জাতীয় প্রেসক্লাব কনফারেন্স লাউঞ্জে ২০১৩ সালের ১৪ই জুন দৈনিক দেশেরপত্রের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় “মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ” শীর্ষক আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক বিচারপতি জনাব সিকদার মকবুল হক। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন দৈনিক দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাবা রুফায়দাহ পন্নী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক নিউজের সম্পাদক জনাব হুমায়ুন কবীর, বিশেষ অতিথি অধ্যাপক জনাব ড. গোলাম রহমান, গণ-যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক জনাব ড. মোহাম্মদ শফিক আহমেদ, চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; এ্যাডভোকেট জনাব মনজিল মোরসেদ, সভাপতি, হিউম্যান রাইটস এন্ড পীস ফর বাংলাদেশ; ইঞ্জিনিয়ার জনাব আবুল হোসেন, সভাপতি, এ.এইচ. পীস ফাউন্ডেশন; দৈনিক দেশেরপত্র পত্রিকার কর্মীবৃন্দ।
স্বাগত বক্তৃতায় দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী সংবাদ মাধ্যমে আত্মনিয়োগ কেন করলেন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, “বর্তমানে মিডিয়া একটি শক্তিশালী চ্যালেঞ্জিং মাধ্যম। মানুষের চিন্তার ক্ষেত্রে, পরিবর্তন সাধনের জন্য বর্তমানে যদিও ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রচণ্ড প্রভাব বিস্তার করেছে- তবে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার এই পর্যায়ে এসে এ কথা অনস্বীকার্য যে, প্রিন্ট মিডিয়া মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সামাজিক সামষ্টিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে একটা শক্তিশালী অবস্থান কোরে নিয়েছে। এটা এমন একটা মাধ্যম যা বরাবরই মানুষের চিন্তার বিকাশ সাধনে, সামাজিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রনে একটা অগ্রণী ভূমিকা পালন কোরে আসছে। যদিও এক সময় প্রিন্ট মিডিয়া শুধু সাহিত্য আর সাম্প্রতিক কিছু খবরের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু এখন সেটার আওতা অনেক বি¯তৃত। প্রিন্ট মিডিয়া যদিও তাদের যাত্রা শুরুই করে এই শপথ নিয়ে যে- তারা সত্যের পক্ষে থাকবে। কিন্তু বর্তমানে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, তারা তাদের সেই অঙ্গীকার থেকে আজ অনেক দূরে অবস্থান নিয়েছে। মিডিয়াকে আজ গ্রাস করতে বসেছে অসততা। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আমরা দৈনিক দেশেরপত্রের মাধ্যমে পথচলা শুরু কোরেছি সত্যকে আমাদের পূঁজি কোরে। মূল নীতি হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি, যা সত্য তাই আমরা প্রকাশ কোরবো। আমাদের স্লোগান-ই, ‘মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ’। এটা শুধু স্লোগান নয়, এটা আমাদের চলার পাথেয়। আমাদের নিয়মিত পাঠক মাত্রই জানেন যে আমাদের স্লোগানের মূল ভাষ্যে আমরা কতটা অনড়। তিনি বলেন “এই মহান কাজে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তাঁর মহান পিতা এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর মাধ্যমে। আমার পিতা ছিলেন তৎকালীন দখলদার বৃটিশ বিরোধি আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা পালনকারী প্রথম সারির নেতা। সেই সুবাদে তিনি এই সংগ্রামের কিংবদন্তীতুল্য নেতৃবৃন্দের সাহচর্য্য লাভ করেন যাঁদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আযম মোহম্মদ আলী জিন্নাহ্, অরবিন্দু বোস, শহীদ হোসেন সোহরাওয়ার্দি প্রমুখ অন্যতম। পরবর্তীতে এই মহান ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে বিপুল অবদান রাখেন। ১৯৬৩ সনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা এমন ছিল যে, একবার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া তৎকালীন আওয়ামী লীগ, মুসলিম লীগের প্রার্থীগণসহ বিপক্ষীয় মোট ছয়জন প্রার্থীই এত কম ভোট পান যে সকলের জামানত বাজেয়াপ্ত হোয়ে যায়।” শুধ তাই নয় মানবজাতির সঠিক পথনির্দেশনা দানকারী এবং সাড়া জাগানো কয়েকটি বই লেখেন। উক্ত বইগুলিতে একটি সুখময়, সমৃদ্ধ বিশ্বব্যবস্থা কিভাবে কায়েম হবে সেই রূপরেখাও তিনি ব্যাক্ত করেন। তাঁর এসব লেখনী সর্ব মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করছে। