শাহ্ আলম, কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রাম পৌর টাউন হলে গতকাল বুধবার দৈনিক দেশেরপত্র ও দৈনিক বজ্রশক্তির উদ্যোগে ‘সকল ধর্মের মর্মকথা- সবার ঊর্ধ্বে মানবতা’ শীর্ষক এক সর্বধর্মীয় সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে কুড়িগ্রাম জেলার আমন্ত্রিত সর্বস্তরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন শ্রেণি ও ধর্ম ও পেশার মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। দৈনিক বজ্রশক্তির বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ শাহারুল এসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্তিত ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মন্ডল (মঞ্জু)। উক্ত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বাংলাদেশ বেতার রংপুর এর জেলা সংবাদদাতা মোঃ শাহাবুদ্দিন, কুড়িগ্রাম জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল করিম মধু, কুড়িগ্রাম পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ কাজিউল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলক সরকার, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফনীন্দ্র মোহন সাহা প্রমুখ।
সর্বধর্মীয় সম্মেলনে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী’র প্রস্তাবনা উত্থাপিত হয় এবং উপস্থিত অতিথিবৃন্দ এই প্রস্তাবনার সাথে সম্পূর্ণ ঐকমত্য প্রকাশ করেন। বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে হাজার বছর ধরে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও দাঙ্গা ভুলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান দৈনিক বজ্রশক্তি ও দেশেরপত্রের সাব এডিটর মোঃ আশেক মাহমুদ। তিনি বলেন, আজ আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি যেভাবে ঠিক সেইভাবে আমাদেরকে এই পুরো জাতিটাকে একত্রিত করতে হবে। তিনি দেশের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে বলেন, আজকে এই যে, সমাজে অন্যায় অশান্তি, মারামারি-যুদ্ধ রক্তপাত হচ্ছে, এসব থেকে বাঁচার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কেউ যদি মনে করেন, আমিতো ব্যক্তিগতভাবে ভাল আছি, তবে আমরা বলব সে ব্যক্তির মধ্যে কোন মানবতা নেই। কারণ, প্রত্যেক বস্তুর যেমন নিজস্ব ধর্ম থাকে, মানুষেরও তেমনি নিজস্ব ধর্ম আছে। আগুনের ধর্ম হচ্ছে সে পোড়াবে, তাপ দেবে, তার লেলিহান শিখায় সব ছাই হয়ে যাবে। আগুন যদি তার এ ধর্ম হারিয়ে ফেলে তবে তাকে আর আগুন বলা যাবে না। ঠিক তেমনিভাবে মানুষের ধর্ম হল মানবতা। মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে সবকিছু ভাগাভাগি করে মানবতার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করবে। মানুষ যদি মানুষের জন্য অনুভব অনুভূতি হারিয়ে ফেলে তবে সে আর মানুষ থাকে না, সে হয় মানুষরূপী পশু, ধর্মহীন। আমরা কাউকে বিশেষ কোনো ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য আসিনি। আমরা এসেছি সবাইকে এই আহ্বান করতে যে, আসুন আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্মের মূল শিক্ষায় ফিরে যাই। আমাদের সকলের ধর্মই এসেছে একই স্রষ্টার পক্ষ থেকে। সকল ধর্মের মূল কথাই এক, আর তা হলো ‘মানবতা’। আজকে সমস্ত পৃথিবীর মানুষ স্রষ্টার দেওয়া জীবনব্যবস্থাকে প্রত্যাখান করে মানুষের তৈরি জীবনব্যবস্থা মেনে নিয়েছে। ফলে আজ আমাদের এই অশাান্তি। মানবসৃষ্ট এই স্রষ্টাহীন জীবনব্যবস্থা আমাদের বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের পরস্পরের শত্র“তে পরিণত করেছে। চলুন আমরা প্রত্যেকে স্রষ্টার দেওয়া বিধান মেনে নিয়ে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে এক জাতি হয়ে যাই। হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সংঘাত ভুলে ঐক্যবদ্ধ সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। মানুষের মুক্তির জন্য কল্যণের জন্য শান্তির জন্য কাজ করাই হল একজন মানুষের প্রকৃত এবাদত এবং মানবতা ধারণকারী ব্যক্তিই প্রকৃত ধার্মিক। আমরা প্রকৃত ধার্মিক হওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে চাই। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী সমস্ত মানবজাতিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ডাক দিয়েছেন। আমরা তার অনুসারীরা আমাদের জীবন ও সম্পদ কোরবানি করে আজ সকল ধর্মের ভাই-বোনদের নিয়ে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। আমাদের বিরুদ্ধে ধর্মব্যবসায়ীরা অবিশ্রান্ত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, আপনারা আমাদেরকে যাচাই করুন। কারো মিথ্যা প্রচারণায় প্ররোচিত না হয়ে আমাদের সম্পর্কে জানুন, পরামর্শ দিন, উপদেশ দিন। আমরা ঐক্য চাই, শান্তি চাই।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর দেওয়া প্রস্তাবনার সাথে একমত পোষণ করেন। তারা দৈনিক বজ্রশক্তি ও দৈনিক দেশেরপত্রের উদ্যোগে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চলমান কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং এই ধরনের উদ্যোগে যে কোনো ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।