হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

খেলাধুলার ক্ষেত্রে রসুলাল্লাহর (সা.) সুন্নাত

রিয়াদুল হাসান

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে মেহেরপুরে আয়োজিত হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। খেলা উপভোগ করতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার দর্শক মাঠে উপস্থিত হন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বহু দর্শক গাছে উঠে, স্কুলের ছাদে বসে খেলা দেখেন। বেশ কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড়ও ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন।

 

চাষীরহাট নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ‘মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কুচকাওয়াজ-২০২২’ পরিদর্শন করছেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম ও অতিথিবৃন্দ।

 

আল্লাহ একদিকে যেমন প্রকৃতির স্রষ্টা, তেমনি তিনি দীনুল ইসলামেরও স্রষ্টা। তাই তো প্রকৃতি আর ইসলামের বিধান একসূত্রে গাঁধা, এক ছন্দে বাঁধা। ইসলামের কোথাও এমন কোনো নিয়ম আপনি পাবেন না অপ্রাকৃতিক। মানুষের শরীর যদি সুস্থ থাকে তাহলেই তার দ্বারা কাজ হয়, কাজের দ্বারা হয় প্রগতি। সুস্থ শরীর হলেই চলবে না, লাগবে সুস্থ মনও। কারণ মনই মানুষকে পরিচালিত করে। মন মানুষকে কুপথে ধাবিত করলে সুস্থ শরীর দিয়ে সমাজেরও ক্ষতিই বৃদ্ধি পাবে। এজন্য ইসলাম সুস্থ দেহ ও মন তৈরির জন্য খেলাধুলা করতে মোমেনদেরকে উৎসাহিত করে। অলস, অকর্মণ্য ব্যক্তিদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। আল্লাহ পছন্দ করেন কর্মচঞ্চল, সজীব, প্রাণবন্ত ও বলিষ্ঠ মো’মেনকে (হাদিস)।

আমরা ছোটবেলায় সবাই ‘খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা’ রচনাটি পড়েছি। সেখানেও আমরা পড়েছি যে, খেলাধুলা মানুষের মনের দুশ্চিন্তা লাঘব করে, সহনশীলতা বাড়ায় এবং দৈহিক পরিশ্রমের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। দৌড় ও সাঁতারের মতো খেলাধুলা মানুষের ফুসফুসের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে। মেদ চর্বি ইত্যাদি দূর করে সুন্দর ও সুঠাম শরীর গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই। খেলাধুলা মানুষের চরিত্র গঠনেও সাহায্য করে।

তাই আল্লাহর রসুলও শরীরচর্চামূলক খেলাধূলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তিনি মূলত সেসব খেলাধূলার উপর জোর দিয়েছিলেন যেগুলো শারীরিকভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং যেগুলোতে দলবদ্ধভাবে খেলার (Teamwork) করার  সুযোগ থাকে। টিমওয়ার্ক এর ফলে মো’মেন নারী ও পুরুষগণ সংগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। যে কোনো বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে তাঁর অনুসারীরা নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হন।

যে ধরনের খেলাগুলো উম্মতে মোহাম্মদীর সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সঙ্গে বিপরীতধর্মী সেগুলোকে তিনি খেলতে নিষেধ করেছেন। যেমন, উম্মতে মোহাম্মদী জাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যই হচ্ছে নিজেদের জীবন ও সম্পদকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবান করে সর্বাত্মক সংগ্রাম করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সত্যদীন সমগ্র মানবজাতির জীবনে কার্যকর করে যাবতীয় অন্যায়, অশান্তি, জুলুম, রক্তপাত নির্মূল করে ন্যায় শান্তি সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। জাতির এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সহায়ক যে ধরনের খেলা আছে সেগুলো ইসলামে বৈধ করা হয়েছে। আল্লাহর রসুল (সা.) সেগুলো খেলতে উৎসাহিত করেছেন। যেমন দৌড় প্রতিযোগিতা, কুস্তি করা, তীর নিক্ষেপ, বল্লম চালানো, ঘোড় দৌড়, শিকার করা ইত্যাদি।

কিন্তু যে খেলাগুলো এই লক্ষ্যের বিপরীত সেগুলো ইসলামে অবৈধ করা হয়েছে। লক্ষ্য যখন বহির্মুখী তখন অন্তর্মুখী কোনো কিছুই ইসলাম উৎসাহিত করতে পারে না। যেমন পাশা খেলা, দাবা খেলা, লুডো খেলা, ভিডিও গেমস ইত্যাদিও মানুষকে অলস করে, অন্তর্মুখী করে। তাই এগুলোও ইসলামে অবৈধ খেলা। আর যে খেলায় জুয়া অর্থাৎ আর্থিক লাভ বা লোকসান রয়েছে তা সবই হারাম। কারণ আর্থিক লাভলোকসান থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়। এবার আমরা ইতিহাস থেকে দেখব রসুলাল্লাহ কীভাবে খেলাধুলার মাধ্যমে জাতির মধ্যে প্রাণশক্তি সঞ্চার করেছিলেন এবং হেযবুত তওহীদও কীভাবে রসুলাল্লাহর সেই সুন্নাহ অনুসরণ করে যাচ্ছে।

