২০১৩ সালের ৯ই জুলাই বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের নওয়াব আলী চৌধুরী সেমিনার কক্ষে দৈনিক দেশেরপত্রের উদ্যোগে “মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জল ইসলাম। এতে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী। অনুষ্ঠানের শুরুতে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। এতে দৈনিক দেশেরপত্রের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন কার্যক্রম ও সংবাদ প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। উক্ত সেমিনারের প্রতিপাদ্য ছিল এই যে, বর্তমানে মানবজাতি অশান্তিময় পরিস্থিতিতে নিমজ্জিত, এই সংকটের জন্য কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠি দায়ি নয়। এর জন্য দায়ি বর্তমান প্রচলিত জীবন ব্যবস্থা তথা সিস্টেম। ত্রুটিযুক্ত এই সিস্টেমকে প্রতিষ্ঠিত রেখে ন্যায়, শান্তি ও সুবিচারের জন্য যতই উদ্যোগ নেয়া হোক, আন্দোলন সভ-সেমিনার, নেতৃত্ব পরিবর্তনের ডাক, বিক্ষোভ- যত কিছুই করা হোক, মানব জীবনে শান্তি আসবে না। শান্তির জন্য একমাত্র পথ প্রচলিত সিস্টেম পরিবর্তন করে স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত সঠিক জীবন ব্যবস্থা মানব জীবনে প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠা করা।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে দৈনিক দেশেরপত্রের সাথে একাত্মতা পোষণ করে দেয়া বক্তব্যে সত্য মিথ্যার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নিজেদের টিকে থাকার জন্য সত্যকে তুলে ধরা প্রয়োজন। আজকের সমাজে নৈতিকতা ও মানবতার পতনের এই করুন সময়ে দেশেরপত্র কর্তৃক সত্যের অদম্য প্রকাশকে উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, “যারা সত্যকে ধারণ করেন এবং সত্যকে প্রকাশ করেন তারা আলোর পথের যাত্রী।”
স্বাগত বক্তব্যে দৈনিক দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী বলেন, “আমার বাবা মহামান্য এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী ছিলেন সত্যের মূর্ত প্রতীক। আমি আমার সেই মহান পিতার আদর্শে পথ চলতে চাই। তাঁর মতই সারাজীবন সত্যের পথে চলার অভিপ্রায় নিয়ে, সত্য প্রকাশে অঙ্গীকারাবদ্ধ হোয়ে আমি আমার জীবনকে উৎসর্গ কোরতে চাই। এজন্যই আমার মিডিয়ায় আগমন।” তিনি আরো বলেন, “আমাদের নীতি হোল যে সংবাদের যে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ সেটা সেই গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা। আমাকে বলা হয়, আপনারা অন্যদের মত অমুক অমুক বিষয়ের গুরুত্ব দিচ্ছেন না কেন? আমার জবাব, জাতিকে মিসগাইড করার জন্য আমি পত্রিকা তৈরি করি না। যে সংবাদ জাতির জন্য সত্যিকারভাবে গুরুত্বপূণর্, আমি সেটার যথাযথ গুরুত্ব দিতে চাই। এতে পত্রিকার কাটতি বাড়ে বাড়–ক, কমে কমুক-আমি সেটা নিয়ে চিন্তিত নই। আমি জানি, এই পথে চলা খুব সহজসাধ্য নয়। আপনাদের মত জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিদের সাহচর্য্য ও উপদেশ আমাদেরকে মানবতার কল্যাণে পথ চলায় অনুপ্রাণিত কোরবে।” বিশেষ অতিথি কে জি মোস্তফা তার বক্তব্যে এই অশান্তিময় পৃথিবীতে শান্তির পায়রা উড়ানোর আহবান জানিয়ে বলেন, “প্রতিবছর পৃথিবীতে শান্তিতে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয়- কিন্তু শান্তি কোথায়? শান্তি নেই কোথাও। তাই আমাদেরকে সত্যের পথে এগিয়ে আসতে হবে।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যন অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খান বর্তমান পৃথিবীতে সত্যকে এক দুষ্প্রাপ্য বিষয় হিসাবে তুলনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খালেদা ইসলাম এই সমাজকে পরিবর্তন করার জন্য বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ার বিরাট ভুমিকা আছে বলে মনে করেন এবং বলেন যে, “যদি আমরা নিজেদের প্রত্যেকের কাজের ক্ষেত্রে সত্যকে মান্য করি তবেই এই পরিবর্তন সম্ভব”। তিনি আরও বলেন, “যারা সত্যের প্রতি আন্তরিক নয়, মানবতার প্রতি তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই।” দৈনিক নিউজের সম্পাদক হুমায়ুন কবির বর্তমান সভ্যতার প্রচলিত সিস্টেমের সমালোচনা করেন এবং এই সিষ্টেমকে পরিহার করে মানবতার প্রকৃত কল্যাণে ব্রতী হওয়ার আহবান জানান। দেশের পত্রের উপদেষ্টা মসিহ উর রহমান রহমান মানবতার কল্যাণে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন। অধ্যাপক গোলাম রহমান এই ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য দেশেরপত্রের কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আজকে মানবতা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, মানুষ অত্যন্ত ক্ষুদ্র কারণে অন্যের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে এবং খুব অল্পে বিশাল হওয়ার, বড় হওয়ার অন্যায় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে।” তিনি নিজের পেশায় নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার মাধ্যমে সত্যকে তুলে ধরার আহবান জানান। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রেও তিনি বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক আলোচনা করেন এবং দেশেরপত্রের বিভিন্ন সাহসী কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ভঙ্গিতে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি তার বক্তব্যে জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী সাহেবের গৌরবময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সাবেক বিচারপতি সিকদার মকবুল হক বর্তমান মিডিয়াকে অত্যন্ত শক্তিশালী উল্লেখ করে বলেন, মাননীয় এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী যে ইসলামের কথা তুলে ধরেছেন, সেটাকে সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এবং মিথ্যাকে বর্জন ও সত্যকে গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশেরপত্রের ভূমিকা প্রশংসনীয়। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সত্যের মূর্তপ্রতিক জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে স্মরণ করে গান পরিবেশন করে অনুষ্ঠানকে আরও উচ্ছল ও প্রানবন্ত করে তোলেন বিশিষ্ট নজরুলগীতি শিল্পি জিল্লুল শাহীন। অনুষ্ঠানের সভাপতি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সমাপনি বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠানের মূলতবী ঘোষণা করেন।