হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
আজকে আমাদের এই মানবজাতির কী অবস্থা একবার দেখুন। ১৬ হাজার এ্যাটম বোমা তৈরি করে রাখা হয়েছে মানুষকে মারার জন্য। পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলি অস্ত্রের ভাষায়, হুমকির ভাষায় কথা বলছে। কেউ কাউকে সমীহ করছেন না, তোয়াক্কা করছেন না, পাত্তা দিচ্ছেন না। সীমান্তে সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করছেন। সমুদ্রে সমুদ্রে রণতরী পাহারা দিচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যেতে পারে। তখন কী দশা হবে পৃথিবীর? কী দশা হবে মানবজাতির? সমাজবিজ্ঞানীদের সঙ্গে কিংবা যে কোনো সচেতন মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে দেখুন, বুঝতে পারবেন। সবাই আশঙ্কা করছেন, এইবার বিশ্বযুদ্ধ লাগলে পৃথিবী আর থাকবে না। অনেকে বলতে পারেন পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার একটা নির্ধারিত কাল রয়েছে। তাদের কথা ঠিকই আছে, একথা আমিও মানি। কিন্তু এটাও সত্য যে নুহ (আ.) এর সময় যখন নির্দিষ্ট কাল এসেছিল, আল্লাহ তখন নবীসহ কয়েকজন মোমেন-মোমেনাকে এবং কিছু প্রাণীকে একটি নৌকায় তুলে রক্ষা করেন আর সমগ্র মানবজাতিকে বিনাশ করে দেন। তিনি সেই আল্লাহ যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, তিনি বেনেয়াজ – ‘কুল হু আল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস্ সামাদ’। পৃথিবীর বা মানবজাতির কাউকে তোয়াক্বা করার ওঁনার কোন দরকার পড়ে না। তাঁর রুহ্ধারী, তাঁর নিজ হাতে বানানো, তাঁর খলিফা হয়ে সমস্ত সৃষ্টিকে ব্যবহার করে এই পৃথিবীর উপর অত্যাচার চালিয়ে যাবে, আল্লাহ তোমাদেরকে ছাড়বেন? না, এই কাজের ফল পাওয়ার সময় এসেছে, অত্যন্ত কঠিন দুঃসময়ে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা।
আজ পৃথিবীর যেদিকে তাকান না কেন দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার, দরিদ্রের ওপর ধনীর বঞ্চনা, শাসিতের ওপর শাসকের জুলুম, সরলের ওপর ধূর্তের প্রতারণায় সমস্ত দুনিয়া নরককু-! এখন কী হবে মানুষের? এ অবস্থা থেকে মানবজাতির নিস্তারের পথ কী? উদ্ধারের পথ কী? এখান থেকে মানবজাতি কী করে বাঁচবে? তাঁর তো ইহকালই শেষ নয়। তার দেহ যেমন সত্য আত্মাও তেমন সত্য। ইহকাল যেমন সত্য, পরকাল তেমন সত্য। এখানে কোনো রকমে ধ্বংসের হাত থেকে পার পেয়ে গেলেও পরকালে কি হবে? সেখানে আল্লাহর সামনে দ-ায়মান হতেই হবে। সেদিন কী করে পার করবেন? এটা বিরাট প্রশ্ন। তাহলে মানবজাতির সামনে এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এই মানুষ কী করে ইহকালে মুক্তি লাভ করবে, পরকালে মুক্তি লাভ করবে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত একটি দিনের জন্যও পৃথিবী যুদ্ধমুক্ত ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত এখনও শুকায় নাই। তখন জাতিসংঘ তৈরি করা হয়েছিল বিশ্বকে শান্তি দিবে বলে। কিন্তু জাতিসংঘ ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য জাতীয়-আন্তর্জাতিক সংস্থা হলো, সংগঠন হলো, হাজার হাজার মতবাদ তৈরি হলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বানানো হল, আইনকে কঠিন থেকে কঠিনতর করা হল, নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হচ্ছে কিন্তু মানবজাতির মধ্যে শান্তি আনতে পেরেছে? না। সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিটা সমাজে কি উত্তরে, কি দক্ষিণে, কি পূর্বে, কি পশ্চিমে, কি মরু অঞ্চলে, কি মেরু অঞ্চলে, কি আরব, কি আধুনিক, কি ইউরোপ, কি আমেরিকায়, কি জাপানে, কি চাইনিজ, কি জার্মানী সমস্ত সমাজ আজকে হত্যা, গুম, ধর্ষণ, রাহাজানি, অবিশ্বাস, সুদ, ঘুষ, হাইজ্যাক ধাই ধাই করে বেড়ে চলেছে। প্রতিটা মানুষ আত্মিকভাবে দেউলিয়া, সামাজিকভাবে অশান্ত, রাজনৈতিভাবে আজকে দাঙ্গা বিক্ষোব্ধময়, পুরো মানবজাতি আজ এই নরককু-ে পতিত হয়েছে। এখন মানবজাতির পথ কি? কেমনে মানবজাতি বাঁচবে? এটাই বড় প্রশ্ন –
কীভাবে মানুষের মুক্তি?