দৌড় প্রতিযোগিতা:

রসুলাল্লাহর সাহাবিরা দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। আলী (রা.) হালকা পাতলা গড়নের মানুষ ছিলেন এবং তিনি দৌড়ের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত গতিসম্পন্ন ছিলেন বলে ইতহাসে পাওয়া যায়। স্বয়ং নবী করীম (সা.) তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী আয়েশার (রা.) সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন।

আয়েশা (রা.) নিজেই বলেছেন: “নবী করীম (সা.) দৌড়ে আমার সাথে প্রতিযোগিতা করলেন। তখন আমি আগে বেরিয়ে গেলাম। পরে যখন আমার শরীর ভারী হয়ে গেল তখনও আমার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করে আমাকে হারিয়ে দিলেন এবং বললেন: এবার সেবারের বদলা নিলাম (আহমদ, আবু দাউদ)।

রসুলাল্লাহ আম্মা আয়েশার (রা.) সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন কেবল স্ত্রীকে আনন্দ দেওয়ার জন্য নয়, তিনি চাইতেন উম্মতে মোহাম্মদীর নারীরা পরিশ্রমী হোক, যোদ্ধা চরিত্রের হোক। এটা ছিল খেলার মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ। রসুলাল্লাহ তাঁর প্রতিটি যুদ্ধে কোনো না কোনো স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। আরো কিছু সংখ্যক নারীও যুদ্ধযাত্রায় অংশ নিতেন। তারা আহত যোদ্ধাদের সেবা করতেন, পানি পান করাতেন এমন কি শহীদদের দেহ মোবারক দাফন করতেন।

রসুলাল্লাহর এই পবিত্র সুন্নাহ অনুসারে হেযবুত তওহীদের সদস্য-সদস্যারাও দৌড়ানোর অনুশীলন করেন। বিভিন্ন উপলক্ষে বহুবার দৌড় প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছে। ফুটবল এমন একটি খেলা যেখানে খেলোয়াড়দেরকে দেড়ঘণ্টা ধরে বল নিয়ে ছুটতে হয়। এজন্য মাননীয় এমামুয্যামান ব্যক্তিগতভাবে ফুটবল খেলাকে পছন্দ করতেন। তিনি নিজেও তরুণ বয়সে দুর্দান্ত ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম ২০১৭ সনে তওহীদ ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি পিনাকল স্পোর্টস নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন যার অধীনে সারাদেশে ফুটবল ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার খেলার আয়োজন করা হয়।

কুস্তি করা

বুজুর্গ মানুষ বলতেই আমাদের সামনে তসবিহ হাতে একজন জুবুথুবু বৃদ্ধ মানুষের প্রতিমূর্তি ভেসে ওঠে। অথচ আল্লাহর রসুল (সা.) ছিলেন ঠিক এর উল্টো। তিনি অত্যন্ত শক্তসমর্থ দেহের অধিকারী ছিলেন। রুকানাহ ছিলেন মক্কার একজন প্রসিদ্ধ বীর যাকে কেউ কখনো কুস্তিতে হারাতে পারত না। একদিন মক্কার কোন গলিপথে নিরিবিলি সাক্ষাৎ হলে রসুলাল্লাহ তাকে তওহীদের দিকে আহ্বান করেন এবং বলেন, আমি যদি তোমাকে হারাতে পারি, তাহলে কি তুমি ঈমান আনবে? তিনি সানন্দে রাজি হয়ে যান। কারণ তিনি ভেবেছিলেন রসুলাল্লাহকে তিনি খুব সহজেই হারিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু যখন তারা লড়লেন দেখা গেল রসুলাল্লাহই রুকানাকে পরাজিত করে দিলেন। বিস্মিত হয়ে রুকানা আবারও খেলার জন্য আহ্বান করলেন। এভাবে তারা তিনবার খেললেন এবং প্রতিবারই রসুলাল্লাহ (সা.) বিজয়ী হলেন। আজকে অতি মুসলিম, অতি মুত্তাকি যারা কেবল ঈমানের শক্তি দিয়ে শত্রুর সাথে রসুলাল্লাহ ও সাহাবীদের বিজয়ী হওয়ার গল্প করেন তাদেরকে কোনো একজন কুস্তিগীরের সাথে লড়তে দেওয়া দরকার, তাহলেই তাদের ভুল ভাঙতে সময় লাগবে না।

