সমগ্র বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত আন্দোলন হেযবুত তওহীদের আকিদা ও কার্যক্রম সম্পর্কে মানুষের মনে কৌতূহল রয়েছে। সাধারণত যে সব প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা হচ্ছে সেগুলোর জবাব নিয়ে এই আয়োজন। জবাব দিয়েছেন হেযবুত তওহীদের মুখপাত্র মো. মশিউর রহমান।
জনতার প্রশ্ন: ইসলামের ইতিহাসে বহু রকমের খেলাফত ছিল, হেযবুত তওহীদ কোন খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়?
আমাদের উত্তর: আমরা আল্লাহর খেলাফত করতে চাই। কারণ পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ বলেছেন যে তিনি মানুষকে তাঁর খলিফা হিসাবে সৃষ্টি করেছেন (সুরা বাকারা ৩০)। খলিফা শব্দের অর্থ প্রতিনিধি, তাই পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে তাঁর পক্ষে কাজ করাই হচ্ছে মানুষের মূল কাজ, মূল এবাদত। সেই মূল কাজটি কী? সেটা হলো, আল্লাহ যেভাবে সমস্ত সৃষ্টিজগৎকে নিজের হুকুম দ্বারা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করেন, ঠিক সেভাবে আল্লাহর হুকুম দিয়ে মানবজাতিকে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করা। সেজন্য আল্লাহ যে দীন পাঠিয়েছেন তার নাম রেখেছেন ইসলাম অর্থাৎ শান্তি। সুতরাং মানুষ যদি আল্লাহর হুকুম-বিধান দিয়ে তার সামগ্রিক জীবন পরিচালনা করতে পারে তাহলেই সে আল্লাহর খেলাফত করল। তাহলেই তাঁর সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূর্ণ হল। আমরা আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করার মাধ্যমে আল্লাহর খেলাফত করতে চাই, যেমনটা হয়েছিল খোলায়ফায়ে রাশিদুনের সময়।
বর্তমানে খেলাফতের বহু ব্যাখ্যা রয়েছে, বহু রকমের খেলাফতের দৃষ্টান্ত ইতিহাসে রয়েছে যেমন- উমাইয়া, আব্বাসীয়, ফাতেমীয়, উসমানীয় ইত্যাদি। এই প্রতিটি খেলাফতই ছিল মূলত রাজতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র যেখানে সুলতানই সর্বেসর্বা। কোনো কোনো সুলতানের বিরুদ্ধে সীমাহীন ভোগবিলাসে মত্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এভাবে তারা অধিকাংশই আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করতেন না। তারা সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য খেলাফত ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছেন। আমরা বলেছি, রসুলাল্লাহর হাদীস মোতাবেক নবীর (সা.) ওফাতের পর ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত প্রকৃত ইসলামের আকিদা ও দীন প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। তারপর উম্মতে মোহাম্মদী তার দায়িত্ব ভুলে যায়। এর পরে খেলাফতের নামে রাজতন্ত্রই চলতে থাকে কয়েকশ বছর ধরে। এক সময় আল্লাহর শাস্তি তাদের উপর নেমে আসে। ফলে তারা ভিন্ন জাতির হাতে পরাজিত হয়ে তাদের গোলামে পরিণত হয়।
মহান আল্লাহ আবার তাঁর সত্যদীন ইসলামের আকিদা তাঁর এক প্রিয় বান্দা হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে উপলব্ধি করালেন। তিনি ১৯৯৫ সনে টাঙ্গাইলের করটিয়ায় এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। এই আন্দোলনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করলেন রসুলের (সা.) দেখানো তরিকা মোতাবেক এবং পাঁচ দফা কর্মসূচি অনুযায়ী। আমরা রসুলাল্লাহর (সা.) কর্মনীতি ব্যতীত অন্য কোনো তরিকা, মতাদর্শ বা খেলাফত ব্যবস্থা অনুসরণ করি না। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা যদি আল্লাহর হুকুম বিধান পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে যাবতীয় অন্যায় অবিচার, যুদ্ধ-রক্তপাত নির্মূল করে শান্তি, ন্যায়, সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারি তাহলেই আমরা আল্লাহর খেলাফত করলাম। আপনি কোনো এলাকায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করলেন, কিন্তু সেখানে শান্তি আসলো না, তাহলে বুঝতে হবে, আপনি আল্লাহর দেওয়া ইসলাম কায়েম করেননি, সম্ভবত মোল্লাতন্ত্র কায়েম করেছেন। আল্লাহ মোমেনদেরকে পৃথিবীর উপর শাসনকর্তৃত্ব বা খেলাফত দান করবেন বলে ওয়াদা করেছেন যেখানে ভয়ভীতির পরিবর্তে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত থাকবে (সুরা নূর ৫৫)। এটাই হচ্ছে আল্লাহর খেলাফতের প্রমাণ।
জনতার প্রশ্ন: আপনারা রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চান, কিন্তু রাজনীতি করেন না। তাহলে সেটা কীভাবে প্রতিষ্ঠা করবেন?
