বিকৃত ইসলামগুলোর ইসলাম প্রতিষ্ঠার যে প্রচেষ্টা, সেটা একেক জনের একেক ধরনের। যেমন, বর্তমানে সবচেয়ে বড় একটি ধারণা দাঁড়িয়েছে- আমাদের পতনের মূল কারণ হোচ্ছে আমাদের অশিক্ষা, আমরা শিক্ষিত নই মানে আমরা জ্ঞান অর্জন কোরি না। এই মতবাদটা আগে থেকে ছিলো। কতগুলো বিশিষ্ট সংগঠন বিশেষ কোরে ড: মাহথির মোহাম্মদ এটাকে আরো খুব জোর দিয়েছেন যে, আমাদেরকে পূর্ব মহীমময় অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য আমাদের একমাত্র পথ হোচ্ছে জ্ঞানার্জন। আবার কোন কোন সংগঠন কাজ কোরছে শুধু শিক্ষিত লোকের মধ্যে। তারা সাধারণ মানুষের কোন পরোয়া করে না, তারা কাজ করে স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ইত্যাদি শিক্ষিতদের মধ্যে। তাদের বিশ্বাস এটা না হোলে ইসলামকে উঠানো যাবে না। এ ব্যাপারে আমার পরিষ্কার জবাব হোচ্ছে, স্পেন দখল কোরে সেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠা কোরল কারা? তারা অশিক্ষিত। লেখা পড়া জানতো না। কিন্তু তারা দীনুল হক বুঝেছিল, ইসলাম বুঝেছিল, আল্লাহ কি চান বুঝেছিল। তারা স্পেন দখল কোরল, দখল করার পর তারা ‘লেইউজহেরাহু’ অর্থাৎ দীনকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, জেহাদ বাদ দিলো। রাজত্ব কোরতে আরম্ভ কোরল। কয়েকশত বছর রাজত্ব কোরল। এই কয়েকশত বছরের মধ্যে তারা শিক্ষায়-দীক্ষায়, বিজ্ঞানে, চিকিৎসাশাস্ত্রে সর্বদিকে পৃথিবীর সবার ঊর্ধ্বে উঠে গেল, শ্রেষ্ঠ হোয়ে গেল। সমস্ত দুনিয়ার থেকে লোক আসতো সেখানে শিক্ষার জন্য। যখন এই অবস্থা হলো তখন কি হলো? ইউরোপিয়ান খ্রিস্টানেরা তাদেরকে পিটিয়ে স্পেন থেকে বের কোরে দিলো। এমনভাবে বের কোরল যে, একটা মোসলেম আর সেখানে ছিলো না। ঘড়ঃ ধ ংরহমষব ড়হব (একজনও ছিল না)। হয় ঋড়ৎপবষু পড়হাবৎঃবফ, জোর কোরে ধর্মান্তরিত কোরে খ্রিস্টান বানিয়ে দেওয়া হোয়েছে, আর না হয় মেরে ফেলা হোয়েছে। একটা মানুষও ছিলো না মোসলেম। কখন? জ্ঞান অর্জনের চূড়ান্ত পর্যায়ে। দখল কোরে ইসলাম প্রতিষ্ঠা কোরল অশিক্ষিত মানুষগুলি আর যখন তুমি উবংঃৎড়ু (ধ্বংসপ্রাপ্ত) হোয়ে বের হোয়ে আসলে তখন তুমি পৃথিবীর সর্বোচ্চ আসনে, উচ্চ শিক্ষিত। ঠিক একই ঘটনা বাগদাদে। বাগদাদ দখল কোরল কারা? অশিক্ষিত উম্মতে মোহাম্মদী। মোঙ্গলিয়ানরা এসে যখন তাদের একেবারে ধ্বংস কোরল, বাগদাদ শহর গুড়িয়ে দিলো, খলিফাকে হত্যা কোরল, তখন তারা পৃথিবীর সবার চেয়ে বেশি শিক্ষিত। প্রযুক্তিতে, রসায়নে, পদার্থবিদ্যায়, বিজ্ঞানে, চিকিৎসাশাস্ত্রে, জ্যোতির্বিদ্যায়, গণিতে তারা পৃথিবীর সবার ঊর্ধ্বে। তাহোলে এদের যে প্রচেষ্টা, আমরা শিক্ষিত হোলেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা কোরবো এটা ভুল। তাহোলে সঠিক কী? তওহীদ। যে তওহীদ হাতে নিয়ে এই উম্মাহ অর্ধেক পৃথিবীতে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা কোরছিলো, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হোয়েছিলো সেটা হোচ্ছে তওহীদ। এজন্য আমাদের আন্দোলনের নামই হেযবুত তওহীদ। এটা হোচ্ছে আরেকটি বড় রকমের তফাৎ।
