হেযবুত তওহীদের কার্যক্রম সম্পর্কে গণমাধ্যমের নীরবতার কারণ কী ?
প্রশ্ন: মাননীয় এমাম, আমার কাছে অনেকেই প্রশ্ন করে, হেযবুত তওহীদকে মাঠে ময়দানে কাজ করতে দেখি। লক্ষ লক্ষ জনসচেতনমূলক অনুষ্ঠান আপনারা দেশজুড়ে করে থাকেন। কিন্ত গণমাধ্যমে এসবের সংবাদ আমরা পাই না কেন?
উত্তর: প্রশ্নটা এ সময়ের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সারা দেশে আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মব্যবসা, মাদকব্যবসা ইত্যাদির বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ সভা, সমাবেশ, র্যালি, সেমিনার করে যাচ্ছি। কিন্ত আমাদের জাতির পক্ষে এমন নিঃস্বার্থ ও কল্যাণমূলক কাজের সেরকম প্রচারণা আমরা পাই না কেন?
এই ‘কেন’-র কতগুলো কারণ আছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, দুঃখজনক হলেও সত্য গত ২৬ বছর থেকে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে একশ্রেণির ইসলামবিদ্বেষী গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়েছে যে হেযবুত তওহীদ জঙ্গি, সন্ত্রাসী, নিষিদ্ধ ইত্যাদি। এসব দেখে সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হয়েছে এমনকি প্রশাসনের অনেকেও প্রভাবিত হয়েছেন। প্রভাবিত হয়ে আমাদের হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। আরেকটি বিষয় হল আমাদের গণমাধ্যমগুলি দুঃখজনকভাবে তাদেরকে অনুসরণ করছে যারা দুনিয়াকে কন্ট্রোল করে। দুনিয়ার বড় বড় মিডিয়াগুলো দুনিয়ার মানুষরা কী ভাববে, কী চিন্তা করবে সেই চিন্তাশক্তি পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে। আপনারা জানেন বিশ্বের বড় বড় মিডিয়াগুলোর কী অবস্থা? মিডিয়ামোগলেরাই ঠিক করেন যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কে হবে, কার নামে কোন কেলেঙ্কারি হবে ইত্যাদি। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, হল্যান্ড এসব দেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন কীভাবে হবে, কীভাবে ঘটবে, রাশিয়াতে কী হবে, ইন্ডিয়াতে কী হবে, আরবে কী হবে, উন্নয়নশীল দেশে কী হবে ইত্যাদি সমস্তকিছুর রোডম্যাপ নির্ধারণ করে এ সমস্ত মিডিয়াগুলি।
বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ মিডিয়াই ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে। তারা এককভাবে ইসলামকে টার্গেট করেছে। তারা দেখল যে সমস্ত তন্ত্রমন্ত্র ব্যবস্থা যখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে, পুঁজিবাদী গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে, সমাজতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে, রাজতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। এই মুহূর্তে একটাই সভ্যতা বা আদর্শ রয়েছে যেটাকে কেন্দ্র করে জাগরণ সৃষ্টি করা হতে পারে। সেটা হচ্ছে ইসলাম। যেহেতু ইসলাম দিয়ে একসময় শান্তিপূর্ণ সমাজ কায়েম করা হয়েছে এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ সেই অনাবিল শান্তিময় পরিবেশ ও সমৃদ্ধ সভ্যতাকে লালন করেছে। সে ইতিহাস মানুষ বিস্মৃত হয় নি। মুসলিম জনগোষ্ঠীর ঈমানী চেতনা আবার তাদেরকে অপমান-লাঞ্ছনাময় জীবন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা যোগাতে পারে। মানুষ আবারো ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে পারে। সেটা করলে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের কায়েম করে রাখা এই স্বার্থবাদী ব্যবস্থা, শোষণমূলক ব্যবস্থা আর টিকবে না। তারা টার্গেট করল ইসলামকে। তারা মিডিয়াগুলোকে ব্যবহার করে প্রচার করতে লাগল যে ইসলাম খারাপ, ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম। মুসলমান মানেই সন্ত্রাসী। ইসলামের নামে যত দল আছে সবগুলো এক, প্রত্যেকের গোড়া এক। তারা সকালবেলা আলাদা হলেও দিনের শেষে এক। তারা সন্ত্রাসী করবে, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড করবে। তারা আবার আমাদেরকে সেই ১৪শ বছর পেছনে নিয়ে যাবে। আমরা কাজ করতে গিয়ে বহু প্রশাসনিক কর্মকর্তার মুখে একথা শুনেছি যে, “ঐ হিজবুত তাহরীর আর হেযবুত তওহীদ একই, সব এক”। কিন্তু এই কথার আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমি ঘৃণা করি এ কথাকে। ন্যায় অন্যায়, ডান বাম এক হতে পারে না, এক নয়। আমরা ইসলাম চাই, তারাও ইসলাম চায়। মানলাম একটা জঙ্গিবাদী দলও নামাজ পড়ে আমরাও নামাজ পড়ি, তারা আল্লাহ বিশ্বাস করে আমরাও করি, তারাও যে কোর’আনের আয়াতের কথা বলে আমরাও তাও বলি। এই কারণে আপনারা বলছেন ও-ই সব একই? তাহলে আমি বলব, আমাদের দেশে একজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন নাম আব্দুর রহমান। আবার একজন জঙ্গি নেতাও ছিলেন যার নাম শায়েখ আব্দুর রহমান। তাহলে দুজনেই কি এক? আমার নামে ফেসবুকে একটি আইডি থেকে ভীষণভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল, আমি ঢাকার উত্তরা থানায় গেলাম জিডি করতে। থানা কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সহযোগিতা করেছিলেন। আসার সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলছিলেন, “এমাম সাহেব, নামে নামে যমে টানে। নামটা বাদ দিলেই তো হয়। এই নামটার কারণেই তো আপনাদের ওপর এত হয়রানি, এত সন্দেহ। এই নাম না থাকলেও তো হতো।” আমি বললাম, প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান আর শায়েখ আব্দুর রহমান কি এক হলো? কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ, কোনটা ন্যায়-অন্যায়, কোনটা সত্য-মিথ্যা এগুলো দেখার দায়িত্বই তো সরকারের, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর, মিডিয়ার সবার।
‘সব এক’ এই অন্ধত্বের নীতিকে ধারণ করায় আমাদের দেশের মিডিয়াগুলো মনে করে হেযবুত তওহীদও খারাপ, হেযবুত তওহীদকে প্রমোট করব না, তাদের কোনো ভাল কাজই আমলযোগ্য নয়। তারা ওঁৎ পেতে বসে থাকে হেযবুত তওহীদের কোনো খারাপ কাজ আছে কিনা তা প্রচার করার জন্য, ওটা সঙ্গে সঙ্গে প্রচার হয়ে যায়। আপনারা জানেন নোয়াখালির সেই পৈশাচিক ঘটনার প্রতিবাদে আমরা সারা বাংলাদেশে সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম কিন্তু একটি খবর পর্যন্ত তারা প্রচার করে নাই। আমি অবাক হলাম পাবনার একটি ঘটনায়। পাবনাতে একটি থানায় ওসি সাহেব অনুরোধ করলেন যে, আপনারা সংবাদ সম্মেলনটা এখানে না করে সদরে করেন। এখানে আপনাদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী তাই একটু অসুবিধা আছে, তারা আপনাদের ক্ষতি করতে পারে। তাই আমি বললাম ঠিক আছে। তোমরা ওসি সাহেবের এই অনুরোধ রাখ, সদরে করো। সাংবাদিকদেরকে দাওয়াত দাও। পরের দিন পত্রিকায় পড়লাম; পত্রিকায় বড় করে হেডলাইন ‘পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গিয়েছে হেযবুত তওহীদের সংবাদ সম্মেলন’। কী গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ! এমন সংবাদ পেলেই মিডিয়া প্রচার করতে সদাপ্রস্তুত। তাদের প্রয়োজন নেগেটিভ সংবাদ। দেশের জন্য, মানুষের জন্য জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা জনসভা করলেও সেটা তাদের নজরে আসে না। কীরকম একচোখা বিচার করুন।
সুনামগঞ্জে একলোক হেযবুত তওহীদে যোগ দিয়েছে। সে মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সা ঋণ করে আমি শুনেছি, মানুষ তার নামে বদনাম করে। আমি বলেছি ওকে হেযবুত তওহীদ থেকে বের করে দাও, যদি এভাবে মানুষের সাথে প্রতারণা করে তাহলে ও হেযবুত তওহীদের কেউ নয়। সে অনেক তওবা করে বলেছে, “আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি অন্যায় করেছি, আর মানুষের কাছ থেকে এভাবে টাকা নেব না।” আমি বলেছি যদি ভাল হও তবে থাকো। তার ব্যক্তিগত লেনদেনের ঝামেলার কারণে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। এটা স্বাভাবিক ঘটনা নয় কি? যে কোনো দলেই এ ধরনের লোক থাকতে পারে, তাদের এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। আশ্চর্যের বিষয়, পত্রিকায় হেডলাইন করা হয়েছে, ‘হেযবুত তওহীদের সদস্য গ্রেফতার’। এখানে হেযবুত তওহীদের সদস্য গ্রেফতারের প্রসঙ্গ কেন আসলো? সেকি হেযবুত তওহীদের প্রচারকাজ করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছে? সুনামগঞ্জের হেন পত্রিকা নেই যেখানে এ সংবাদ আসে নি। জাতীয় পত্রিকাতেও এসেছে হয়ত। এই হচ্ছে বিষয়।
তবে মিডিয়ার এই দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই পাল্টানো শুরু হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ্। আমাদের গণমাধ্যমগুলোর যারা ইতিমধ্যেই ভুল ধারণা থেকে মুক্ত হয়েছেন আমি তাদেরকে ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানাই। আমি তাদেরকে বলবো আপনারা ওই ধর্মব্যবসায়ী কূপমণ্ডূকদের অপপ্রচারে প্রভাবিত হবেন না, আর ইসলামবিদ্বেষী কিছু শয়তান আছে তাদের অপপ্রচারেও প্রভাবিত হবেন না। হেযবুত তওহীদ একটি ন্যয়সঙ্গত আন্দোলন, মানবতার কল্যাণকামী আন্দোলন। কাজেই হেযবুত তওহীদকে প্রত্যক্ষভাবে জানুন, বুঝুন। যে পরিমাণ সভা সমাবেশ আমরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে করছি এ এক বিস্ময়কর ব্যাপার। সরকার মহোদয় কয় হাজার কোটি টাকা দিয়ে বেসরকারিভাবে এরকম কাজ করাতে পারতেন? কিন্তু আমরা আমাদের মেয়েদের সোনা দানা বিক্রি করে, ভাইদের রক্ত পানি করে সেই অর্থ দিয়ে নিজেরা কষ্ট করে জাতির জন্য এ কাজ করেছি। এটা যদি প্রচারিত হতো, জাতির এক বিরাট কল্যাণ হতো। এটা গণমাধ্যমগুলো যত দ্রুত এ কথাটি বুঝতে পারবেন ততই মঙ্গল।