আমাদের উত্তর: আমরা বরাবরই বলে আসছি- স্বার্থের রাজনীতি, ধান্দাবাজির রাজনীতি, ক্ষমতার কামড়া-কামড়ি এবং কাদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতি পরিহার করতে হবে। আমাদের মৌলিক নীতিগুলোর একটি হলো- হেযবুত তওহীদের কোনো সদস্য প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সক্রিয় থাকতে পারবে না। কারণ, এই রাজনৈতিক ব্যবস্থা ব্রিটিশদের প্রবর্তিত ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতির প্রতিফলন। ব্রিটিশরা এ উপমহাদেশ স্বাধীন করার পূর্বে এই গণতান্ত্রিক সিস্টেম আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে যায়, যার ফলে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা একটি দিনের জন্যও শান্তিতে থাকতে পারি নি।
ক্ষমতার অপব্যবহার, বিরোধী দলকে দমন, স্বার্থান্বেষী রাজনীতি, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, খুন-গুম, অর্থ পাচারসহ যাবতীয় অপরাধ ও নৈরাজ্যের মূলে রয়েছে এই ব্রিটিশ-প্রবর্তিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা। তাই আমরা এই ধান্দাবাজের স্বার্থের রাজনীতি পরিহার করি। এবং ইসলামের প্রকৃত আদর্শের আলোকে জীবনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
আমরা কেমন রাষ্ট্রব্যবস্থা চাই তা আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব আকারে পেশ করেছি, বই ছাপিয়ে, পত্রিকার মাধ্যমে, সভা-সেমিনার করে সেটা জাতির সামনে তুলে ধরেছি। সেখানে আমরা বহুদলীয় রাজনীতির কুফল তুলে ধরেছি এবং কীভাবে সকল মানুষের রাজনৈতিক অধিকার সংরক্ষণ করেও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা যায় তার রূপরেখা তুলে ধরেছি। আমরা বর্তমানের নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার সাধন করে কীভাবে নির্লোভ, সাহসী, সত্যবাদী, আমানতদার ব্যক্তিদেরকে জনগণের নেতা নির্বাচন করা যাবে তা তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, যারা নেতৃত্বের জন্য লালায়িত তারা নেতা হতে পারবে না।
আমরা আমাদের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে জাতির সামনে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপন করছি। যদি বাংলাদেশের জনগণ আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে নেয় এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব হেযবুত তওহীদকে অর্পণ করে, তাহলে আমরা সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করব। আমরা দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা মেনে নেওয়ার জন্য মানুষকে আহ্বান করে যাচ্ছি। আল্লাহর রসুল (সা.) যেভাবে তওহীদের ভিত্তিতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে গেছেন আমরাও ঠিক সেভাবেই তওহীদের দিকেই মানুষকে আহ্বান করছি। মক্কার জনগণ তার ডাকে সাড়া দেয়নি, তিনি সেখানে সন্ত্রাসবাদী আচরণ করেননি। মদিনার জনগণ তওহীদের ডাকে সাড়া দিয়েছে, সেখানে তিনি আল্লাহর দীনের হুকুমবিধানে চর্চা করেছেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের দেশের মানুষও যদি সত্য ও ন্যায়ের এই আহ্বানে সাড়া দেয়, তবেই আমরা তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ। কিন্তু ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতিতে আমরা কখনও সম্পৃক্ত হবো না।
[হেযবুত তওহীদের সঙ্গে যোগাযোগ: ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৭১১৫৭১৫৮১, ০১৭১১২৩০৯৭৫]