কিছুদিন আগে শেরপুর শহরের রঘুনাথ বাজারে হেযবুত তওহীদের একজন সদস্য আন্দোলনের বই নিয়ে প্রচারকার্যে গেলে চার পাঁচজন সন্ত্রাসী প্রকৃতির যুবক বাধাপ্রদান করে এবং এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মেরে জখম করে। জানা যায় তারা একটি পোশাক তৈরি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। এই হামলাকারী যুবকদের সাথে কিন্তু আমাদের সদস্যদের কোনো পূর্ব পরিচিতি বা শত্রুতা নেই। তাহলে কেন এই হামলা? প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, মাসখানেক আগে একজন ধর্মীয় বক্তা সেখানে ওয়াজ মাহফিলে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা কথা বলে স্থানীয় লোকদেরকে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে মারার জন্য ফতোয়া দিয়ে এসেছেন। এই ফতোয়ারই শিকার হন প্রচারকার্যে যাওয়া সদস্যগণ। ঘটনাটি ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখের।
এর পরদিন (২৮ ডিসেম্বর) গাজিপুরের বরমি বাজারে হেযবুত তওহীদের প্রচার কার্যক্রমে অংশ নিতে গিয়েছিলেন কয়েকজন নারী কর্মী। একটি মাদ্রাসার সন্নিকটে তাদেরকে বাধা দেয় কয়েকজন কথিত ধর্মীয় লেবাসধারী ব্যক্তি। তারা হেযবুত তওহীদকে ইসলামবিরোধী, খ্রিষ্টান, কাফের ইত্যাদি বলে চিৎকার করতে থাকে। মেয়েদেরকে মোল্লাশ্রেণির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য হেযবুত তওহীদের কয়েকজন সদস্য সেখানে যান এবং বাধাদানকারীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ইতোমধ্যেই তারা ধর্মীয় উন্মাদনায় উত্তেজিত হয়ে উঠেছে, সহিংস ও ‘বীরত্ব ব্যাঞ্জক’ কিছু তারা করবেই করবে। পুরুষ সদস্যদেরকে পেয়েই মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্র-শিক্ষক লোহার রড, লাঠিসোটা নিয়ে তাদের উপর হামলা করে বসে। মুহূর্তে শত শত লোক সেখানে জমে যায়, কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক এতটাই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে যে তারা হেযবুত তওহীদের সদস্যদের এলোপাথাড়িভাবে মারধর, হত্যার উদ্দেশ্যে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত, এমনকি নারী সদস্যদেরকেও শারীরিকভাবে আক্রমণ ও হেনস্তা করে। এরইমধ্যে তারা নারীকর্মীদের সাথে থাকা আন্দোলনের বই, প্রচারপত্র, স্মার্টফোন, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা যা ছিল সব জোরপূর্বক নিয়ে নেয়। সদস্যদেরকে জোর করে মাদ্রাসার ভিতরে নিয়ে মারধর করা হয়। মারাত্মকভাবে আহত অবস্থায় তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এটি ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখের ঘটনা।
এর পরদিনই (২৯ ডিসেম্বর ২০২২) ঢাকার আশুলিয়াতে হেযবুত তওহীদের কয়েকজন নারী সদস্য প্রকাশনার ক্যাম্পেইন করতে গেলে সেখানেও একজন ইলেকটিক্যাল সামগ্রী বিক্রেতা তাদেরকে বিনা উস্কানিতে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করে। লোকটি দেখতে ধার্মিক অর্থাৎ দাড়িটুপি আছে। তার গালিগালাজ ভয়াবহ অশ্লীল, একজন সদস্যা সেটা ভিডিও করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের সদস্যারা সাহসিকতার সঙ্গে তার কথার জবাব দেন। স্থানীয় কিছু লোকের মধ্যস্থতায় ঘটনাটি আর এগোয় না।
একইভাবে দেশের সর্বত্র যেখানেই আমাদের সদস্যরা উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তুলতে প্রচারকার্যে অংশ নিচ্ছেন, সেখানেই তারা প্রবল বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। মেয়েদেরকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে। যারা এই আক্রমণগুলো করছেন তাদের উদ্দেশে আমার আজকের কথা। তারা ইসলামকে ভালোবাসেন এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। না খেয়ে থাকলেও তারা ইসলামকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকতে চায়। এদেরকেই অনেকে বলেন তওহীদি জনতা। এই শ্রেণিটির মনে মগজে, মস্তিষ্কে, ধারণায়, ক্রমাগত অপপ্রচার করে গেঁথে দেওয়া হয়েছে যে, ‘হেযবুত তওহীদ ইসলামের শত্রু, মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী, হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম ইসলামের শত্রু। তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, ইসলামের ক্ষতি করার জন্য দাঁড়িয়েছেন। তাই হেযবুত তওহীদকে প্রতিহত করা ইসলামের কাজ, সওয়াবের কাজ।’ এভাবে জনগণের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ওয়াজে, খুতবায়, অনলাইনে ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। তারা বুঝতে পারছে না যে একটি শ্রেণি তাদেরকে, তাদের ঈমানী শক্তিকে ব্যবহার করছে, তারা অপশক্তির ক্রীড়নক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে তাদের এই আক্রোশ, ও প্রতিহিংসার কারণ, হেযবুত তওহীদ তাদের শত শত বছর ধরে চলা রমরমা ধর্মব্যবসার লালবাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে। ফলে জনগণ ধর্মের আড়ালে লুকিয়ে থাকা তাদের স্বার্থপর কদর্য চেহারাটা দেখে ফেলছে। ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে তারা সচেতন হয়ে উঠছে, তাদেরকে আর কোনোভাবে ধর্মের নামে অধর্ম গেলানো যাবে না। আর তাদেরকে স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার বানানো যাবে না। শুধু নিজেদের এই স্বার্থকে বাঁচিয়ে রাখতে ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীটি সত্যনিষ্ঠ আন্দোলন হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে এই মিথ্যাচার প্রতিনিয়ত চালিয়ে আসছে। তারা হেযবুত তওহীদের অকাট্য বক্তব্যের বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা করতে ও জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা জানে, মানুষ হেযবুত তওহীদের এসব কথা শুনলে তাদের ধর্মের নামে মিথ্যের বেসাতি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে এমন সব অপপ্রচার চালাতে হবে যাতে করে মানুষ হেযবুত তওহীদকে ঘৃণা করে, এ আন্দোলনের বক্তব্যই না শোনে।
নিজেদের ধর্মব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে রসুলাল্লাহ (সা.) বিরুদ্ধে ঠিক এ কাজটিই করেছিল আবু জেহেল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। তারা রসুলাল্লাহকে পাগল, গণক, ভণ্ড, জাদুকর, বিকৃতমস্তিষ্ক, মিথ্যাবাদী ইত্যাদি সব রকম অপবাদ আরোপ করেছিল। রসুলাল্লাহ তাঁর জাতিকে তওহীদের দিকে আহ্বান জানাতে শুরু করার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে এসব প্রচারণা শুরু হয়। হজের সময় আরবের ও আরবের বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ মক্কায় আসত। এই আবু জাহেল ও তার অনুচরেরা সেই সব হাজিদের তাবুতে গিয়ে গিয়ে এসব অপপ্রচার করত। তাদেরকে বলত যে মক্কায় মোহাম্মদ নামে এক লোক আছে। সে পাগল হয়ে গেছে। তার কথা শুনবে না। তাদের এসব অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে লোকেরা রসুলাল্লাহর সাহাবিদের উপরে, মানবতার কল্যাণকামী সৈনিকদের উপরে, মো’মেনদের উপরে অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে, শহীদ করেছে, আহত-বিকলাঙ্গ করেছে। সেভাবেই আমাদের সমাজের ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটির মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডায় প্রভাবিত হয়ে সত্যনিষ্ঠ আন্দোলন হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপরও ধর্মান্ধ মানুষ প্রতিনিয়ত হামলা, নির্যাতন, হয়রানি চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ ধর্মব্যবসায়ীদের প্রোপাগাণ্ডায় প্রভাবিত এই মানুষগুলোই যখন রসুলাল্লাহর (সা.) সামনে গিয়েছে, তাঁর মুখ থেকে তওহীদের বাণী, ইসলামের কথা শুনেছে তখন তারা পাল্টে গিয়েছে। তারা বলেছে, এই সত্য জানার আগ পর্যন্ত আপনি ছিলেন আমাদের জীবনের বড় শত্রু। আর আজকে থেকে আপনি আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় বন্ধু।