(৩) হেযবুত তওহীদের কর্মসূচি আল্লাহর রচিত, অন্যান্য দলের কর্মসূচি মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত
আমি একটা একটা কোরে বোলছি, পৃথিবীর অন্য সমস্ত সংগঠন নয়, হেযবুত তওহীদে কেন যোগ দিবেন? এ প্রশ্নের জবাব। যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কোরছেন, প্রত্যেকটা প্রচেষ্টার একটা তরীকা লাগবে না? কোনো কাজ কোরতে গেলে, কি প্রক্রিয়ায় কোরবে? ওটাকে কর্মসূচি বলা চলে, তরীকা বলা চলে, প্রক্রিয়া বলা চলে, কি চৎড়পবংং- এ কাজটা কোরবে? এটা যদি ভুল হয় তবে সেই কাজ ব্যর্থ হবে। এই প্রক্রিয়াগুলি তারা কোথায় পেয়েছেন? নাম উল্লেখ কোরতে চাই না, তবুও পৃথিবীর যে বড় বড় সংগঠন আছে, এদের প্রত্যেকের প্রক্রিয়া যারা সেই সংগঠন তৈরি কোরেছেন, তাদের নেতারা সেই প্রক্রিয়া তৈরি কোরছেন। তাদের নেতারা বোসেছেন, চিন্তা ভাবনা কোরেছেন যে, কি চৎড়পবংং- এ কাজ কোরলে, কি তরিকায় কাজ কোরলে আমরা সফল হবো। সেটা কর্মসূচি হিসেবে তাদের সামনে আছে। যতগুলো সংগঠন পৃথিবীতে আছে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, প্রত্যেকেরই কর্মসূচি আছে। আলাদা আলাদা কর্মসূচি। কারো ছয় দফা, কারো পাঁচ দফা, কারো আট দফা, কারো দশ দফা, কারো চার দফা। প্রত্যেকেরই দফাগুলি ভিন্ন ভিন্ন, এর সাথে আর কারো মিল নাই, আলাদা আলাদা। এখন নবীকে যখন আল্লাহ বোললেন, তোমাকে পাঠানো হলো দু’টা জিনিস দিয়ে, এ দু’টা আল্লাহর দেওয়া, এর মধ্যে মানুষের কোন হাত নাই। সেটা কি? হেদায়াহ এবং দীনুল হক। তুমি এই দু’টিকে প্রতিষ্ঠা, (লে-ইউজহেরাহ) কোরবে। কিভাবে কোরবে? এ চৎড়পবংং-টা কি, তিনি বোলে দিবেন না? নবীর উপর কি ছেড়ে দিবেন যে, হে মোহাম্মদ (দঃ)! তোমার উপর দায়িত্ব দিলাম, এটাকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ‘আলাদ্দীনে কুল্লেহি’, যত জীবনব্যবস্থা আছে সমস্তগুলির উপরে এটাকে চৎবাধরষ (প্রতিষ্ঠা) করার জন্য, তোমাকে দায়িত্ব দিয়ে দিলাম। কিভাবে তিনি কোরবেন, এটা আল্লাহ বোলে দিবেন না? না দিলে নবী ঋৎবব (স্বাধীন), তিনি তাঁর খুশি মতো কোরবেন। তিনি দফা বানাবেন, এত দফা। কিন্তু না। এটা হোতে পারে না। আল্লাহ সোবহান, তাঁর কোন ত্র“টি নাই, তাঁর কোন ঝযড়ৎঃপড়সরহম (অপূর্ণাঙ্গতা) নাই, তাঁর কোন উবভবপঃ (ত্র“টি) নাই, তাই তিনি বলে দিলেন যে, তুমি এই চৎড়পবংং-এ কোরবে। সেটা হোল পাঁচদফার একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি। তুমি ঐক্যবদ্ধ হবে, উরংপরঢ়ষরহবফ (শৃঙ্খলাবদ্ধ) হবে তোমার উম্মাহ, তাদের নেতার এতায়াত কোরবে, হেজরত কোরবে এবং জেহাদ অর্থাৎ প্রচেষ্টা, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা কোরবে, এই পাঁচটা দফা। আমরা যদি নবীর জীবনের দিকে তাকাই, প্রত্যেকে দেখবেন তাঁর সম্পূর্ণ জীবনে এই পাঁচটা দফা। তাঁর উম্মাহ টহরঃবফ (একতাবদ্ধ) ছিলো। একদম ইস্পাতের মতো ঐক্যবদ্ধ ছিলো। উরংপরঢ়ষরহবফ (শৃঙ্খলিত) ছিলো, সর্বাবস্থায় তাঁদের মধ্যে কঠিন সৃঙ্খলা থাকতো। এতায়াতের তো কোন কথাই নাই, হুকুমের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত কাজ কোরে ফেলতেন। হেজরত অর্থাৎ গায়রুল্লাহ থেকে, যা কিছু আল্লাহর না, তার থেকে হেজরত মানে নিজেকে মুক্ত কোরে নেওয়া, সরিয়ে নেওয়া, ত্যাগ করা, চোলে আসা; রসুলাল্লাহর আসহাবরা তাই কোরেছেন, তাঁরা সমস্ত রকম গায়রুল্লাহ থেকে হেযরত কোরেছেন। আর জেহাদের ক্ষেত্রে তাঁর উম্মাহ কি কোরছেন? অবিশ্রান্ত, নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন জীবনভর। নবী (দ:) সারা জীবন এই পাঁচ দফার উপর নিজে ছিলেন এবং তাঁর আসহাবরাও ছিলেন। এ সম্বন্ধে নবী নিজে কী বোললেন? আল্লাহ আমাকে পাঁচটা দায়িত্ব দিয়েছেন। খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য সবার থেকে আমাদের তফাতের মধ্যে একটা বড় তফাৎ আমি পেশ কোরছি। রসুলাল্লাহ বোললেন, আল্লাহ আমাকে পাঁচটা দায়িত্ব দিয়েছেন, কী? ঐক্যবদ্ধ হও; শোনো (আসমাউ), শোনো মানে উরংপরঢ়ষরহব (শৃংখলা), কান খাড়া, সতর্ক ভাবে শোন; আদেশ পালন করা, আত্তাবেয়্যু, হুকুম তামিল করা ঙনবফরবহপব (মান্য করা); হেজরত করা, সমস্ত গায়রুল্লাহ থেকে, আল্লাহর দেওয়া যা আছে তার বাহিরে যা আছে সব গায়রুল্লাহ এবং তাগুত, সেখান
থেকে হেজরত কোরে ইসলাম আল্লাহর ঝুংঃবস-এ আসা এবং এটাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার জেহাদ অর্থ চেষ্টা, আপ্রাণ চেষ্টা, সর্বাত্মক চেষ্টা, জান মাল দিয়ে চেষ্টা। এই হলো পাঁচদফা। রসুল বোললেন, এটা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। এই পাঁচ দফার বেষ্টনী থেকে যে এক বিঘত সোরে যাবে, তার গলা থেকে ইসলাম খুলে গেলো।
কি সাংঘাতিক কথা! কি সাংঘাতিক কথা! গলা থেকে ইসলাম খুলে গেলো মানে কি? সে কাফের মোশরেক হোয়ে গেলো! এক বিঘত, এই পাঁচ দফা থেকে এক বিঘত সোরে গেলে সে কাফের মোশরেক হোয়ে গেল। গলা থেকে ইসলামের রজ্জু রশি খুলে যাওয়া মানেই ইসলাম থেকে বের হোয়ে যাওয়া। যদি না সে আবার তওবা কোরে ফিরে আসে, একটা ঝপড়ঢ়ব (সুযোগ) রইলো। আর যদি এর বাহিরে কোন জিনিসের দিকে কেউ ডাকে, সে নিজেকে মো’মেন বোলে বিশ্বাস কোরুক, সে সালাহ কায়েম কোরুক অর্থাৎ নামাজ পড়–ক, রোজা করুক, সে জাহান্নামের জ্বালানী। কি সাংঘাতিক! এটা সাধারণ কথা নয়!
