জঙ্গিবাদের অপবাদ যখন ইসলামের উপর আরোপ করা হয় তখন অনেকেই ধর্মকে এই কালিমা থেকে রক্ষা করার জন্য বলে থাকেন ইসলামে জঙ্গিবাদ নেই, সন্ত্রাসের কোনো জায়গা নেই, কোনো সাম্প্রদায়িকতা নেই, মানুষকে হত্যা করার কথা নেই। শুনতে ভালোই লাগে। কিন্তু যারা জঙ্গিবাদী তারা তো ঐ ইসলামের দোহাই দিয়েই, কোর’আন হাদিসের দলিল দেখিয়েই মানুষ জবাই করছে, আত্মঘাতী হয়ে অসংখ্য মানুষ হত্যা করছে। তাহলে বিষয়টা কেমন হলো? যারা কেবল বলে যাচ্ছেন ইসলামে এটা নাই, ওটা নাই তাদেরকে অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে যে ইসলামে আছেটা কী? ‘না’ তো বুঝলাম, কিন্তু ‘হ্যাঁ’-টা কী?
শুধু নাই বললে তো চলবে না, ইসলাম বিদ্বেষীরা দিনরাত প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে যে, ইসলাম একটি জঘন্য সন্ত্রাসবাদী বিশ্বাস। তারাও কোর’আন থেকে, রসুলের যুদ্ধময় জীবন থেকে এই ঘটনা, ওই ঘটনা, এই হাদিস, ওই হাদিস তুলে এনে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অনুমোদন ইসলামে আছে, একজন প্রকৃত মুসলমান মানেই হচ্ছে একজন জঙ্গি। যারা জঙ্গি না তারা প্র্যাকটিসিং মুসলিম না। মোহাম্মদ (সা.) জঙ্গিবাদই শিক্ষা দিয়ে গেছেন। এই কথা শুনে অনেকেই হয়তো নাউজুবিল্লাহ পাঠ করবেন কিন্তু সেটুকুই কি যথেষ্ট? আপনাকে কি ঐ সব ধর্মবিদ্বেষীদের যুক্তি খণ্ডন করতে হবে না? যদি না করেন তাহলে মনে রাখবেন, মানুষ কিন্তু সাময়িক হুজুগে মাতলেও দিনশেষে যুক্তিশীল প্রাণী। তারা ঐ ধর্মবিদ্বেষীদের যুক্তিকেই মেনে নেবে এবং ইসলামবিদ্বেষী হয়ে যাবে। এখন যদি কেউ জঙ্গিবাদী ও ধর্মবিদ্বেষী এই উভয় তাবুর উত্থাপিত যুক্তিগুলোকে খণ্ডাতে না পারেন তাহলে মুখে মুখে ইসলাম শান্তির ধর্ম বলে জিকির করে কোনো ফায়দা হবে না, ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে জঙ্গি হওয়া থেকে ফেরাতে পারবে না, যুক্তিশীল ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে নাস্তিক ধর্মবিদ্বেষী হওয়া থেকে ফেরাতে পারবে না।
এখানেই দরকার ইসলামের প্রকৃত রূপ তুলে ধরা এবং রসুলাল্লাহর (সা.) জীবদ্দশায় সংঘটিত প্রাসঙ্গিক ঘটনাবলীর সঠিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা। এটি একটি কঠিন আদর্শিক লড়াই। প্রত্যেকটি কথাকে ইসলামের শিক্ষা দিয়েই খণ্ডাতে হবে, রসুলের জীবন থেকেই আপনাকে ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিটাকে তুলে আনতে হবে। এটা করতে আমাদের আলেম ওলামারা ব্যর্থ হচ্ছেন। তারা কেবল অমুক নাস্তিক, তমুক মুরতাদ ইত্যাদি বলে গলাই ফাটাতে পারেন আর পারেন দুর্বল জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ধর্মোন্মাদনা সৃষ্টি করে হামলা করতে। শক্তিমানের অর্থের কাছে তাদের আত্মা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে গেছে। ধর্মবিক্রী তাদের জীবিকা; তাদের নৈতিক শক্তি নিঃশেষিত; মানবজাতিকে, মুসলিম জাতিকে এই ঘোর সংকটকালে রক্ষা করতে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই, বক্তব্য নেই। তাদের বক্তব্য কেবল বিভাজনই বৃদ্ধি করতে পারে, সংযুক্ত করতে পারে না। কিন্তু এখন বিভাজনের সময় নয়। সমগ্র মুসলিম দাবিদার জনগোষ্ঠীর জীবন আজ হুমকির মুখে পড়েছে। কখন কোন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ আক্রান্ত হয় তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে জাতির রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে চলেছে ফেরকা মাজহাবের দ্বন্দ্ব সংঘাত। এসব অন্তর্গত সংঘাত আমাদের পতনকেই তরান্বিত করছে। আমরা আশঙ্কিত, কারণ আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার ৯০% নামে হলেও মুসলমান। তাই আমাদের দেশটিও যে কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানের মতো সাম্রাজ্যবাদীদের রণাঙ্গনে পরিণত হতে পারে।
এখন দরকার সেই আদর্শ যা শতধাবিভক্ত মুসলিম জাতিকে এক নেতার অধীনে ঐক্যবদ্ধ করবে, এক লক্ষ্যে চালিত করবে। এটাই হচ্ছে তাদের শক্তি ও পরাক্রম ফিরে পাওয়ার পূর্বশর্ত। এখন আর খুঁটিনাটি মাসলা মাসায়েল আর আমলের দোষ ত্রুটি নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না, জঙ্গিবাদের ইস্যুতে ইতোমধ্যেই বহু দেশ কারবালায় পরিণত হয়েছে। আমাদের এই সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বঙ্গভূমিকে যদি আমরা রক্ষা করতে চাই তাহলে মুসলিমদেরকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে, তাদেরকে ঈমান ও দেশপ্রেমের চেতনায় জাগ্রত হতে হবে। সকল বিভাজনের বিরুদ্ধে তাদেরকে হতে হবে বজ্রকঠিন। প্রকৃত ইসলামের সেই ইতিহাস যুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব, আদর্শ, বক্তব্য তুলে ধরছে হেযবুত তওহীদ যার সামনে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে ধর্মের নামে প্রচলিত সকল অপব্যাখ্যা, সাম্প্রদায়িকতা, অন্ধত্ব, কুসংস্কার, ধর্মব্যবসাসহ সকল নষ্ট মতবাদ।