তাহের মারুফ
তায়েফ থেকে ফিরে আসা, তাদের রুঢ় ও অমানবিক আচরণ এবং আবু তালিব ও আম্মা খাদিজার মৃত্যুর পর কুরাইশের অত্যাচার বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। এতে রসুল (সা.) এর অন্তরে একাধিক চিন্তা একত্রিত হয়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে শোকাহত ও দুঃখে কাতর নবীর সান্ত্বনা আসে। নবুওয়াতের ১০ম সালে রজবের ২৭ তারিখের রাতে তিনি যখন নিদ্রারত ছিলেন, জিবরাঈল (আ.) বুরাক নামক বাহন নিয়ে আসেন। বোরাক ঘোড়া সদৃশ এক জন্তু যার দুটি দ্রুতমান পাখা আছে বিদ্যুতের ন্যায়। রসুলকে (সা.) তাতে আরোহণ করানো হয় এবং জিবরাঈল তাঁকে ফিলিস্তীনে বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রথমে নিয়ে যান। অতঃপর সেখান থেকে আসামান পর্যন্ত নিয়ে যান। এ ভ্রমনে তিনি পালনকর্তার বড় বড় নিদর্শন পরিদর্শন করেন। আসমানেই পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করা হয়। তিনি একই রাত্রে তুষ্ট মন ও সুদৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে মক্কায় প্রত্যাগমন করেন। ভোর বেলায় কাবা শরিফে গিয়ে তিনি লোকদেরকে একথা শুনালে কাফেরদের মিথ্যার অভিযোগ ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ আরোপ বেড়ে যায়। উপস্থিত কয়েকজন লোক তাঁকে বাইতুল মুকাদ্দাসের বিবরণ দিতে বলে। মূলত উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে অপারগ ও অক্ষম প্রমাণিত করা। তিনি তন্ন তন্ন করে সব কিছু বলতে লাগলেন। কাফেররা এতে ক্ষান্ত না হয়ে বলে, আমরা আর একটি প্রমাণ চাই। রসুল (সা.) বললেন, আমি পথে মক্কাগামী একটি কাফেলার সাক্ষাৎ পাই এবং তিনি কাফেলার বিস্তারিত বিবরণসহ উটের সংখ্যা ও আগমনের সময়ও বলে দিলেন। রসুল (সা.) সত্যই বলেছেন কিন্তু কাফেররা হটকারিতা, কুফর ও সত্যকে অস্বীকার করার দরুণ ভ্রান্ত রয়ে গেল। সকাল বেলায় জিবরাঈল (আ.) এসে রসুলকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পদ্ধতি ও সময়সূচি শিখিয়ে দিলেন। ইতঃপূর্বে নামাজ শুধু সকাল বেলায় দু’রাকাত ও বিকেল বেলায় দু’রাকাত ছিলো। কুরাইশরা সত্য অস্বীকার করতে থাকায় এ দিনগুলোতে তিনি মক্কায় আগমণকারী ব্যক্তিদের মাঝে দাওয়াতী তৎপরতা চালাতে লাগলেন। তিনি তাদের অবস্থান স্থলে মিলিত হয়ে দাওয়াত পেশ করতেন এবং তার সুন্দর ব্যাখ্যা দিতেন। আবু লাহাব তাঁর পিছনে তো লেগেই থাকতো। সে লোকদেরকে তাঁর থেকে ও তাঁর দাওয়াত থেকে সতর্ক থাকতে বলতো। এক বার ইয়াসরিব থেকে আগত এক দলকে ইসলামের আহ্বান জানালে তাঁরা মনোযোগ দিয়ে শুনে এবং তাঁর অনুসরণ ও তাঁর প্রতি ঈমান আনতে ঐক্যবদ্ধ হয়। ইয়াসরিববাসী ইহুদিদের কাছে শুনতো যে অদূর ভবিষ্যতে এক নবী প্রেরিত হবেন। তাঁর আবির্ভাবের যুগ নিকটে এসে গেছে। তাদেরকে যখন তিনি ইসলামের দাওয়াত দেন, তাঁরা বুঝতে পারলো যে তিনি সেই নবী যার কথা ইহুদিরা বলেছে। তাঁরা সত্ত্বর ইসলাম গ্রহণ করে ফেলে এবং বলে ইহুদিরা যেন আমাদের অগ্রগামী না হয়। তাঁরা ছিল ৬ জন, পরবর্তী বছর ১২ জন আসে। তাদেরকে রসুল (সা.) মৌলিক শিক্ষা দেন। প্রত্যাবর্তনের সময় তাদের সাথে তিনি মুসআব বিন উমাইরকে (রা.) কোর’আন ও দীনের বিধানাবলী শিক্ষা দেয়ার জন্য পাঠান। মুসআব (রা.) মদিনায় বিরাট প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। এক বছর পর তিনি যখন মদিনায় আসেন, তখন তাঁর সাথে ৭২ জন পুরুষ ও দু’জন মহিলা ছিল। রসুল (সা.) তাদের সাথে মিলিত হন এবং তাঁরা দ্বীনের সহযোগিতা ও এর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। অতঃপর তাঁরা মদিনায় ফিরে যান।
এরই ধারাবাহিকতায় কিছুকাল পরে রসুলাল্লাহ ও তাঁর আসহাবগণ মদীনায় হেযরত করেন এবং ইসলামের নবযুগের সূচনা করেন।
শিক্ষা: দৃষ্টিহীন, যুক্তিহীনভাবে যারা সত্যের বিরোধিতা করতে থাকে তাদের সামনে যতবড় প্রমাণই উপস্থিত করা হোক না কেন তারা কখনো সত্য গ্রহণ করবে না। কিন্তু এতে সত্যের পক্ষাবলম্বনকারীদের দুশ্চিন্তা করার কোনোই কারণ নেই, কারণ শেষ বিজয় সত্যেরই হয়। সত্য যখন উপস্থিত হয় তখন মিথ্যাকে বিতাড়িত হতেই হয়।