টাঙ্গাইল সদর পৌরসভা সভাকক্ষ মিলনায়তনে দৈনিক দেশেরপত্রের উদ্যোগে “জঙ্গিবাদ তথা যাবতীয় সন্ত্রাস দমনে আমাদের প্রস্তাবনা” এবং “অন্যায় দূরীকরণে সিস্টেম পরিবর্তনের বিকল্প নেই” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দৈনিক দেশেরপত্রের একক পৃষ্ঠপোষকতায় জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ, প্রভাষক, প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, শিল্প-উদ্যোক্তা, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সমাজে ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ এর কারণে সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যা এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। দৈনিক দেশেরপত্রের বৃহত্তর ময়মনসিংহের সিনিয়র ব্যুরো প্রধান শেখ মনিরুল এসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল পৌরসভা মেয়র জনাব সহিদুর রহমান খান মুক্তি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, দৈনিক দেশেরপত্রের উপদেষ্টা জনাব মসীহ উর রহমান, দৈনিক দেশেরপত্রের প্রধান বার্তা সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম, মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: ইউসুফ আলী মিয়া, টাঙ্গাইল জেলা সিনিয়র তথ্য অফিসার কাজী গোলাম আহাদ, সরকারী কুমুদিনি কলেজের অধ্যক্ষ মো: শহীদ উল্লাহ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ মনিরুল এসলাম উপস্থিত সকল অতিথিদেরকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “বর্তমান সমাজটা এখন এমন হয়ে গেছে যে, একজন আর একজনের পিছনে সবসময় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। কে কখন কার ক্ষতি করতে পারবে তাই নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একারণে নিজেদের মধ্যে দয়ামায়া, ভালোবাসা, সহযোগিতা ইত্যাদি হারিয়ে যাচ্ছে।” তিনি বলেন, “আইন করে শাস্তি দিয়ে মায়া-মমতা, ভালোবাসা, ঐক্য কখনও আনা যায় না। কারণ এই সিস্টেমে ভালো থাকতে চাইলেও ভালো থাকা সম্ভব নয়। ঐক্য, ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ব, মায়ামমতা, এগুলো জাতির সম্পদ । মানব সমাজে যখন এই গুণগুলো বিরাজ করে তখন জাতি হয়ে যায় একটা সম্মৃদ্ধ জাতি। আর যখন জাতি থেকে এ গুণগুলো হারিয়ে যায় তখনি সেই জাতি দৈন্যদশায় পড়ে। এই সম্পদ আবার ফিরিয়ে আনতে হবে এবং সেটার উপায় আল্লাহ দিয়েছেন। সেটা জানানোর জন্যেই আজকের এই আয়োজন।” প্রধান অতিথির বক্তব্যে টাঙ্গাইল পৌরসভা মেয়র জনাব সহিদুর রহমান খান মুক্তি বলেন, “বর্তমান সময়ের আলেমরা কোরআন-হাদিসের ব্যাপারে নিজেরাই বিভ্রান্ত। তিনজন আলেমকে একই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিন ধরনের উত্তর পাওয়া যায়।” তিনি আলেমদের মধ্যে অনৈক্যে ও মতবিরোধের এই অবস্থার পরিবর্তনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী বলেন, “আল্লাহ আমাদেরকে একটি চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা দিয়েছেন কিন্তু আমরা আল্লাহর দেওয়া সেই পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থাকে পুরোপুরি ত্যাগ করে কেবল ব্যক্তি জীবনে কিছু এবাদত বন্দেগী করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই ব্যক্তিগত ধর্মপালন যে জাতীয় জীবনে শান্তি আনতে পারছে না তার প্রমাণ আজকের সমাজ।” তিনি আরো বলেন, “আলো জ্বালালে যেমন অন্ধকার দূরীভত হয়, তেমনি প্রকৃত সত্য প্রকাশ হলে সমাজের সকল অন্যায়-অত্যাচার, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি দূর হবে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এই বস্তুবাদী সিস্টেমকে পরিত্যাগ করে আল্লাহর দেওয়া অপরূপ, নিখুঁত সিস্টেমটি গ্রহণ করতে হবে। একমাত্র আল্লাহর দেয়া সিস্টেমই পারে সমাজের সকল প্রকার পাপাচারের পথ বন্ধ করতে।” তিনি আল্লাহর দেয়া সিস্টেম বাস্তবায়নের ফলে আজকের ঘুণে ধরা সমাজের অসৎ মানুষগুলিই একেকজন সোনার মানুষে পরিণত হবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
