নিরাপরাধ তিন জন নারী ও দুই জন পুরুষ সরল বিশ্বাস হৃদয়ে ধারন করে ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা সংক্রান্ত বক্তব্য সম্বলিত লিফলেট সর্বসাধারণের মাঝে বিতরণ করেন। যে লিফলেট মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন ২০০৭ সালে বৈধতা দান করেছে। অথচ মহামান্য হাইকোর্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গাইবান্ধা জেলার সদর থানার পুলিশ একযুগ আগে ২০১২ সালে সেই লিফলেট বিতরণের কারণে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ আনে।
একযুগ আগের পুরোনো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মিথ্যা অভিযোগে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে গাইবান্ধায় হেযবুত তওহীদের ৫ সদস্যকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছেন আদালত। রবিবার (২৬ জানুয়ারি ২০২৫) গাইবান্ধা জুডিশিয়াল প্রথম আদালত পৃথক দুই মামলার রায়ে তাদের খালাস প্রদান করেন। এ সময় অব্যাহতি পাওয়া সদস্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। খালাসপ্রাপ্ত হেযবুত তওহীদের সদস্যরা হলেন- মো. আরজু আহম্মেদ (৩৫), মো. ইমরান আলী (৩৪), মেহেরজান নেছা (৪০), শামীমা আক্তার (৩০) এবং আল্পনা আক্তার (৩০)। মামলার রায় ঘোষণার পর তাদেরকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন হেযবুত তওহীদের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। অবসান ঘটে একযুগের হয়রানির।
জানা যায়, ২০১২ সালে গাইবান্ধা শহরে হেযবুত তওহীদের প্রকাশনা ও আদর্শিক বক্তব্য সম্বলিত হ্যান্ডবিল প্রচার করছিলেন মো. ইমরান আলী ও আরজু আহম্মেদ। স্থানীয় একটি মহল তাদের কাজে বাধা প্রদান করে এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশে অভিযোগ করে। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় এবং ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখায়। পরবর্তীতে গাইবান্ধা থানার এসআই ফিরোজ হোসেন বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে মামলা করেন।
অপর মামলাটি ঘটে ২০১৩ সালে। যখন শামীমা আক্তার, মেহেরজান নেছা ও আল্পনা আক্তার গাইবান্ধা বাসস্টান্ডে একই লিফলেট বিতরণ করার সময় স্থানীয় কিছু উগ্রবাদী লোক প্রথমে বাধার সৃষ্টি করে এবং পরে ভুল তথ্য দিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় গাইবান্ধা থানার তৎকালীন এসআই শাহাদত হোসেন বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন।
প্রথম মামলায় অভিযুক্তদের ছয় মাস ও দ্বিতীয় মামলায় অভিযুক্তদেরকে আড়াই মাস কারাবন্দি রাখা হয়। পরে জামিনে মুক্তি পান তারা। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চলা মামলা, আদালতে হাজিরা এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রবিবার আদালত তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে জানিয়ে উভয় মামলার আসামীদেরকে খালাস দেন।
মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ সুজন বলেন, “হেযবুত তওহীদ একটি বৈধ আইনমান্যকারী সংগঠন। সরকারের অনুমোদিত কার্যক্রম পরিচালনায় তাদের কোনো বাধা নেই। ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। আমরা আদালতে প্রমাণ করেছি যে, এসব অভিযোগ ছিল ভিত্তিহীন। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট।”
দীর্ঘ দিন হয়রানির কারণে তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার দুর্বলতার ব্যাপারেও অসন্তোষ প্রকাশ করলেও আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন হেযবুত তওহীদের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও খালাসপ্রাপ্ত সদস্যরা।
খালাসপ্রাপ্ত শামীমা আক্তার বলেন, দীর্ঘ একযুগ পরে হলেও আমাদের হয়রানিমূলক মামলাটি মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। এতে আমরা বিজ্ঞ আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে উক্ত বিষয়টিকে মিথ্যা প্রমাণ কতে এতদিন লাগায় হতাশাও প্রকাশ করেন তিনি।
হেযবুত তওহীদের গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি জাহিদ হাসান মুকুল বলেন, “হেযবুত তওহীদ সারা দেশে রাষ্ট্রীয় আইন মেনে কাজ করে। আমাদের কার্যক্রমে বই বিক্রি, হ্যান্ডবিল বিলি, সভা-সমাবেশ এবং সেমিনার আয়োজন করা হয়। গত ৩০ বছরে আমরা কোনো আইন ভঙ্গ করিনি এবং ভবিষ্যতেও করব না। তা সত্ত্বেও একটি মিথ্যা মামলার জন্য ১২ বছর ধরে আমাদের সদস্যদের ভোগান্তি পোহাতে হলো। এটি বিচার বিভাগের একটি নেতিবাচক দিক।”
তিনি আরও বলেন, “দুই মামলাতেই পুলিশ প্রথমে তাদেরকে ৫৪ ধারায় আটকের পর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ২৯৫ ধারায় মামলা করে। কিন্তু হেযবুত তওহীদের বক্তব্য কোনোভাবেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে না। আজকে আদালতের রায়ে সেই বিষয়টি আবারও প্রমাণ হলো। সেই সাথে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোও ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা। আমরা চাই দ্রুত সেগুলোরও নিষ্পত্তি করা হোক।” সূত্র: বাংলাদেশেরপত্র ডটকম