ধর্ম এ দুটিকে পৃথক করে জীবন পরিচালনার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু শান্তি আসে নি। একদিকে রাষ্ট্রনায়করা ধর্মকে পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার চেষ্টা করেছেন, অন্যদিকে ধর্মব্যবসায়ী, ধুরন্ধর কতিপয় রাজনীতিবিদরা মানুষের এই সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রে রায়ট সৃষ্টি করেছে, দাঙ্গা হাঙ্গামার মাধ্যমে মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে বিপথে পরিচালিত করেছে। এখাবে ধর্মবিশ্বাস বার বার রাষ্ট্রজীবনে প্রভাব ফেলেছে। এভাবে আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্মকে ভুল পথে পরিচালিত করা। এই প্রাচীন সমস্যার সমাধান নিয়ে এসেছে হেযবুত তওহীদ। বিষয়টি নিয়ে সবাইকে ভাবার সময় এসেছে। ধর্মকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়, একে ইতিবাচক খাতে প্রবাহিত করে কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠন করার ফর্মুলা আমরা মানুষের সামনে তুলে ধরছি।
দৈনিক বজ্রশক্তির প্রকাশক ও সম্পাদক এস এম শামসুল হুদা বলেন, বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল জঙ্গিবাদ। অনেক সময় শক্তি দিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে প্রমাণিত হয়েছে যে, শক্তি দিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল সম্ভব নয়। কারণ এটি একটি আদর্শিক যুদ্ধ। যারা জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত তারা কোন না কোন আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত। তাদের ধারাণা তারা যেটা করছে সেটা করলে জান্নাত পাবে। সুতরাং শক্তি দিয়ে এটি দমন করা সম্ভব নয়। তাদেরকে যদি বোঝানো যায় যে তারা যেটা করছে সেটা ভুল পথ। এর মাধ্যমে তারা তাদের ইহকাল ও পরকাল দুটোই হারাচ্ছে। কীভাবে এটি ভুল পথ তা কোর’আন হাদীস থেকে প্রমাণ করতে পারলেই জঙ্গীবাদ দ্বারা মানুষ আর প্রভাবিত হবে না। সেটা প্রমাণ করার জন্য তথ্য ও যুক্তি আমাদের কাছে আছে। এখন প্রয়োজন রাষ্ট্রসহ সর্বশ্রেণির মানুষে সচেতনতা সৃষ্টি।
বক্তব্য রাখেন সাবেক সৈনিক ওমর ফারুক। তিনি বলেন, মানুষের তৈরি বিধান কখনও মানুষকে শান্তি দিতে পারে না। যার জন্য ¯্রষ্টা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসুল পাঠিয়েছেন এবং মানবজাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, মোহাম্মদ (স) এর এ পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেবার কিছু দিনের মধ্যেই ইসলাম বিকৃত হতে শুরু করেছে। জন্ম নিয়েছে হাজার রকম দল মত ও পথের। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের অপব্যাখ্যা করে মানবজাতিকে এভাবে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করা হয়েছে। কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে মানবজাতিকে আবারো শান্তির ছায়াতলে আনা সম্ভব হবে। তিনি হেযবুত তওহীদের বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলা ভিশনের সিনিয়র ক্যামেরাম্যান ও নিউজ কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স কে জেড সোহেল, এশিয়ান টিভির স্টাফ রিপোর্টার শারিয়ার জামান দিপ, যায়যায় দিনের স্টাফ রিপোর্টার এজাজুল হক মুকুল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার শফিকুল ইসলাম সোহাগ, আলোকিত বাংলাদেশের স্টাফ ফটো সাংবাদিক ফজিত শেখ বাবু, আমাদের অর্থনীতির সিনিয়র রিপোর্টার রফিক আহম্মেদ, ভোরের সময়ের প্রকাশক ও সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান, এবি নিউজ ২৪ ডটকমের সম্পাদক শাহিন চৌধুরী, ফোকাস বাংলানিউজের সহ সম্পাদক শাখায়ট হোসেন জনি, ভোরের ডাকের স্টাফ রিপোর্টার ফজলুর রহমান, ফটো সাংবাদিক জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলা নিউজ ২৪ ডট কমের স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট রাশেদুল আলম চৌধুরী, নিউ নেশনের স্টাফ রিপোর্টার এহসানুল হক জসিম, মানব জমিনের স্টাফ রিপোর্টার উৎপল রায়, নিউ এইজ এর স্টাফ ফটো সাংবাদিক সনি রমানি, শীর্ষ নিউজ ডট কমের স্টাফ রিপোর্টার আবু রায়হান বারী শিমুল, দৈনিক জনতার স্টফ রিপোর্টার (ক্রাইম) আবু জাফর, নয়া দিগন্তের স্টাফ ফটো সাংবাদিক মো. করীফ। মানব কণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার হরোলাল রায় সাগর, দৈনিক জনতার চিফ ফটো জার্নালিস্ট মো. আব্দুল হানিফ, দৈনিক অগ্নিশিখার স্টাফ রিপোর্টার মো. সুমন আহমেদ, সংবাদ দিগন্তের সহকারী সম্পাদক মো. আব্দুস সালাম, দি রিপোর্ট ২৪ ডট কমের রিপোর্টার আল-হেলার শুভ, দৈনিক খবরপত্রের সিনিয়র রিপোর্টার, বাংলামেইল ২৪ ডট কমের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট দিপান্বিতা চামেলি, সিনিয়র প্রতিবেদক সালাহ উদ্দীন চৌধুরী, দি ইন্ডিপেন্টের শিক্ষানবিশ ফটো সাংবাদিক পারভেজ আহম্মেদ, নতুন সময়ের রিপোর্টার মো. ওমর ফারুক, সাপ্তাহিক সত্য সমাচারের স্টাফ রিপোর্টার সুমন চৌধুরী, দৈনিক সংগ্রামের স্টাফ রিপোর্টার এইচ এম আকতার, অর্থসূচকের স্টাফ রিপোর্টার মাইদুল ইসলাম, ডেইলি ইন্ডাস্ট্রি এর চীফ ফটো সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন, এডিটর বিডি ২৪ ডটকমের সম্পাদক কে এ এইচ মিঠু, দৈনিক দিনকালের স্টাফ রিপোর্টার মো. হান্নান, রাইজিং বিডি ডটকমের স্টাফ রিপোর্টার জুনায়েদ শিশির এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী উৎপল বিশ্বাস প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে ‘এক নজরে এমামুয্যামান ও হেযবুত তওহীদ’ এবং ‘ধর্মবিশ্বাস: এক বৃহৎ সমস্যার সহজ সমাধান’ শীর্ষক দুইটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

 

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...