দৈনিক দেশেরপত্রের উপদেষ্টা জনাব মসীহ উর রহমান বলেন, “আজ আমরা দুনিয়ার কাজকর্মে এতই ব্যস্ত হয়েছি যে, আমাদের সামনে শান্তির কোন পথ খোলা আছে কিনা তা ভাবার সময় ও সুযোগ নাই। আমরা আমাদের পরবর্র্তী প্রজন্মকে কোন পরিবেশে রেখে যাব তা ভাবতে হবে।” পত্রিকার পাতার সা¤প্রতিক সময়কালের লোমহর্ষক কিছু ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেখানে প্রাণাধিক প্রিয় স্বামী-স্ত্রী এক অপরকে হত্যা করছে, সন্তান পিতা-মাতাকে হত্যা করছে, পিতা-মাতা সন্তানকে হত্যা করছে সেখানে কোন নিরপত্তা বাহিনীই আমাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না। ” তিনি সবাইকে আল্লাহর সিস্টেমে ফিরে গিয়ে একটি শান্তিময় সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
দৈনিক দেশেরপত্রের প্রধান বার্তা সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা বলেন, সত্যনিষ্ঠ মানুষ ও মানবজাতি গড়ার মাধ্যম হিসাবে যুগে যুগে আল্লাহ তাঁর নবী রসুলদের মাধ্যমে বিধান প্রেরণ করেছেন যাকে আমরা এখন ধর্ম বলি। এই ধর্ম যদি মানুষের অকল্যাণের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন বুঝতে হবে যে সেটা বিকৃত ধর্ম, ধর্মের সত্যরূপ নয়। আজ আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসা আছে যেখানে ধর্মকে পুঁজি কোরে চাকরি ও ব্যবসা করার শিক্ষা নিয়ে ছাত্ররা বেরিয়ে আসছে এবং ধর্মকেই জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করছে। কিন্তু কোন নবী রাসুল, কোন সাহাবী, ধর্ম প্রচার করে বিনিময় নিয়েছেন- এটা কেউ দেখাতে পারবে না। দুঃখজনক বিষয় এটাই এখন বৈধ হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে। তিনি বলেন,ধর্মে প্রবিষ্ট আরেকটি মিথ্যা হচ্ছে জঙ্গিবাদ। জঙ্গিবাদ দমনের জন্য সারা পৃথিবীতে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ব্যাপক চেষ্টা চালানো হচ্ছে কিন্তু কার্যত জঙ্গিবাদ নির্মূল হয় নি। কোরআন-হাদিস থেকে ভুল বোঝানোর কারণেই মানুষ জঙ্গি হয়। তারা মনে করে এই পথেই জান্নাত। এই বিশ্বাসে তারা জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দেয়। এখন যদি কোরআন-হাদিস থেকে যুক্তি দিয়ে তাদের বোঝানো যায় যে, এটা ভুল পথ, এই পথে তারা দুনিয়া এবং জান্নাত দুটিই হারাচ্ছে তবে নিশ্চয় তারা সে পথ ত্যাগ করবে”। তিনি আরও বলেন, “বর্তমানের আলেমদের দিয়ে জঙ্গিদের এই কথা বোঝানো যাবে না, কারণ তারা নিজেরাই ধর্ম বিক্রীর মত একটি হারাম কাজে লিপ্ত আছেন। ধর্মকে ব্যবসার হাতিয়ার বানাতে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা সেটাই করছেন। তাই যারা নিজেরাই ভুল পথে আছেন তাদের সাহায্য নিয়ে জঙ্গিদের ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়”। তিনি আরও বলেন, “জঙ্গিদের বোঝানোর জন্য এমন মানুষ দরকার যারা পার্থিব কোন বিনিময়ের জন্য এসলাম প্রচার করে না এবং সত্য পথের উপর প্রতিষ্ঠিত। সেই সত্যবাদিতা আল্লাহ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজিদ খান পন্নীকে দান করেছেন।” তিনি বাংলাদেশ সরকারকে যামানার এমামের দেয়া এই প্রস্তাবনার আলোকে আদর্শিকভাবে জঙ্গি দমন করে পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত রাখার আহবান জানান।