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, “আমি আমার সেই মহান পিতার আদর্শে পথে চোলতে চাই। তাঁর মতই সারাজীবন সত্যের পথে চলার অভিপ্রায় নিয়ে, সত্য প্রকাশে অঙ্গীকারাবদ্ধ হোয়ে আমার জীবনকে উৎসর্গ কোরতে চাই।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক বিচারপতি জনাব সিকদার মকবুল হক বলেন, “আদর্শলিপি দিয়ে আমাদের সবার পড়াশুনা শুরু হোয়েছিল। সেখানে লেখা ছিল, ‘সদা সত্য কথা বলিবো’। আজ সবাই যদি সত্য কথা বলত তাহলে সমাজে অত্যাচার, অবিচার, দুর্নীতি কিছুই থাকত না।’ তবে দেশেরপত্র সত্যের প্রকাশে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। সংবিধানের ৩৯ ধারা মোতাবেক কথা বলার স্বাধীনতা সবারই আছে, থাকবে। তবে অন্যের অধিকারের প্রতিও সম্মান দেখাতে হবে।”
অধ্যাপক জনাব ড. গোলাম রহমান বলেন, “আমাদের সংবিধানে বাক স্বাধীনতার কথা আছে তবে এই বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। নাগরিকদের অধিকার রয়েছে জনকল্যাণের জন্য সত্য প্রকাশ করা। আমরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। মিডিয়ার যেমন স্বাধীনতা রয়েছে, তেমনি দায়িত্বশীলতার কথাও ভুলে যাওয়া সুযোগ নেই।” অধ্যাপক জনাব ড. মোহাম্মদ শফিক আহমেদ- পবিত্র কোরআন থেকে দুটি আয়াত তুলে ধরে বলেন- তোমাদের কাছে যখন কেউ কোন সংবাদ নিয়ে আসবে তোমরা আগে সেটা যাচাই করবে। এবং সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না ও জেনে বুঝে সত্য গোপন করো না।” জনাব মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘যে সত্য নিয়ে দৈনিক দেশেরপত্র দাঁড়িয়েছে তার জয় অবশ্যম্ভাবী, আজ হোক আর কাল হোক’। বিশেষ অতিথি অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস কোরি, তবে সেটা দায়িত্বশীল স্বাধীনতায়। মিডিয়াকর্মীদের ভুললে চলবে না যে, তাদের স্বাধীনতা যেমন রয়েছে তেমনি দায়িত্বশীলতাও রোয়েছে।’
দৈনিক দেশেরপত্রের উপদেষ্টা জনাব মশিউর রহমান বলেন, “আমাদের সমাজ ও রাস্ট্র ব্যবস্থায় এমন পরিবেশ এখনও হয়নি যে সঠিক ও মুক্তভাবে সত্য বিষয়কে সহজ ও নি:সংঙ্ক চিত্তে তুলে ধরা যাবে। তবুও আমরা একটা নিরপেক্ষ ও পরিচ্ছন্ন গণমাধ্যম হিসেবে জাতিকে সঠিক নির্দেশনা দেয়ার মানসে সাড়াজাগানো একজন সত্যনিষ্ঠ মহামানবের বক্তব্য নিয়মিতভাবে প্রকাশ কোরে যাচ্ছি।” আমাদের মনে রাখতে হবে মানুষ শুধু শরীর, দেহ সর্বস্ব নয়। তার আত্মাও আছে। ভালো, মন্দ, ন্যায় অন্যায় এর মানদণ্ড ঠিক করে যে আত্মা আজ কোথাও সেই আত্মার উন্নতির কোনো প্রশিক্ষণতো নেই বরং কোন কোন ক্ষেত্রে আত্মাকে পর্যন্ত অস্বীকার করা হোয়েছে।” এই অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় তুলে ধরে তিনি বলেন, “মানবজাতিকে শান্তি পেতে হলে তাকে মানুষের তৈরী সকল জীবনব্যবস্থা ত্যাগ কোরে স্রষ্টার দেওয়া জীবন ব্যবস্থা মেনে নিতে হবে। কারণ, গত কয়েক শতাব্দিতে মানুষ তাদের নিজেদের তৈরী জীবনব্যবস্থাগুলি একটা একটা কোরে তাদের জীবনে প্রয়োগ কোরে দেখেছে। কিন্তু সেই জীবনব্যবস্থাগুলির কোনটিই তাদের জীবনে শান্তি তো দিতে পারেই নি বরং দিনের পর দিন অশান্তি চরম আকার ধারণ কোরেছে।”
এতে আরো বক্তব্য রাখেন দেশেরপত্রের বার্তা সম্পাদক জনাব এস.এম শামসুল হুদা, দৈনিক নিউজের সম্পাদক জনাব হুমায়ুন কবির ও আমন্ত্রিত অথিতিবৃন্দ। অতিথিগণ তাদের বক্তব্যে দেশেরপত্রের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন এবং দৈনিক দেশেরপত্র যাতে তার অভিষ্ট লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে দায়িত্বপালন করতে পারে সে জন্য সকলের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্লাইড শো প্রদর্শনের মাধ্যমে সারাদেশে চলমান ক্যাম্পেইন কার্যক্রমের ভিডিও চিত্র তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুলতানা রাজিয়া কণিকা ও জাহিদুল ইসলাম মামুন।
আনুষ্ঠানে আগত বক্তাগণ
অনুষ্ঠান সঞ্চালন
অনুষ্ঠানস্থলের ছবি
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের রেজিষ্ট্রেশন
অনুষ্ঠানে আগত অন্যান্য অতিথিবৃন্দ
অনুষ্ঠানে আগত মিডিয়াকর্মীবৃন্দ
সেচ্ছাসেবকবৃন্দ
সঙ্গীত পরিবেশন
প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শণী
অথিতিদের বক্তব্যের ভিডিও