দৌড় প্রতিযোগিতা ও কুস্তি করলে ভাব-গাম্ভীর্যের হ্রাস পায় বা বয়সের সঙ্গে মানায় না এমন ধারণা রসুলাল্লাহ ভুল প্রমাণ করলেন। কেননা নবী করীম (সা.) যখন আয়েশা (রা.) এর সাথে দৌড়ে প্রতিযোগিতা করেছিলেন, তখন তাঁর বয়স পঞ্চাশোর্ধ হয়েছিল।

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডিও এমন একটি খেলা যা কুস্তির মতোই খেলোয়াড়দের মধ্যে একাধারে গতিশীলতা, দম, ক্ষিপ্রতা ও সাহসের সঞ্চার করে। এতে একসঙ্গে অনেক খেলোয়াড় যোগ দিতে পারেন। এই কাবাডি খেলা ডিজিটাল যুগে হারিয়ে যেতে বসেছে। একে আবারও জনপ্রিয় করে তোলার জন্য মাননীয় এমামুয্যামান ‘তওহীদ কাবাডি দল’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সারা দেশে এই দল বহু টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে।

উশু, কুশু, কারাতে ইত্যাদি খেলা বাংলাদেশে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে অনেক আগেই আত্মপ্রকাশ করেছে। এই খেলাগুলো শরীর গঠন ও সুস্বাস্থ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। হেযবুত তওহীদের অনেক সদস্য বাংলাদেশ কুশু ফেডারেশনের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

তীর নিক্ষেপ

তীর ও বর্শা নিক্ষেপের খেলাকেও ইসলাম উৎসাহিত করে। রসুলাল্লাহ যখন সাহাবিদেরকে তীরন্দাজীর প্রতিযোগিতা করতে দেখতেন তখন বলতেন: তোমরা তীর নিক্ষেপ করো। আমি তোমাদের সঙ্গে রয়েছি।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসুলাল্লাহ একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন যারা তীর দিয়ে লক্ষভেদের চর্চা করছিল। তিনি বলেন, হে ইসমাঈলের বংশধর! তোমরা তীরন্দাজী করো। কেননা তোমাদের পিতা ছিলেন তীরন্দাজ (আহমাদ শরীফ ৩৪৩৪, গায়াতুল মারাম ৩৭৯)।

বস্তুত তাঁর দৃষ্টিতে তীর নিক্ষেপ কেবল একটা খেলা ছিল না, তা ছিল একটি শক্তি অর্জন ও শক্তির প্রকাশ। আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা শত্রুদের মোকাবেলার জন্য সাধ্যমত শক্তি অর্জন ও সংগ্রহ কর (সুরা আনফাল ৬০)। এই আয়াতটি উল্লেখ করে রসুলাল্লাহ সাহাবীদেরকে বলেছিলেন, জেনে রাখ, তীরন্দাজী একটা শক্তি। তীরন্দাজী একটা শক্তি, তীরন্দাজী একটা শক্তি (মুসলিম ৪৮৪০)। অন্যত্র নবীজি (সা.) বলেন ‘তোমাদের জন্য তীর নিক্ষেপ শিক্ষা করা কর্তব্য। কেননা এটা তোমাদের জন্য একটি উত্তম খেলা।’ (ফিকহুস সুন্নাহ : ২/৬০) তিনি আরও বলেন ‘যে ব্যক্তি তীর চালনা শেখার পর তা ছেড়ে দেয়, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৬৬৮)।

তবে তিনি পালিত জন্তুকে তীর-বল্লমের লক্ষ্য বানাতে নিষেধ করেছেন। তাছাড়া তিনি পালিত জন্তুকে উত্তেজিত করে দিয়ে পারস্পরিক লড়াইয়ে লিপ্ত করতে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন (আবু দাউদ, তিরমিযী), যেমন মোরগের লড়াই, ষাঁড়ের লড়াই। জাহেলিয়াতের যুগেও এমন নিষ্ঠুর খেলা আরবে প্রচলিত ছিল যাতে দুটো উট, ছাগল বা ভেড়াকে লড়াইতে লিপ্ত করে দেওয়া হত এবং পরিণামে তারা আহত হয়ে মৃত্যমুখে পতিত হত।

সময়ের বিবর্তনে তীর নিক্ষেপের জায়গা দখল করে নিয়েছে রাইফেল শ্যুটিং। মাননীয় এমামুয্যামান একজন বিশ্বমানের রাইফেল শ্যুটার ছিলেন। ১৯৫৬ সনে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ব অলিম্পিক আয়োজনে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিযোগী হিসাবে মনোনীত হয়েছিলেন।