জেলা তথ্য অফিসার কাজী গোলাম আহাদ বলেন, “দৈনিক দেশেরপত্রের মানবতার কল্যাণে সত্য প্রকাশের আহ্বান একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। জঙ্গিবাদ তথা সন্ত্রাসবাদ শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের সমস্যা। এ সমস্যা থেকে বের হবার একমাত্র উপায় হচ্ছে সমাজে কোরআন-হাদিসের প্রকৃত আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা।” তিনি এই আদর্শ প্রতিষ্ঠায় সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জনাব ইউসুফ আলী মিয়া বলেন, “জীবন-দর্শন সব দিক দিয়ে অনুকরণীয় একজন মানব ছিলেন জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। তিনি ছিলেন সত্যের মূর্ত প্রতীক তাই তাঁর আদর্শে পরিচালিত দৈনিক দেশেরপত্র অবশ্যই প্রকৃত সত্য প্রকাশ করে সমাজের সকলের মঙ্গল বয়ে আনবে।” সরকারী কুমুদিনি কলেজের অধ্যক্ষ জনাব মো: শহীদ উল্লাহ অত্যান্ত আনন্দের সাথে বলেন, “আমি যা দেখলাম ও শুনলাম তা আমাকে মুগ্ধ করেছে । দৈনিক দেশেরপত্র মাধ্যমে ইসলামের যে প্রকৃত রূপ প্রকাশ পাচ্ছে তা মেনে চললে রাষ্ট্রকে অবশ্যই সন্ত্রাস মুক্ত করা সম্ভব।” অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশে দৈনিক দেশেরপত্রের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম এবং জঙ্গিবাদের উত্থান ও উত্তরণের উপায়ের ওপর নির্মিত সংক্ষিপ্ত ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও একটা ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে যামানার এমাম জনাব মো: বায়াজীদ খান পন্নীর বর্নাঢ্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠান স্থলে যামানার এমামের লিখিত এবং তওহীদ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বই সমূহ বিক্রির জন্য প্রদর্শন করা হয়। দৈনিক দেশেরপত্রের বৃহত্তর ময়মনসিংহের ব্যবস্থাপক এনামুল হক বাপ্পা এবং ব্যুরো প্রধান মোঃ এসলাম নাফের সার্বিক সহযোগীতায় এবং মোঃ রাশেদ খান ও ইতি আক্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। দৈনিক দেশেরপত্রের বৃহত্তর ময়মনসিংহের সিনিয়র ব্যুরো প্রধান শেখ মনিরুল এসলামের সভাপতিত্বে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী শিক্ষা অফিসার হুমায়ুন আফরীন, প্রভাষক মো: শহীদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র তাসনিম শিরিন চৈাধুরী, চ্যানেল আই সাংবাদিক ইকবাল হোসেন, সৈয়দ মোহাব্বত আলী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান খান, প্রধান শিক্ষক মরিয়ম বেগম, মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ তরুন ইউসুফ, বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ আহমেদ, প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম, আলেকদিয়া চেয়ারম্যান কোরবান আলী, সময় টিভি সাংবাদিক মোঃ কাদের, মৎস জরিপ অফিসার মোঃ আশরাফ উদ্দিন, জেলা সিনিয়র তথ্য অফিসার গাজী গোলাম আহমেদ,টাঙ্গাইল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক মির্জা আনোয়ার হোসেন বাবুল, দেলদুয়ার বিএনপি সভাপতি আব্দুল আজিজ খাঁ, টাঙ্গাইল থানা শ্রমিকলীগ সভাপতি নুরুল ইসলাম, ইজি বাইক মালিক সমিতি সভাপতি শাজাহান আলী, সেক্রেটারী কামরুল ইসলাম, রিক্সাশ্রমিক সভাপতি মোঃ আকবর আলী প্রমুখ।