হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

জনতার প্রশ্ন আমাদের উত্তর

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

প্রশ্ন: শুকর খাওয়া হারাম। সেই শুকরের অগ্নাশয়ের হরমোন ব্যবহার করে কৃত্রিম ইনুসলিন তৈরি করা হয়, সুতরাং সেটাও নিঃসন্দেহে হারাম। প্রশ্ন হলো, হেযবুত তওহীদের সদস্যরা কি ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিন গ্রহণ করেন?

উত্তর: কৃত্রিম ইনসুলিন তৈরিতে যেমন শুকরের শরীরের উপাদান ব্যহৃত হয়, তেমনি গরুর অগ্নাশয় থেকেও ইনসুলিন তৈরি করা হয়। এভাবে বিভিন্ন প্রাণীর দেহের অংশ থেকে ওষুধ তৈরি করা হয়। সাপের বিষ থেকেও জীবনরক্ষাকারী ওষুধ তৈরি করা হয়। তবে এই উপাদানগুলো সরাসরি ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয় না। এগুলোকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের নিয়মানুযায়ী প্রক্রিয়াজাত করে ওষুধ বানানো হয়। যে কোনো হারাম উপাদানকে প্রক্রিয়াজাত করার করার পর যে ওষুধ তৈরি হয় সেটা হারাম থাকে কিনা তা নিয়ে মুফতিদের মধ্যেই ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। আমরা বিতর্কে যাব না। আমরা মনে করি, প্রাণ রক্ষাকারী, জীবন রক্ষাকারী কোন জিনিস হারাম হতে পারে না। আলস্নাহ পবিত্র কোর’আনে খাদ্য হিসেবে চারটি মাত্র জিনিস খাওয়া হারাম করেছেন। তিনি বলেছেন, মরা প্রাণী, রক্ত, শুকরের মাংস এবং যা আলস্নাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা শুধুমাত্র এগুলোই তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। কিন্তু কেউ যদি বাধ্য হয় এগুলো খেতে এবং তার ভেতরে খাওয়ার কোনো আকাঙ্খা না থাকে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত না খায়, তাহলে তার কোনো পাপ হবে না। আল্লাহ অবশ্যই অনেক ক্ষমা করেন, তিনি নিরন্তর দয়ালু। [আল-বাক্বারাহ ১৭৩]

সুতরাং এই হারাম খাদ্যগুলোও যদি জীবন বাঁচানোর সহায়ক হয় তখন তা গ্রহণে কোন বাধা নেই। তবে প্রয়োজনের বেশি গ্রহণ করা যাবে না। জীবন রক্ষার প্রয়োজনে আল্লাহ এটা ছাড় দিয়েছেন। রক্ত খাওয়া হারাম কিন্তু রক্ত ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে গ্রহণ করা তো হারাম নয়। ইনসুলিনও ইনজেকশনের মাধ্যমেই রক্তে প্রয়োগ করা হয়। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তোমাদের কী হয়েছে, যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে তা তোমরা খাবে না? অথচ তিনি তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, যা তোমাদের উপর হারাম করেছেন। অবশ্য যদি তোমরা একান্ত নিরুপায় হও তাহলে ভিন্ন কথা।” (সুরা আনফাল- ১১৯)

এভাবে আল্লাহ যতবারই কোনো খাদ্যকে হারাম বলেছেন ততবারই এমনটা উল্লেখ করেছেন, যে ব্যক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে, কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল। (সুরা মায়েদাহ, আয়াত ৩)
এখানে সঙ্গতকারণে গরুর গোবর/মূত্র জায়েজ না না-জায়েজ সে প্রশ্নও এসে যায়। হিসাব মোতাবেক স্বাভাবিকভাবে খাদ্য হিসাবে এটাও অপবিত্র। আমরা মুসলিমরা গাভীর দুধ খাই কারণ এতে পুষ্টি আছে। কিন্তু গরুর মূত্র তো খাই না; ওটা অপবিত্র ও ক্ষতিকর। কিন্তু গরুর মূত্রের কোন অংশ থেকে যদি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে প্রাণ রক্ষাকারী কোন ওষুধ বের করে আনেন, তবে সেটাতো আর মূত্র থাকে না; ওষুধ হয়ে যায়।

মোটকথা শুধু ঐসব বস্তু খাওয়া হারাম, যা আল্লাহ হারাম করেছেন এবং জীবন রক্ষার তাগিদে যদি তা ভক্ষণ করা হয়, সেটা আল্লাহ ছাড় দিয়েছেন। তাই আপনার এই প্রশ্নের আলোকে আমাদের উত্তর হচ্ছে- হেযবুত তওহীদের সদস্য-সদস্যাদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা ডায়াবেটিস নিরাময় হাসপাতালে যান। সেখানে যদি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলেন, “জীবন বাঁচানোর জন্য আপনার ইনসুলিন নেওয়া প্রয়োজন” তারা অবশ্যই সেটা নিবেন। এক্ষেত্রে তারা তো আর শুকর ভক্ষণ করছেন না; শুধু মেডিসিন নিচ্ছেন। জরুরি পরিস্থিতিতে শুকর ভক্ষণ করতে হলে সেটা নিয়েও তো কেউ আপত্তি করতে পারে না। করলে সেটা হবে বাড়াবাড়ি।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...