একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে হেযবুত তওহীদের একজন সদস্য মো: রাশেদুল হাসান মাননীয় এমামুযযামানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেন। এমামুযযামান বিস্তারিতভাবে এ প্রশ্নের জবাব দেন। এখানে আমরা তাঁর সেদিনের কথাগুলি ঈষৎ সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধোরছি। এমামুযযামানের এই বক্তব্যটি সিডি আকারেও প্রকাশিত হোয়েছে।
মো: রাশেদুল হাসান: এমামুযযামান, আমরা সাধারণত যারা বালাগে যাই তারা প্রায়ই একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হই, সেটা হোচ্ছে “পৃথিবীতে বর্তমানে অনেক ইসলামিক দল আছে, যারা চায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হোক এবং আপনারাও আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার কথাই বোলছেন। প্রশ্ন হোচ্ছে অন্যান্য দলে যোগ না দিয়ে আমরা হেযবুত তওহীদে কেন যোগ দিব? ওদের সাথে আপনাদের তফাৎটা কোথায়?”
এমামুযযামান: প্রশ্নটা অত্যন্ত যুক্তিসংগত, ঠবৎু ঢ়বৎঃরহবহঃ য়ঁবংঃরড়হ যে, পৃথিবীতে এতো সংগঠন থাকতে, যে সব সংগঠন আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা চায়, তাতে না যেয়ে আমরা বিশেষ কোরে হেযবুত তওহীদে আসার জন্য মানুষকে কেন ডাকছি? কেন বালাগ দিচ্ছি? খুব যুক্তিসংগত প্রশ্ন। এর জবাব বুঝতে হোলে প্রথমে বুঝতে হবে, আমরা কী বোলি? আমাদের বক্তব্য কী? হেযবুত তওহীদের প্রথম বক্তব্যই হোচ্ছে যে, আল্লাহ তাঁর রসুলের মাধ্যমে যে দীন, ‘দীনুল হক’ পৃথিবীতে পাঠালেন। সেই আয়াত- , ‘হুয়াল্লাজী আরসালা রাসুলাহু বেলহুদা ওয়া দীনুল হক্ লে-ইউজহেরাহু আলাদ্দীনে কুল্লেহি’ অর্থাৎ আল্লাহর রসুলকে পাঠালেন হেদায়াত ও দীনুল হক দিয়ে, সেটাকে পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত দীন অর্থাৎ জীবনব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য (সুরা ফাতাহ ২৮, তওবা ৩৩, সফ ৯)। দীন অর্থ জীবনব্যবস্থা। মানুষ পৃথিবীতে কী কোরে থাকবে, তার থাকার ঝুংঃবস (নিয়ম) কী হবে, তার আইন কী হবে, তার চবহধষ পড়ফব (দণ্ডবিধি) কী হবে, তার অর্থনীতি কী হবে, তার সমাজ ব্যবস্থা কী হবে, তার ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয়, সমস্ত ব্যবস্থার ঈড়সঢ়ষবঃব, পড়সঢ়ৎবযবহংরাব (পরিপূর্ণ) নাম দীন। আল্লাহ বোলছেন, ‘হেদায়াত’ আর সেই ‘দীনুল হক’ দিয়ে আমি নবী পাঠালাম। হেযবুত তওহীদের বক্তব্য হোচ্ছেÑ সেই দীন যেটা ১৪০০ বছর আগে আসলো পৃথিবীতে, আল্লাহর রসুল আনলেন এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ মোতাবেক তিনি আরবে সেটাকে প্রতিষ্ঠা কোরলেন। তিনি চোলে যাবার পর তাঁর উম্মাহ সেই ‘লেইউজহেরাহু আলাদ্দীনের কুল্লেহি’ (অন্যান্য সমস্ত দীনের প্রতিষ্ঠা)-কে বাস্তবায়ন করার জন্য পৃথিবীতে বের হোয়ে পোড়লেন এবং অর্ধেক পৃথিবীতে সেটা বাস্তবায়ন হলো। তারপর দুর্ভাগ্যক্রমে তারা তাদের উদ্দেশ্য ভুলে গেলেন, আকীদা ভুলে গেলেন এবং সেই খেলাফত তখন রাজতন্ত্রে পর্যবসিত হলো এবং তারা অন্যান্য রাজা বাদশাহর মতো রাজত্ব কোরতে আরম্ভ কোরলেন। সুতরাং আল্লাহ এ জাতিকে সতর্ক কোরে দিয়েছিলেন, হুশিয়ার কোরে দিয়েছিলেন যে, এই ‘লেইউজহেরাহু আলাদ্দীনে কুল্লেহি’ অর্থাৎ পৃথিবীতে এই দীনুল হক’কে প্রতিষ্ঠার কাজ জেহাদ অর্থাৎ সংগ্রাম, চেষ্টা, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা যদি তুমি ছেড়ে দাও তাহোলে তোমাকে আমি কঠিন শাস্তি দেবো এবং শাস্তি দেওয়ার পর তোমাদের সরিয়ে অন্য কোন জাতিকে ক্ষমতা দিয়ে দেবো, তুমি গোলাম হোয়ে যাবে (সুরা তওবা- ৩৯)। আল্লাহর এই কথাকে পরিত্যাগ কোরে যখন তারা রাজত্ব কোরতে আরম্ভ কোরল তখন আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্র“তি মোতাবেক তাদের কঠিন শাস্তি দিলেন। যে শাস্তি আপনারা ইতিহাস পোড়লে পাবেন, ওটা বলার সময় এখন না। তাদের সরিয়ে ইউরোপিয়ানদের সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে সমস্ত মোসলেম দুনিয়াকে তাদের গোলাম বানিয়ে দিলেন। কারণ, আল্লাহ মিথ্যা বোলতে পারেন না, তাঁর প্রতিশ্র“তি ভাঙ্গতে পারেন না। তারপর যখন থেকে এই রাজত্ব আরম্ভ হলো তখন থেকে ইসলামের ভেতরে আকীদা নষ্ট হওয়ার দরুন বিকৃতি আসতে আরম্ভ কোরল। পর্যায়ক্রমে সেই বিকৃতি বাড়তে-বাড়তে আজ ১৪০০ বছর পর সেই ইসলাম আর ইসলাম নাই। আল্লাহ যে দীনুল হক দিলেন নবীর সঙ্গে পাঠিয়ে সেটা নাই, অবিকৃত নাই। সেটা বিকৃত হোতে হোতে এখন এমন একটা অবস্থায় এসেছে যে, সেটা বিপরীত হোয়ে গেছে, শুধু বিকৃত নয়, বিপরীত হোয়ে গেছে। যে হেদায়াহ নিয়ে নবী আসলেন, সে হেদায়াহ কী? দিক নির্দেশনা, সোজা পথ, সংক্ষেপে সেটা হোচ্ছে কলেমা- ‘লা এলাহা এল্লাল্লাহ’ এটা। এই দিক নির্দেশনা নষ্ট হোয়ে গেলো। তারপরে দীনুল হক যেটা, সেটা বিকৃত হোতে হোতে সেটা এমন এক পর্যাে য় আজ এসে পৌঁছেছে, যেটা আল্লাহর সেই দীন আর নেই। এটা হোচ্ছে হেযবুত তওহীদের বক্তব্য। আমি জিনিসটা একটু চেষ্টা কোরবো লিখে বলার জন্য :
দীনুল হক কি? দীনুল ইসলাম। দীনুল হক মানুষের জীবনে কার্যকরী কোরলে ঊভভবপঃরাব (কার্যকরী) কোরলে শান্তি আসবে, শান্তি মানে ইসলাম। [এমামুযযামান বোর্ডে দু’টি দাগ দিয়ে প্রকৃত ইসলাম ও বিকৃত ইসলামের তুলনা পেশ করেন।]
বিকৃত হোতে হোতে আজ ১৪০০ বছর পর বর্তমানের বিকৃত এবং বিপরীত অবস্থা। এটা আর আল্লাহর পাঠানো ঐ দীনুল হক, ইসলাম নাই। এখন আল্লাহ কোন কারণে তাঁর অপার রহমতে এতদিন পর আবার প্রকৃত দীনুল হক আমাদের বুঝালেন।
দুই শতাব্দী থেকে এই ইসলামকে, দীনুল হক’কে আবার পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার অর্থাৎ আল্লাহ যে অন্যান্য জাতি দিয়ে যে গোলাম কোরে দিলেন এই গোলামী থেকে মুক্ত হোয়ে আবার আল্লাহর সেই দীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা গত দুই শতাব্দী থেকে চোলছে। তফাৎ হলো এখানে হেযবুত তওহীদের সাথে অন্য সবার। সবার প্রচেষ্টা হোচ্ছে এই [এমামুযযামান বোর্ডের দিকে দেখিয়ে] বিকৃত অবস্থার যে ইসলামটা সেটাকেই আবার প্রতিষ্ঠা করা। এর মধ্যে বিভিন্ন সংগঠন তাদের বিভিন্ন আকীদায় চেষ্টা কোরছেন কিন্তু এই বিকৃত ইসলামকে। আর হেযবুত তওহীদ চেষ্টা কোরছে আল্লাহর সেই প্রকৃত দীনুল হক, সেটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সহজ কথা, ওরা যেটাকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কোরছে ওটা বিকৃত ইসলাম, আর আমরা যেটা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কোরছি সেটা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের দেওয়া প্রকৃত ইসলাম, এখানে আসলো তফাৎ। আমরা মানুষকে ডাকবো, তারা প্রশ্ন কোরছে যে, আমরা আপনাদের সঙ্গে কেন আসবো, ওদের সঙ্গে নয় কেন? এটা হোচ্ছে এক নম্বর জবাব।