এই যে এত পরিবর্তন এটা কেন হয়েছে? কী কারণে হয়েছে? অপপ্রচারে প্রভাবিত মানুষগুলো যখন সত্যটা জেনেছে তখন তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। আজ যে শ্রেণিটি হেযবুত তওহীদের পথে প্রতিনিয়ত বাধার সৃষ্টি করছে তাদের প্রতি আমাদের কথা হচ্ছে, আমরা জানি যে, আপনারা হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়েছেন। তাই না জেনে, না শুনে একটি নির্দিষ্ট মহলের মিথ্যাচারে প্রভাবিত হয়ে আপনারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে লেগে পড়েছেন। অথচ এ বিষয়ে কোর’আনে কী নীতিমালা আছে সেটা আপনাদের খেয়াল রাখা কর্তব্য। যদি সত্যি সত্যিই আপনারা ইসলামকে ভালোবেসে থাকেন, ধর্মপ্রাণ মো’মেন-মুসলমান হয়ে থাকেন, ইসলামের জন্য কোনোকিছু করতে চান তাহলে আপনাদের উচিত ছিল কারো অপপ্রচারে কান না দেওয়া, হুজুগে-গুজবে মেতে না ওঠা। চিনের কান নিয়ে গেছে শুনে আগে কানে হাত দিয়ে যাচাই করুন, অযথা চিলের পিছনে দৌড়াবেন না। এ বিষয়ে কোর’আনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে-
‘হে মো’মেনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোনো কোনো অনুমান তো পাপ। আর তোমরা একে অপরের গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গিবত করো না।’ – (সুরা আল হুজরাত ১২)
‘হে ঈমানদারগণ, যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও- এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।’- (সুরা আল হুজরাত ৬)
‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তরকে প্রতিটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল ৩৬)। অর্থাৎ মানুষ যা করবে তা কান দিয়ে শুনে, চোখ দিয়ে দেখে, অন্তর দিয়ে বুঝে, জ্ঞান দিয়ে বিচার করে তারপর করবে। যে বিষয় সম্পর্কে তার সঠিক জ্ঞান নেই তা কখনও সে করবে না।
যারা গুজব রটনা করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ কতটা কঠোর তা পবিত্র কোর’আনের সুরা আহযাবের এই আয়াতগুলো পড়লেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘…এবং যারা নগরে গুজব রটনা করে তারা বিরত না হলে আমি নিশ্চয়ই তাদের বিরুদ্ধে তোমাকে প্রবল করব, এরপর তারা এ নগরীতে অল্প দিনই তোমার প্রতিবেশীরূপে থাকবে। অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে এবং নির্দয়ভাবে হত্যা করা হবে (সুরা আহযাব: ৬০-৬২)।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ধারা মোতাবেক প্রত্যেক নাগরিকের আইনসম্মতভাবে বক্তব্য দেওয়ার অধিকার আছে, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদের ক) তে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক নাগরিকের বাক স্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের এবং চিন্তা ও বিবেকের, বাক স্বাধীনতার অধিকার প্রদান করা হইল।’ একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস লালন, প্রচার, মসজিদ নির্মাণ, বাকস্বাধীনতা তথা মতামত প্রকাশের অধিকার রাখি। আমাদের এই সাংবিধানিক অধিকার যারা হরণ করতে চেষ্টা করবে তারাই বাস্তবে আইন অমান্যকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু হেযবুত তওহীদ বিগত প্রায় আটাশ বছর ধরে দেশের প্রচলিত আইন মান্য করে আন্দোলন করে যাচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে হেযবুত তওহীদ রাষ্ট্রের একটিও আইন লঙ্ঘন করে নি, একটিও অন্যায় করে নি। এটা শুধু আমাদের মৌখিক দাবি নয়, এটা নিম্ন থেকে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত।
আমাদের কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র। অথচ যখন আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি তখন ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটির দ্বারা বেআইনীভাবে হামলার শিকার হচ্ছি। তাদের হামলায় আমাদের পাঁচজন সদস্য ইতোমধ্যে শহীদ হয়ে গেছেন। ২০০৩ সালে মাদারীপুরে এভাবেই তারা আক্রমণ চালিয়ে হেযবুত তওহীদের একজন সদস্যকে হত্যা করে। পরে সেখানে হত্যা মামলা হয়েছে। একই বছর কুষ্টিয়াতে একজন বয়স্ক নারী সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার বাড়িঘর লুটপাট ও ধ্বংস করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৪ই মার্চ নোয়াখালীতে উত্তেজিত ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীরা একইভাবে হেযবুত