১৪ জানুয়ারি ২০১৬ বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ পৃথিবীকে এক মহাযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছে। বাংলাদেশেও একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার হীন উদ্দেশ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। এই পরিস্থিতে জাতি ও দেশকে নিরাপদ রাখতে ষোল কোটি মানুষ সকল প্রকার সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-ধর্মব্যবসা-অপরাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অপরিহার্য। সে লক্ষ্যে বিগত বিশ বছর যাবৎ দেশের জনগণকে সেই সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে ধর্মীয় কর্তব্যবোধ এবং দেশপ্রেমের প্রেরণায় উজ্জীবিত করে যাচ্ছে হিজবুত তাওহীদের। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার “বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘সাগর-রুনি’ মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে হিজবুত তাওহীদ এবং মিডিয়া পার্টনার হিসাবে সহযোগিতায় ছিল ‘দৈনিক বজ্রশক্তি’, ‘বাংলাদেশেরপত্র.কম’ ও ‘জেটিভি অনলাইন’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন হিজবুত তাওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার এডিটিং সেকশনের সাবেক ইনচার্জ প্রবীণ সাংবাদিক আবুল কালাম, জেটিভি অনলাইনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব অনলাইন টেলিভিশনের আহ্বায়ক, হিজবুত তাওহীদের আমীর মসীহ উর রহমান, দৈনিক বজ্রশক্তির প্রকাশক ও সম্পাদক এস. এম. সামসুল হুদা, বাংলাদেশেরপত্র.কমের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াদুল হাসানসহ গণ্যমান্য অনেকে। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন দৈনিক বজ্রশক্তির উপদেষ্টা রুফায়দাহ পন্নী। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে ভিডিও
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হিজবুত তাওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আজ সমগ্র পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসেছে, বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশগুলো ১৬ হাজারের বেশি অ্যাটোমিক বোম ও হাইড্রোজেন বোম মজুদ করেছে মানবজাতিকে ধ্বংস করার জন্য। অন্যদিকে পৃথিবীব্যাপী চলছে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ। এই জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটিয়েছে ঐ পশ্চিমা পরাশক্তিধর দেশগুলো। অস্ত্রব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য একদিকে তারা জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে অন্যদিকে সন্ত্রাস দমনের নামে সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। এখন তারা পৃথিবীকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। এখন যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয় তবে সমগ্র মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। এদিকে আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থাও ভয়ানক। একদিকে সামাজিক অন্যায়-অবিচার জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে, অপর দিকে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটিয়ে যুদ্ধবাজ সাম্রাজবাদী পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি এদিকে ঘুরানোর হীন চেষ্টা চলছে। দিনকে দিন জঙ্গিদলগুলো বে-পরোয়া হয়ে উঠছে। কিছুদিন পরপরই ঘটছে জঙ্গিবাদী ঘটনা। এই অবস্থায় শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এই জঙ্গিবাদ ও সামাজিক অপরাধ দূর করা সম্ভব নয়, শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজন একটি নির্ভুল আদর্শ। সেই আদর্শ মহান আল্লাহ দয়া করে হিজবুত তাওহীদকে দান করেছেন। এখন এই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সামাজিক অপরাধ দূরীকরণে জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই। জনগণের কাছে এই সঠিক আদর্শটি তুলে ধরার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই
