মাসুদ রানা
জঙ্গিবাদ সৃষ্টির কারণ: জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড একটি আদর্শ দ্বারা পরিচালিত হয়। ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা থেকে এর জন্ম। ধর্মব্যবসায়ী মোল্লারা মাদ্রাসা, মক্তব, মিলাদ, মাহফিল, ওয়াজ, সভা-সম্মেলন ইত্যাদি করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মানুভূতি জাগিয়ে তুলে অন্যায় পথে পরিচালিত করে। অধিকাংশ সময়ই রাজনৈতিক স্বার্থে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বোঝানো হয়- অমুক কাফের, অমুক নাস্তিক, অমুককে মারতে পারলে জান্নাত নিশ্চিত ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব বলে ধর্মব্যবসায়ী প্রতারকরা সাধারণ মানুষকে সহিংসতার পথে ঠেলে দেয়, যা এক সময় রূপ নেয় হৃদয়বিদারী ধ্বংসযজ্ঞে।
আরেক ধরনের জঙ্গি গ্রুপ রয়েছে যারা আরও ভয়াবহ। এরা আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে দেশে, পাহাড়ে-জঙ্গলে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করে; সিনেমা হল, পর্যটন কেন্দ্র, পার্ক, স্কুল, অফিস-আদালত ইত্যাদি স্থানে বোমা হামলা করে, জনজীবনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এদের উত্থানের পেছনেও কোনো না কোনোভাবে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণির যোগসাজস থাকেই, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঐ ধর্মব্যবসায়ীদের ব্যবহার করে প্রধান কলকাঠি নাড়ায় পশ্চিমারা। আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের ইতিহাস ও তথ্য-উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এসব বড় বড় জঙ্গি গ্র“পগুলোকে পশ্চিমারা প্রাথমিকভাবে অস্ত্র, অর্থ, প্রশিক্ষণ দিয়ে, নিরাপত্তা দিয়ে তৈরি করে, অতঃপর তাদেরকে ব্যবহার করে বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করে। এমনও হয়েছে যে, পশ্চিমা কুচক্রী মহল সরাসরি এদেরকে অস্ত্র সাহায্য দিয়ে তাদের শত্র“শক্তির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে, অনেকটা শত্রু দিয়ে শত্রু ঘায়েলের মতো। তবে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, ধর্মব্যবসায়ী রাজনীতিকদের স্বার্থের কারণেই হোক, আর পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রেই হোক জঙ্গিরা সর্বদাই পরিচালিত হয়েছে আদর্শ দ্বারা, এবং সে আদর্শ হচ্ছে ইসলাম। তারা ইসলামকে, আল্লাহ-আল্লাহর রসুলকে নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে, যার কারণে বুকে মাইন বেঁধে শত্র“সমেত আত্মঘাতী হতেও তাদের আত্মা কাঁপে না, প্রাণের মায়া তাদের পথরোধ করতে পারে না। আল্লাহ-আল্লাহর রসুল, ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য তারা অকাতরে তাদের মূল্যবান জীবন বিসর্জন দেয়।
জঙ্গিবাদ নির্মূলের উপায়: দেড়যুগ ধরে জঙ্গিবাদ সারা বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রক্তের বন্যায় লাল হয়ে গেছে পৃথিবীর মাটি, ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে আফগানিস্তান, ইরাক। পাকিস্তান, সিরিয়া, নাইজেরিয়াসহ বিশ্বের প্রায় সকল মুসলিম দেশেই জ্বলছে জঙ্গিবাদ নামক সহিংসতার আগুন। কেবল ইরাকেই মারা গেছে ১০ লক্ষ আদম সন্তান। বিশ্বের সুপার পাওয়ারগুলি তাদের সর্বাত্মক সামরিক শক্তি ও অর্থ বিনিয়োগ করেও এই সমস্যার কোনো কূল-কিনারা করতে পারে নি। জঙ্গিরা মরছে, বেঁচে থাকছে জঙ্গিবাদ। যতই তাদেরকে জোর করে দমনের চেষ্টা করা হচ্ছে, ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে ততই তাদের উগ্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে, এমন কি তারা আত্মঘাতীও হচ্ছে। এভাবে দিন দিন বেড়েই চলেছে ধর্মের নামে সহিংসতা, জনগণের দুর্ভোগ, কিন্তু কোনো সমাধান আসছে না। দীর্ঘ দেড় যুগের এত অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির পর অবশ্য এখন জ্ঞানী-গুণীরা একমত হচ্ছেন যে, শক্তিপ্রয়োগে, সামরিক কায়দায় জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব নয়; কারণ জঙ্গিবাদ কোনো সাধারণ ও বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নয়, এটি একটি বিকৃত আদর্শ। এই আদর্শ যতদিন টিকে থাকবে, জঙ্গিবাদও ততদিন টিকে থাকবে। তাই একে মোকাবেলাও করতে হবে আদর্শ দিয়েই। সহজভাবে বলতে গেলে, ‘কোর’আন হাদিসের অপব্যাখ্যার মাধ্যমেই জঙ্গিবাদ নামক এই ভুল মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। এই আদর্শিক যুদ্ধে জয়ী হতে হলে কোর’আন হাদিসের সেই বিষয়গুলির সঠিক ব্যাখ্যা মানুষকে জানাতে হবে।’