তওহীদের দুইজন সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে পৈশাচিক কায়দায় জবাই করে হত্যা করে। তাদের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়, চোখ তুলে নেয়, গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই হত্যা মামলায় ছয় শতাধিক লোককে আসামী করে সরকারবাদী মামলা দায়ের করা হয়েছে। যারা সেদিন হুজুগে-গুজবে মেতে স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে পড়ে এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তারা এ মামলার আসামী। বিগত ৭ বছর ধরে এই মামলার ঘানি টানতে টানতে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অর্থসম্পদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের ভয়ে পলাতক আসামীদের লুকিয়ে লুকিয়ে বাঁচতে চাচ্ছে। অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে, আর দেশে ফিরতে পারছে না। ক্ষণিকের আবেগে সন্ত্রাসী উন্মাদনায় মেতে তারা এমন একটা ভুল করে ফেলেছেন যা তাদের পরিবারকে বিপন্ন ও অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। তাদের পরিবারগুলো পথে বসে পড়ছে, সন্তান অভিভাবকশূন্য বড় হচ্ছে। ২৩ আগস্ট ২০২২ তারিখে তারা পাবনায় ধর্মব্যবসায়ীদের উস্কানিতে হেযবুত তওহীদের একজন সদস্যকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। যে হত্যা মামলা এখনো চলছে। এই মামলার আসামিদের জীবনেও একই দুর্যোগ নেমে আসবে। যারা উস্কানিদাতা তারা কিন্তু আইনের ফাঁক গলে ঠিকই বেরিয়ে যাচ্ছে, মধ্য দিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে তাদের অন্ধ অনুসারীরা।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, একটি ঘটনা আরো দশটা ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। জল বহুদূর গিয়ে গড়াচ্ছে। মামলার মীমাংসা করানোর নাম করে ফাঁকতালে সুযোগসন্ধানী ধান্ধাবাজ রাজনৈতিক নেতারাও স্বার্থ হাসিল করছে। ধর্মব্যবসায়ীদের মত তারাও চায় এ ধরনের ঘটনা বার বার ঘটুক। রসুলাল্লাহর সময়ও গোত্রপতিরা অর্থাৎ যারা সমাজ পরিচালক ছিল তারাও নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য রসুলাল্লাহ ও তাঁর সাহাবিদের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে। এই দুটো শ্রেণি সুযোগ পেলেই সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে ইন্ধন দিয়ে সন্ত্রাসী কাজে লেলিয়ে দিয়ে বারবার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। কিন্তু ঘটনা ঘটানোর সময় বা তার পরে আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
তাই যারা অন্ধের মত অন্যের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে আমাদের ভুল বুঝছেন তাদের প্রতি আমাদের কথা যে, আমাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার আগে আমাদের বই পড়ুন, আমাদের বক্তব্য শুনুন, আমাদের কোন বিক্রয় প্রতিনিধি আপনার কাছে গেলে কী বলতে চায় আগে শুনুন। আল্লাহ কোর’আনে প্রথম যে আয়াতটি নাজিল করেছেন তাতেই বলেছেন, ইক্বরা অর্থাৎ পড়ো (সুরা আলাক্ব ১)। অন্যত্র বলেছেন, তোমরা মনোযোগ সহকারে শোনো এবং সেখান থেকে যা উত্তম তা গ্রহণ কর (সুরা যুমার ১৮)। আমাদের কোনো কথা বা কাজ ভুল মনে হলে তার বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা করুন। আমাদের কোনো ভুল থাকলে সেটা আমরা সংশোধন করতে চাই। কোনো অভিযোগ থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানান। আপনারা ইসলামের নীতি লঙ্ঘন করবেন না, করলে আপনারাই গোনাহগার হবেন। আইন হাতে তুলে নিবেন না, নিলে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই এভাবে আর ইসলামের অবমাননা করবেন না। মুসলমানদের এই অসহিষ্ণু ও উগ্রবাদী আচরণের কারণে কোটি কোটি মানুষ ইসলামের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছে, আল্লাহ-রসুলকেই গালি দিচ্ছে। যদি সত্যিই ইসলামকে ভালোবাসেন তাহলে হেযবুত তওহীদ কী বলছে, কী করতে চাচ্ছে তা অন্যদের থেকে না শুনে আমাদের কাছ থেকে জানুন এবং সিদ্ধান্ত নিন। জানার জন্য আমাদের কাছে আপনারা সাদরে আমন্ত্রিত।