পৃথিবীতে মানুষ কীভাবে চলবে, কীভাবে তাদের জীবন পরিচালিত হবে, তাদের জীবনব্যবস্থা কী হবে- তা সব থেকে ভালো জানেন মহান আল্লাহ। তিনিই এই বিশ্বব্রহ্মা- সৃষ্টি করেছেন, সুতরাং তিনিই ভালো জানেন, কোন পথে পরিচালিত হলে মানব সমাজে শান্তি আসবে, আর কোন পথে অশান্তি। সেজন্য তিনি মানব জাতিকে তার ঐশী গ্রন্থ ও নবী-রসুলদের মাধ্যমে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই দিক নির্দেশনার উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে ¯্রষ্টার সার্বভৌমত্ব। আজ মানব জাতি ¯্রষ্টার সার্বভৌমত্বকে বাদ দিয়ে দাজ্জালীয় বস্তুতান্ত্রিক সভ্যতার সার্বভৌমত্বকে তাদের জীবনে প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ করছে। যার অবশ্যম্ভাবী ফল হচ্ছে- অন্যায়, অশান্তি, যুদ্ধ, রক্তপাতপূর্ণ সমাজ। গতকাল রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্য দানকালে এসব কথা বলেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, হেযবুত তওহীদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আলী হোসেন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও দৈনিক দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, ঢাকা মহানগরের সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম, সাফেনা উইমেন্স ডেন্টাল কলেজ এন্ড হসপিটালের সাবেক লেকচারার ডা. আব্দুল্লাহ ইবনে বোরহান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হেযবুত তওহীদের খিলগাঁও থানা সভাপতি আব্দুল আলিম। ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মাদক প্রভৃতি রোধে করণীয়’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হেযবুত তওহীদের সদস্যগণ অংশ নেন।
মুখ্য আলোচক তার বক্তব্যে আরও বলেন, মানুষকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে- সে কার সার্বভৌমত্ব মানবে। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, নাকি দাজ্জাল তথা ইবলিশের সার্বভৌমত্ব। এক আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নিলে মানব সমাজে নেমে আসবে অনাবিল শান্তি, সমৃদ্ধি। যার প্রমাণ আমরা রসুলাল্লাহর জীবদ্দশায় পেয়েছি। সেসময় সমাজে এতোটাই শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, একা একজন যুবতী নারী রাতের অন্ধকারে হেঁটে যেতে পারতো তার মনে আল্লাহ ও বন্য জন্তু ছাড়া আর কোনো ভয় থাকতো না। সেই শান্তি আজ আমরা কল্পনাও করতে পারি না। হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আজ বিশ্বজুড়ে মুসলিম জাতির সকল বঞ্চনা, নিগ্রহের কারণ একটাই- অনৈক্য। এক আল্লাহর সৃষ্টি হয়েও, এক রসুলের অনুসারী হয়েও আজ আমরা বহু দলে-উপদলে বিভক্ত। এই বিভক্তিই আমাদেরকে শক্তিহীন দুর্বল একটি বিচ্ছিন্ন জনসমষ্টিতে পরিণত করেছে।
তিনি মানব সৃষ্টির ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, মানুষকে আল্লাহ এক বাবা-মা আদম হাওয়া থেকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে তার ইতিহাস ভুললে চলবে না। তার অহংকার করার কিছুই নেই কারণ তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি দিয়ে। হেযবুত তওহীদের এই সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমরা মানবতার কথা বলি, সাম্যের কথা বলি। কিন্তু সেই সাম্য কি আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠা হয়েছে? যেখানে শততলা দালান রয়েছে, যেখানে মানুষ বিলাশবহুল গাড়িতে চড়ে বেড়ায়, যে সমাজে বিপুল অর্থ শুধুমাত্র ব্যাংকে অলস পরে থাকে- সেই সমাজে মানুষ কী করে অভুক্ত থাকতে পারে, কী করে সেই জাতির বহু মানুষ উদ্বাস্তুর জীবন যাপন করে, কী করে সেই জাতির শিশুরা অনাহারে মারা যায়। তার মানে সাম্য, সমতা, মানবতা থেকে আমরা আজ অনেক দূরে। আজ মানবতা কেবল মানুষের মুখে কিংবা মিডিয়ার সংবাদে। সত্যিকারের মানবতার ধারক হচ্ছে হেযবুত তওহীদ। আমরা এমন একটি সমাজ বিনির্মাণে নিজেদের জীবন-সম্পদ উৎসর্গ করেছি- যে সমাজে মানুষ আর না খেয়ে মারা যাবে না, আর কেউ উদ্বাস্তু হবে না, আর কোনো ভূ-খ- সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা পরাশক্তির হামলার শিকার হবে না। যে সমাজে নারীরা তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করবে, ধর্মের নামে আর কোনো স্বার্থ হাসিলের কুটকৌশল থাকবে না, আর কোনো মিথ্যা ফতোয়া আমাদের জাতির প্রগতিকে ব্যাহত করতে পারবে না- এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখি আমরা।
তিনি বলেন, এই মহান উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের পথচলা। কিন্তু এই কাজ শুধু হেযবুত তওহীদের কাজ নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির আজ এই একই উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। তাই সকলের প্রতি আহ্বান, আসুন আমরা সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তি ও ন্যায়বিচারপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে নিজেদেরকে নিয়োজিত করি।