হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম, এমাম হেযবুত তওহীদ
ফেসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি আমাদের প্রতি অভিযোগ আরোপ করেন যে, আমরা আলেমদের বিরোধিতা করি অর্থাৎ আমরা নাকি আলেম বিদ্বেষী। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বিরুদ্ধে ওয়াজে বলা হয়ে থাকে আমরা আলেমদের প্রতি বিদ্বেষ ছাড়াচ্ছি যার মাধ্যমে আমাদের অভিপ্রায় হলো, সাধারণ মানুষের আলেমদের প্রতি যে শ্রদ্ধা রয়েছে তাকে নিঃশেষ করে দেওয়া ও এর মাধ্যমে তাদের ইসলাম থেকে আলাদা করে দেয়া। সত্যিই কী আমাদের অভিপ্রায় সেটাই?
আমরা দৃঢ়ভাবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের বিরুদ্ধে আনিত এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা আলেম বিদ্বেষী নই। আমি আমার বিভিন্ন জনসভা, কর্মিসভা, সেমিনার ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে পরিষ্কারভাবে বলেছি যে, আলেম মূলত দুই প্রকার। এক, সত্যনিষ্ঠ আলেম ও দুই, ফেতনা সৃষ্টিকারী আলেম। নবী করিম (স.) এর দুইটি হাদিস পর্যবেক্ষণ করলেই আমরা এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারি। আল্লাহর রসুল কখনই সকল আলেমকে এক পাল্লায় মাপেন নি। একটি হাদিসে রসুল বলেছেন, “এমন এক সময় আসবে যখন আসমানের নিচের সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব হবে তাদের আলেম সমাজ। তারা ফিতনা সৃষ্টি করবে ও সেই ফিতনা তাদের দিকেই ধাবিত হবে।” অন্য একটি হাদিসে আল্লাহর রসুল বলেছেন, “আল ওলামাউ ওরাসাতুল আম্বিয়া, অর্থাৎ আলেমরা নবী-রসুলদের উত্তরসূরি।” নবী-রসুলগণ অর্থ-সম্পদ রেখে যান না, তারা রেখে যান তাদের এলেম, নবুয়তী এলেম। সেই এলেমকে যারা ধারণ করে তারাই হচ্ছেন আলেম। নবীদের অবর্তমানে তারাই সে জ্ঞান বিতরণ করেন।
লক্ষ্য করুন, দুইটি হাদিস থেকে দুই শ্রেণীর আলেমের রূপ পাওয়া যায়। প্রথমটি সেই সকল আলেম যারা ফিতনা অর্থাৎ সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তিনি সাড়ে ছয় লক্ষ হাদিস সংগ্রহ করেন যার মধ্যে অনেকগুলি ছিল ভুয়া, অর্থাৎ জাল হাদিস। তিনি সেগুলো থেকে বাছাই করে সাড়ে ছয় হাজার সহিহ হাদিস লিপিবদ্ধ করেন। তাহলে যারা সেই সকল জাল হাদিস রচনা করলো তারা কী করে সত্যনিষ্ঠ আলেম হতে পারে? আমরা কী করে তাদের অনুসরণ করতে পারি?
