মোরশেদ খান, আমীর, হেযবুত তওহীদ, ময়মনসিংহ
আজ বিশ্বময় যে অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ, রক্তপাত এক কথায় অশান্তি চলছে এমন অস্থিতিশীল পরিবেশ ইতোপূর্বে আর হয় নি। বিশেষ করে মুসলমান নামক এই জাতিটির উপর চলছে অবর্ণনীয় নির্যাতন নিপীড়ন। তাদের দুঃখ, কষ্ট, দুর্ভোগ ভাষায় প্রকাশ করার নয়। তারা সংখ্যায় ১৬০ কোটি হয়েও সকল জাতির আক্রমণের শিকার, একটা একটা করে মুসলিম প্রধান দেশগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। বোমার আঘাতে মরছে মুসলিম, সাগরে ভাসছে মুসলিম, উদ্বাস্তু হচ্ছে মুসলিম, কৃত্রিম দুর্ভিক্ষে না খেয়ে মরছে মুসলিম। বিরাণভূমিতে পরিণত হচ্ছে সমস্ত দেশ, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে তাদের বাড়িঘর, মসজিদ মাদ্রাসাসহ সকল স্থাপনা। এর কারণ কী?
এ কারণটাই আমরা বলছি যে, মানবজাতির যিনি স্রষ্টা তিনিই ভালো জানেন মানুষ কীভাবে চললে শান্তি পাবে এবং সেই উপায় তিনি দিয়েছেন। তিনি বাবা আদম (আ.) থেকে শুরু করে আখেরি নবী মোহাম্মদ (দ.) পর্যন্ত সকল নবী রসুলের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য সঠিক পথনির্দেশ (হেদায়াহ) ও জীবনবিধান পাঠিয়েছেন। যখনই মানুষ আল্লাহর দেওয়া সেই দীনকে প্রত্যাখ্যান করে নিজেরা তাদের জীবনব্যবস্থা বানিয়ে নিয়েছে তখনই তাদের জীবনে অশান্তি নেমে এসেছে। তাদের এই অশান্তি যে কেবল পার্থিব তা নয়, আল্লাহর দীন প্রত্যাখ্যান করার শাস্তিস্বরূপ আখেরাতেও তারা অনন্তকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে।
পূর্ববর্তী নবী-রসুলগণ এসেছেন পৃথিবীর কোন একটা নির্দিষ্ট অঞ্চল বা গোত্রের জন্য। কিন্তু শেষ নবী এসেছেন সমগ্র মানবজাতির জন্য। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ তাঁর রসুলকে বলেছেন এই ঘোষণা দেওয়ার জন্য যে, ‘হে মানবজাতি, আমি তোমাদের
সকলের জন্য আল্লাহর রসুল’ (সুরা আরাফ ১৫৮)। তাঁর উপাধি আল্লাহ তায়ালা ঠিক করে দিয়েছেন রহমাতাল্লিল আলামিন অর্থাৎ সমস্ত বিশ্ব জাহানের জন্য রহমত স্বরূপ। এর অর্থ হল তাঁকে আল্লাহ তায়ালা পাঠিয়েছেন মানবজাতির জন্য শেষ উদ্ধারকারী হিসাবে, শেষ শাফায়াতকারী হিসাবে। শেষ জীবনবিধান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা’আলা তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন তা তিনি পবিত্র কোর’আনে অন্তত তিনটি আয়াতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আল্লাহ স্বীয় রসুলকে প্রেরণ করেছেন হেদায়াহ ও সত্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা (দীনুল হক) সহকারে যেন রসুল একে অন্যান্য সকল দীনের উপরে বিজয়ী করেন (সুরা তওবা ৩৩, সুরা সফ ৯, সুরা ফাতাহ ২৮)। অর্থাৎ আল্লাহ তওহীদ ও তওহীদ ভিত্তিক জীবনব্যবস্থা নবীকে প্রদান করেছেন। কিন্তু এটাকে প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার দায়িত্ব তিনি অর্পণ করেছেন রসুলকে এবং উম্মতে মোহাম্মদীকে। সেজন্য তিনি বলেছেন যে, আমি আদিষ্ট হয়েছি মানবজাতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ এবং আমাকে তাঁর রসুল হিসাবে মেনে নেয় [আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বোখারী ও মুসলিম]। আল্লাহ রসুলকে পাঠিয়েছেন মানবজাতির সামগ্রিক জীবনে শান্তি ন্যায় ও সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য। তিনি মক্কায় আইয়্যামে জাহেলিয়াতের অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অনৈক্য হানাহানি ইত্যাদিতে লিপ্ত বর্বর আরবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করলেন একটি কথার উপরে – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.) অর্থাৎ তোমরা বল জীবনের যে অঙ্গনেই হোক যেখানে আল্লাহর কোনো হুকুম রসুলের কোনো হুকুম আছে সেখানে আর কারো হুকুম আমরা মানবো না। এই একটি কথার উপর তিনি আরব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করলেন। এর আগেও আরবরা আল্লাহকে বিশ্বাস করত, ক্বাবাকে আল্লাহর ঘর মনে করেই হজ্ব করত, খাতনা করত, যে কোনো কাজের আগে আল্লাহর নাম নিত, নিজেদের সন্তানের নাম আব্দুল্লাহ রাখতো। কিন্তু আল্লাহর হুকুম না মানার কারণে তারা কাফের মোশরেক ছিল। তাদেরকে আল্লাহর রসুল যখন সামগ্রিক জীবনে আল্লাহর হুকুমের পক্ষে, সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করলেন, তারা মোমেন-মুসলিমে পরিণত হলো। এই ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি যারা কিছুদিন পূর্বেও হানাহানিতে লিপ্ত ছিল তারা ভাই ভাই হয়ে গেল। এমন শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হলো যে একটি যুবতি মেয়ে মূল্যবান অলঙ্কার পরিহিত অবস্থায় রাতের অন্ধকারে শত শত মাইল পথ অতিক্রম করত। তার মনে কোনো ক্ষতির আশঙ্কাও জাগ্রত হতো না। এমন ন্যায়বিচার সুবিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল যে আদালতে মাসের পর মাস অপরাধ সংক্রান্ত কোনো মামলাই আসতো না। উটের পিঠে সম্পদ ও খাদ্য বোঝাই করে ধনীরা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরত কিন্তু গ্রহণ করার মতো কাউকে পাওয়া যেত না। এটাই হচ্ছে কলেমার বাস্তবিক রূপ। এই দীন প্রতিষ্ঠার ফলে এমন অকল্পনীয় শান্তি অর্ধপৃথিবীতে আসবে বলেই আল্লাহ এই দীনের নাম রেখেছেন ইসলাম, আক্ষরিক অর্থেই শান্তি। আজ এই শান্তির ছিটেফোঁটাও আছে কি?