বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রকৃত চলন কোথাও না দেখা গেলেও একটি বিষয় খুব করে চর্চিত হতে দেখা যায়। তা হলো অধিকার আদায়ের নামে হরতাল, ভাংচুর, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি। এটি নাকি গণতান্ত্রিক অধিকার! এই অধিকারের ব্যাপারে স্কুল পড়–য়া থেকে শুরু করে সকলেই সচেতন। সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে অবরোধ, বেতন ভাতা আদায়ের জন্য ভাংচুর ঘেরাও এসব এখন নিত্য ঘটনা। তাই সবকিছু দৃষ্টে মনে হয় বাংলাদেশ যেন হরতাল, অবরোধ, অগ্নি সংযোগ, সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি, ককটেল বিস্ফোরণে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করার এক স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত বা বিশেষ শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার জন্য অভিশপ্ত এই গণতান্ত্রিক অধিকার আর কতকাল চলবে?
এই নিবন্ধটি লেখার সময় আমার এক সহকর্মী বললÑ গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখ না, সংবিধান লঙ্ঘন হবে। জানি না সত্য সংবিধান লঙ্ঘন হবে কিনা? কারণ সংবিধানের সব ধারা উপধারা আমার জানা নেই। কিন্তু দেশের একজন নাগরিক হিসাবে আমার জন্য, জনগণের জন্য যা কষ্টদায়ক তা বলার অধিকার সংবিধান আমাকে দিয়েছে। সেই অধিকার থেকেই বলছি, যে সকল কর্মকাণ্ড দেশ ও জনগণের ক্ষতি সাধন করে সে সকল অধিকারকে গণতান্ত্রিক রূপ দেয়ার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু রয়েছে। একটি বিশেষ শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার জন্য গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করা, বাসে আগুন দিয়ে নিরীহ জনগণকে অগ্নিদগ্ধ করার অধিকারকে কেনই বা সাংবিধানিক রূপ দেয়া হয়েছে তা বোধগম্য নয়।
মানুষ তার প্রয়োজনে নির্বিঘেœ চলাফেরা করবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, লেখাপড়া করবে এটাই স্বাভাবিক ও মানবিক। সেই অধিকারকে হরণ করে একটি মহল যখন তার পথ রুদ্ধ করে থাকে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য করে, স্কুল কলেজের পরীক্ষা বন্ধ করে দেয় তখন সেখানে গণতন্ত্র কিভাবে থাকে? আর একে যদি গণতান্ত্রিক রূপ দেয়ার এতই প্রয়োজন থাকে তাহলে একবার জনগণের মতামত নিয়ে দেখুন তারা এই ভঙ্কর সর্বনাশী ব্যবস্থাকে গ্রহণ করে না প্রত্যাখ্যান করে। নিশ্চয় একশ্রেণির রাজনৈতিক ধান্দাবাজ ও স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠি ছাড়া কেউ মানুষকে কষ্ট দেয়ার মতো কোন কর্মসূচির পক্ষে মতামত দেবে না। তাই এই গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে হরতাল, জ্বালাও পোড়াও, অবরোধ, ভাংচুর থেকে মানুষ মুক্তি চায়। আমি জানি কিছু কিছু ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হবে না। কিন্তু দেশ ও জনগণের জন্য ক্ষতিকার এমন বিষয়ে অনৈক্য হবার কোন সুযোগ নেই। সুতরাং শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য নয়, দয়া করে জনগণের আকাক্সক্ষার কথা ভাবুন। আমাদেরকে এসকল কষ্টদায়ক জ্বালাও পোড়াওয়ের হরতাল থেকে মুক্তি দিন।
কাজী আবদাল্লাহ আল মাহফুজ
সাংবাদিক ও কলামিস্ট