আমরা সেই সকল আলেমদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল যারা সত্যনিষ্ঠ। যাদের জ্ঞান মানবতার কল্যাণে ব্যবহৃত হয়, যারা জ্ঞান বিতরনের জন্য কোন বিনিময় নেন না, নিজেদের জ্ঞানের অপব্যবহার করে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকা- ঘটান না তাঁরাই সত্যনিষ্ঠ আলেম। তাঁরা আল্লাহ থেকে আগত সত্যকে ধারণ করে ও সত্যকে প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে সদা নির্ভিক থাকে। রসুলে পাক (স.) এর কাছে যে জ্ঞান ছিল তা থেকে সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ করেছেন হযরত আলী (রা.)। আল্লাহর রসুলের একটি হাদিসই রয়েছে যেখানে তিনি বলছেন, “আমি জ্ঞানের শহর হলে আলী সেই শহরের দরজা।” সেই সুবাদে আলী (রা.) সত্যনিষ্ঠ আলেমদের শিরোমণি। তার জীবনযাপনের দিকে আমাদের দৃষ্টিপাত করি তবে আমরা দেখতে পাবো তিনি কখনই তাঁর সেই জ্ঞান দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করেনি। তিনি কখনই সে জ্ঞানের কোন বিনিময় নেন নি। একদিন রসুল তনয়া ও আলী (রা.) এর স্ত্রী মা ফাতিমা (রা.) একদিন তাঁকে বললেন ঘরের কাজে সহয়তা করার জন্য একজন লোক প্রয়োজন। আলী (রা.) তখন বললেন তিনি সক্ষম নন। মা ফাতিমা নিজেই নিজের কাজ করতেন। যব থেকে আটা ভাঙানোর জন্য যাঁতা পিষতে পিষতে তাঁর হাতে কড়া পড়ে গিয়েছিল। আলী (রা.) কোন ভৃত্যের ব্যবস্থা করতে পারেন নি কারণ সচ্ছলতা ছিল না। তিনি রসুলের সাথে থেকে ও তাঁর ওফাতের পরও আল্লাহর রাস্তায় কঠোর সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি ছিলেন আল্লাহর পথে নির্ভিক সংগ্রামকারী। সত্যনিষ্ঠ আলেমের তাঁর চেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ আর হয় না। যারা এই প্রকার নির্ভিক, অন্যায়ের কাছে মাথানত করেন না, সামান্য অর্থের বিনিময়ে দীনকে নিজের এলেমকে বিক্রি করেন না তাদের আমরা সালাম জানাই, শ্রদ্ধা করি।
আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তার কারণ হলো আমাদের সম্পর্কে জনগণকে ভুল বুঝানো হয়। এই ভুল বুঝানোর কাজটিই করে ধর্মব্যবসায়ী, ফিতনা সৃষ্টিকারী আলেম সমাজ যাদের রসুল আসমানের নিচে সর্বনিকৃষ্ট জীব হিসেবে ভবিষ্যদ্বানী করেছেন এবং যাদের আমরা বিরোধিতা করি। যারা ফিতনা সৃষ্টি করে, ধর্মব্যবসা করে, সমাজে দাঙ্গা-হাঙ্গামার বিস্তার ঘটায় তাদের বিরুদ্ধে কী আমাদের কথা বলা উচিত নয়? তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে নয়তো অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা হলো না। আপনারা জানেন আমরা হেযবুত তওহীদ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলি তাই আমাদের তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেই হবে। আমাদের হেযবুত তওহীদের মধ্যেও আলেম রয়েছে। তারা সক্রিয়ভাবে আমাদের আন্দোলনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। তাহলে বুঝা যায় যে আমরা সকল আলেমদের বিরোধিতা কখনই করি নি।
আলেমদের ব্যাপারে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। মনে করা হয় যারা মাদ্রাসা থেকে বের হচ্ছে তারা সকলেই আলেম। যাদের নামের আগে আল্লামা, মাওলানা, মুফতি এই রকম পদবী লাগানো থাকে তারা হচ্ছেন প্রকৃত আলেম। কিন্তু এই ধারণা মোটেও ঠিক নয়। মুসা (আ.) যখন আল্লাহর কাছে প্রশ্ন রাখলেন যে, আলেম কে? তখন আল্লাহ বললেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করে কখনই তৃপ্ত হয় না সেই আলেম। একজন আলেম দীনের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি দুনিয়ার জ্ঞানও অর্জন করবেন। একজন আলেম হবেন নিরহংকারী, তিনি সদা জ্ঞানের জন্য তৃষ্ণার্ত থাকবেন। তিনি হবেন বিনয়ী, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা এ ধরণের আলেমদের মোটেও অসম্মান করি না। আমরা শুধু চাই বর্তমানে যারা আলেম হিসেবে পরিচিত রয়েছেন তারা সকলেই মো’মেন হন। আপনারা মো’মেন হলেই আমাদের সমাজ, দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে।