একটি জিনিস লক্ষণীয় আলস্নাহ পবিত্র কোর’আনে উপদেশ দেন মানবজাতিকে কিন্তু হুকুম দেন শুধু মো’মেনদেরকে। যেমন শিক্ষক তার ক্লাসে যে সকল ছাত্র বাধ্য ও মনোযোগী শুধু তাদেরকেই হুকুম দেন, আর যারা অবাধ্য ও অমনোযোগী তাদেরকে উপদেশ দেন। এই মানবজাতিও আল্লাহর বান্দা হিসাবে কে কোন অবস্থানে আছেন তা বোঝার জন্য কোর’আন শরীফের কিছু আয়াত তুলে ধরা হলো।
সুরা এবরাহীম-আয়াত-৩১:
আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মো’মেন তাদেরকে তুমি বল সালাহ্ কায়েম করতে এবং আমি তাদেরকে জীবিকা হিসাবে যা দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করতে- সেই দিনের পূর্বে যেদিন ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব থাকবে না।’
এই আয়াত দ্বারা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, সমগ্র মানব জাতির মধ্যে শুধু যারা মো’মেন তাদেরকেই আল্লাহ সালাহ কায়েম করতে হুকুম দিয়েছেন। তাই সবার আগে জানতে হবে মো’মেন কাকে বলে ও কি করলে মো’মেন হওয়া যায়? কারণ মো’মেন না হয়ে সালাহ কায়েম করলে তাতে কোন ফল হবে না।
সুরা হুজুরাত-আয়াত-১৫:
‘তারাই মো’মেন যারা আলস্নাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি ঈমান অনে, পরে সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদ করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ।’
‘জেহাদ’ শব্দের অর্থ সর্বাত্মক চেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রম করা। দীন অর্থাৎ, আলস্নাহর দেওয়া জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার্থে যে সংগ্রাম করা হয় তাকে ‘জেহাদ’ বলে। নিজের অর্জিত সম্পদ ও নিজের জীবন দিয়ে এই জেহাদ যারা করবে, তারাই মো’মেন এবং তারাই জান্নাতি। উক্ত আয়াতে মো’মেনের সংজ্ঞায় দু’টি ভাগ। প্রথম ভাগ আলস্নাহ ও রসুলের প্রতি ঈমান অর্থাৎ ‘তওহীদ’, দ্বিতীয় ভাগ সেই তওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য ‘জেহাদ’ অর্থাৎ সর্বাত্মক সংগ্রাম। সংক্ষেপে বলতে গেলে মো’মেন হতে মানুষকে দু’টি শর্ত পূরণ করতে হয়। যথা: ‘তওহীদ’ ও ‘জেহাদ’। মো’মেন হওয়ার পর একজন মো’মেনের চরিত্রে যে বৈশিষ্ট্যগুলি আসবে সেগুলি হলো:
সুরা তাওবা-আয়াত-২৩:
হে মো’মেনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতা যদি ঈমানের মোকাবিলায় কুফরীকে শ্রেয় জ্ঞান করে, তবে উহাদিগকে অত্মরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা উহাদিগকে অত্মরঙ্গরূপে গ্রহণ করে, তারাই জালেম।’
অর্থাৎ যারা আল্লাহর দেওয়া জীবনবিধান (ইসলাম) না মেনে তাগুতের তৈরি জীবনবিধান (গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি) মানে তারা আমার যেই হোক তাকে আর অত্মরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা যাবে না।
সুরা মায়েদা-আয়াত-৫১:
হে মো’মেনগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর যালেম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’
সুতরাং ইহুদি খ্রিষ্টানদের তৈরি করা জীবনবিধানের যারা অনুসারী তাদের আখেরাতও ওদের সঙ্গেই হবে অর্থাৎ তারা জাহান্নামী। এখানে নামাজ, রোজা বা কোন এবাদতের কোন উল্লেখ আল্লাহ করেন নি।
সুরা মায়েদা-আয়াত-৫৫:
তোমাদের বন্ধু তো আলস্নাহ, তাঁহার রসুল ও মো’মেনগণ-যারা বিনীত হয়ে সালাহ্ কায়েম করে ও যাকাহ্ দেয়।’
এই আয়াতগুলির অর্থ বুঝতে মহান্ডিত, মহাজ্ঞানী বা কোন আলেম হবার প্রয়োজন নেই। শুধু অহংকার মুক্ত হয়ে, সত্য বোঝার মন নিয়ে এবং আল্লাহকে ভয় করলেই যে কেউ বুঝে নিতে পারবে যে সে আ্লোহর দৃষ্টিতে মো’মেন না কাফের। যারা এই আয়াতের অর্থ বুঝেও, ফাঁকি দিতে চান, কেবল তারাই এই আয়াতের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে সঠিক অর্থ থেকে দূরে সরে যেতে চায়। তাদের হলো সেই ছাত্রের মত যে পড়া না শিখেও শিক্ষককে বিভিন্ন অজুহাতে ফাঁকি দেবার চেষ্টা করে।