হেযবুত তওহীদ ঐ পাঁচ দফাকে তাদের কর্মসূচি গ্রহণ কোরছে। পৃথিবীর আর কোন সংগঠনের এটা নাই। তারা প্রত্যেকে, সমস্ত সংগঠনের কর্মসূচি তাদের নেতারা নিজেরা তৈরি কোরে নিয়েছেন, যার যার বুদ্ধিতে যা এসেছে, মাথায় যা আসছে, বুদ্ধি কোরে, যুক্তি কোরে, পরামর্শ কোরে, সব কিছু কোরে তারা কর্মপদ্ধতি তৈরি কোরে নিয়েছেন। আর হেযবুত তওহীদের কর্মসূচি, সেই কর্মসূচি যা আল্লাহ নবীকে দিয়েছেন, নবী আবার বোলছেন, ‘আমি তোমাদের দিয়ে গেলাম এটা, তোমরা এই মোতাবেক কাজ কোরবে।’ শুধু যে আমাকে দিয়েছেন এটুকু বোলে আল্লাহর রসুল থেমে যান নি। তিনি বোলছেন, ‘আমি তোমাদের দিয়ে গেলাম’। দিয়ে গেলাম বোলে তারপর বোললেন, ‘যে এর থেকে আধা হাত সোরে গেলো সে ঙঁঃ ড়ভ ঊংষধস (ইসলাম থেকে বহি®কৃত)। এর বাহিরে অন্য কোন চৎড়পবংং (প্রক্রিয়া) এর দিকে কেউ ডাকলে, অর্থাৎ আল্লাহ যেটা দিয়েছেন এটা না, আমাদের তৈরি এই চৎড়পবংং এ, এই প্রক্রিয়ায় আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা কোরবো, এই বোলে ডাকলে সে নিজেকে মো’মেন বোলে বিশ্বাস কোরলেও, মোসলেম বোলে বিশ্বাস কোরলেও, নামাজ পোড়লেও, রোজা কোরলেও, সে জাহান্নামের জ্বালানী।’ হাদীস বর্ণিত সেই পাঁচদফা আমাদের কর্মসূচি এবং আমাদের কাজের প্রক্রিয়া। আমরা এখানে আবার সবার থেকে একদম তফাৎ হোয়ে গেলাম।
তিনটা বড় বড় কারণ বোললাম। এই তিনটা বড় বড় কারণের জন্য পৃথিবীর অন্য সমস্ত সংগঠন থেকে আমরা অন্য, এবং এজন্য আমরা সবাইকে ডাকি যে, না, অন্য সংগঠন না, তোমরা হেযবুত তওহীদে আসো। এখানে আল্লাহর সেই তওহীদ ‘লা এলাহা এল্লাল্লাহ’র উপর এই সংগঠন এবং কর্মসূচি আল্লাহ দিয়েছেন রসুলকে এবং রসুল দিয়েছেন আমাদেরকে। যে কর্মসূচি তৈরি কোরছেন আল্লাহ স্বয়ং, দিয়েছেন রসুলকে, রসুল দিয়েছেন আমাদের, এর চেয়ে বড় কোন কর্মসূচি সম্ভবপর? না, অসম্ভব। আমাদের কর্মসূচী সেটা। আর বাকি সবার কর্মসূচি কিসের? কিসের তরীকা? পৃথিবীতে আল্লাহর দীনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, তাদের নিজেদের মস্তিষ্কে প্রসূত, তাদের ইৎধরহ (মস্তিষ্ক) থেকে চিন্তা ভাবনা কোরে তারা কোরেছে। কারো ছয় দফা, কারো চার দফা, কারো আট দফা ইত্যাদি নানান রকম দফা আছে। আমাদের পাঁচ দফা। যেটা আমাদেরকে রসুল দিয়েছেন। (চোলবে…)