(২) আল্লাহর প্রকৃত তওহীদ আর কারও কাছে নেই।
দ্বিতীয়তঃ (এমামুযযামান বোর্ডের দিকে দেখিয়ে) ইসলামের যে বিকৃতি, এই বিকৃতিতে কি হোয়েছে? প্রথম কলেমা নষ্ট হোয়ে গেছে। কলেমা নষ্ট হোলে দীনুল হক আর কিছু রোইলো? কলেমা নষ্ট হোয়েছে কিভাবে? ‘লা এলাহা এল্লাল্লাহ’ হোচ্ছে ইসলামের কলেমা। এটা ছাড়া কোন ইসলাম আছে? নাই। এখন ‘লা এলাহা এল্লাল্লাহ’ এর এলাহ শব্দের অর্থ বিকৃত হোয়ে গেছে, এলাহ শব্দের অর্থ বদলিয়ে সেটাকে উপাস্য, মাবুদ করা হোয়েছে। কোর’আনের যত অনুবাদ দেখবেন, ‘লা এলাহা এল্লাল্লাহ’ অর্থ লেখা হোয়েছে আল্লাহ ছাড়া উপাস্য নাই। মাবুদ আরবী শব্দ। ইংলিশ অনুবাদগুলো আমার হাতে আজ পর্যন্ত যা এসেছে, সব ঞযবৎব রং হড়হব ঃড় নব ড়িৎংযরঢ়বফ ড়ঃযবৎ ঃযবহ অষষধয (আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই) কিন্তু এটা ভুল, ডৎড়হম. এলাহ অর্থ যার হুকুম শুনতে হয়। ‘লা এলাহা এল্লাল্লাহ’র ইংলিশ অনুবাদ হবে ঞযবৎব রং হড়হব ঃড় নব ড়নবুবফ ড়ঃযবৎ ঃযবহ অষষধয (আল্লাহ ছাড়া কোন হুকুমদাতা নেই)। এখানেই সম্পূর্ণ জিনিস আলাদা হোয়ে গেল, বিকৃত হোয়ে গেল। ইসলামের মাথাই কেটে গেলো এবং যেহেতু ঐটা গেলো, বাকিটার বিকৃতি অবশ্যম্ভাবী। গোড়াই যদি নষ্ট হোয়ে যায় তো কি থাকবে? গোড়া নষ্ট হোয়ে গেলো।
এলাহ শব্দের অর্থ নষ্ট হোয়ে যাওয়ার ফলে কি হোল? এই হোল যে, ‘লা এলাহা এল্লাল্লাহ’ এর অর্থ ‘লা মাবুদ এল্লাল্লাহ’ করায় আল্লাহর হুকুমকে অমান্য কোরে তাঁর উপাসনা আরম্ভ হলো। বর্তমানে এই যে, আমরা এখানে বোসে আছি, এখন পৃথিবীতে হাজার হাজার মসজিদ তৈরী হোচ্ছে, ঞযড়ঁংধহফং ড়ভ ঃযবস ঁহফবৎ পড়হংঃৎঁপঃরড়হ (হাজার হাজার আছে নির্মানাধীন), সমস্ত পৃথিবীতে। কি জন্য? উপাসনা করার জন্য, যাকে বর্তমানে বলে এবাদত করার জন্য। আর তাঁর হুকুম শোনার অর্থাৎ মানার জন্য কোথাও আছে কিছু? সমস্ত পৃথিবীতে তাঁর হুকুম মানছে কেউ? মানছে না। তাঁর দেওয়া রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, দণ্ডবিধি, সামাজিক ব্যবস্থা কোনখানেই তাঁকে, আল্লাহকে মানা হোচ্ছে? কোথাও তাঁর হুকুম মানা হয় না। কারণ কি? ঐ যে বোললাম, ‘লা এলাহা এল্লাল্লাহর’ অর্থ বদলিয়ে ‘লা মাবুদ এল্লাল্লাহ’ করার ফলে এটা হোয়েছে।
উপাসনার শেষ নাই। ভুললে চোলবে না, এবলিস রাজিম হোয়েছে কেন, বহি®কৃত হোয়েছে কেন, মালাউন হোয়েছে কেন, কি জন্য? আল্লাহর এবাদত করে নাই বোলে নাকি হুকুম শুনে নাই বোলে? এবাদতে এবলিসের চাইতে কেউ উপরে যেতে পারবে না। এবাদতে এবলিসকে কেউ পেছনে ফেলতে পারবে না। সে বহি®কৃত, মালাউন এবং রাজিম হোয়েছে কেন? হুকুম না শুনার জন্য, আদেশ না শুনার জন্য অর্থাৎ আল্লাহর উলুহিয়াতকে অস্বীকার করার জন্য, আল্লাহকে এলাহ হিসাবে অস্বীকার করার জন্য। মাবুদ না মানার জন্য নয়। কলেমার অর্থাৎ তওহীদের মানে বিকৃত হোয়ে গেল, ঐখানেই ইসলামের গোড়া শেষ হোয়ে গেলো, এই বিকৃত ইসলামে। আর হেযবুত তওহীদের কলেমা ‘লা এলাহা এল্লাল্লাহ’, আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম শুনবো না। এই তফাৎই পৃথিবীর সমস্ত দলের প্রচেষ্টার সঙ্গে আমরা এখানে আলাদা। এর চেয়ে বড় তফাৎ আর কি চাইতে পারে? (চোলবে….)