হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

খলিফা ওমর (রা.) এর দু’টো চিঠি

খলিফা ওমরের (রা.) সময় আলা ইবনে হাজরামী (রা.) বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে খলিফার নির্দেশে তাঁকে অনেকবার অঞ্চল পরিবর্তন করতে হয়েছে। এমনই দুটো নির্দেশমূলক চিঠি এখানে উল্লেখ করা হলো।

প্রথম চিঠি: আলা ইবনে হাযরামী (রা.)- এর প্রতি
প্রাচীন লেখকদের মাঝে শুধুমাত্র ইবন সা’আদ এ চিঠিটির উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীদের মাঝে কেবলমাত্র আলী আল-মুত্তাকী বুরহানপুরী ইবন সা’আদের উদ্ধৃতিতে কানযুল উম্মালে এটির উল্লেখ করেছেন। এর বর্ণনাকারী হিসেবে ইমাম শা’বীর নাম উল্লেখ করা হয়। তাঁর মতে আলা (রা.) এর ইন্তেকাল হয়েছে ১৪ হিজরিতে। তবে অন্যান্য ঐতিহাসিক, যেমন সাইফ ইবন ওমর বলেছেন, এর কয়েক বছর পর পর্যন্তও তিনি জীবিত ছিলেন। কেউ কেউ তাঁর মৃত্যুর সন ২১ হি. বলে উল্লেখ করেছেন।

এ চিঠি আলা (রা.) এর কাছে বাহরাইনের গভর্নর থাকাকালে পৌঁছেছিল। আবু বকর (রা.) এর আমলে বাহরাইনের ধর্মান্তর বিদ্রোহ তিনিই দমন করে ছিলেন এবং তখন থেকেই তিনিই প্রধান শাসনকর্তা ছিলেন। যা হোক, ওমর (রা.) লিখেছিলেন:
“বসরায় উতবা ইবন গায্ওয়ানের কাছে চলে যাও। আমি তার স্থলে তোমাকে গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত করেছি। মনে রেখো, তুমি এমন এক ব্যক্তির কাছে যাচ্ছ যিনি মুহাজিরিনে আওওয়ালিনের অন্যতম। যাঁর সম্পর্কে আল্লাহ পূর্বাহ্নেই শুভ পরিণামের শুভ সংবাদ দিয়ে রেখেছেন। আমি তাঁকে এজন্য বদলি করছি না যে, তাঁর মাঝে দিয়ানতদারী, সত্যের ব্যাপারে কঠোরতা ও সাহসিকতার অভাব রয়েছে। বরং আমার ধারণা যে, বসরা যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে তুমি বেশি ভালো হবে এবং তুমিই বেশি কাজে আসবে। অতএব উতবার অধিকার ও সম্মানের প্রতি লক্ষ রেখো। তোমার পূর্বে আমি আর একজনকে গভর্নর নিযুক্ত করেছিলাম। কিন্তু বসরা পৌঁছার পূর্বেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। আল্লাহর ইচ্ছা যদি তুমি সেখানের ক্ষমতাসীন হতে পার, তাহলে তো হলোই। আর যদি তিনি উতবাকেই বহাল রাখতে ইচ্ছা করেন তাহলে ক্ষমতাসীন সেই থাকবে। কেননা, সব ব্যাপারের এখতিয়ার আল্লাহ রাব্বুল আলামিনেরই রয়েছে। জেনে রাখো, আল্লাহর হুকুম কী হবে তা আঁচ করা যায় না। তবে হুকুমের সংরক্ষণ সে-ই করেছে বলে ধরা হবে, যে আল্লাহর নির্দেশের বাস্তবায়ন করেছে। সেই মহান সত্তার প্রতি তোমার দৃষ্টিকে নিবদ্ধ রাখ, যাঁর সন্তুষ্টি কামনার জন্য তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমার সকল শ্রম ও পরিশ্রম হবে তাঁরই জন্য; তাঁকে ছাড়া অন্য কিছুতে মন লাগিও না। দুনিয়া নিঃসন্দেহে ক্ষণস্থায়ী ও ভঙ্গুর, আর আখিরাত চিরস্থায়ী এবং অক্ষয়। অতএব এমন বস্তু, যার কল্যাণ ও পরিণাম অস্থায়ী, তা যেন তোমাদেরকে এমন বস্তু থেকে গাফেল না করে দেয়, যার পরিণাম ও কল্যাণ চিরস্থায়ী।
আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, যেন তোমার পক্ষ থেকে এরূপ কাজ না হয় যাতে তিনি নারাজ হয়ে যান। নিঃসন্দেহে আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন তাকে জ্ঞান ও হিকমত দান করে থাকেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন তোমাদেরকে ও আমাদেরকে তাঁর আনুগত্যের তাওফিক দান করেন এবং আযাব থেকে বাঁচিয়ে রাখেন।” (শা’বী বর্ণিত, তাবাকাত ইবন সা’আদ, ৪:৭৮; কানযুল উম্মাল, ৩:১৪৯)

দ্বিতীয় চিঠি: আলা ইবন হাযরামী (রা.)- এর প্রতি
নাসিখুত তাওয়ারিখ-এ আলা (রা.) কর্তৃক ফারিস আক্রমণ ১৯ হিজরিতে হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তখন বসরার গভর্নর ছিলেন আবু মুসা আশ’আরী। কিন্তু সাইফ ইবনে ওমর থেকে ১৭ হিজরির ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতানুসারে তখন বসরার গর্ভনর ছিলেন উতবা (রা.)। ঘটনার বিবরণের মাঝেও দুজনের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য এই যে ‘নাসিখুত তাওয়ারিখ’ এর মতে আক্রমণকারীদের জাহাজ ফারিসবাসীরা জ্বালায়নি বরং সামুদ্রিক তুফানে তা বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যা হোক ওমর (রা.) লিখেছিলেন:
“আল্লাহ তা’আলা শাসকদের এজন্যই ক্ষমতা দেন যে সাধারণ মানুষ যেন তাদের আনুগত্য করে। কেননা আনুগত্যের অভাবে নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তুমি আমার অনুমতি ব্যতিরেকে একটি বাহিনী তৈরি করেছ, আর তাদের নিয়ে ফারিস আক্রমণ করে মুসলমানদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছ। আমি বসরার গভর্নরকে তোমার সহায়তার জন্য একটি বাহিনী প্রেরণ করতে লিখে দিয়েছি। বর্তমানে তুমি গভর্নর নও। আর তোমাকে বাহরাইনও যেতে হবে না। তুমি অবিলম্বে সা’আদ ইবনে আবী ওয়াক্কাসের কাছে চলে যাও। যদি আমি জানতাম যে, তার অধীনস্থতার চেয়েও তোমার কাছে অপছন্দনীয় কিছু আছে তাহলে তোমাকে তাই করার নির্দেশ দিতাম। (সূত্র: নাসিখুত তাওয়ারিখ, ৪ঃ৩৬৮)

[সংগ্রহ: শাকিলা আলম, খুরশিদ আহমদ ফারিক বিরচিত ওমর (রা.)-এর সরকারী পত্রাবলি বই থেকে]

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...