প্রথম প্রশ্ন হলো, মানুষ এখানে আসলো কেন? মানুষের এই পরিণতি তো এখানে হওয়ার কথা না। সে আল্লাহর খলিফা, আল্লাহর প্রতিনিধি, আল্লাহ তাঁকে নিজ হাতে বানালেন, আল্লাহ যুগে যুগে তাঁকে নবী-রসুল দিয়ে গাইডলাইন করলেন, সিরাতুল মুস্তাকীম দিলেন, আল্লাহ একটা মূহূর্তের জন্য পথ প্রেরণ করেন নাই। তাহলে মানবজাতিকে এখানে কে আনল? কেন মানবজাতি এখানে আসল? প্রথম প্রশ্ন। দ্বিতীয় প্রশ্ন, মানবজাতিকে এখান থেকে উদ্ধারের এখন উপায় কি? পথ কি? আদৌ কোনও পথ জানা আছে?
এবার আসি আমাদের মুসলিম নামক জাতির প্রসঙ্গে। আমার মুসলমান নামক জাতি। আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি, রসুলকে বিশ্বাস করি, কেতাবে বিশ্বাস করি, পরকালে জান্নাতে যাওয়ার আশা করি। মুসলিম জাতি সম্পর্কে আল্লাহ কোর’আনে বলেছেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদেরকে মানবজাতির মধ্য থেকে উত্থিত করা হয়েছে যেন তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করতে পারো এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারো (সুরা ইমরান ১১০)।” আটলান্টিকের তীর থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত আমরা সংখ্যায় ১৬০ কোটি। সংখ্যায় এত অধিক হয়েও মিয়ানমারে মার খাই আমরা, চীনদেশে মার খাই আমরা, ভারতে মার খাই আমরা, ফিলিস্তিনে মাত্র এক কোটি ইহুদীর হাতে মার খাই আমরা, বসনিয়াতে নিপীড়িত হই আমরা, মধ্যপ্রাচ্যে আগুনে জ্বলি আমরা, আফ্রিকাতে না খেয়ে মারা যাই আমরা, সাড়ে ছয় কোটি উদ্বাস্তু আমরা। এই কথাটা আজকে বিবেচনায় নিতে হবে। প্রতিটা মুহূর্তে বোমার আঘাতে ল-ভ- হচ্ছে আমাদের দেশ। এখনও যে দেশগুলো আক্রান্ত হয় নি, সেই সব দেশের মুসলিমদেরকে এখনও সময় থাকতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে, কার্যকর পন্থা খুঁজে বের করতে হবে।
[১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখ সোমবার ঢাকার উত্তর বাড্ডায় অনুষ্ঠিত একটি আলোচনা সভায় হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম কর্তৃক প্রদত্ত ভাষণের খ-াংশ। সম্পাদনায় মো. রিয়াদুল হাসান। বক্তব্যের পরবর্তী অংশ দেখুন আগামীকাল।]