বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতি হোচ্ছে এখানে জনতার নামে, গণতন্ত্রের নামে যার যা খুশি তাই করাকে বৈধতা দান করা হয়। এমনকি জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারা, ঘর-বাড়ি, দোকানপাট, পরিবহন ভাঙচুর ও জ্বালিয়ে দেওয়া এখন নিত্য-নৈমত্তিক ও সাধারণ ব্যাপার বলে গণ্য করা হয়। ফলে এদেশের অর্থনীতি, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা, সামাজিক স্থিতিশীলতা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোচ্ছে। কিন্তু রাজনীতির নামে, গণতন্ত্রের নামে যার যা খুশি করার লাইসেন্স দেওয়ার গণতন্ত্র আর কতকাল চোলতে পারে? যে গণতন্ত্র আমাদের জীবনকে কষ্টদায়ক কোরে তোলে, যে গণতন্ত্র সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, জীবন সম্পদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সেই গণতন্ত্র বাস্তবায়ন করাটা আমাদের জন্য কতটা জরুরি? আদৌ কি পশ্চিমাদের অনুকরণ কোরতে গিয়ে আমাদের এমন গণতন্ত্রর মেনে চলার প্রয়োজন রোয়েছে? হ্যা, আমাদের কাছে কোন বিকল্প জীবনব্যবস্থা না থাকলে না হয় একটা কথা ছিলো। কিন্তু আমাদেরকে স্রষ্টা একটি উত্তম জীবন বিধান দান করেননি?
আমাদের অতীতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই এদেশে মোসলেম শাসকদের আগমনের আগে এদেশের হিন্দু (প্রকৃতপক্ষে সনাতন) রাজাগণ শাস্ত্র অনুযায়ী রাজ্য চালাতেন। এরপরে যখন মোসলেমগণ এই উপমহাদেশে আসেন তখন তারাও রাজ্য চালিয়েছেন স্রষ্টার দেওয়া বিধান অনুসারেই। ঐ সময়ে রাজা/ সুলতানগণ যদি তা না কোরতেন তবে উভয় আমলেই রাজ্য পরিচালনার কাজে নিয়োজিত পুরোহিত এবং কাজীগণ রাজাকে বাধ্য কোরতেন স্রষ্টার দেওয়া আইন দিয়ে শাসন কাজ চালাতে। এর ব্যত্যয় ঘোটলে তারা রাজ্য পরিচালনার অধিকার হারাতেন। ফলস্বরূপ সে সময় ধনে-বলে এদেশ অনেক সমৃদ্ধ ছিলো। সমৃদ্ধির পরিমাণ এমনি ছিলো যে, বহু বিদেশি শক্তির কাছেই তা ছিলো অত্যন্ত লোভনীয়। লোভাতুর সুদূর ইউরোপীয় ব্রিটিশগণ এদেশের সাথে বাণিজ্য করার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামে এক প্রতিষ্ঠান চালু করে। পরে ধীরে ধীরে তারা এদেশের মানুষকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিভক্ত কোরে এদেশ দখল কোরে নেয়। দীর্ঘ দু’শো বছর শাসন-শোষণের পর বিদায়ের সময় এলে তাদেরই শিক্ষায় শিক্ষিত একশ্রেণির গোলামি মানসিকতাপূর্ণ ও নিজেদের সম্বন্ধে হীনমন্য লোকেদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা দিয়ে যায়। অবশ্য এর আগেই তারা ভবিষ্যতে আমাদেরকে প্রত্যক্ষভাবে শাসন না কোরতে পারলেও পরোক্ষভাবে যাতে আজীবন গোলাম কোরে রাখতে পারে সে জন্য আমাদেরকে গোলামির মন্ত্র অর্থাৎ গণতন্ত্র শিক্ষা দিয়ে যায়।
পরিতাপের বিষয় এই যে ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর অর্ধশত বছর অতিবাহিত হোয়ে গেলেও আজও আমরা তাদের শেখানো গণতন্ত্র আকড়ে ধরে নিজেদের মধ্যে সীমাহীন অনৈক্য, মারামারি ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত আছি। অথচ ব্রিটিশদের এদেশে আসার আগে আমাদের মধ্যে শান্তি-সমৃদ্ধি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কোন ঘাটতি ছিলো না। এদেশের অতীত ইতিহাস যারা ভাসা-ভাসাভাবেও পাঠ কোরবেন তারা তা কিছুতেই এ সত্যকে অস্বীকার কোরতে পারবেন না। কিন্তু বর্তমানে আমরা পাশ্চাত্যের শেখানো গণতন্ত্রের তত্ত্ব বাস্তবায়ন কোরতে গিয়ে এর সবকিছুই হারিয়ে বসেছি। অনেকে বলতে পারেন অতীতের চেয়ে আমরা এখন যান্ত্রিক প্রগতি, ভোগ-বিলাসে এগিয়ে গেছি। হ্যা, এই যুক্তিকে অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তারপরও ভোগ-বিলাসের সাথে যে আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা যোগ হোয়েছে তাকে কিছুতেই মানুষের সভ্যতা বলা যায় না। আর এ জাতি যদি এখন পর্যন্ত তাদের অতীত ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারতো তবে শান্তি বজায় রাখার পাশাপাশি তারা অবশ্যই এই প্রগতি অর্জন কোরতে পারত। কেননা সে সময়ে প্রযুক্তিতে এই উপমহাদেশ যতটা এগিয়ে গিয়েছিল তা কোন অংশেই পাশ্চাত্যের চেয়ে কম ছিলো না। কিন্তু জাতি যখন জাতীয়ভাবে গোলামিতে ডুবে গেলো তখন তাদের একূল ওকূল দু’কূলই হারিয়ে বসলো। গোলামির চূড়ান্ত অবস্থায় তারা এমনকি পাশ্চাত্যের তৈরি করা জীবনব্যবস্থা পর্যন্ত ধার কোরে চলতে বাধ্য হোচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হোল এদেশীয়দের জীবনধারার সাথে পাশ্চাত্য সৃষ্ট গণতন্ত্র কোনভাবেই মানানসই নয়। তবুও জোর করে চাপিয়ে দেওয়া এই গণতন্ত্রের কারণেই আজ আমাদের এই দুরাবস্থা।
তাই প্রশ্ন হোল এখনও কি আমরা প্রভুদের চাপিয়ে দেওয়া গণতন্ত্রকে আকড়ে ধরে নিজেরা নিজেরা মারামারি, হানাহানিতে লিপ্ত হোয়ে এভাবে তিলে তিলে নিঃশ্বেস হবো? এখনো কি আমাদের হুশ ফিরে আসবেনা? ভোগ-বিলাস ও আরাম-আয়েশ নয়, অন্তত শান্তিতে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য আমাদের শপথ হোক গণতন্ত্র নয়, আগে আমরা ভালোভাবে বাঁচতে চাই।