ঢাকা প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক আবুল কালাম তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, আমি জীবনে বহু অনুষ্ঠানে গিয়েছি, বহু আলোচনা, বক্তব্য শুনেছি কিন্তু আজকে হিজবুত তাওহীদের এমাম যে বক্তব্য দিলেন আমার জীবনে এমন বক্তব্য কখনোই শুনিনি। তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে সামগ্রিক বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন, এর পরে আর বক্তব্যের কিছু থাকে না। আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে অত্যন্ত মনোযোগের সাথে তার বক্তব্য শুনেছি। এখন তার এই কথা আমরা যদি মেনে চলতে পারি তবেই মুক্তি মিলবে।
বক্তারা দেশবাসীর প্রতি ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান করে বলেন, স্বার্থপরের সমাজ নাই, নামাজ নাই, জান্নাত নাই। বর্তমানে আমাদের দেশে যে ষড়যন্ত্র চলছে, দেশ যে সঙ্কটে পতিত হয়েছে তা থেকে দেশকে বাঁচানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব ও সামাজিক কর্তব্য।
অনুষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অনন্য অবদান রাখায় প্রবীণ সাংবাদিক আবুল কালামকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে “ধর্মবিশ্বাস: এক বৃহৎ সমস্যার সহজ সমাধান” শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থের বিনিময়ে ধর্মের কাজ হয় না -আবুল কালাম
বর্তমানে ধর্মের কাজ করানো হয় অর্থের বিনিময়ে কিন্তু অর্থের বিনিময়ে ধর্মের কাজ হয় না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের এডিটিং সেকশনের সাবেক ইনচার্জ প্রবীণ সাংবাদিক আবুল কালাম। হিজবুত তাওহীদের আয়োজনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি একটি গল্প উদ্ধৃত করে বলেন, একবার এক ব্যক্তি তার ভাতিজাকে বললো- তুমি যদি মসজিদে গিয়ে এক ওয়াক্ত নামাজ পড় তবে আমি একশ’ টাকা দেব। তখন ভাতিজা মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে চাচার কাছে এসে বললো, চাচা, আমাকে পাঁচশ’ টাকা দাও কারণ আমি আজ মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েছি যার স্বাক্ষী তুমি স্বয়ং। তখন চাচা বললো- তুমি নামাজ পড়েছ এতে তোমার লাভ হয়েছে, আমি কেন টাকা দেব? আমি তো কেবল তোমাকে ভালো কাজে উৎসাহিত করার জন্য ওটা বলেছিলাম। তখন ভাতিজা বললো, আমি আগেই বুঝেছিলাম তুমি এমনটা করবে, এজন্য নামাজ পড়েছি ঠিকই কিন্তু ওজ্ওু করিনি, সুরাও পড়িনি। এ গল্প বলে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমরা আসলে টাকা দিয়ে মানুষকে ধর্মের কাজ করাতে চাই, স্বার্থের লোভ দেখিয়ে কখনোই মানুষকে দিয়ে ভালো কাজ করানো যাবে না এজন্য দরকার সঠিক শিক্ষা।
তিনি বলেন আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে প্রতিটা বিষয়েই সচেতনতার অভাব রয়েছে। এ কারণে ফুটপাতে খোলা জায়গাতে বিক্রি হয় সুস্বাদু খাবার আর সুন্দর এসি রুমে বিক্রি করা হয় জুতা। মানুষকে সচেতন করবার কোনো বিকল্প নেই। আসল সচেতনা সৃষ্টির কাজটি করে যাচ্ছে হিজবুত তাওহীদ।
তিনি বক্তব্যের শুরুতেই হিজবুত তাওহীদের এমামের বক্তব্যের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, আমি জীবনে বহু অনুষ্ঠানে গিয়েছি, বহু আলোচনা, বক্তব্য শুনেছি কিন্তু আজকে হিজবুত তাওহীদের এমাম যে বক্তব্য দিলেন আমার জীবনে এমন বক্তব্য কখনোই শুনিনি। তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে সামগ্রিক বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন, এর পরে আর বক্তব্যের কিছু থাকে না। আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে অত্যন্ত মনোযোগের সাথে তার বক্তব্য শুনেছি। এখন তার এই কথা আমরা যদি মেনে চলতে পারি তবেই মুক্তি মিলবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ধর্মের কাজ মনে করে ঘরে বসে শুধু তজবি টিপি অথচ পাশেই মানুষ না খেয়ে কষ্ট করে কিন্তু আমরা তা দেখি না। এভাবে তজবি টিপলে চলবে না, মানুষের মনকে টিপতে হবে। মানুষের শান্তির জন্য কাজ করতে হবে। তিনি হিজবুত তাওহীদের সদস্য হবার আশাপোষণ করে বক্তব্য শেষ করেন।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অনন্য অবদান রাখায় তাকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে “ধর্মবিশ্বাস: এক বৃহৎ সমস্যার সহজ সমাধান” শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।