২০০৩ সনে কুষ্টিয়ার যুগিয়াতে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে তৎকালীন সহকারী জেলা আমীর হান্নান খানের বাড়িতে ধর্মব্যবসায়ী সন্ত্রাসীরা মিছিল করে হামলা চালায়। ব্যাপকভাবে লুটপাট করে বাড়িঘর ধ্বংস্তূপে পরিণত করে। তাদের অমানবিক প্রহারে সেদিন শহীদ হন হেযবুত তওহীদের বর্ষিয়াণ সক্রিয় সদস্যা রাবেয়া খাতুন।
শহীদ রাবেয়া খাতুন
কুষ্টিয়ার যুগিয়া এলাকার একজন মোজাহেদা শহীদ রাবেয়া। জন্ম ১৯৫২ সনে। পিতা মো. ভাদু মালিথা, মাতা মোছাঃ ছাকাতুন নেছা। এক ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। গ্রামের স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। মাত্র ১৫ বৎসর বয়সে পাবনা জেলার মাহতাব শেখের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। মেজো মেয়ের স্বামী মো. আনিসুর রহমানের মাধ্যমে ৩০ অক্টোবর ১৯৯৮ তারিখে তিনি তওহীদ গ্রহণ করেন।
সে সময় কুষ্টিয়াতে প্রায়ই ধর্মব্যবসায়ীদের সঙ্গে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত। এর মধ্যে বড় একটি ঘটনা হয় মঙ্গলবাড়িয়া। সেখানে রাবেয়া খাতুন খুব বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাঁর পরিবারের সবাই ছিলেন হেযবুত তওহীদের সদস্য এবং তাঁদের বাড়িকে কেন্দ্র করেই যুগিয়াতে হেযবুত তওহীদের কর্মকাণ্ড চলত। তাই তাঁরা ছিলেন ধর্মব্যবসায়ীদের টার্গেট। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৩ তারিখে স্থানীয় ধর্মব্যবসায়ীরা এবং একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসীরা শত শত লোক জড়ো করে তাঁদের বাড়িতে আক্রমণ করে। বেশ কিছুদিন ধরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল বলে হেযবুত তওহীদের বেশ কিছু সেখানে অবস্থান করছিলেন। তারাও ধর্মব্যবসায়ীদের হামলার শিকার হন। সংখ্যায় তারা অল্প হলেও অসম সাহসিকতার সঙ্গে হামলাকারীদেরকে প্রতিহত করতে থাকেন। রাবেয়া খাতুনও বাঁশের লাঠি হাতে আপ্রাণ লড়াই করে যান। কিন্তু শত শত বর্বর ধর্মব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের হামলায় একে একে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা আহত হয়ে পড়ে যেতে থাকেন। রক্তাক্ত অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে তারা এখানে ওখানে পড়ে থাকেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুন শাহাদাতের পেয়ালা পান করেন। ফজরের সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মুমূর্ষ সদস্যদেরকে উদ্ধার করেন। শহীদ রাবেয়ার পোস্ট মর্টেম হয় এর দুই দিন পর। সে সময় পর্যন্ত তাঁর দেহ সম্পূর্ণ সতেজ ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষ্য দেন। কুষ্টিয়া পৌর গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।