বল্লম চালানো

তীর নিক্ষেপণের ন্যায় বল্লম চালানোও এক প্রকারের বৈধ খেলা। সে সময় হাবশি কৃষ্ণাঙ্গরা বল্লম চালনায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। রসুলাল্লাহ এমন হাবশি সাহাবীদেরকে মসজিদের আঙিনায় ঢাল ও বল্লম চালানোর কৌশল প্রদর্শনের প্রচলন করেছিলেন। ঈদের দিন বিকেলে তিনি তাঁর স্ত্রী উম্মুল মোমেনিন আয়েশা (রা.) কে সঙ্গে নিয়ে এই খেলা উপভোগ করেছিলেন। তিনি খেলোয়াড়দের উৎসাহ দানের জন্য বলেছিলেন: “হে বনি আরফিদা, মারো, জোরে মারো, তোমার কাছেই রয়েছে তোমার প্রতিপক্ষ।” (আয়েশা রা. থেকে বুখারী পর্ব ১৩ : /২ হাঃ ৯৪৯, ৯৫০, মুসলিম ৮/৪, হাঃ ৮৯২)। মসজিদের প্রাঙ্গণের মধ্যে খেলাধুলার এই আয়োজন আজকে চিন্তারও বাইরে। কিন্তু প্রকৃত ইসলামে মসজিদ হচ্ছে মুসলিম সমাজের যাবতীয় কাজের ও সামাজিকীকরণের কেন্দ্রস্থল। আর বর্তমানের মসজিদগুলো নিছক উপাসনাকেন্দ্র।

ঘোড় দৌড়

রসুলাল্লাহ বলেছেন, ঘোড়ার ললাট কেয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ লিখিত রয়েছে (আবু হোরায়রা রা. থেকে বুখারী, নেসায়ী)। সেই যুগে ঘোড়া ছিল যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ বাহন। তাই নিজ উম্মাহকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে ঘোড়া চালনায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে হয়েছে। এজন্য তিনি ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাও করেছেন বহুবার। তিনি ঘোড়া এতটাই ভালবাসতেন যে আনাস (রা.) বলেছেন, রসুলাল্লাহর নিকট নারীর পর ঘোড়া অপেক্ষা আর কোন বস্তু প্রিয় ছিল না (সুনানে নাসাঈ)। ওমরও (রা.) বলেছেন, তোমাদের সন্তানদের সাঁতার কাটা ও তীর নিক্ষেপের শিক্ষা দাও। ঘোড়ার পিঠে লাফ দিয়ে উঠে বসতেও তাদেরকে অভ্যস্ত কর।

ইবনে উমর (রা.) বলেছেন: রাসুল (সা.) হাফইয়া থেকে সানিয়াতুল বিদা পর্যন্ত সীমানার মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াসমূহের দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান করেছেন। স্থান দুটির দূরত্ব ছিল ছয় মাইল। (বুখারি, হাদিস : ৩৬৫৭)। ইবনে উমর (রা.) সে প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন। তাঁর ঘোড়াটি সীমানা টপকে মসজিদের ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল। ঘোড়দৌড়ে বিজয়ী প্রতিযোগীকে পুরস্কারও দেওয়া হত।

মাননীয় এমামুয্যামানও একজন দক্ষ ঘোড়সওয়ার ছিলেন। পাশাপাশি তিনি মোটর সাইকেল চালনার বিপজ্জনক কলাকৌশলে (Stant Riding) বিশেষ দক্ষ ছিলেন।

শিকার করা

একটি উপকারী ও কল্যাণময় ক্রীড়া হচ্ছে শিকার করা। এ কাজে যেমন খাদ্যলাভ হয়, উপার্জন হয়, শরীরচর্চা হয়, তেমনি ক্ষিপ্রতা ও সাহসিকতা বৃদ্ধি পায়। জমিদার পরিবারে অংশ নেওয়া এমামুয্যামান একজন দুঃসাহসী শিকারী ছিলেন। বালক বয়স থেকে সত্তর দশকের গোড়া পর্যন্ত- তিনি দেশের বিভিন্ন বনে-জঙ্গলে ঘুরে অজগর, চিতাবাঘ, কুমির, শুকরসহ বহু হিংস্র জন্তু শিকার করেছেন। শিকারের সত্য ঘটনা অবলম্বনে তিনি “বাঘ-বন-বন্দুক” নামে একটি বই রচনা করেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরির সুপারিশে পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষাবোর্ড বইটিকে দশম শ্রেণির সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে।

একটি জাতির প্রাণশক্তি হলো তার তরুণ সমাজ। জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল সূত্রই হলো যুবসমাজকে গতিশীল, আদর্শবান, সুস্থ দেহ ও মনের অধিকারী করে গড়ে তোলা। এই বাস্তবতাকে উপলব্ধি করেই সারাদেশে শরীরগঠনমূলক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...